HS BENGALI PROJECT নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

by - September 16, 2019

নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION : NIRUDDES



মূল গল্প -- নিরুদ্দেশ।
লেখক -- প্রেমেন্দ্র মিত্র।
চরিত্রবর্গ -
সুদীপ - বছর ৩০ এর যুবক।
সোমেশ - বছর ৩০ এর যুবক , সুদীপের বন্ধু।
বাবু -- ১৬ - ১৭ বছরের একটি ছেলে।
বাবা -- বাবুর বাবা।
মা -- বাবুর মা।
নায়েবমশাই।
খাজাঞ্চিমশাই।
দুজন সরকার ( কর্মচারী )।
জমিদারমশাই। 
প্রতিটি চরিত্রকে চরিত্রের প্রয়োজন অনুসারে পরিধান করতে হবে।



দৃশ্য ১ :-
মঞ্চ পরিকল্পনা - ঘরে সাধারণ একটি টেবিল , দুটি সাধারণ চেয়ার। ঘরের পরিবেশ থমথমে। নেপথ্যে বৃষ্টি ও বাজ পড়ার শব্দ। গল্পের প্রধান দুজন চরিত্র সুদীপ ও সোমেশ চেয়ারে বসে খবরের কাগজের পাতা ওল্টাচ্ছে।
সুদীপ -- এই শীতের দিনে বৃষ্টি পড়ছে দেখছিস !
সোমেশ -- হ্যাঁ , মেঘাচ্ছন্ন পৃথিবী যেন মৃতের মতো অসার হয়ে আছে।
সুদীপ -- তুই না আসলে আজ দুপুরটা কিভাবে কাটাতাম , বুঝতে পারছি না। তবে ........ ( খবরের কাগজটা ভাঁজ করে সোমেশকে ধরিয়ে ) একটা আশ্চর্য ব্যাপার দেখেছিস ?
সোমেশ -- কী ?
সুদীপ -- আজকের কাগজে একসঙ্গে সাত - সাতটা নিরুদ্দেশ এর বিজ্ঞাপন।
[ সোমেশ কোনো কৌতূহল প্রকাশ করলো না , কেবল উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ]
আসলে কী জানিস , নিরুদ্দেশের এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে আমার কিন্তু হাসি পায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা কী হয় জান তো ? ছেলে হয়তো রাত করে থিয়েটার দেখে বাড়ি ফিরেছেন। এমন তিনি প্রায়ই ফিরে থাকেন আজকাল ..............
[ আলো আস্তে আস্তে কমতে থাকলো এবং একসময় বন্ধ হয়ে গেল। ]

নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION : NIRUDDES

দৃশ্য -২
মঞ্চ পরিকল্পনা -- এই দৃশ্যটিতে প্রথম দৃশ্যের তুলনায় খুব বেশি পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় ; কেননা প্রথম দৃশ্য শেষ হওয়ার পর অতি দ্রুত এই দৃশ্যটি শুরু করতে হবে। খুব বেশি হলে প্রথম দৃশ্যের মঞ্চ সজ্জার সাথে একটি কাপড়ে ভর্তি আলনা এনে রাখা যেতে পারে। ঘরে বাবা অতি চিন্তিতভাবে পায়চারি করছেন। মা আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদো কাঁদো ভাব।
বাবা -- কোথায় গেলেন বাবু ! তোমার গুণধর পুত্রটি ?
[ মা চুপ করে থাকলেন। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে বাবা গর্জে ওঠেন। ]
চুপ করে থেকো না ; কথার উত্তর দাও।
মা ( ফুঁপিয়ে ) -- অনেক পেড়াপিড়ি করছিলো বাবু। তাই আমি ক'টা টাকা বার করে দিয়েছিলাম।
বাবা -- টাকা ? তা সেই টাকা নিয়ে কোথায় গেছে তোমার গুণধর পুত্র ?
মা -- রাতের শো'তে থিয়েটার দেখতে গেছে।
বাবা -- ( প্রচন্ড রেগে গিয়ে ) -- তা এত রাতেও বাবুর আসার সময় হলো না ! আরবারে তো ফেল করে মাথা কিনেছেন। এবারও কী করে কৃতার্থ করবেন বুঝতেই পারছি। আর পয়সাগুলো আমার তো খোলামকুচি কি'না , তাই নাবাবপুত্তুর যা খুশি তাই করছেন। দূর করে দেবো , আসুক এবার দূর করে দেবো।
[ ঠিক এইসময় সেই পুত্র অর্থাৎ বাবুর প্রবেশ। তাকে প্রবেশ করতে দেখে মা আনন্দিত হয়ে উঠলেন। কিন্তু বাবা হঠাৎ করে কী করবেন , কী বলবেন বুঝতে পারলেন না। হঠাৎ তিনি  বলে উঠলেন -]
বাবা -- ( গর্জে উঠে ) -- এমন ছেলের আমার দরকার নেই - বেরিয়ে যা।
[ বাবু হঠাৎ থমকে যায় ; দ্রুত পায়ে সে আলনার দিকে এগিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে একটি ব্যাগ বের করে নিজের জামা কাপড় ওই ব্যাগের ভেতর পুরতে থাকে। ]
মা ( আশঙ্কিত হয়ে ) -- আরে করো কী ? এতক্ষন পর এলো ছেলেটা ; আগে খেয়ে তো নিক। পরে বললেই তো হতো।
বাবা ( মারমুখী হয়ে ) -- তোমার আস্কারাতেই তো উচ্ছন্নে গেছে ! মাথাটি তো তুমিই খেয়েছো আদর দিয়ে।
[ মা আঁচল দিয়ে চোখ মোছেন। বাবু ব্যাগ নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। ]

দৃশ্য - ৩
মঞ্চ পরিকল্পনা - দ্বিতীয় দৃশ্যের অনুরূপ।
মা এবং বাবা দুজনেই থমথমে মুখে বসে আছেন।
বাবা -- কাল সারারাত কিছু মুখে তোলোনি শুনলাম।
মা -- ( ফুঁপিয়ে কেঁদে ) -- বাবু ...........
বাবা -- মিছিমিছি প্যানপ্যান করো না। অমন ছেলে যাওয়াই ভালো।
[ মা আরো জোরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। ]
তা'ও গেলে তো বাঁচতাম। এ বেলাই দেখো সুড়সুড় করে আবার ফিরে আসবে। এমন বিনি পয়সার হোটেলখানা পাবে কোথায় ?
মা -- এই দারুন শীতে কাল সারারাত ছেলেটা কোথায় রইলো কে জানে ! কী করে বসে আমার তা'ই ভয়।
বাবা -- ( ব্যাঙ্গ করে ) -- হ্যাঁ ভয় ! তোমার ছেলে কিছুই করে নি গো , কিছুই করে নি। দিব্যি আছে কোনো বন্ধুর বাড়ি। অসুবিধে হলেই এসে দেখা দেবে।
মা ( কাঁদতে কাঁদতে ) -- কীরকম অভিমানী জানো তো ? ( রাগত স্বরে , দৃঢ় কণ্ঠে ) ও না এলে আমি কিচ্ছুটি খাবো না।
বাবা -- ( বিরক্ত হয়ে ) -- না ! আর থাকতে দিলে না ! এ অশান্তির চেয়ে বনবাস ভালো।
[ এই বলে বাবা উঠে বেরিয়ে গেলেন ] 

নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION : NIRUDDES

  দৃশ্য ৪
মঞ্চ পরিকল্পনা - পূর্ববর্তী দৃশ্যের ন্যায়।
মা একইভাবে বসে আছেন। বাবা প্রবেশ করলেন।
বাবা -- বুঝলে আর চিন্তার কোনো কারণ নেই। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে এসেছি। তোমার ছেলের নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনে লিখেছি - বাবু , তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসো ; তোমার মা কাল থেকে জল গ্রহণ করেন নি।
[ মা সঙ্গে সঙ্গে আবার কেঁদে উঠলেন। ]
আহা , চিন্তা কোরোনা , বললাম তো , ....... কাল সকালের কাগজেই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হবে। সে বিজ্ঞাপন দেখে তোমার ছেলে নিশ্চই ফিরে আসবে।
[ এই কথা বলা মাত্রই হঠাৎ বাবুর প্রবেশ। বাবুকে দেখে বাবার মধ্যে আনন্দ ও বিস্ময়ের প্রকাশ। মা কান্না থামিয়ে বাবুর দিকে এগিয়ে গেলেন। ]
মা -- এই তো বাবা , আমার বাবু ফিরে এসেছে। কোথায় ছিলি বাবা ! তোর জন্য তোর বাবা ভেবে ভেবে অস্থির।
বাবু ( গম্ভীর ভাবে ) -- আমি ফিরে আসার জন্য আসি নি।
মা - ( অবাক হয়ে ) -- বলিস কি তুই ! তাহলে কী করতে এসেছিস তুই ?
বাবু -- আমার গোটা কতক বই নিয়ে যেতে এসেছি।
মা ( চোখের জল মুছে , ক্ষুব্ধ হয়ে ) -- তা যাবি বই কি ; অমনি কুলাঙ্গার তুই তো হয়েছিস। কোনো ছেলে যেন আর বকুনি খায় না। তুই একেবারে পির হয়েছিস ? কাল সারারাত তোর বাবা দুচোখের পাতা এক করেননি তা জানিস ? ভেবে ভেবে চেহারাটা আজ কী হয়েছে দেখ একবার ! বই নিয়ে যেতে এসেছি ! .........
বাবা ( মৃদুস্বরে ) -- আঃ আর বকাবকি করো কেন ?
মা  ( ধমকের স্বরে ) -- তুমি থামো। অত আদর ভালো নয় ! একটু বকুনি খেয়েছেন বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে এত বড়ো আস্পর্ধা।



দৃশ্য ৫
মঞ্চ পরিকল্পনা - প্রথম দৃশ্যের অনুরূপ।
সুদীপ ও সোমেশ একই ভাবে বসে আছে।
সুদীপ -- দেখলে তো অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাস এই।
( কিছুক্ষন সোমেশের দিকে  তাকিয়ে থেকে ) কী হয়েছে তোর বলতো ? মিছিমিছিই আমি একলা বকে মরছি।
সোমেশ ( কিছুক্ষন পর ) -- তুমি হয়তো জানো না , এই বিজ্ঞাপনগুলোর পেছনে অনেক সময় সত্যকার ট্রাজেডি থাকে।
সুদীপ -- তা থাকে যে তা আমি অস্বীকার করছি না। কখনো কখনো সত্যিই যে যায় সে আর ফেরে না।
সোমেশ -- ( ঈষৎ করুন হেসে ) -- না , আমি ফিরে না আসার ট্রাজেডির কথা বলছি না।
সুদীপ -- তাহলে ?
সোমেশ -- ফিরে আসারই ভয়ানক একটা ট্রাজেডির কথা আমি জানি।
সুদীপ -- তার মানে !
সোমেশ -- শোনো বলছি। ( একটু থেমে সোমেশ আবার শুরু করলো ) পুরোনো খবরের কাগজের ফাইল যদি উল্টে দেখো , তাহলে দেখতে পাবে বহু বছর আগে এখানকার একটি প্রধান সংবাদপত্রের পাতায় দিনের পর দিন একটি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন বেড়িয়েছে। সে বিজ্ঞাপন নয় , সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস। সেই বিজ্ঞাপনের প্রথম দিকে দেখা যায় মায়ের কাতর অনুরোধ ছেলের প্রতি ফিরে আসার জন্য। ধীরে ধীরে মায়ের কাতর অনুরোধ হতাশ দীর্ঘশ্বাসের মতো খবরের কাগজের পাতায় যেন মিলিয়ে যেতেও দেখা গেল। তারপর সেই বিজ্ঞাপনে শোনা গেল পিতার গম্ভীর স্বর , একটু যেন কম্পিত , তবু ধীর ও শান্ত - '' শোভন ফিরে এস। তোমার মা শয্যাগত। তোমার কি এতটুকু কর্তব্যবোধও নেই !''
সুদীপ -- তারপর , তারপর কী হলো ?
সোমেশ -- বিজ্ঞাপন তারপরও কিন্তু থামলো না। তারপর দেখা গেল বিজ্ঞাপনে পিতার স্বর ভারী হয়ে আসছে যেন ; মনে হয় গলাটা যেন ধরা -'' শোভন , এখন না এলে তোমার মা'কে আর দেখতে পাবে না। ''
সুদীপ -- তারপর কী হলো ? শোভন ফিরে এলো ?
সোমেশ -- নাহ , শোভনের হৃদয় এতে গললো না। এরমধ্যে বিজ্ঞাপনে বাবার গলার স্বর ভারী হয়ে আসছে।
সুদীপ -- বিজ্ঞাপন কি তারপরেও চলতে লাগলো ?
সোমেশ -- হ্যাঁ , বিজ্ঞাপন সমানভাবে চলতে লাগলো। শুধু পিতার নিজেকে সামলাবার ক্ষমতা আর নেই। এবার তাঁর স্বরে কাতরতা , শুধু কাতরতা নয় , একান্ত দুর্বলতা - ''শোভন , জানো না আমাদের কেমন করে দিন যাচ্ছে ! এসো , আর আমাদের দুঃখ দিও না।''
সুদীপ -- তারপর ?
সোমেশ -- তারপর বিজ্ঞাপন ক্রমশঃ হতাশ হাহাকার হয়ে উঠলো। তারপর একেবারে গেল বদলে। আর শোভনকে উদ্দেশ্য করে কিছু লেখা নাই। সাধারণ একটি বিজ্ঞপ্তি মাত্র। এই ধরণের , এই চেহারার , এই বয়সের একটি ছেলে। আজ একবছর তার কোনো সন্ধান নেই। সন্ধান দিতে পারলে পুরস্কার পাওয়া যাবে।
( কিছুক্ষন থেমে ) তারপর থেকে পুরস্কারের পরিমান ক্রমশই বাড়তে লাগলো খবরের কাগজের পাতায়। দোহারা ছিপছিপে একটি বছর ষোলো - সতেরোর ছেলে। ডান কানের কাছে একটি বড় জড়ুল। জীবিত না মৃত এইটুকু যদি কেউ সন্ধান দিতে পারে , তাহলেও পুরস্কার পাওয়া যাবে।
সুদীপ -- এত গেল বিজ্ঞাপনের উপাখ্যান। আসল ব্যাপার কিছু জানিস নাকি ?
সোমেশ ( দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ) -- জানি ! শোভনকে আমি জানতাম। সে কোনো ভয়ঙ্কর অভিমানের বশে বাড়ি ছেড়ে এসেছিলো তা মনে কোরো না। বাড়ি ছাড়াটাই তার কাছে একান্ত সহজ। ছুতোটা যা হোক কিছু হলেই হলো। শুনলে আশ্চর্য হবে , খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনের সংবাদ জানলেও সেগুলো সে অনুসরণই করে নি। কোনোদিন চোখে পড়েছিল হয়তো , তারপর অনায়াসে সেগুলো গেছিলো ভুলে। বাড়ির বাইরে যে সমস্ত দুঃখ - অসুবিধায় অন্য কেউ হলে হয়রান হয়ে পড়ত , তার ভেতরই সে পেয়েছিলো মুক্তির স্বাদ।
সুদীপ -- ভাবা যায় না। এমনটাও হয় ! তারপর কী হলো ?
সোমেশ -- বিজ্ঞাপন যেদিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল , কেন জানি না শোভনের উদাসীন মনটাও বিচলিত হয়ে উঠলো। শেষ বিজ্ঞাপনের কথাগুলো ছিল '' শোভন , তোমার মার সঙ্গে আর বুঝি তোমার দেখা হলো না। তিনি শুধু তোমারই নাম করছেন এখনো। '' ব্যাস তারপর আর কোনো বিজ্ঞাপন দেখা গেল না।
সুদীপ -- তারপর ?

সোমেশ -- প্রায় দুই বৎসর তখন কেটে গেছে। শোভন একদিন হঠাৎ গিয়ে হাজির তার দেশে ..................
একটা কথা আগে বলিনি , শোভন সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে নয় , তাদের প্রাচীন জমিদারি অনেক দুর্দিনের মধ্যে দিয়ে এসেও তখনও তেমন ক্ষয় পায়নি। শোভনই তার একমাত্র  উত্তরাধিকারী।
সুদীপ -- যাক শেষটুকু আর না বললেও চলবে , বুঝতে পেরেছি।
সোমেশ -- তুমি যেরকম ভাবছো সেরকমটা নয়। দুবছর স্বাধীন জীবনের দুঃখ কষ্ট গায়ে না মাখলেও তার ছাপ শোভনের উপর এসে পড়েছে। দুবছরে সে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু তাই বলে তার কর্মচারীরা তাকে চিনতে পারবে না এমনটা আশঙ্কা সে করেনি।
সুদীপ -- বল কী ?
সোমেশ -- পুরোটা শোনো তাহলে ................ 
( আলো আস্তে আস্তে নিভে এলো। ) 

নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION : NIRUDDES

দৃশ্য ৬
মঞ্চ পরিকল্পনা - এই দৃশ্যে একটি প্রাচীন জমিদারবাড়ির কাছারির অবতারণা করা হবে। সেজন্য আরো  কিছু চেয়ার টেবিল এবং দৃশ্যের অনুরূপ সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে।
দৃশ্যের শুরুতে  নায়েবমশাই , দুজন সরকার ও খাজাঞ্চিমশাই নিজ নিজ আসনে উপবিষ্ট হয়ে কাজে ব্যাস্ত। এমন সময় নেপথ্যে শোভনের গলা শোনা গেল।
শোভন ( নেপথ্যে ) -- এই কে আছো , দরজা খোলো।
( নায়েবমশাই উঠে দরজা খুলে দিলেন। সাথে সাথে শোভন মঞ্চে প্রবেশ করলো। মঞ্চে প্রবেশ করেই সে সোজা হাঁটা শুরু করলো। )
নায়েবমশাই ( শোভনকে বাধা দিয়ে ) -- আরে করেন কি , কোথায় চললেন , কাকে চান ?
শোভন -- কাউকে না , ভেতরে যাবো।
নায়েবমশাই ( শোভনকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে তারপর স্মিত হেসে ) -- ওঃ , কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কেন , আসুন এখানে একটু বিশ্রাম করুন।
শোভন ( অবাক হয়ে ) কেন কী হয়েছে নায়েবমশাই ?
নায়েবমশাই -- না না হয়নি কিছুই।
শোভন -- মা ভালো আছেন ?
নায়েবমশাই -- ( অদ্ভুত হেসে ) -- ভালো আছেন বইকি !
শোভন -- তাহলে ভেতরে গেলেই তো হতো।
নায়েবমশাই ( কঠিন স্বরে ) -- না , আপনি এখানে বসুন।
( খাজাঞ্চীবাবুকে উদ্দেশ্য করে ) ইনি ভেতরে যেতে চাইছেন।
খাজাঞ্চীবাবু ( শোভনকে একবার দেখে নিয়ে ) -- ওঃ ইনি আজই এসেছেন বুঝি !
নায়েবমশাই -- হ্যাঁ , এইমাত্র।
শোভন ( অধীর ভাবে ) -- আপনারা কী বলতে চান স্পষ্ট করে বলুন ! মার কি কিছু হয়েছে ? বাবা কেমন আছেন ?
( সকলেই শোভনকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখছে )
নায়েবমশাই -- তাঁরা সবাই ভালো আছেন ; কিন্তু এখন তো আপনার সঙ্গে দেখা হবে না।
শোভন ( অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ) -- কেন দেখা হবে না ? আপনাদের কি মাথা খারাপ হয়েছে ! আমি চললাম।
নায়েবমশাই ( শান্ত ঠান্ডা স্বরে ) -- দেখুন মিছিমিছি কেলেংকারি করে লাভ নেই ; এতে ফল হবে না কিছু।
শোভন ( অবাক হয়ে ) -- আপনারা কি আমায় চিনতে পারছেন না ?
( সকলে নীরব )
আমি শোভন , বুঝতে পারছেন না  আমি শোভন ?
( নায়েবমশাই পিছনে ফিরে টেবিলের দিকে গেলেন , সেখান থেকে একটা ছবি নিয়ে এসে শোভনের হাতে ধরালেন। )




শোভন ( ছবি নিয়ে , অত্যন্ত বিস্মিত কণ্ঠে ) -- এতো আমারই ফটো , দেখুন ভালোকরে আপনারাই মিলিয়ে................. নাঃ এ অসহ্য।
নায়েবমশাই -- দেখুন কিছু মনে করবেন না। আপনার সঙ্গে একটু মিল আছে সত্যি। কিন্তু এর আগেও দুজনের সঙ্গে এমনই মিল ছিল। এমনকি জরুল পর্যন্ত। আমাদের এ নিয়ে গোলমাল করতে মানা আছে। আমরা কিছু হাঙ্গামা করবো না , আপনি এখন চলে যেতে পারেন।
শোভন ( একটু থেমে , কাতরভাবে ) -- একবার শুধু আমি মা বাবার সাথে দেখা করবো। আপনারা বিশ্বাস করছেন না। কিন্তু একবার আমায় শুধু দেখা করতে দিন।
নায়েবমশাই ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) শুনুন তাহলে , সাতদিন আগে শোভন মারা গেছে।
শোভন ( ব্যাঙ্গের হাসি হাসতে হাসতে ) -- কেমন করে মারা গেল ?
নায়েবমশাই -- রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে , অপঘাতে। নাম , ধাম , পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়নি , কিন্তু দুর্ঘটনার সময় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাদের কয়েকজন আমাদের বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের সব জানিয়েছেন। হাসপাতালেও আমরা খবর নিয়েছি। সেখানকার ডাক্তারদের বর্ণনাও আমাদের সঙ্গে মিলে গেছে।
( এই সময় শোভন যেদিক দিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করেছিল তার উল্টো দিক দিয়ে তার বাবা মঞ্চে প্রবেশ করলো )
শোভন ( বাবাকে লক্ষ্য করে ) বাবা ! ( এই বলে সে বাবার দিকে ছুটে গেল ) বাবা আমায় চিনতে পারছো !
বাবা ( কিছুক্ষন থেমে থেকে ) -- কে ?
নায়েবমশাই ( দ্রুত পায়ে শোভনের কাছে এসে শোভনকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ) -- না না , কেউ না , সেই সেবারের মতো। এই নিয়ে তিনবার হলো।
জনৈক সরকারমশাই -- আমরা আসতে দিইনি , হঠাৎ আমাদের হাত ছাড়িয়ে ........
( শোভনের বাবা হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিলেন , তারপর একদৃষ্টে শোভনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন )
শোভনের বাবা -- নায়েবমশাই আপনি একবার অন্দরে আসুন।
( শোভনের বাবা প্রস্থান করলেন , তার পেছন পেছন নায়েবমশাইও প্রস্থান করলেন। শোভন হতাশ ও অবাক হয়ে আবার তার আসনে হতাশ হয়ে বসে পড়লো। কিছুক্ষন বাদে নায়েবমশাই ফিরে এলেন। )
নায়েবমশাই ( শোভনের উদ্দেশে ) -- আপনাকে দয়াকরে একটা কাজ করে দিতে হবে।
শোভন ( হতাশ ও আহত কণ্ঠে ) -- কী কাজ ?
নায়েবমশাই -- বাড়ির কর্ত্রী মুমূর্ষু , ছেলের মৃত্যু সংবাদ তিনি শোনেননি। তাকে কিছু জানানো হয়নি। এখনো তিনি শোভনকে দেখবার আশা করে বসে আছেন। আপনাকে তাঁর হারানো ছেলে হয়ে দেখা দিতে হবে। মুমূর্ষুর দৃষ্টিতে কিছু ধরা পড়বে না। হারানো ছেলের সাথে সত্যি আপনার সাদৃশ্য আছে।  এজন্য জমিদারবাবু নিজে আপনাকে কাতর অনুরোধ জানিয়েছেন। আপনাকে দশ হাজার টাকাও দেওয়া হবে। ( পকেট থেকে দুটি টাকার বান্ডিল বের করে শোভনের হাতে গুঁজে দিলেন ) ।

নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION : NIRUDDES




দৃশ্য ৭
মঞ্চ পরিকল্পনা - প্রথম দৃশ্যের অনুরূপ।
সুদীপ ও সোমেশ সেই একইভাবে বসে আছে। দুজনেই চুপ। হঠাৎ সুদীপ সোমেশের মুখে কিছু একটা লক্ষ্য করে বললো -
সুদীপ ( আশ্চর্য হয়ে ) -- সোমেশ তোমার কানের কাছেও তো একটা জরুল আছে।
সোমেশ ( রহস্যের হাসি হেসে ) -- সেজন্যই তো গল্প বানানো সহজ হলো। উঠি বুঝলে ; বৃষ্টি থেমে গেছে।
( সোমেশ সঙ্গে সঙ্গে উঠে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করলো। সুদীপ অবাক হয়ে বসে থাকলো। )
সুদীপ ( আসন থেকে উঠে পরে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে অবাক ও আশ্চর্য কণ্ঠে ) --সোমেশই তাহলে শোভন !
( ধীরে ধীরে পর্দা নেমে এলো )


   

You May Also Like

0 comments