নাট্যরূপ - ছাতির বদলে হাতি Bengali Dramatisation Chatir bodole hati

by - October 09, 2019

Bengali Dramatisation Chatir bodole hati

নাট্যরূপ - ছাতির বদলে হাতি 



চরিত্রবর্গ :-

মনমোহন মহাজন 
চেংমান 

দুজন মধ্য বয়স্ক ব্যাক্তি 

কয়েকজন কৃষক  
প্রথম দৃশ্য :-
মঞ্চ পরিকল্পনা - একটি মাঝারি দোকান। দোকানটি বন্ধকি - তেজারতির। তাতে একটি ছাতিসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র রয়েছে। একটি ছোট বাক্স। এই বাক্সের উল্টোদিকে মনমোহন মহাজন নিজ আসনে উপবিষ্ট। নেপথ্যে বাদলার দিনের আবহ শব্দ। এজন্য নেপথ্যে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাতের শব্দ তৈরী করতে হবে। মনে রাখতে হবে দৃশ্যটিকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে নেপথ্যে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের শব্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।



মনমোহন মহাজন ( একটি বজ্রপাতের শব্দের সাথে সাথে ) -- বাপরে বাপ্ , কী বাদলার দিন। ২৫-৩০ বছর হয়ে গেল এই হালুয়াঘাট বন্দরে বন্ধকি - তেজারতির ব্যবসা করছি ; এমন বদলা তো কোনোদিনই দেখিনি বাপু। 
[ একটু সচকিত হয়ে , মঞ্চের বাঁ দিকের প্রবেশ পথের দিকে তাকিয়ে ]
এই বাদলার দিনেও কে যেন আসছে বলে মনে হচ্ছে ! 
[ মঞ্চে চেংমান এর প্রবেশ। তার হাতে ছাতা নেই। হাতের গামছাটা মাথার ওপর দিয়ে ধরে সে যেন বৃষ্টিকে আড়াল করতে চাইছে। দৌড়োতে দৌড়োতে সে মনমোহন মহাজনের দোকানের সামনে পৌঁছলো। ]
কে হে তুমি , এমন বাদলার দিনে চললে কোথায় ! 
চেংমান -- আজ্ঞে আমি চেংমান , একজন চাষী। এই হালুয়াঘাট বন্দরে এসেছিলাম সওদার কাজে। তা দিন যা পড়লো !
মনমোহন মহাজন -- তা তোমার আর দোষ কী বলো ! মাথার ওপর দেও - দেবতা স্তম্ভিত। পৃথিবী কম্পিত করে মুষলধারে বৃষ্টি। এ বৃষ্টি ধরবার কোনো লক্ষনই নেই। 
চেংমান -- মহা সমস্যায় পড়েছি হুজুর।রাত তো হতে চললো। বৃষ্টি তো থামবে বলে মনে হচ্ছে না। বাড়ি ফিরি কী করে ! অথচ আজ যে বাড়ি ফিরতেই হবে। 
মনমোহন মহাজন -- তা তোর কাছে ছাতা নেই ?
চেংমান -- না হুজুর। 
মনমোহন মহাজন -- ( দোকানে টাঙিয়ে রাখা একটি ছাতা নামিয়ে ) -- তুই এক কাজ কর , এই ছাতাটা নিয়ে বাড়ি চলে যা। নিজে ভিজিস তাতে কিছু নয় , কিন্তু এতগুলো পয়সার সওদা যে ভিজে পয়মাল হয়ে যাবে। 
চেংমান -- দেখি হুজুর , আর একটু দেখি ; বৃষ্টি যদি থামে। 
মনমোহন মহাজন -- আরে না না ; এ বৃষ্টি আর থামবে না। তুই এ ছাতাটা নিয়ে যা। 
চেংমান -- কিন্তু হুজুর , সওদায় সব টাকা খরচ হয়ে গেছে। হাতে তো আর টাকা নেই !
মনমোহন মহাজন ( আশ্বাসের হাসি হাসতে হাসতে ) -- আরে আরে , নগদ পয়সা না'ই বা দিলে। যখন তোমার সুবিধে হবে , দিয়ে গেলেই হল। ওর জন্য কিছু ভেবো না। 
চেংমান -- ভরসা দিচ্ছেন হুজুর !
মনমোহন মহাজন -- আরে যা যা ; নিয়ে যা। 
[ চেংমানের ধীরে ধীরে প্রস্থান। মনমোহন মহাজনের মুচকি মুচকি হাসি। ]

Bengali Dramatisation Chatir bodole hati

নাট্যরূপ - ছাতির বদলে হাতি 


দ্বিতীয় দৃশ্য :- 
মঞ্চ পরিকল্পনা - প্রথম দৃশ্যের অনুরূপ। তবে এবার নেপথ্য থেকে আসা বৃষ্টি ও বজ্রপাতের শব্দ অনুপস্থিত। প্রথম দৃশ্যের মতোই মনমোহন মহাজন তার দাওয়ায় বসে আছেন। ধীরে ধীরে চেংমান মঞ্চে প্রবেশ করলো। হাতে ছাতা। তবে এবার ছাতাটি বন্ধ। মনমোহন মহাজন গভীর মনোযোগের সাথে হিসেবে পরীক্ষা করছেন।

চেংমান -- আজ্ঞে হুজুর !
[ মনমোহন মহাজন মাথা তুলে চেংমানের দিকে চাইলো। ]
এই , আবার এলাম। 
মনমোহন মহাজন -- ( চেংমানকে নিরীক্ষণ করে ) -- ওঃ তুই , হ্যাঁ বল। 
চেংমান -- বাবু পাওনাগন্ডা মিটায়ে নেন। ছাতাটির দাম নিয়ে নিন বাবু। 
মনমোহন মহাজন ( ব্যাস্ত হয়ে ) -- আহা , ......... অত তাড়া কীসের , সে দিও ক্ষণ পরে। 
চেংমান -- কিন্তু হুজুর ......................
মনমোহন মহাজন -- আরে কিন্তুর কিছু নেই। ........ এখন যা ; পরে দিয়ে দিস এক সময়।

তৃতীয় দৃশ্য 
দ্বিতীয় দৃশ্যের অনুরূপ। চেংমান হাতে ও মাথায় বোঝা নিয়ে মঞ্চের একধার থেকে একধারে পেড়িয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ সেদিকে নজর পড়ে মনমোহন মহাজনের। 
মনমোহন মহাজন -- আরে .......... এই , এই লোকটা , কী যেন নাম। ............
চেংমান ............ এই চেংমান ......... এদিকে আয় হতভাগা। 
[ চেংমান অবাক হয়ে সেদিকে ধীরে ধীরে এগোতে থাকে ] 
কী বাছাধন , বড়ো পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছ এক বছর থেকে। এবার আমার পাওনা মিটিয়ে দাও দেখি। 
চেংমান ( অবাক ও স্তম্ভিত হয়ে ) -- আজ্ঞে হুজুর , আমি তো প্রায় ২০-২৫ বার আপনারে শুধিয়েছি , কতবার বলেছি ছাতার দামটা নিয়ে নিন , পাওনাগন্ডা মিটিয়ে নিন। কিন্তু আপনি পরে হবে পরে হবে বলে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছেন। তবে আজ একথা কেন বলছেন ? আমি তো ছাতার ব্যাপারটা ভুলেই গেছিলাম। 
মনমোহন মহাজন -- তা ' তো ভুলবেই। ভুলতে পারলেই তো টাকাটা বেঁচে যাবে। ওসব কথায় আমি ভুলছি না। ভালোয় ভালোয় আমার সমস্ত পাওনা মিটিয়ে দাও। নইলে সওদার সমস্ত মাল এখানে রেখে যাও। 
চেংমান ( রাগত স্বরে ) -- দিয়ে দেব , আজই আপনার ছাতার দাম দিয়ে দেব। কত দাম বলুন। 
মনমোহন মহাজন ( হিসেবের খাতা পরীক্ষা করে ) -- এই একবছরে চক্রবৃদ্ধিহারে ছাতির দাম সুদ সমেত পাওনা হয়েছে কয়েক হাজার টাকা। 
চেংমান ( অবাক হয়ে ) -- কী ! হাজার টাকা !

Bengali Dramatisation Chatir bodole hati

নাট্যরূপ - ছাতির বদলে হাতি 


চতুর্থ দৃশ্য :-
দুজন ব্যাক্তি মঞ্চের দুই দিক থেকে মঞ্চের একদিক থেকে আরেকদিকে আসছেন। দুজন কাছাকাছি আসতেই .................. 
জনৈক ব্যক্তি ১ -- এই যে ভায়া চললে কোথায় ?
জনৈক ব্যক্তি ২ -- এই গেছিলাম হালুয়াঘাট বন্দরে , ব্যবসার কাজে। 
জনৈক ব্যক্তি ১ -- তা হালুয়াঘাট বন্দরে চেংমানের ব্যাপারটা শুনলে ?
জনৈক ব্যক্তি ২ -- হ্যাঁ শুনলাম। 
জনৈক ব্যক্তি ১ -- সত্যি ! কীভাবে এই মহাজনেরা গরীব কৃষকদের ঠকায়। মনমোহন মহাজন একটা মাত্র চটি দিয়ে চেংমানের হাজার টাকা নিয়ে নিল। এ যেন ছাতির বদলে হাতি। 
জনৈক ব্যাক্তি ২ -- শুধু কি মনমোহন মহাজন ; এই তো সেদিন ডালুদের গ্রাম কুমারগাঁতির নিবেদন সরকারের ছেষট্টি বিঘে জমি মহাজন কুটিশ্বর সাহা এমনিভাবে দেনার দায়ে কেড়ে নিয়েছে। ............. আরেক ধুরন্ধর মহাজন এক চাষীকে ধারে কোদাল দিয়ে পরে তার কাছ থেকে পনেরো বিঘে জমি মোচড় দিয়ে নিয়েছিল। 
জনৈক ব্যক্তি ১ -- শুধু কি মনমোহন মহাজন আর কুটিশ্বর সাহা ! তার উপর রয়েছে জোতদার আর জমিদারদের নিরঙ্কুশ শাসন। আর সেই সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ সিংহের দাপট। 
জনৈক ব্যক্তি ২ -- কী আর করা ! প্রতিরোধ চাই ভায়া প্রতিরোধ। ........... বিপ্লব চাই। ...... চাই আন্দোলন। ......


Bengali Dramatisation Chatir bodole hati

নাট্যরূপ - ছাতির বদলে হাতি 


পঞ্চম দৃশ্য :-
জনাকয়েক কৃষক মঞ্চে উপবিষ্ট। একজন সামনে এগিয়ে দর্শকদের সম্মুখে।
জনৈক কৃষক ১ -- আমরা ডালু , হাজং , গারো ......... জাতে ছোট .......... আমরা কৃষক .........
[ জনৈক কৃষক ১ কথাগুলি বলা শুরু করার পর অন্যান্য কৃষকরা ধীরে ধীরে তার পাশে এসে দাঁড়াবে। ]
আমরা জমিতে সারাবছর খাটি। ধান পাকলে ........ জমিদারের খামারে তুলে দিতে হয়।
জনৈক কৃষক ২ -- কর্জার ধান শোধ দিতে হয় টাকায় এক মণ হিসাবে।
জনৈক কৃষক  ৩ -- আমরা বুকের রক্ত জল করে ফসল ফলাই আর ঘরে ফিরি শুধু পালা হাতে।
জনৈক কৃষক ৪ -- আর আছে নানকার প্রথা। জমি জরিপের পর আড়াই টাকা পর্যন্ত খাজনা সাব্যস্ত হয়।
জনৈক কৃষক ৫ -- আর খাজনা না দিতে পারলেই মার। .............. পিছমোড়া করে মার। ............ তারপর আমাদের মালঘরে আটকে রেখে সব সম্পত্তি খাস করে নেয়।
জনৈক কৃষক ১ -- কিন্তু ভাইসব ; দিন বদলেছে ! নওয়াপাড়া , দুমনাকুড়া , ঘোষপাড়া আর ভুবনকুড়ার বিরাট তল্লাটে ডালু চাষীরা আজ জেগে উঠেছে। তারা বলেছে জমিদারের খামারে আর ধান তুলবে না ; তারা ধান তোলেনি। পুলিশ - কাছারি কিছুতেই কিছু হয়নি। শেষে জমিদার হার মেনেছে।
 জনৈক কৃষক ২ -- আজ বন্দরের ভদ্রলোকেরা তাদের তুই তুকারি করতে সাহস পায় না ;
'' আপনি '' বলে সম্ভাষণ করে। থানায় চেয়ার ছেড়ে দেয় বসতে।
 জনৈক কৃষক ৩ -- আর আমরা ! ........... আমরা হাল বাইছি ভাই .......... আমরা হাল বাইছি। কিন্তু মাটি কঠিন ; উঠতে চায় না ; কী কষ্ট ! কী কষ্ট !
 জনৈক কৃষক ১ -- যারা এত কষ্ট করে সকলের মুখে অন্য যোগায় , ইচ্ছে করে ........ ইচ্ছে করে জমিদারের হাত থেকে বাংলার সমস্ত জমি তাদের হাতে দিই ; মহাজনের নিষ্ঠুর ঋণের বোঝা থেকে তাদের মুক্তি দিই।
সকলে ( দর্শকদের উদ্দেশ্যে ) -- তোমাদের কি ইচ্ছে হয় না ? 

You May Also Like

1 comments