সংস্কৃত প্রকল্প - উজ্জয়িনী , মথুরা , কাশী , বৃন্দাবন
সংস্কৃত প্রকল্প - উজ্জয়িনী , মথুরা , কাশী , বৃন্দাবন
সংস্কৃত প্রকল্প - উজ্জয়িনী , মথুরা , কাশী , বৃন্দাবন
ভূমিকা :-
পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে ভারতীয় সভ্যতা যে অন্যতম তা আজ বিশ্ববাসীর নিকট প্রতিষ্ঠিত। আলেকজান্ডার ডাফ , ম্যাক্সমুলার , উইলিয়াম জোন্স - প্রমুখেরা ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা স্বীকার করেছেন এবং সে ঐতিহ্য যে গোটা বিশ্বের মার্গদর্শক - সে কথাও বলেছেন। ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বহু প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নগরের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন - বারাণসী , কোশল , অবন্তী , বৎস , মগধ - ইত্যাদি। এই সকল নগরীগুলি একদিকে যেমন ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক ও বাহক তেমনি অন্যদিকে বহু প্রাচীন যুগে ভারতীয় সংস্কৃতির এই উৎকর্ষতা বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ ও বিস্মিত করে।
বর্তমান প্রকল্পটিতে এই সকল প্রাচীন নগরীগুলির মধ্যে উজ্জয়িনী , মথুরা , কাশী , বৃন্দাবন - এই চারটি নগরী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণ পরিচয়ের সাথে সাথে মানচিত্রে নগরীগুলির অবস্থান , আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব , নগরগুলির সাথে জড়িত বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনা - এগুলি সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রকল্পের বৈশিষ্ট ও লক্ষ্য :-
যে সকল বৈশিষ্ট ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রচনার কাজে আত্মনিয়োগ করা হয়েছে সেগুলি হলো -
প্রথমতঃ - প্রাচীন ভারতের চারটি বিশিষ্ট নগরী - উজ্জয়িনী , মথুরা , কাশী ও বৃন্দাবন - সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা।
দ্বিতীয়তঃ - প্রাচীন ভারতের নগরীগুলি ভারতীয় সমাজ , সভ্যতা ও সংস্কৃতির ওপর কীরূপ প্রভাব বিস্তার করেছিল - সে সম্পর্কে জানা।
তৃতীয়তঃ - উক্ত নগরীগুলির রাজনৈতিক তাৎপর্য নির্ধারণ করা।
চতুর্থতঃ - প্রতিটি নগরীর সাথে জড়িত বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।
পঞ্চমতঃ - বর্তমান সময়ে উক্ত নগরীগুলির যথাযথ প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে আলোচনা করা।
ষষ্ঠত :- সর্বপরি , সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি চেতনা এবং প্রকল্প ভিত্তিক কাজে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ :-
কর্মপদ্ধতি ও পরিকল্পনা :-
প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে যে সকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলি হলো -
>>বিদ্যালয়ে সংস্কৃত বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক ক্স মহাশয় কর্তৃক প্রকল্পের জন্য বিষয়বস্তু নির্বাচন।
>>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয় কর্তৃক বিষয়বস্তু সম্পর্কে ও প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত।
>>>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয়ের নির্দেশমতো বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে ও ইন্টারনেটের সহায়তা গ্রহণ করে প্রকল্পের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ।
>>>>> সংগৃহীত তথগুলির সাহায্যে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা।
>>>>>> খসড়া প্রতিবেদনটি মাননীয় শিক্ষক মহাশয়ের নিকট উপস্থাপন করলে তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ দান করেন।
>>>>>>> প্রয়োজনীয় সংশোধনীর পর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি পুনরায় লিপিবদ্ধ করা হলো।
>>>>>>>> ইন্টারনেট থেকে প্রয়োজনীয় চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলি যথাস্থানে উপস্থাপন করা হলো।
>>>>>>>>> মানচিত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলির অবস্থান চিহ্নিত করা হলো।
>>>>>>>>>> পূর্ণাঙ্গ ও সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হলো।
তথ্য বিশ্লেষণ :-
বৃন্দাবন
বৃন্দাবন হল ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মথুরা জেলার অন্তর্গত একটি শহর। ঈশ্বর পরম রাধামাধব এখানে নিজেদের সচ্চিদানন্দ ছেলেবেলার লীলা প্রকাশ করে থাকেন । শহরটি ঈশ্বর পরম রাধামাধবের ভূ লোকের লীলা ভূমি জেলাসদর মথুরা থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে আগ্রা-দিল্লি হাইওয়ের (২ নং জাতীয় সড়ক) উপর অবস্থিত। বৃন্দাবন শহরে রাধা ও কৃষ্ণের অনেকগুলি মন্দির আছে। হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান।
ইতিহাস
বৃন্দাবন একটি প্রাচীন শহর। এই শহর হিন্দু ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত এবং হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। এই শহরের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির একটি হল গোবিন্দদেব মন্দির। এটি ১৫৯০ সালে নির্মিত হয়। সেই শতাব্দীরই গোড়ার দিকে বৃন্দাবন একটি শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। বৃন্দাবনের আদি অবস্থান কোথায় ছিল, তা ১৬শ শতাব্দীর আগে মানুষ ভুলে গিয়েছিল। চৈতন্য মহাপ্রভু এই স্থান পুনরাবিষ্কার করেন। ১৫১৫ সালে কৃষ্ণের বাল্যলীলার স্থানগুলি নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে চৈতন্য মহাপ্রভু বৃন্দাবনে এসেছিলেন। কথিত আছে, তিনি দিব্য প্রেমের আধ্যাত্মিক ভাবে আচ্ছন্ন হয়ে বিভিন্ন পবিত্র বনে পরিভ্রমণ করেছিলেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, তিনি তাঁর দৈব আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমে বৃন্দাবন ও তার চারপাশে যে সকল স্থানে কৃষ্ণ তাঁর বাল্যলীলা করেছিলেন বলে মনে করা হয়, সেগুলি আবিষ্কার করেন।
মীরা বাই মেবার রাজ্য পরিত্যাগ করে তীর্থযাত্রা করতে করতে বৃন্দাবনে আসেন। তিনি জীবনের শেষ ১৪ বছর বৃন্দাবনেই কাটান। যে মন্দিরে তিনি ছিলেন সেটি এখন 'প্রাচীন মীরাবাই' নামে পরিচিত।
বিগত ২৫০ বছরে বৃন্দাবনের অধিকাংশ বনই নগরায়ণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই নগরায়ণ প্রথম শুরু করেন স্থানীয় রাজারা। পরবর্তীকালে সেই কাজ চালিয়ে নিয়ে যান গৃহনির্মাতা সংস্থাগুলি। শুধুমাত্র কয়েকটি স্থান ছাড়া বাকি অঞ্চলের বনাঞ্চল স্থানীয় ময়ূর, গরু, বাঁদর ও বিভিন্ন ধরনের পাখি সহ বিলুপ্ত হয়। শহরে এখন অল্প ময়ূরই দেখা যায়। তবে বাঁদর ও গরু শহরের সর্বত্রই দেখা যায়।
ধর্মীয় ঐতিহ্য
হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে বৃন্দাবন একটি পবিত্র তীর্থস্থান। এটি কৃষ্ণ উপাসনার একটি কেন্দ্র। বৃন্দাবন, গোবর্ধন ও গোকুল কৃষ্ণের জীবনের সঙ্গে যুক্ত। কৃষ্ণের ভক্তেরা প্রতি বছর এই স্থানে তীর্থযাত্রায় আসেন এবং বিভিন্ন উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। ভাগবত পুরাণ অনুসারে, কৃষ্ণ গোপীদের গ্রাম গোকুলে তাঁর পালক পিতামাতা নন্দ ও যশোদার গৃহে পালিত হয়েছিলেন। উক্ত পুরাণ অনুসারে, কৃষ্ণ বৃন্দাবনের বনেই রাসলীলা ও অন্যান্য বাল্যলীলা করেন। তাঁর দাদা বলরাম ও অন্যান্য রাখাল বালকদের সঙ্গে তিনি এখানে দুষ্টুমি করে বেড়াতেন।
সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার ইতিহাস
মদনমোহন মন্দির - মুলতানের রাজা কাপুর রাম দাস কালীয়দমন ঘাটের কাছে মদনমোহন মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এটি বৃন্দাবনের অন্যতম প্রাচীন মন্দির। চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের সঙ্গে এই মন্দিরটি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে এই মন্দিরের আদি মদনগোপাল বিগ্রহটি নিরাপত্তাজনিত কারণে রাজস্থানের কারাউলিতে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে এই মন্দিরে মূল বিগ্রহের একটি প্রতিমূর্তি পূজিত হয়।
মীরা বাই মন্দির - নিধিবনের কাছে শাহজি মন্দিরের দক্ষিণ দিকে মীরা বাই মন্দিরটি অবস্থিত। এই মন্দিরটি মীরা বাইয়ের মন্দির। কোনো কোনো জীবনীগ্রন্থে বলা হয়েছে, ১৫৪৭ সালে দ্বারকায় মীরা বাই সশরীরে দ্বারকায় কৃষ্ণ বিগ্রহে বিলীন হয়ে যান। তবে গবেষকরা এই কিংবদন্তির ঐতিহাসিকতা স্বীকার করেন না। তবে একথা সত্য যে, মীরা বাই কৃষ্ণ-উপাসনা নিয়েই থাকতেন এবং তাঁর রচিত ভজনগুলি তাঁকে ভক্তি আন্দোলন যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্ত-কবির স্বীকৃতি এনে দিয়েছিল।
বাঁকেবিহারী মন্দির - স্বামী হরিদাস নিধিবন থেকে বাঁকেবিহারীর বিগ্রহটি আবিষ্কার করার পর ১৮৬২ সালে বাঁকেবিহারী মন্দির নির্মিত হয়।
প্রেম মন্দির - বৃন্দাবনের উপকণ্ঠে ৫৪ একর জমির উপর প্রেম মন্দিরটি নির্মিত। এটি প্রতিষ্ঠা করেন কৃপালু মহারাজ। মূল মন্দিরটি শ্বেতপাথরে নির্মিত এবং সেখানে কৃষ্ণের বহু মূর্তি খোদিত রয়েছে।
রাধাবল্লভ মন্দির - হরিবংশ মহাপ্রভু রাধাবল্লভ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরের বেদীতে কৃষ্ণের বিগ্রহের পাশে রাধার একটি মুকুট রাখা থাকে।
জয়পুর মন্দির - জয়পুরের মহারাজ দ্বিতীয় সাওয়াই মাধো সিং ১৯১৭ সালে রাধামাধব মন্দির বা জয়পুর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
রাধারমণ মন্দির - গোপাল ভট্ট গোস্বামীর অনুরোধে রাধারমণ মন্দির নির্মিত হয়। এই মন্দিরে কৃষ্ণের একটি শালগ্রাম বিগ্রহ রয়েছে।
শাহজি মন্দির - ১৮৭৬ সালে লখনউয়ের শাহ কুন্দন লাল এই মন্দিরের নকশা করেন এবং মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরটি অনন্য স্থাপত্যশৈলী ও শ্বেতপাথরের সুন্দর ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত। মন্দিরে বারোটি সর্পিল স্তম্ভ রয়েছে। প্রত্যেকটি স্তম্ভের উচ্চতা ১৫ ফুট। এছাড়া মন্দিরে বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতি ও তৈলচিত্র সমন্বিত একটি হলঘরও আছে।
রঙ্গজি মন্দির - ১৮৫১ সালে নির্মিত রঙ্গজি মন্দির বিষ্ণুর অন্যতম রূপ রঙ্গনাথ বা রঙ্গজির প্রতি উৎসর্গিত। এই মন্দিরে বিষ্ণু অনন্তশায়ী ভঙ্গিমায় পূজিত হন। মন্দিরটি দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। এতে একটি ছয় তলা গোপুরম ও ৫০ ফুট উঁচু ধ্বজা স্তম্ভ রয়েছে। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে মন্দিরে ব্রহ্মোৎসব উপলক্ষ্যে মন্দিরের উদ্যানে রথযাত্রা আয়োজিত হয়।
গোবিন্দদেব মন্দির -.১৫৯০ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের দান করা লাল বেলেপাথর দিয়ে রাজা মানসিংহ সাত তলা উঁচু গোবিন্দদেব মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। আওরঙ্গজেব এই মন্দিরটি ধ্বংস করে দেন।
রাধাদামোদর মন্দির - ১৫৪২ সালে বৃন্দাবনের ষড়গোস্বামী কর্তৃক সেবাকুঞ্জে রাধাদামোদর মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।
বৃন্দাবন শক্তিপীঠ /কাত্যায়নী মন্দির ও ভূতেশ্বর মহাদেব মন্দির - রঙ্গনাথ মন্দিরের কাছে রাধাবাগে কাত্যায়নী মন্দির অবস্থিত। এটি একটি শক্তিপীঠ। কথিত আছে, এখানে দেবী সতীর আঙটি পড়েছিল।
চিন্তাহরণ হনুমান মন্দির - অটলবনের কাছে অবস্থিত চিন্তাহরণ হনুমান মন্দিরটি হল হনুমানের মন্দির।
অন্যান্য পবিত্র স্থান
বৃন্দাবনের অন্যান্য পবিত্র স্থানগুলি হল সেবাকুঞ্জ, কেশীঘাট, শ্রীজি মন্দির, যুগলকিশোর মন্দির, লালবাবু মন্দির, রাজঘাট, কুসুম সরোবর, ইমলিতল, কালীয়ঘাট, রমণরেতি, বরাহঘাট, চিরঘাট, স্বামী হরিদাসের সমাধি। স্বামী হরিদাসের সম্মানে তাঁর সমাধিতে প্রতি বছর একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই সম্মেলনে ভারতের বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞেরা গান পরিবেশন করেন। সেবাকুঞ্জ রক্ষণাবেক্ষণ করে ব্রজ ফাউন্ডেশন।
বারাণসী
বারাণসী হল ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারাণসী জেলার একটি শহর। শহরটি স্থানীয়ভাবে বেনারস নামে এবং বাঙালিদের কাছে কাশী নামে অধিক পরিচিত। শহরটি গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ শহরের থেকে এই শহরের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার ; হিন্দুধর্ম ও জৈনধর্মের সাতটি পবিত্রতম শহরের ("সপ্তপুরী") একটি হল বারাণসী। শুধু তাই নয়, বৌদ্ধধর্মের বিকাশেও বারাণসী শহরের বিশেষ ভূমিকা ছিল। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, বারাণসীতে মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করেন। বারাণসী ভারত তথা বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির অন্যতম।
খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে মহম্মদ ঘোরি বারাণসীর অনেক মন্দির লুণ্ঠন ও ধ্বংস করেছিলেন। এই শহরের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি অষ্টাদশ শতাব্দীতে বর্তমান রূপ পেয়েছে।
কাশীর মহারাজা (ইনি "কাশী নরেশ" নামে পরিচিত) হলেন বারাণসীর প্রধান সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক। বারাণসীর সব ধর্মীয় উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তিনি। গঙ্গানদীর সঙ্গে বারাণসীর সংস্কৃতির বিশেষ যোগ আছে। বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে বারাণসী উত্তর ভারতের এক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বারাণসীর ইতিহাস বিশ্বের অনেক প্রধান ধর্মসম্প্রদায়ের ইতিহাসের চেয়েও প্রাচীন। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের বারাণসী ঘরানার উৎপত্তি এই শহরে। এই শহরে অনেক বিশিষ্ট ভারতীয় দার্শনিক, কবি, লেখক ও সংগীতজ্ঞ বাস করেছেন। বারাণসীর কাছে সারনাথের গৌতম বুদ্ধ প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেছিলেন।
বারাণসী ভারতের আধ্যাত্মিক রাজধানী। তুলসীদাসের রামচরিতমানস সহ একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থ এই শহরে রচিত হয়েছিল। বারাণসীর সঙ্কটমোচন হনুমান মন্দিরটিকে তার স্মরণে "তুলসীমানস মন্দির" বলা হয়। বারাণসীর কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার প্রাচীনতম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি। বারাণসীকে "মন্দিরনগরী", "ভারতের পবিত্র নগরী", "ভারতের ধর্মীয় রাজধানী", "আলোকনগরী", "শিক্ষানগরী" ও "বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত নগরী"-ও বলা হয়।
উজ্জয়িনী
উজ্জয়িনী :-
ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্যের উজ্জয়িনী জেলার একটি শহর ও পৌর সংস্থার অধীন এলাকা।উজ্জয়িনী ভারতের প্রাচীন নগরী। এর অবস্থান বর্তমানমধ্যপ্রদেশ রাজ্যে শিপ্রা নদীর তীরে। পুরাতাত্ত্বিক উৎখননে এই নগরীর চারিদিকে আনুমানিক খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত একটি প্রাচীর আবিষ্কৃত হয়েছে। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজধানীর রূপে অনুমিত এই নগরী শক ও গুপ্তযুগে জ্যোতিষ চর্চার প্রসিদ্ধ কেন্দ্র ছিল। উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির বিখ্যাত।
পৃথিবীর মানচিত্রে শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৩.১৮° উত্তর ৭৫.৭৭° পূর্ব। সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ৪৯১ মিটার (১৬১০ ফুট)।
ভারতের ২০১১ সালের জনমিতি অনুসারে উজ্জয়িনী জেলার জনসংখ্যা ১৯,৮৬,৮৬৪জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫১.১৫% এবং নারী ৪৮.৮৪%। এখানে সাক্ষরতার হার ৭২.৩৪%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৩.৪৬% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৬০.৭৪%।
এই শহরের জনসংখ্যার ১৩.৬৫% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য :-
উজ্জয়িনী নগরীটি ভারতের সাংস্কৃতিক জগতে এক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক নগরী। ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের সময়কালে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁচেছিলো। গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজধানী হিসেবে এই নগরী প্রসিদ্ধ। এই সময় এই নগরী জ্ঞান - বিজ্ঞান , শিল্প - চর্চার ক্ষেত্রে অনন্য উৎকর্ষতার পরিচয় দিয়েছিলো।
সংস্কৃত প্রকল্প - উজ্জয়িনী , মথুরা , কাশী , বৃন্দাবন
ভূমিকা :-
পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে ভারতীয় সভ্যতা যে অন্যতম তা আজ বিশ্ববাসীর নিকট প্রতিষ্ঠিত। আলেকজান্ডার ডাফ , ম্যাক্সমুলার , উইলিয়াম জোন্স - প্রমুখেরা ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা স্বীকার করেছেন এবং সে ঐতিহ্য যে গোটা বিশ্বের মার্গদর্শক - সে কথাও বলেছেন। ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বহু প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নগরের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন - বারাণসী , কোশল , অবন্তী , বৎস , মগধ - ইত্যাদি। এই সকল নগরীগুলি একদিকে যেমন ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক ও বাহক তেমনি অন্যদিকে বহু প্রাচীন যুগে ভারতীয় সংস্কৃতির এই উৎকর্ষতা বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ ও বিস্মিত করে।
বর্তমান প্রকল্পটিতে এই সকল প্রাচীন নগরীগুলির মধ্যে উজ্জয়িনী , মথুরা , কাশী , বৃন্দাবন - এই চারটি নগরী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণ পরিচয়ের সাথে সাথে মানচিত্রে নগরীগুলির অবস্থান , আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব , নগরগুলির সাথে জড়িত বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনা - এগুলি সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রকল্পের বৈশিষ্ট ও লক্ষ্য :-
যে সকল বৈশিষ্ট ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রচনার কাজে আত্মনিয়োগ করা হয়েছে সেগুলি হলো -
প্রথমতঃ - প্রাচীন ভারতের চারটি বিশিষ্ট নগরী - উজ্জয়িনী , মথুরা , কাশী ও বৃন্দাবন - সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা।
দ্বিতীয়তঃ - প্রাচীন ভারতের নগরীগুলি ভারতীয় সমাজ , সভ্যতা ও সংস্কৃতির ওপর কীরূপ প্রভাব বিস্তার করেছিল - সে সম্পর্কে জানা।
তৃতীয়তঃ - উক্ত নগরীগুলির রাজনৈতিক তাৎপর্য নির্ধারণ করা।
চতুর্থতঃ - প্রতিটি নগরীর সাথে জড়িত বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।
পঞ্চমতঃ - বর্তমান সময়ে উক্ত নগরীগুলির যথাযথ প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে আলোচনা করা।
ষষ্ঠত :- সর্বপরি , সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি চেতনা এবং প্রকল্প ভিত্তিক কাজে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ :-
কর্মপদ্ধতি ও পরিকল্পনা :-
প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে যে সকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলি হলো -
>>বিদ্যালয়ে সংস্কৃত বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক ক্স মহাশয় কর্তৃক প্রকল্পের জন্য বিষয়বস্তু নির্বাচন।
>>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয় কর্তৃক বিষয়বস্তু সম্পর্কে ও প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত।
>>>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয়ের নির্দেশমতো বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে ও ইন্টারনেটের সহায়তা গ্রহণ করে প্রকল্পের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ।
>>>>> সংগৃহীত তথগুলির সাহায্যে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা।
>>>>>> খসড়া প্রতিবেদনটি মাননীয় শিক্ষক মহাশয়ের নিকট উপস্থাপন করলে তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ দান করেন।
>>>>>>> প্রয়োজনীয় সংশোধনীর পর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি পুনরায় লিপিবদ্ধ করা হলো।
>>>>>>>> ইন্টারনেট থেকে প্রয়োজনীয় চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলি যথাস্থানে উপস্থাপন করা হলো।
>>>>>>>>> মানচিত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলির অবস্থান চিহ্নিত করা হলো।
>>>>>>>>>> পূর্ণাঙ্গ ও সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হলো।
তথ্য বিশ্লেষণ :-
বৃন্দাবন
বৃন্দাবন হল ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মথুরা জেলার অন্তর্গত একটি শহর। ঈশ্বর পরম রাধামাধব এখানে নিজেদের সচ্চিদানন্দ ছেলেবেলার লীলা প্রকাশ করে থাকেন । শহরটি ঈশ্বর পরম রাধামাধবের ভূ লোকের লীলা ভূমি জেলাসদর মথুরা থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে আগ্রা-দিল্লি হাইওয়ের (২ নং জাতীয় সড়ক) উপর অবস্থিত। বৃন্দাবন শহরে রাধা ও কৃষ্ণের অনেকগুলি মন্দির আছে। হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান।
ইতিহাস
বৃন্দাবন একটি প্রাচীন শহর। এই শহর হিন্দু ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত এবং হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। এই শহরের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির একটি হল গোবিন্দদেব মন্দির। এটি ১৫৯০ সালে নির্মিত হয়। সেই শতাব্দীরই গোড়ার দিকে বৃন্দাবন একটি শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। বৃন্দাবনের আদি অবস্থান কোথায় ছিল, তা ১৬শ শতাব্দীর আগে মানুষ ভুলে গিয়েছিল। চৈতন্য মহাপ্রভু এই স্থান পুনরাবিষ্কার করেন। ১৫১৫ সালে কৃষ্ণের বাল্যলীলার স্থানগুলি নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে চৈতন্য মহাপ্রভু বৃন্দাবনে এসেছিলেন। কথিত আছে, তিনি দিব্য প্রেমের আধ্যাত্মিক ভাবে আচ্ছন্ন হয়ে বিভিন্ন পবিত্র বনে পরিভ্রমণ করেছিলেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, তিনি তাঁর দৈব আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমে বৃন্দাবন ও তার চারপাশে যে সকল স্থানে কৃষ্ণ তাঁর বাল্যলীলা করেছিলেন বলে মনে করা হয়, সেগুলি আবিষ্কার করেন।
মীরা বাই মেবার রাজ্য পরিত্যাগ করে তীর্থযাত্রা করতে করতে বৃন্দাবনে আসেন। তিনি জীবনের শেষ ১৪ বছর বৃন্দাবনেই কাটান। যে মন্দিরে তিনি ছিলেন সেটি এখন 'প্রাচীন মীরাবাই' নামে পরিচিত।
বিগত ২৫০ বছরে বৃন্দাবনের অধিকাংশ বনই নগরায়ণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই নগরায়ণ প্রথম শুরু করেন স্থানীয় রাজারা। পরবর্তীকালে সেই কাজ চালিয়ে নিয়ে যান গৃহনির্মাতা সংস্থাগুলি। শুধুমাত্র কয়েকটি স্থান ছাড়া বাকি অঞ্চলের বনাঞ্চল স্থানীয় ময়ূর, গরু, বাঁদর ও বিভিন্ন ধরনের পাখি সহ বিলুপ্ত হয়। শহরে এখন অল্প ময়ূরই দেখা যায়। তবে বাঁদর ও গরু শহরের সর্বত্রই দেখা যায়।
ধর্মীয় ঐতিহ্য
হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে বৃন্দাবন একটি পবিত্র তীর্থস্থান। এটি কৃষ্ণ উপাসনার একটি কেন্দ্র। বৃন্দাবন, গোবর্ধন ও গোকুল কৃষ্ণের জীবনের সঙ্গে যুক্ত। কৃষ্ণের ভক্তেরা প্রতি বছর এই স্থানে তীর্থযাত্রায় আসেন এবং বিভিন্ন উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। ভাগবত পুরাণ অনুসারে, কৃষ্ণ গোপীদের গ্রাম গোকুলে তাঁর পালক পিতামাতা নন্দ ও যশোদার গৃহে পালিত হয়েছিলেন। উক্ত পুরাণ অনুসারে, কৃষ্ণ বৃন্দাবনের বনেই রাসলীলা ও অন্যান্য বাল্যলীলা করেন। তাঁর দাদা বলরাম ও অন্যান্য রাখাল বালকদের সঙ্গে তিনি এখানে দুষ্টুমি করে বেড়াতেন।
সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার ইতিহাস
মদনমোহন মন্দির - মুলতানের রাজা কাপুর রাম দাস কালীয়দমন ঘাটের কাছে মদনমোহন মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এটি বৃন্দাবনের অন্যতম প্রাচীন মন্দির। চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের সঙ্গে এই মন্দিরটি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে এই মন্দিরের আদি মদনগোপাল বিগ্রহটি নিরাপত্তাজনিত কারণে রাজস্থানের কারাউলিতে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে এই মন্দিরে মূল বিগ্রহের একটি প্রতিমূর্তি পূজিত হয়।
মীরা বাই মন্দির - নিধিবনের কাছে শাহজি মন্দিরের দক্ষিণ দিকে মীরা বাই মন্দিরটি অবস্থিত। এই মন্দিরটি মীরা বাইয়ের মন্দির। কোনো কোনো জীবনীগ্রন্থে বলা হয়েছে, ১৫৪৭ সালে দ্বারকায় মীরা বাই সশরীরে দ্বারকায় কৃষ্ণ বিগ্রহে বিলীন হয়ে যান। তবে গবেষকরা এই কিংবদন্তির ঐতিহাসিকতা স্বীকার করেন না। তবে একথা সত্য যে, মীরা বাই কৃষ্ণ-উপাসনা নিয়েই থাকতেন এবং তাঁর রচিত ভজনগুলি তাঁকে ভক্তি আন্দোলন যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্ত-কবির স্বীকৃতি এনে দিয়েছিল।
বাঁকেবিহারী মন্দির - স্বামী হরিদাস নিধিবন থেকে বাঁকেবিহারীর বিগ্রহটি আবিষ্কার করার পর ১৮৬২ সালে বাঁকেবিহারী মন্দির নির্মিত হয়।
প্রেম মন্দির - বৃন্দাবনের উপকণ্ঠে ৫৪ একর জমির উপর প্রেম মন্দিরটি নির্মিত। এটি প্রতিষ্ঠা করেন কৃপালু মহারাজ। মূল মন্দিরটি শ্বেতপাথরে নির্মিত এবং সেখানে কৃষ্ণের বহু মূর্তি খোদিত রয়েছে।
রাধাবল্লভ মন্দির - হরিবংশ মহাপ্রভু রাধাবল্লভ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরের বেদীতে কৃষ্ণের বিগ্রহের পাশে রাধার একটি মুকুট রাখা থাকে।
জয়পুর মন্দির - জয়পুরের মহারাজ দ্বিতীয় সাওয়াই মাধো সিং ১৯১৭ সালে রাধামাধব মন্দির বা জয়পুর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
রাধারমণ মন্দির - গোপাল ভট্ট গোস্বামীর অনুরোধে রাধারমণ মন্দির নির্মিত হয়। এই মন্দিরে কৃষ্ণের একটি শালগ্রাম বিগ্রহ রয়েছে।
শাহজি মন্দির - ১৮৭৬ সালে লখনউয়ের শাহ কুন্দন লাল এই মন্দিরের নকশা করেন এবং মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরটি অনন্য স্থাপত্যশৈলী ও শ্বেতপাথরের সুন্দর ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত। মন্দিরে বারোটি সর্পিল স্তম্ভ রয়েছে। প্রত্যেকটি স্তম্ভের উচ্চতা ১৫ ফুট। এছাড়া মন্দিরে বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতি ও তৈলচিত্র সমন্বিত একটি হলঘরও আছে।
রঙ্গজি মন্দির - ১৮৫১ সালে নির্মিত রঙ্গজি মন্দির বিষ্ণুর অন্যতম রূপ রঙ্গনাথ বা রঙ্গজির প্রতি উৎসর্গিত। এই মন্দিরে বিষ্ণু অনন্তশায়ী ভঙ্গিমায় পূজিত হন। মন্দিরটি দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। এতে একটি ছয় তলা গোপুরম ও ৫০ ফুট উঁচু ধ্বজা স্তম্ভ রয়েছে। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে মন্দিরে ব্রহ্মোৎসব উপলক্ষ্যে মন্দিরের উদ্যানে রথযাত্রা আয়োজিত হয়।
গোবিন্দদেব মন্দির -.১৫৯০ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের দান করা লাল বেলেপাথর দিয়ে রাজা মানসিংহ সাত তলা উঁচু গোবিন্দদেব মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। আওরঙ্গজেব এই মন্দিরটি ধ্বংস করে দেন।
রাধাদামোদর মন্দির - ১৫৪২ সালে বৃন্দাবনের ষড়গোস্বামী কর্তৃক সেবাকুঞ্জে রাধাদামোদর মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।
বৃন্দাবন শক্তিপীঠ /কাত্যায়নী মন্দির ও ভূতেশ্বর মহাদেব মন্দির - রঙ্গনাথ মন্দিরের কাছে রাধাবাগে কাত্যায়নী মন্দির অবস্থিত। এটি একটি শক্তিপীঠ। কথিত আছে, এখানে দেবী সতীর আঙটি পড়েছিল।
চিন্তাহরণ হনুমান মন্দির - অটলবনের কাছে অবস্থিত চিন্তাহরণ হনুমান মন্দিরটি হল হনুমানের মন্দির।
অন্যান্য পবিত্র স্থান
বৃন্দাবনের অন্যান্য পবিত্র স্থানগুলি হল সেবাকুঞ্জ, কেশীঘাট, শ্রীজি মন্দির, যুগলকিশোর মন্দির, লালবাবু মন্দির, রাজঘাট, কুসুম সরোবর, ইমলিতল, কালীয়ঘাট, রমণরেতি, বরাহঘাট, চিরঘাট, স্বামী হরিদাসের সমাধি। স্বামী হরিদাসের সম্মানে তাঁর সমাধিতে প্রতি বছর একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই সম্মেলনে ভারতের বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞেরা গান পরিবেশন করেন। সেবাকুঞ্জ রক্ষণাবেক্ষণ করে ব্রজ ফাউন্ডেশন।
বারাণসী
বারাণসী হল ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারাণসী জেলার একটি শহর। শহরটি স্থানীয়ভাবে বেনারস নামে এবং বাঙালিদের কাছে কাশী নামে অধিক পরিচিত। শহরটি গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ শহরের থেকে এই শহরের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার ; হিন্দুধর্ম ও জৈনধর্মের সাতটি পবিত্রতম শহরের ("সপ্তপুরী") একটি হল বারাণসী। শুধু তাই নয়, বৌদ্ধধর্মের বিকাশেও বারাণসী শহরের বিশেষ ভূমিকা ছিল। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, বারাণসীতে মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করেন। বারাণসী ভারত তথা বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির অন্যতম।
খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে মহম্মদ ঘোরি বারাণসীর অনেক মন্দির লুণ্ঠন ও ধ্বংস করেছিলেন। এই শহরের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি অষ্টাদশ শতাব্দীতে বর্তমান রূপ পেয়েছে।
কাশীর মহারাজা (ইনি "কাশী নরেশ" নামে পরিচিত) হলেন বারাণসীর প্রধান সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক। বারাণসীর সব ধর্মীয় উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তিনি। গঙ্গানদীর সঙ্গে বারাণসীর সংস্কৃতির বিশেষ যোগ আছে। বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে বারাণসী উত্তর ভারতের এক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বারাণসীর ইতিহাস বিশ্বের অনেক প্রধান ধর্মসম্প্রদায়ের ইতিহাসের চেয়েও প্রাচীন। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের বারাণসী ঘরানার উৎপত্তি এই শহরে। এই শহরে অনেক বিশিষ্ট ভারতীয় দার্শনিক, কবি, লেখক ও সংগীতজ্ঞ বাস করেছেন। বারাণসীর কাছে সারনাথের গৌতম বুদ্ধ প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেছিলেন।
বারাণসী ভারতের আধ্যাত্মিক রাজধানী। তুলসীদাসের রামচরিতমানস সহ একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থ এই শহরে রচিত হয়েছিল। বারাণসীর সঙ্কটমোচন হনুমান মন্দিরটিকে তার স্মরণে "তুলসীমানস মন্দির" বলা হয়। বারাণসীর কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার প্রাচীনতম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি। বারাণসীকে "মন্দিরনগরী", "ভারতের পবিত্র নগরী", "ভারতের ধর্মীয় রাজধানী", "আলোকনগরী", "শিক্ষানগরী" ও "বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত নগরী"-ও বলা হয়।
ইতিহাস
কিংবদন্তি অনুসারে, শিব এই শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত-এর নায়ক পাণ্ডব ভ্রাতারা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ভ্রাতৃহত্যা ও ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপ থেকে উদ্ধার পেতে শিবের খোঁজ করতে করতে এই শহরে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, যে সাতটি শহর মোক্ষ প্রদান করতে পারে, সেগুলির একটি হল বারাণসী:
বারাণসী একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে ওঠে। এই শহর মসলিন ও রেশমের বস্ত্র, সুগন্ধি দ্রব্য, হাতির দাঁতের কাজ ও ভাস্কর্য শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। গৌতম বুদ্ধের (জন্ম ৫৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সময় বারাণসী ছিল কাশী রাজ্যের রাজধানী। ৫২৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বারাণসীর কাছে সারনাথে বুদ্ধ প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তন করেন। এই ঘটনা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস "ধর্মচক্রপ্রবর্তন" নামে পরিচিত। ৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে চীনা পর্যটক ফা হিয়েন এই শহরে এসেছিলেন। তার রচনা থেকে এই শহরের ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকাণ্ডের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন গঙ্গার পশ্চিম তীরে ৫ কিলোমিটার (৩.১ মা) দীর্ঘ অঞ্চলে বারাণসী অবস্থিত ছিল। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে হিউয়েন সাং বারাণসীতে এসেছিলেন। তিনি এই শহরকে "পোলোনিসি" নামে উল্লেখ করেন এবং লেখেন এই শহরে ৩০টি মন্দির ছিল ও প্রায় ৩০ জন সন্ন্যাসী ছিলেন। অষ্টম শতাব্দীতে বারাণসীর ধর্মীয় গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এই সময় আদি শঙ্কর শিব উপাসকদের বারাণসীর প্রধান সম্প্রদায় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।বারাণসীতে যে সবচেয়ে পুরনো পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে অনুমিত হয় গাঙ্গেয় উপত্যকায় এই শহরে জনবসতি ও বৈদিক ধর্ম ও দর্শন শিক্ষাকেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব একাদশ কিংবা দ্বাদশ শতাব্দীতে। এই জন্য বারাণসীকে বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির একটি মনে করা হয়। উক্ত পুরাতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ থেকে জানা যায় যে, বৈদিক ধর্মাবলম্বী আর্যরা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। যদিও, প্রায় সমসাময়িককালে রচিত অথর্ববেদ থেকে জানা যায়, এই অঞ্চলে আগে স্থানীয় উপজাতির মানুষেরা বসবাস করত। তবে সেই জাতির বসতির প্রমাণ কোনো পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে বিদ্যমান ২৩তম জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্ব (ইনিই প্রথম ইতিহাস-স্বীকৃত তীর্থঙ্কর) বারাণসীর অধিবাসী ছিলেন।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য :-
তক্ষশীলা থেকে পাটলীপুত্র পর্যন্ত প্রসারিত একটি রাস্তা বারাণসীকে দুই শহরের সঙ্গে যুক্ত করেছিল। ১১৯৪ সালে তুর্কি মুসলমান শাসক কুতুবুদ্দিন আইবক বারাণসী জয় করেন। তিনি এই শহরের প্রায় এক হাজার মন্দির ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন। মুসলমান রাজত্বে এই শহরের সমৃদ্ধি নষ্ট হয়েছিল। অবশ্য আফগান অনুপ্রবেশের পর ত্রয়োদশ শতাব্দীতে কিছু নতুন মন্দির নির্মিত হয়েছিল। ১৩৭৬ সালে ফিরোজ শাহ বারাণসী অঞ্চলের কিছু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন। ১৪৯৬ সালে আফগান শাসন সিকন্দর লোদি এই অঞ্চলে হিন্দুদের প্রতি দমনপীড়ন নীতি বজায় রেখে অবশিষ্ট মন্দিরগুলির অধিকাংশই ধ্বংস করে দেন। মুসলমান শাসনের অবদমনের পরেও মধ্যযুগে বারাণসী শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে তার খ্যাতি হারায়নি। এর ফলে ধর্ম ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে এই শহরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ভক্তিবাদী আন্দোলনের বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কবীর। তিনি ১৩৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কবীরকে "পঞ্চদশ শতাব্দীর ভারতের শ্রেষ্ঠ ভক্তিবাদী সন্ত কবি ও অতিন্দ্রীয়বাদী" বলা হয়। বারাণসীর ভক্তি আন্দোলনের অপর একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন রবিদাস। তিনি ছিলেন পঞ্চদশ শতাব্দীরই এক ভক্তিবাদী ধর্মসংস্কারক, অতিন্দ্রীয়বাদী, কবি, পর্যটক ও ধর্মগুরু। তিনি বারাণসীতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই শহরেরই এক চামড়ার কারখানায় তিনি কাজ করতেন। ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার বহু বিশিষ্ট পণ্ডিত ও ধর্মপ্রচারক বারাণসীতে এসেছিলেন। ১৫০৭ সালের শিবরাত্রি উৎসবের সময় গুরু নানক এই শহরে আসেন। তার এই বারাণসী সফর শিখধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘম সম্রাট আকবরের সময়কাল ছিল বারাণসীর সাংস্কৃতিক নবজাগরণের যুগ। আকবর শহরটি সাজিয়ে তোলেন। তিনি এই শহরে শিব ও বিষ্ণুর দুটি বিশাল মন্দির নির্মাণ করিয়ে দেন। পুণের রাজা অন্নপূর্ণা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই যুগেই , ১৮৮৩।২০০ মিটার (৬৬০ ফু) দীর্ঘ আকবরি সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ষোড়শ শতাব্দী থেকে পর্যটকেরা আবার এই শহরে আসা শুরু করেন। ১৬৬৫ সালে ফরাসি পর্যটক জ্যঁ ব্যপ্তিস্ত তাভার্নিয়ার এই শহরের গঙ্গাতীরবর্তী বিন্দু মহাদেব মন্দিরের স্থাপত্য সৌন্দর্যের কথা বর্ণনা করেন। শের শাহের আমলে কলকাতা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত রাস্তা নির্মিত হলে এই অঞ্চলের পরিবহন পরিকাঠামোরও উন্নতি ঘটেছিল। উক্ত রাস্তাটিই ব্রিটিশ যুগে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নামে পরিচিত হয়। ১৬৫৬ সালে আওরঙ্গজেব আবার এই শহরের বেশ কিছু মন্দির ধ্বংস করার এবং মসজিদ স্থাপনের আদেশ দেন। এর ফলে কিছু সময়ের জন্য আবার বারাণসীর সমৃদ্ধি নষ্ট হয়। যদিও আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলের শাসনভার হিন্দু ও হিন্দুদের প্রতি বন্ধুমনোভাবাপন্ন সামন্ত রাজাদের হাতে চলে যায়। আধুনিক বারাণসীর বেশিরভাগটাই রাজপুত ও মারাঠা রাজাদের হাতে তৈরি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলির বেশিরভাগই বর্তমান রূপ পায়। ব্রিটিশ যুগে (১৭৭৫-১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ) কাশীর রাজাই এখানকার মুখ্য শাসক হয়ে ওঠেন। ১৭৩৭ সালে মুঘল সম্রাট কাশী রাজ্যকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাশীর রাজবংশ বারাণসী শাসন করেছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহম্মদ শাহ প্রচলিত পঞ্জিকার ভুলত্রুটি ধরার জন্য গঙ্গার তীরে একটি মানমন্দির তৈরির আদেশ দেন। এই মানমন্দিরটি বারাণসীর মানমন্দির ঘাটের পাশে অবস্থিত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে আবার বেশ কিছু পর্যটক এই শহরে আসেন।
মথুরা
মথুরা উত্তর ভারতের একটি রাজ্য উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত শহর। এই শহর আগ্রা থেকে কমবেশি ৫০ কিমি উত্তরে এবং দিল্লী থেকে ১৪৫ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। উত্তরপ্রদেশের মথুরা জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র এই মথুরা। প্রাচীন কালে এই শহর ছিল অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মথুরার জনসংখ্যা ছিল ৪৪১,৮৯৪।
ইতিহাস
হিন্দুধর্মের মতানুসারে মথুরা কে কৃষ্ণের জন্মস্থান হিসেবে মনে করা হয় যা কিনা শ্রী কৃষ্ণ জন্মভুমির কেন্দ্রে অবস্থিত। এই শহর হিন্দুরা যে সাতটি শহর কে পবিত্র মনে করে তার অন্যতম।বেদে মথুরার কথা না থাকলেও রামায়ণ-মহাভারত ও পৌরাণিক যুগে যথেষট প্রসিদ্ধি পেয়েছে।মউজপুর, মধুপুরী, মধুবন, মধুরা, মদুরা-যুগে যুগে নাম বদলে হয়েছে মথুরা। বৌদ্ধদের কাছেও মথুরা একটি বিশিষ্ট জনপদ। এখনেই রাজকুমার উপগুপ্ত বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে সম্রাট অশোককে মথুরাতেই বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা দেন।
ভারত সরকারের ঐতিহ্য শহর উন্নয়ন এবং অগমেন্টেশন যোজনার অন্তর্গত করা হয়েছে এই মথুরা কে।
মন্দির
১. দ্বারকাধীশ মন্দিরঃ শহরের মাঝে প্রধান মন্দিরটি শেঠ গোকুল দাস ১৮১৪ সালে নির্মাণ করেন। এই মন্দিরে প্রতি বছর জাঁকজমক সহকারে হোলি ও জন্মাষ্টমী উৎসব পালিত হয়। কাছেই দেখবেন কিংবদন্তি ঘেরা বিশ্রামঘাট। কংসকে বধ করার পর শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম এই ঘাটে বিশ্রাম নিয়ে ছিলেন। এখানে নৌকা ভাড়া করে যমুনার ঘাটগুলো ঘুরে দেখা যাই। অনুপম স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ঘাটগুলোর মধ্যে স্বামীঘাট অ অসিকুণ্ড ঘাট উল্লেখযোগ্য।
২. কেশব দেও মন্দির, মথুরা/শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দিরঃ ভক্তদের বিশ্বাস কাটরা কেশবদেবের এই মন্দিরটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানে নির্মিত। বীর সিংহের হাতে গড়া আদি মন্দির অবশ্য ঔরাঙ্গজেব ধ্বংস করে নির্মাণ করেন ঈদগা। সাম্প্রতিক কালে এই মন্দির ও মসজিদকে ঘিরে বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। কাছেই দেখুন ভাগবৎভবন।
৩. কনস্কিলা বা কংসের দুর্গঃ যমুনার উত্তরতীরে অত্যাচারী রাজা কংস এই দুর্গ নির্মণ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি। দুর্গের অধিকাংশই আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও অম্বরের রাজা মানসিংহ কংসের কারাগারটি সংস্কার করান।
মদনমোহন মন্দির
৪. গীতা মন্দিরঃ সাম্প্রতিক কালে নির্মিত এই মন্দিরটি মথুরার সবচেয়ে আকর্ষনীয় মন্দির। মন্দিরের বিভিন্ন থামে খোদিত রয়েছে গীতার ৭০০ শ্লোক। আর ভালো লাগে দেওয়ালগাত্রের পৌরাণিক চিত্রাবলি।
৫. জামা মসজিদঃ আবু-উন-নবি খান ১৬৬১ সালে চারটি বড় মাপের মিনার সহ জামা মসজিদ নির্মণ করেন। কারও কারও মতে এটিই শ্রীকৃষ্ণ প্রকৃত জন্মভূমি।
৬. গভর্নমেন্ট মিউজিয়ামঃ (সোমবার ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে ১০-৩০মিঃ থেকে ১৬-৩০ মিঃ প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা) এখানকার মৌর্জ, শুঙ্গ, কুষাণ ও গুপ্তযুগের অসংখ্য পুরাকীর্তির সংগ্রহ এককথায় বিস্ময়কর। এই অমুল্য পুরাকীর্তিগুলির বয়স ৮০০ খ্রিঃ পুর্ব থেকে ১২ খ্রিস্টব্দের মধ্যে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন কুষাণ যুগের শিল্পকর্মগুলি।
এছাড়াও মথু্রায় দেখবেন- বলভদ্র কুণ্ড সরস্বতী কুণ্ড পোট্রা কুণ্ড শিবতাল বৃন্দাবনের পথে পাগলা বাবা মন্দির ভুতেশ্বর মন্দির গোকর্নেশ্বর মন্দির রঙ্গেশ্বর মন্দির পিপ্লেশ্বর মন্দির যমুনা বাগ গুরুগোবিন্দ সিং – এর স্মৃতি বিজড়িত গুরুদোয়ারা জৈন সিদ্ধক্ষেত্র চৌরাশিয়া ( শেষ জৈন কৈবল্যজ্ঞানী শ্রী জম্মুস্বামীর তপস্যাস্থল)।
জনপরিসংখ্যান
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, মথুরা জেলার জনসংখ্যা ২,৫৪১,৮৯৪। এই জনসংখ্যা কুয়েত রাষ্ট্র বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা রাজ্যের সমান। ভারতের ৬৪০টি রাজ্যের মধ্যে জনসংখ্যার হিসেবে এই রাজ্যের স্থান ১৬৭তম। জেলার জনঘনত্ব ৭৬১ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (১,৯৭০ জন/বর্গমাইল)। ২০০১-২০১১ দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২২.৫৩%। মথুরার লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৮৫৮ জন মহিলা। সাক্ষরতার হার ৭২.৬৫%.
ভাষা
মথুরা ও আশেপাশের অঞ্চলের মানুষ ব্রজ ভাষায় কথা বলেন।
খাবার
মথুরায় রাবড়ি, পেঁড়া, খাজা ও পেঠা ভালো পাওয়া যায়।