H.S. Sociology notes .

১. ভারতে দৃষ্টবাদের সূচনা ও তার বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর। 


ভারতে দৃষ্টবাদের সূচনা ও বিকাশ : - 
সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁত '' দৃষ্টবাদ '' প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন। তিনি বিবর্তনের ধারায় সমাজের বিকাশকে তিনভাগে ভাগ করেন এবং সর্বশেষ স্তরকে দৃষ্টবাদী স্তর হিসেবে চিহ্নিত করেন। দৃষ্টবাদের মূলকথা হল - বিজ্ঞান শুধু বাস্তব জগতের দৃষ্ট বিষয়ের বর্ণনা ও বিশ্লেষণ করবে। মানুষ তার দৃষ্টের ভিত্তিতে এবং অভিজ্ঞতার আলোকে সবকিছু অনুসন্ধান করবে। তাই অনেকে দৃষ্টবাদকে অভিজ্ঞতাবাদ হিসাবে আখ্যায়িত করেন। 

সমাজতত্ত্বের আলোচনা ক্ষেত্রে দৃষ্টবাদ : -
অগাস্ট কোঁত দৃষ্টবাদ শব্দটিকে বিজ্ঞানের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁর মতে , দৃষ্টবাদের পর্যায়ে মানুষ ঈশ্বর ও অন্যান্য ভ্রান্তি থেকে মুক্তি পায়। কেননা , প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বা , দৃষ্ট প্রকৃতিকে অতিক্রম করে যাওয়ার কোনো ক্ষমতা মানুষের নেই। দৃষ্ট প্রকৃতিই হল চরমসত্তা। তাই সমাজতত্ত্বের আলোচনাতে দৃষ্টবাদের প্রয়োগ সমাজতত্ত্বকে বিজ্ঞানসম্মত করে তোলে। 

ভারতে দৃষ্টবাদের সূত্রপাত ও দৃষ্টবাদীগণ :- 
ভারতে যিনি প্রথম দৃষ্টবাদ প্রবর্তন করেন , তিনি হলেন হুগলি কলেজের অধ্যক্ষ স্যামুয়েল লব। এরপর যাঁরা দৃষ্টবাদ সম্পন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমাজ বিশ্লেষণ করেছেন তাঁদের মধ্যে অগ্রণী হলেন - দ্বারকানাথ মিত্র , কৃষ্ণনাথ মুখার্জি , রাধাকমল ভট্টাচার্য , অমৃতলাল রায় , রমেশচন্দ্র মিত্র , রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় , যোগেশচন্দ্র ঘোষ , ব্রজেন্দ্রনাথ শীল - প্রমুখ। 

আচার্য্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল এর ভূমিকা :- 
আচার্য্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল ( ১৮৬৪ - ১৯৩৮ ) কে বলা হয় একজন মানবতাবাদী দার্শনিক , ধর্মতত্ত্ববিদ এবং ব্রাহ্মসমাজের প্রধান চিন্তাবিদ। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ , যুক্তিবাদী , বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে বিশ্বাসী ও বহুবিদ্যাবিশারদ। তিনি অগাস্ট কোঁত - এর দৃষ্টবাদের অন্যতম অনুসরণকারী। তাঁর মত ছিল - পাশ্চাত্য সভ্যতাকে বিশ্ব সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র হিসাবে বিবেচনা করা মৌলিকভাবে ভুল। অ - পাশ্চাত্য মানবসভ্যতাসমূহ পাশ্চাত্য সভ্যতাকে ঘিরে আবর্তিত হবে - এ আশা সুদূর পরাহত এবং অসম্ভব। 

সমাজকেন্দ্রিক তথ্যনিষ্ঠ আলোচনা :- 
যাইহোক , এই সময় পাশ্চাত্যের সমাজচিন্তা এবং ভারতীয় সমাজভাবনা - এ দুটির মধ্যে উভয়দেশের চিন্তাবিদদের তুলনামূলক আলোচনা চলতে থাকে। এছাড়াও বঙ্গীয় সমাজবিজ্ঞান সভায় একাধিক বিদগ্ধজন তাঁদের সমাজ সম্পর্কিত নিবন্ধ বিভিন্ন সময়ে পাঠ করেছিলেন। শুধু তাই নয় , বিদগ্ধ পন্ডিতগণ এখানে প্রায়শই সমবেতভাবে সমাজকেন্দ্রিক তথ্যনিষ্ঠ তর্ক - বিতর্কের আসর বসাতেন। 

উপসংহার : - 
এইভাবে ভারতে সমাজতাত্ত্বিক চর্চার অসংগঠিত বিচরণক্ষেত্র তৈরী হতে থাকে এবং ভারতে সমাজতাত্ত্বিক আলোচনার প্রেক্ষাপট তৈরী হয়। এই সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা সঠিক অর্থে সমাজতাত্ত্বিক না হলেও তা ছিল সমাজ সম্বন্ধীয়। এরই বিবর্তনের ধারায় ভারতের চিন্তাজগতে সূচনা হয় এক নতুন সামাজিক বিজ্ঞানের , যা পরবর্তীতে সমাজতত্ত্বকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান করে।      






 

Share
Tweet
Pin
Share