HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION OF A STORY

by - September 10, 2019

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION OF A STORY : MONTUR MASTER


বাংলা প্রকল্প : নির্বাচিত গল্প থেকে নাট্যরূপ নির্মাণ :-

মূলগল্প - মন্টুর মাস্টার
লেখক - শিবরাম চক্রবর্তী
মন্টুর মাস্টার


চরিত্রবর্গ :-
মিহির - বছর তিরিশের এক যুবক। 
মন্টু - দশ বারো বছর বয়সের একটি ছেলে। 

মন্টুর বাবা -- বছর চল্লিশ - পঁয়তাল্লিশের এক ব্যাক্তি।    

দৃশ্য ১
মঞ্চ পরিকল্পনা
প্রথম দৃশ্যে মঞ্চে সাধারণ একটি পড়ার টেবিল ; তাতে কিছু বই পত্র , কিছু কাগজপত্র। টেবিলের পাশে একটি সাধারণ চেয়ার। মঞ্চে সাধারণ আলো। পর্দা উঠলে দেখা গেল মিহিরকে। মিহির চেয়ারে বসে আছে।
মিহির -- জীবনে আর কিছু হলো না। তিরিশ বছর হয়ে গেল। কোনো কাজ নেই , চাকরি নেই। ধূর........... বিরক্তি ধরে গেল। ......... এখন প্রতিদিন বসে থাকা খবরের কাগজের অপেক্ষায় ............... যদি কোনো নতুন কাজের বিজ্ঞাপন দেখা যায়........... আজ আবার খবরের কাগজের কী হলো ! এখনো আসছে না !
[ এই সময় নেপথ্যে কলিং বেলের শব্দ। পরপর দুইবার। ]
ওই এলো বোধহয়।
[ মিহির উঠে পড়লো চেয়ার থেকে। উঠে মঞ্চের বামদিকে গেল। ]
কী হলো আজ এত দেরী যে !
নেপথ্য কণ্ঠ -- ও সাইকেল খারাপ হয়ে গেছিলো দাদাবাবু।
মিহির -- ও আচ্ছা আচ্ছা।
[ এইবলে মিহির খবরের কাগজটি নিলো ; তারপর আবার চেয়ারের পাশে আসলো আর খবরের কাগজের পাতা ওল্টাতে লাগলো। ]
একটা মোটামুটি কাজ পেলে বেঁচে যাই। .................. বীরভূমে রাজনৈতিক সংঘর্ষ....... দিনদুপুরে ব্যাঙ্ক ডাকাতি ................ সিনেমায় অভিনয়ের নামে প্রতারণা .............. ধূর ........... ওলিম্পিকে .... আরে এটা কী ! গৃহশিক্ষক চাই , আহার ও বাসস্থান দেওয়া হইবে , তাছাড়া বেতন মাসিক পাঁচ হাজার টাকা .............
[মিহির খবরের কাগজটা ভাঁজ করতে শুরু করলো , দর্শকদের দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে  -]
এইরকম , ঠিক এইরকমটাই খুঁজছিলাম আমি ; থাকা - খাওয়া এমনিই হবে , তার উপর মাসে পাঁচ হাজার টাকা ! বাড়িতেও পাঠাতে পারবো কিছু আর এম এ টাও পড়া হয়ে যাবে। সিনেমা , পকেট খরচ কোনোকিছুরই অভাব হবে না। তবে [ একটু চিন্তিত ] এই বিজ্ঞাপনটা আগেও যেন কাগজে দেখেছি , খুব সম্ভব ছেলেটি একটি গবাকান্ত - তাই বেতন ভারী দেখে কেও এগোলেও ছেলে আবার তার চেয়ে ভারী দেখে পিছিয়ে পরে। [ নতুন উদ্যমে ] কিন্তু আমি পিছোবো না। প্রাণপণে পড়াবো ছেলেটাকে। পড়াতে গিয়ে যদি পাগল হয়ে  যেতে হয় তবুও পড়াবো। পাঁচ হাজার টাকা কম কথা নয়। তার জন্য গাধা পিটিয়ে মানুষ করা - আর বেশি কথা কি ! মানুষ পিটিয়েও গাধা বানানো যায়। ভদ্রলোক কি অতগুলো টাকা মাগনা দিচ্ছেন নাকি ? ............ আজই ...... আজই আমি দেখা করতে যাবো।



দৃশ্য ২
মঞ্চ পরিকল্পনা -
মন্টুর বাড়ি। বসার ঘর। একটি টেবিল , তাতে একটি ফুলদানি। টেবিলের পাশে তিন চারটি চেয়ার। মোটামুটিরূপে ঘরটিতে আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রকাশ থাকবে। ঘরে উজ্জ্বল আলো। চেয়ারে উপবিষ্ট মন্টু ও মন্টুর বাবা।
মন্টুর বাবা -- কি'রে মন্টু , একটা মাস্টারতো টানা একমাস তোকে পড়াতে পারলো না। আবার কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছি ; দেখা যাক নতুন কোনো মাস্টারের খোঁজ পাওয়া যায় কি'না।
[ একথা বলতে বলতে নেপথ্যে কলিং বেলের শব্দ পাওয়া গেল। ]
মন্টু দেখ , কে আবার এলো ; নতুন কোনো মাস্টার এলো না'কি !
[ মন্টু উঠে পড়লো। মন্টুর বাবা একটু গুছিয়ে বসলেন। মন্টু ও মিহির মঞ্চের মাঝে উপবিষ্ট হলো। মিহিরের হাত নমস্কারের ভঙ্গিতে। ]
মিহির -- ( আমতা আমতা করে ) নমস্কার , আমি ওই কাগজে গৃহশিক্ষকের বিজ্ঞাপন দেখে এসেছিলাম।
মন্টুর বাবা -- হ্যাঁ , হ্যাঁ আসুন আসুন বসুন।
[ মিহির একটি ফাঁকা চেয়ারে বসলো। মন্টুর বাবা মিহিরকে আপাদ মস্তক পরীক্ষা করতে লাগলো ]
মিহির -- এই যে আমার সার্টিফিকেট গুলো।
[ মিহির সার্টিফিকেটগুলো মন্টুর বাবার হাতে তুলে দেয়। মন্টুর বাবা একটি কভার ফাইল মিহিরের হাত থেকে নেয় এবং না দেখেই টেবিলে রেখে দেয়। কিছুক্ষন চুপচাপ থাকার পর ]
মন্টুর বাবা -- তোমার জামাটা একবার খোল তো বাপু !
মিহির -- জামা ! জামা কেন খুলতে হবে ?
মন্টুর বাবা -- আপত্তি আছে তোমার ?
মিহির -- না না ( জামা খুলতে খুলতে ) পাঁচ হাজার টাকার চাকরির জন্য জামা খোলা কেন জামাই হতেও আমি রাজি। ( বলতে বলতে সম্পূর্ণ জামা খুলে ফেললো )
মন্টুর বাবা -- তুমি এক্সারসাইজ করো ?
মিহির ( অবাক হয়ে ) -- একটু আধটু।
মন্টুর বাবা -- বেশ , বেশ।
মিহির -- ( ইতস্ততঃ করে ) -- অভয় দিলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
মন্টুর বাবা -- নিশ্চই।
মিহির -- গৃহশিক্ষকের সাথে শরীর চর্চার সম্পর্কটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
মন্টুর বাবা - ( হাসতে হাসতে ) - ও কিছু নয় , এমনিই জিজ্ঞেস করলাম। আর একটা শেষ প্রশ্ন করবো তোমায়।
মিহির - ( টেবিলে রাখা কভার ফাইল খুলে একটি সার্টিফিকেট মন্টুর বাবাকে দিতে দিতে ) -- হ্যাঁ , হ্যাঁ নিশ্চই।
[ মন্টুর বাবা সার্টিফিকেট টি নিয়ে কোনো উৎসাহ না দেখিয়ে , একবারও না দেখে সেটাকে আবার টেবিলে রেখে দেয়। ]
মন্টুর বাবা -- তোমার শরীরটা নেহাত মন্দ নয়। ওজোন কত তোমার ?
মিহির ( প্রচন্ড আশ্চর্য হয়ে ) -- ওজোন ! ......... তা হবে দু মণের কাছাকাছি।
মন্টুর বাবা ( উৎসাহিত হয়ে ) -- বেশ , বেশ ; কিছুদিন টিকতে পারবে বলেই মনে হয়। 
মন্টু ( উৎসাহিত হয়ে ) -- হ্যাঁ বাবা , এ মাস্টারমশাইয়ের গায়ে অনেক রক্ত আছে।
মন্টুর বাবা - কিছুদিন টেকা আশার কথা ; কিন্তু বেশ কিছুদিন টেকাটাই হলো আশঙ্কার। যাক , সবই শ্রী ভগবানের হাত।
মন্টু -- ভগবানের হাত নয় বাবা , শ্রী ছার্...............
মন্টুর বাবা -- চুপ ! কথার উপর কথা ক'স কেন ? কিছু  বুদ্ধি - শুদ্ধি হলো না তোর। (মিহিরের উদ্দেশ্যে ) হ্যাঁ , দেখো বাপু , পড়াশোনার সাথে সাথে একে শিষ্টতাও শেখাতে হবে। পিতামাতা , গুরুজনদের কথার উপর কথা বলা , অতিরিক্ত হাসা - এইসব মহৎ দোষ সারাতে হবে এর।
মিহির ( ইতস্ততঃ করে ) -- তাহলে কবে থেকে আমি ............
মন্টুর বাবা -- না না কবে থেকে না ; কাল থেকে ; কাল থেকেই শুরু করো।
মিহির -- বেশ তাহলে।
মন্টুর বাবা -- হ্যাঁ , আরেকটা কথা ; ওই পাঁচ হাজার টাকাই বেতন নির্ধারিত হলো। কিন্তু একটা শর্ত আছে। পুরো একমাস না পড়ালে , এমনকি একদিন কম হলেও একটা টাকাও পাবে না তুমি। পাঁচ দিন , দশ দিন পড়িয়ে অনেক প্রাইভেট টিউটর ছেড়ে চলে গেছে ; সে   রকম হলে আমি বেতন দিতে পারি না। সেকথা আমি আগেই বলে রাখছি।
মন্টু - একজন তো ঊনত্রিশ দিন পর্যন্ত ছিলেন। আরেকটা দিন যদি থেকে যেতে পারতেন ! কিন্তু কিছুতেই পারলেন না।
মন্টুর বাবা - তুই থাম। বারবার বলেছিনা কথার উপর কথা না বলতে।
( মিহিরের উদ্দেশ্যে ) তা তোমার জিনিসপত্র সব নিয়ে এসোগে। আজ সন্ধ্যে থেকেই ওকে পড়াবে ; ( মন্টুর উদ্দেশ্যে ) যা মন্টু মাস্টার মশাইয়ের ঘরটা দেখিয়ে দে।



দৃশ্য ৩
মঞ্চ পরিকল্পনা -
একটি ছোট বিছানা। পাশে একটি টেবিল ও তার পাশে একটি চেয়ার। মিহির বিছানায় বসে আছে।
মিহির - পাঁচ হাজার টাকা , পাঁচ হাজার টাকা , পয়লা তারিখে পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া কম কথা নয়। চিরকাল মাস গেলে টাকা দিয়েই এসেছি ; কলেজের টাকা , মেসের টাকা , খবরের কাগজ ওয়ালার টাকা , আরো কত টাকা .............. এই প্রথম আমি মাস গেলে নিজে টাকা পাবো। না , এরা যথার্থই ভদ্রলোক , যত্ন নিয়ে পড়াতে হবে। কাজটা ফস্কে গেলে হবে না।
[ এই সময় নেপথ্য থেকে - ]
মন্টু (নেপথ্য কণ্ঠ ) -- আসবো স্যার ?
মিহির -- কে মন্টু , এসো , এসো।
[ মন্টু ঘরে প্রবেশ করলো। হাতে দু - একটা বই খাতা। তারপর চেয়ারটিতে বসলো ]
মিহির -- আহা চেয়ারে কেন ! এই , এইখানে এসো বিছানাতে।
মন্টু ( চমকে উঠে ) -- না না স্যার , আমি ওই বিছানায় বসবো না।
মিহির ( অবাক হয়ে ) -- কেন ? এত সুন্দর বিছানা !
মন্টু -- না স্যার , আপনি মাস্টার মশাই , গুরুজন।  আপনার বিছানায় কি পা ঠেকাতে আছে আমার ? বাবা বারণ করেছেন।
মিহির - ও আচ্ছা। ঠিক আছে তাহলে , চেযারে গিয়েই বোসো তাহলে। কিন্তু যা'ই বলো বিছানাটি তোমাদের খাসা ; কী নরম ; বেশ আরাম হবে ঘুমিয়ে। .............. যাক গে , তোমার বই বের করতো দেখি।
[ একটি বই হাতে নিয়ে দু - একটা পাতা উল্টে ]
আচ্ছা মন্টু Beans মানে জানো ?
মন্টু -- না স্যার।
মিহির -- Beans মানে হলো বরবটি , একধরণের সবজি , তরকারি হয় , আমরা খাই।Beans দিয়ে একটা সেনটেন্স করো দেখি। পারবে ?
মন্টু -- হ্যাঁ , I had been there ।
মিহির -- ( প্রচন্ড অবাক হয়ে )  আচ্ছা এবার বুঝতে পারলাম তোমার সব মাস্টাররা কেন পালিয়ে যায় ! গবাকান্ত বলে গবাকান্ত ! এর মানেটা কী ?
মন্টু -- এর মানেতো খুব সোজা স্যার ; এর মানে হলো সেখানে আমার বরবটি ছিল।
মিহির -- থাম ,  থাম , আর ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবেনা আমাকে। I had been there  মানে হলো - আমি সেখানে ছিলাম।
মন্টু -- তবে আপনি যে বললেন Beans  মানে বরবটি ? তাহলে কি আমি সেখানে বরবটি ছিলাম ?
মিহির -- (প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ) খুব সম্ভব তা'ই ছিলে তুমি। আরে বানানের তফাৎ দেখছো না ! Been হলো  Be ধাতুর form । আর Beans  মানে বরবটি। তা দিয়ে সেনটেন্স তৈরী করলে হয় - Peasants grow beans । অর্থাৎ চাষীরা বরবটি উৎপন্ন করে। বুঝলে এবার।
মন্টু ( অনেকটা ঘাড় নেড়ে ) হ্যাঁ স্যার।
মিহির -- অতটা ঘাড় নেড়ো না , ভেঙে যেতে পারে। আচ্ছা বুঝেছো যখন , তখন Beans  দিয়ে আরেকটা সেনটেন্স বানাওতো দেখি।
মন্টু -- পারবনা স্যার।
মিহির ( হতাশ হয়ে ) -- ওহ ! এই ধরো যেমন - Our cook cooks beans । আমাদের ঠাকুর বরবটি রাঁধে।
মন্টু ( উৎসাহিত হয়ে ) -- হ্যাঁ স্যার এবার Beans ব্যাপারটা আমার বোধগম্য হয়েছে স্যার।
মিহির -- তাহলে একটা সেনটেন্স করো।
মন্টু -- We are all human beans ।
মিহির ( প্রচন্ড অবাক হয়ে ) -- কী ? এর মানে কী ? আমরা সবাই মানুষ বরবটি !
মন্টু - কেন বাবাকে তো অনেকবার বলতে শুনেছি হিউম্যান বীনস !
মিহির ( মাথায় হাত দিয়ে প্রায় চুল ছেঁড়ার অবস্থা ) -- ওহ ! আর পারছিনা।  দিনের পর দিন ; মাসের পর মাস এভাবেই পড়াতে হবে তোমাকে ? .............. যাও , যাও , আজকের মত তোমার ছুটি।
মন্টু ( বইপত্র গোছাতে গোছাতে ) -- যাই তবে স্যার , খিদেটাও পেয়েছে খুব , আপনিও চলে আসুন খাবার ঘরে।
মিহির -- ঠিক আছে , তুমি যাও আমি আসছি।

BENGALI DRAMATISATION : MONTUR MASTER

দৃশ্য - ৪
মঞ্চ পরিকল্পনা - তৃতীয় দৃশ্যের অনুরূপ।
মিহির - নাহ ! ছেলেটা বাচাল হলেও , এদের অতিথি সেবা চমৎকার। এতো সুন্দর খাওয়া কতদিন যে খাওয়া হয়নি ! না না না ছেলেটার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে কাজটা ছাড়া যাবে না।
[ বিছানায় বসে ] আর বিছানাটা কী সুন্দর , কী নরম , খুব সুন্দর ঘুম আসবে তাতে।
যাক ঘুমিয়েই পড়ি তাহলে।
[ মিহির বিছানায় শুয়ে পড়লো। আলো প্রায় নিভে এলো। কিছক্ষন পর প্রচন্ড চিৎকার করে মিহির প্রচন্ড এক লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে পড়লো। লাফ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলো জ্বলে উঠলো। মিহির তার সারা গা প্রচন্ড ভাবে চুলকোতে লাগলো। বিছানা থেকে এক লাফ দিয়ে নিচে নেমে এল ; এখনো সে প্রচন্ডভাবে গা চুলকোচ্ছে। ]
মিহির -- কী এসব ? এসব কী ? আমার সারা গা এভাবে চুলকোচ্ছে কেন ? চাদরের তলে কী আছে ? দেখি তো একবার।
[ চাদরের একপ্রান্ত তুলে ] বাপরে বাপ্ , এ যে হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি কোটি ছারপোকা। কী করি এবার ! আচ্ছা এবার সব বুঝতে পারলাম। কিছুদিন পড়িয়ে , টাকা না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা ; দাঁড়া ব্যাটারা , তোরা তো আমাকে চিনিস না , দেখাচ্ছি মজা তোদের। আজকের রাতটা এই টেবিলটাতেই শুয়ে কাটিয়ে দিই ; কাল দেখছি তোদের।



দৃশ্য - ৫
মঞ্চ পরিকল্পনা - দ্বিতীয় দৃশ্যের অনুরূপ।
[ মন্টু আর মন্টুর বাবা দুটি চেয়ারে বসে আছে। মন্টুর বাবা বসে বসে সংবাদপত্র পড়ছে। সকালের পরিবেশ। ঘরে উজ্জ্বল আলো। ]
মিহির ( নেপথ্যে থেকে ) আসতে পারি ?
মন্টুর বাবা ( খবরের কাগজ থেকে চোখ তুলে ) কে মিহির , আরে এস এস।
[ মিহির ঘরে প্রবেশ করলো ]
বোসো , বোসো , কাল ঘুম হয়েছিলোতো ভালো ? না মানে নতুন জায়গা তো তাই জিজ্ঞেস করছি !
মিহির -- খাসা ! অমন বিছানায় ঘুম হবে না , বলেন কি আপনি ?
মন্টুর বাবা -- ( অপ্রস্তুত হয়ে ) -- বেশ , বেশ , ঘুম ভালো হলেই ভালো। জীবনের বিলাসই হলো গিয়ে ঘুম।
মন্টু -- আর ব্যাসন হলো বেগুনি , না বাবা ?
মন্টুর বাবা -- তা তোমার ঘুমটা বোধহয় বেশ জমাট ? ঘুমিয়ে আয়েস পাও খুব ?
মিহির -- আজ্ঞে সে কথা আর বলবেন না। একবার আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পাশের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু মোটেই টের পাইনি।
মন্টুর বাবা -- বল কি ?
মিহির -- আমাদের বাড়ি বর্ধমানে। শুনেছেন বোধহয় সেখানে বেজায় মশা , মশারি না খাটিয়ে শোবার জো নেই। একদিন খুব ক্লান্ত ছিলাম মশারি খাটালাম না। পরের দিন যখন ঘুম ভাঙলো , কী বলবো মশাই , দেখি পাশের বাড়িতে শুয়ে আছি।
মন্টুর বাবা -- কী রকম ?
মিহির -- মশায় টেনে নিয়ে গেছে মশাই। সেই জন্যইতো আমি মশারি খাটাই না ; রাত বিরেতে পাশের বাড়ি যাওয়ার ওইটাই সহজ উপায় কি'না !
মন্টুর বাবা ( বেজায় মুষড়ে পড়ে ) -- মশাতেই যখন কিছু করতে পারে নি , তখন কিসে আর কী করবে তোমার ! তুমি দেখছি টিকেই গেলে এখানে।
মিহির -- আমার কিন্তু একটা নিবেদন আছে।
মন্টুর বাবা -- বলে ফেলো।
মিহির -- বলছিলাম , আমার কয়েকটা টাকা আমায় দিতে হবে আগাম , ছারপোকার অর্ডার দেব।
মন্টুর বাবা -- ( অত্যন্ত অবাক হয়ে ) -- ছারপোকার অর্ডার ! বলছো কী ?
মিহির -- ও আপনি জানেন না দেখছি ! ছারপোকার মতো এমন মস্তিষ্কের উপকারী মেমরি বাড়ানোর মহৌষধি আর নেই। বিলেতে ছারপোকার চাষ হয় এইজন্য। ( মন্টুর দিকে তাকিয়ে ) গাধা ছেলে সব দেশেই আছে তো , তাদের জন্য। ( একটু থেমে ) আমার এক বন্ধু তো পুরোদস্তুর ছারপোকার ব্যবসাতেই লেগে গেল ; রেলের সিট্ থেকে , বিছানার তোশক থেকে - যত পারলো ছারপোকা সংগ্রহ করলো , তারপর তাদের দিয়ে শুরু করলো ছারপোকার চাষ , এখন তো কোটিপতি।
মন্টুর বাবা -- বলো কী !
মিহির -- তবে আপনাকে একটা সিক্রেট বলি। ছারপোকার ব্যবসা তো পরে ; আমি তো নিজের জন্যই ছারপোকা চাই। মন্টুর বাবা -- কিরকম ?
মিহির -- ফাইনাল পরীক্ষার আগে ; কিচ্ছুটি পড়া হয়নি ; তখনি আমি জানলাম ছারপোকার কথা। ব্যাস , সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাজার ছারপোকা জোগাড় করে শিলনোড়া দিয়ে বেটে জুস্ করে খেয়ে ফেললাম।
মন্টুর বাবা -- তারপর কী হলো ?
মিহির -- তার ফল তো হাতে নাতেই পেলাম ; ফাইনাল পরীক্ষায় একেবারে ফার্স্ট ক্লাস। 
মন্টুর বাবা -- সত্যিই ?
মিহির -- সত্যি বলে সত্যি ; একেবারে তিন সত্যি।
মন্টুর বাবা -- আগে বলোনি কেন ? অনেকখানি ব্রেন করে ফেলতাম। এমন কাজের জিনিস ছারপোকা ! ইশ আগে জানতে পারলে ............
মন্টু -- বাবা আমাদের তো ছারপোকা কিনতেও হবে না বলো ; বিছানাতেই তো .......
মন্টুর বাবা -- ( মন্টুকে থামিয়ে দিয়ে ) -- চুপ কর হতভাগা ; কতবার বলেছি বড়দের কথার মাঝে কথা বলবে না।
মিহির -- যাক গে বাদ দিন সে সব কথা ; আজ দুপুরে ভবানীপুরে একটা নেমন্তন্ন আছে। একেবারে সন্ধ্যেয় আসবো , তারপর পড়াতে বসবো।
মন্টুর বাবা -- ও আচ্ছা আচ্ছা , সাবধানে যেও আর ঠিক সময়ে এস কিন্তু।
মিহির -- নিশ্চই নিশ্চই , এখন উঠি তাহলে।
মন্টুর বাবা -- ঠিক আছে।
[ এই কথা বলে মিহির উঠে পড়লো ও মঞ্চের বাইরে চলে গেল। সে চলে যেতেই মন্টুর বাবা অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। আসন ছেড়ে উঠে পড়লো। ]
মন্টুর বাবা -- ওরে মন্টু , এযে হাতে একেবারে সোনার চাঁদ রে ; তোর তো ব্রেনের খুবই দরকার ; আর আজকাল আমারও একটু ব্রেনের দরকার পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।
মন্টু -- বাবা তোমারও !
মন্টুর বাবা -- চুপ কর ! জানিস না বয়স বাড়লে ব্রেনের একটু দরকার হয়ে পড়ে। কিছুই তো জানিস না দেখছি ; সেজন্যই তো বলছি তোর ব্রেনের দরকার।
মন্টু -- তাহলে আমরা এখন কী করবো বাবা ?
মন্টুর বাবা -- আরে তোর মাস্টারের বিছানাটাই তো ছারপোকার তীর্থভূমি। আমরা ওই বিছানার সমস্ত ছারপোকা ধরে ফেলবো ......
মন্টু ( তাকে থামিয়ে দিয়ে ) -- আর স্যার এর মতো শিলনোড়া দিয়ে বেটে জুস্ করে খেয়ে ফেলবো।
মন্টুর বাবা -- আরে না না ; এত সময় নেই ; শিলনোড়ার আর দরকার নেই। আমরা সরাসরি বিছানা থেকে ছারপোকা ধরবো আর টপাটপ মুখে পুড়ে ফেলবো।
মন্টু -- চলো চলো তাই চলো ; আমি কিন্তু বেশি খাবো ; আমার বেশি ব্রেনের দরকার।
মন্টুর বাবা -- আরে কথা ছাড় , তাড়াতাড়ি চল ; তোর স্যার আসার আগেই সব ছারপোকা খেয়ে ফেলতে হবে।
[ তারা মঞ্চ থেকে দ্রুত প্রস্থান করলো। ]

দৃশ্য - ৬ 
তৃতীয় দৃশ্যের অনুরূপ। সেখানে মন্টু আর মন্টুর বাবা ভয়ানক ব্যাস্ত। তারা ঘরে এসেই প্রথমেই বিছানার চাদরটি উঠিয়ে ফেললো। তারপর তারা অত্যন্ত ব্যাগ্রভাবে বিছানা থেকে কি যেন খুঁটে খুঁটে তুলে তুলে মুখে পুরতে লাগলো।
মন্টুর বাবা -- খেতে খারাপ নয় বল ; মনে হচ্ছে ব্রেন একটু একটু করে বাড়ছে।
মন্টু -- আমারও তাই মনে হচ্ছে বাবা , ব্রেন যেন একটু একটু করে বাড়ছে।
মন্টুর বাবা -- খা খা , তাড়াতাড়ি খা ; তোর মাস্টারের আসার সময় হয়ে এলো ; এই এলো বলে।
[ আবার তারা অত্যন্ত ব্যাগ্রভাবে বিছানা থেকে খুঁটে খুঁটে মুখে পুড়তে লাগলো। কিছুক্ষন পর হঠাৎ মঞ্চের ভেতর দ্রুত পায়ে প্রবেশ ; কিন্তু মন্টু ও মন্টুর বাবার কান্ড কারখানা দেখে মিহিরের গতি খুব ধীর হয়ে গেল। ধীরে ধীরে সে তার বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। অবাক তার দৃষ্টি। ওদিকে মন্টু আর মন্টুর বাবা অত্যন্ত ব্যাগ্র ভাবে এখনও ছারপোকা খেয়ে চলেছে। তারা এখনও মিহিরকে দেখতে পায়নি। হঠাৎ ]
মিহির ( অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে ) -- একি , একি করছেন  আপনারা......
[ হঠাৎ মিহিরের উপস্থিতি টের পেয়ে মন্টু ও মন্টুর বাবা ছারপোকা খাওয়ার কাজে বিরতি দিলো। এমন একটা ভাব দেখালো যেন কিছুই হয় নি। ]
মিহির -- কি করছেন আপনারা , আমার বিছানা পরিষ্কার করছিলেন নাকি ?
মন্টুর বাবা ( ভালোমানুষ সেজে ) -- না না ওই একটু। মন্টুই বিছানা পরিষ্কার করছিলো ; আমি একটু হাত লাগিয়েছিলাম মাত্র ; হাজার হোক মাস্টার মশাইয়ের বিছানা বলে কথা ; সেতো দেবতার বেদীর তুল্য। ( বলে হাত কচলাতে কচলাতে বোকার মতো হাসতে লাগলো ) ।
মিহির ( কৌতুক করে ) -- তা পুরো বিছানা পরিষ্কার হলো তো ?
মন্টুর বাবা -- হ্যাঁ হ্যাঁ , একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেছে। অনেক্ষন আগেই হয়ে গেছে। আমরা একটু চেক করে দেখে নিচ্ছিলাম আর'কি।
মিহির -- তা বেশ , তবে একটু সমস্যা হয়েছে।
মন্টুর বাবা -- সমস্যা , কী সমস্যা ?
মিহির -- আজ নেমন্তন্নে খুব জোর খাওয়া হয়েছে ; শরীর একেবারে ভারী হয়ে আছে। আজ আর পড়ানোর ইচ্ছে নেই। বুঝতে পারছি , মন্টুর পড়াশোনার খুব ক্ষতি হয়ে গেল।
মন্টুর বাবা -- না না কোনো ক্ষতি হয় নি ; আমরা তো ইতিমধ্যেই অনেক ব্রেন ......
থাক সে কথা ; কাল সকাল থেকে পড়াবে নাহলে। এখন আসি তাহলে ; তুমি বিশ্রাম নাও।
মিহির -- আচ্ছা ঠিক আছে।
[ মন্টু ও মন্টুর বাবার আনন্দের সাথে প্রস্থান। তাদের প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গে মিহির অত্যন্ত আনন্দের সাথে বিছানা ঠিক করতে লাগলো। ]
বাহ্ কী আনন্দ ; কাল সারারাত ঘুম হয়নি। আজ বিছানায় একটাও ছারপোকা নেই। সব খেয়ে ফেলেছে ওরা ; আজ নিশ্চিন্তের ঘুম। ধন্যবাদ মন্টু , ধন্যবাদ মন্টুর বাবা ছারপোকা খেয়ে ফেলার জন্য।
[ এই কথা বলা মাত্র মিহির বিছানার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। পর্দা নেমে এলো। ]


You May Also Like

0 comments