Dena - paona : Natyarup
দেনা পাওনা গল্পের নাট্যরূপ।
চরিত্রবর্গ :
রামসুন্দর মিত্র : নিরুপমার পিতা। বয়স প্রায় পঞ্চাশের উর্দ্ধে। পোশাক পরিচ্ছদে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট।
রায়বাহাদুর
রায়বাহাদুরের স্ত্রী
জনৈক ব্যক্তি
জনৈক পরিচারিকা
পুরোহিতমশাই
বিয়েতে উপস্থিত থাকা জনৈক কয়েকজন
নিরুপমা
রামসুন্দর মিত্রের পুত্রগণ , নাতি নাতনি।
মঞ্চ পরিকল্পনা : - পুরো নাটকটি দুটি অঙ্কে উপস্থাপন করা হবে। প্রথম অঙ্কে রামসুন্দর মিত্রের গৃহ ও দ্বিতীয় অঙ্কে নিরুপমার শ্বশুর বাড়ি। খুব সামান্য সাজ সরঞ্জাম ও উপকরণের মধ্যে দিয়ে নাটকটি উপস্থাপন করা যেতে পারে। রামসুন্দর মিত্রের গৃহ ও নিরুপমার শ্বশুরবাড়ি বোঝানোর জন্য , নিরুপমার শ্বশুরবাড়ির ক্ষেত্রে মঞ্চে কয়েকটি দামি চেয়ার ও একটি টেবিল রাখলেই চলবে। বেতের চেয়ার হলে চেয়ার গুলিকে উপস্থাপন ও সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে লঘুভার হেতু।
অপরদিকে রামসুন্দর মিত্রের গৃহের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার সময় উক্ত আসবাব গুলির সবকটিকে সরিয়ে ফেলে মঞ্চ একেবারে ফাঁকা করে দিতে হবে। তবে রামসুন্দর মিত্রের গৃহের দৃশ্যায়নের সময় যদি একান্তই আসবাবপত্র উপস্থাপন করতে হয় , তাহলে সেই আসবাবপত্রগুলো যেন দারিদ্রের ভারে জর্জরিত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এছাড়াও মঞ্চে প্রয়োজন অনুযায়ী সরঞ্জামের উপস্থাপন ও বিয়োজন ঘটানো যেতে পারে।
প্রথম দৃশ্য :-
রামসুন্দর মিত্রের গৃহ। রামসুন্দর এবং তারই মত জনৈক ব্যাক্তি বাড়ির দাওয়ায় বসে আছেন।
রামসুন্দর মিত্র : বুঝলে ভায়া , পাঁচ ছেলের পর যখন এক কন্যা জন্মিল তখন আমরা অনেক আদর করে তার নাম রেখেছিলাম নিরুপমা।
জনৈক ব্যাক্তি : তা দাদা , তোমার মেয়ের তো বিয়ের কথা চলছিল ; কতদূর এগোল ?
রামসুন্দর মিত্র : বিয়ে পাকা তো।
জনৈক ব্যাক্তি : বিয়ে পাকা , বল কী !
রামসুন্দর মিত্র : আমি তো অনেক খোঁজ করলাম , অনেক পাত্র দেখলাম। কিন্তু পাত্র কিছুতেই পছন্দ হয় না। মনের মত হচ্ছিল না। অবশেষে মস্ত এক রায়বাহাদুরের ঘরের একমাত্র ছেলের সাথে সম্বন্ধ ঠিক করেছি। ........................ ঐ রায়বাহাদুরের বিষয় আশয় যদিও অনেক হ্রাস পেয়েছে ; কিন্তু তবুও বনেদী ঘর বটে।
জনৈক ব্যাক্তি : তা ঠিক।
রামসুন্দর মিত্র : তবে বরপক্ষ দশ হাজার টাকা পণ এবং বহুল দান সামগ্রী চেয়ে বসেছে। আমি কিছু বিবেচনা না করেই রাজি হয়েছি। এমন পাত্রকে কিছুতেই হাতছাড়া করা যায় না ; কি বল ?
জনৈক ব্যাক্তি : তা ঠিক , তবে অত টাকা , অত খরচ তুমি জোগাড় করবে কীভাবে ?
রামসুন্দর মিত্র : জোগাড় করেই নিয়েছি। তবে পণের ছয় - সাত হাজার টাকা এখনও জোগাড় করতে বাকি আছে। .................. কয়জনকে বলেছি , হয়ে যাবে নিশ্চই একটা ব্যবস্থা।
দ্বিতীয় দৃশ্য : -
রামসুন্দর মিত্রের গৃহ। মঞ্চে একটি ছাতনাতলা প্রস্তুত করতে হবে। চারটি কলাগাছ ও কিছু ফুল - পাতার মালা সহকারে। এই দৃশ্যে নাটকের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ত বিভিন্ন ব্যাক্তিকে মঞ্চে উপস্থাপন করতে হবে বিভিন্ন সময়ে।
দৃশ্য শুরু হতেই পুরোহিত মশাই ছাতনাতলায় বিভিন্ন সরঞ্জাম ঠিকঠাক করতে ব্যাস্ত থাকবেন। তারপর ব্যাস্ত হয়ে বলবেন -
পুরোহিত মশাই : নিন রামসুন্দর বাবু , এবার পাত্রকে উপস্থিত করুন।
রামসুন্দর মিত্র পুরোহিত মশাইয়ের পাশেই বসে ছিলেন। তিনি সেখান থেকে যখনই উঠবেন ঠিক তখনই মঞ্চের বাম দিক দিয়ে রায়বাহাদুর তার পুত্র ও কয়েকজন বরযাত্রীসহ মঞ্চে প্রবেশ করবেন। রামসুন্দর মিত্র তাদেরকে আহ্বান করতে এগিয়ে যাবেন।
রামসুন্দর মিত্র : এসো বাবা , ( অত্যন্ত অনুগত স্বরে )
রায়বাহাদুরের পুত্র এগিয়েই যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় তার পিতা অর্থাৎ রায়বাহাদুর তাকে বাঁধা দিলেন।
রায়বাহাদুর : ( পুত্রের উদ্দেশ্যে ) দাঁড়াও , ( রামসুন্দর মিত্রের উদ্দেশ্যে ) পণের বাকী টাকা আগে পরিশোধ করুন , তারপর বিয়ে।
রামসুন্দর মিত্র ( রায়বাহাদুরের হাতে পায়ে ধরে ) : শুভকাজটা সম্পন্ন হয়ে যাক , আমি নিশ্চই পণের টাকাটা পরিশোধ করে দিব।
রায়বাহাদুর ( রামসুন্দর মিত্রের কাতর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ) : টাকা হাতে না পেলে বর সভাস্থ করা যাবে না।
বর অর্থাৎ রায়বাহাদুরের পুত্র : ( হঠাৎ পিতার অবাধ্য হয়ে ) : এসব কী হচ্ছে বাবা ? .................. কেনাবেচা - দরদামের কথা আমি বুঝি না , বিয়ে করতে এসেছি , বিয়ে করে তবে যাবো।
রায়বাহাদুর ( একই সাথে পুত্র ও রামসুন্দর মিত্রের প্রতি অত্যন্ত রুষ্ঠ হয়ে ) : যেমন তুমি বুঝবে।
( এইবলে তিনি মঞ্চ ত্যাগ করলেন। )
বর অর্থাৎ রায়বাহাদুরের পুত্র পিতার চলে যাওয়া কিছুক্ষন দেখলো , তারপর বিবাহ সভার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো।
জনৈক বরযাত্রী ১ : দেখেছেন মহাশয় , আজকালকার ছেলেদের ব্যবহার !
জনৈক বরযাত্রী ২ : শাস্ত্রশিক্ষা , নীতিশিক্ষা একেবারেই নাই , কাজেই .....................
তৃতীয় দৃশ্য :
রামসুন্দর মিত্রের গৃহ। বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং বিবাহ সভার কোনো চিহ্ন মঞ্চে থাকবে না। দৃশ্যটিতে প্রথম দৃশ্যে যে ব্যেক্তির সাথে রামসুন্দর কথা বলছিলেন সেই ব্যাক্তি পুনরায় অনুরূপভাবে উপস্থিত থাকবে।
জনৈক ব্যাক্তি : তা দাদা তোমার মেয়ে নিরুপমার বিয়ে তো শেষ পর্যন্ত ভালোভাবেই সম্পন্ন হল ; এখন কেমন আছে তোমার মেয়ে ? রানীর হালে আছে নিশ্চই ?
রামসুন্দর মিত্র : ( হতাশ হয়ে ) : না ভায়া ; বিয়ে তো হল , কিন্তু মেয়েটা আমার ভালো নেই।
জনৈক ব্যাক্তি : কেন ? কী হল আবার ?
রামসুন্দর মিত্র : আমি প্রায়ই মেয়েকে দেখতে বেয়াইবাড়ি যাই। কিন্তু সেখানে আমার কোনো প্রতিপত্তি নাই। চাকরগুলো পর্যন্ত আমাকে নিচু নজরে দেখে। মেয়ের সাথে মাত্র পাঁচ মিনিট দেখা করতে দেওয়া হয়। কুটুম্ববাড়িতে এমন করে অপমান তো আর সহ্য করা যায়না।
তাই আমি স্থির করেছি , পণের ওই বাকি ছয় - সাত হাজার টাকা যেমন করে পারি দ্রুত পরিশোধ করবো।
চতুর্থ দৃশ্য :
তৃতীয় দৃশ্যের অনুরূপ। তবে এবার জনৈক ব্যাক্তিটি আগে থেকেই বসে থাকবেন না। তিনি মঞ্চের একদিক থেকে আরেকদিকে যাওয়ার সময় রামসুন্দর মিত্র ডেকে তার সাথে কথা বলবেন।
রামসুন্দর মিত্র : এই যে ভায়া কোথায় চললে ?
জনৈক ব্যাক্তি : তেমন কোথাও না , ( রামসুন্দরের দিকে এগিয়ে এসে ) , তা তোমার খবর বলো।
রামসুন্দর মিত্র : খবর ভালো নয় ভায়া ; টাকাটা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। দেনার দায়ে সংসার চালানো পর্যন্ত দুস্কর হয়ে উঠেছে। এখন ভাবছি ছেলেদের না জানিয়ে এই বাড়িটাই বিক্রি করে দেব।
জনৈক ব্যাক্তি : সে'কী ! তাহলে থাকবে কোথায় ?
রামসুন্দর মিত্র : এই বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে এই বাড়িতেই ভাড়া থাকবো। ............... তা না করলে আর উপায় নেই ভায়া , মেয়েটার কষ্ট আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ............... শাশুরির কাছে পিতৃগৃহের নিন্দা শুনে আর গোপনে চোখের জল ফেলে তার দিন কাটে। অতি কষ্টে তিন হাজার টাকা সুদে ধার করেছি। আজ যাবো টাকাটা দিতে। একটু তো মুখরক্ষা হবে।
পঞ্চম দৃশ্য :
রায়বাহাদুরের গৃহ। মঞ্চে উপস্থিত রামসুন্দর মিত্র ও তাঁর কন্যা নিরুপমা।
রামসুন্দর মিত্র : কেমন আছিস মা ?
নিরুপমা : আমাকে এখানে ভালো লাগছে না। তোমার জামাইও এখানে নেই। ক'দিনের জন্য আমাকে নিয়ে চল না।
রামসুন্দর মিত্র : হ্যাঁ , এবার নিয়ে যাবো মা।
এমন সময় রায়বাহাদুর ও গিন্নি মঞ্চে প্রবেশ করলেন। তাদের প্রবেশ করতে দেখে রামসুন্দর মিত্র উঠে দাঁড়ালেন ও নিরুপমা প্রস্থান করল।
রামসুন্দর মিত্র : ( হাত জোর করে অনুগত ভঙ্গিতে ) আজ্ঞে , কেমন আছেন আপনারা ?
রায়বাহাদুর এবং তার গিন্নি রামসুন্দরের কথার তেমন কোনো উত্তর করলেন না।
রামসুন্দর মিত্র : হ্যাঁ , হ্যাঁ বেয়াই , সেই টাকাটা বাকি আছে বটে ; রোজই মনে করি , কিন্তু সময়কালে আর মনে থাকে না। আরে ভাই , বুড়ো তো হয়েছি না'কি ( জোর করে হাঁসার চেষ্টা করে। )
তারপর অতি সংকোচে নিজের পকেট থেকে তিনখানা নোট বার করে বেয়াইয়ের হাতে দিলেন। বেয়াই সেই টাকাটা নিলেন। গুনে দেখলেন। তারপর হেঁসে উঠলেন।
রায়বাহাদুর : থাক বেয়াই ওতে আমার কাজ নেই ; আমি এই সামান্য নিয়ে হাত গন্ধ করতে চাইনা।
রামসুন্দর মিত্র অত্যন্ত মুষড়ে পড়লেন।
রামসুন্দর মিত্র : ( অত্যন্ত সঙ্কোচের সাথে ) : এরপরের বার নাহয় পুরোটাই আনবো।
রায়বাহাদুর : ( সেকথায় কর্ণপাত না করে ) আর কিছু বলার আছে আপনার ?
রামসুন্দর মিত্র : হ্যাঁ , বলছিলাম , মেয়েকে যদি ক'দিনের জন্য নিয়ে যাই ?
রায়বাহাদুর : সে এখন হচ্ছে না।
রামসুন্দর মিত্র কাঁপা কাঁপা হাতে সেই তিনটি নোট আবার পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন।
ষষ্ঠ দৃশ্য :-
রামসুন্দর মিত্রের গৃহ। মঞ্চে একা বসে আছেন রামসুন্দর মিত্র। এরপর মঞ্চে প্রবেশ করল রামসুন্দরের নাতি।
রামসুন্দরের নাতি : দাদা আমার জন্য গাড়ি কিনতে যাচ্ছো ? ঠেলা গাড়ি ?
রামসুন্দর মিত্র নিরুত্তর থাকলেন।
রামসুন্দরের নাতি : পূজো তো চলে আসলো দাদা , দাও না আমাকে একটা গাড়ি কিনে !
এরপর রামসুন্দর মিত্রের এক নাতনির প্রবেশ।
রামসুন্দরের নাতনি : পূজার নিমন্ত্রনে যাবার মত আমার একটা ভালো কাপড় নেই। দাও না দাদা আমাকে একটা ভালো কাপড় কিনে !
রামসুন্দর মিত্র : ( প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ) উফ্ফ তোরা যা'তো , যা বলছি এখান থেকে।
রামসুন্দর মিত্রের নাতি ও নাতনি বিষন্ন মুখে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করলো। রামসুন্দর মিত্র মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন। ঠিক এরপর রামসুন্দরের তিন পুত্রের প্রবেশ।
প্রথম পুত্র : বাবা আপনার সাথে কিছু কথা আছে ?
রামসুন্দর মিত্র ( অবাক হয়ে ) তোদের আবার কী কথা ?
দ্বিতীয় পুত্র ( রামসুন্দরের নিকটে এগিয়ে এসে ) : আপনি হাজার লুকোনোর চেষ্টা করলেও আমরা জেনে গেছি আপনি এ বাড়ি বিক্রি করতে চাইছেন। একবারও আমাদের কথা ভেবে দেখেছেন কি ?
রামসুন্দর মিত্র : ( রাগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে ) : তোদের জন্য আমি কি নরকগামী হব ? আমাকে তোরা সত্য পালন করতে দিবি না ?
যাঃ সবকটা অকর্মার দল , বেরো এখান থেকে। ................................ যত্তসব।
রামসুন্দরের পুত্ররা একে একে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করল।
রামসুন্দর মিত্র : না , সবকিছু হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগে আমাকে আজকেই বেয়ান বাড়িতে টাকাটা পৌঁছে দিতে হবে। বাড়ি তো বিক্রি হয়েই গেছে। এই অপগন্ডগুলো তো জানেই না। জানলে যে কী করবে !.......................... না , না , আমাকে যা করার আজকেই করতে হবে।
সপ্তম দৃশ্য :-
রায়বাহাদুর মশাইয়ের গৃহ। একজন ভৃত্য মঞ্চে থাকা আসবাবপত্র ঝাড়পোঁছ করছে। বীরদর্পে রামসুন্দর মিত্রের প্রবেশ।
রামসুন্দর মিত্র : ( ভৃত্যের উদ্দেশ্যে ) : বেয়াই মশাই বাড়ি নেই নাকি ?
ভৃত্য অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকায় এবং নিরুত্তর থাকে। এই সময় মঞ্চে নিরুপমার প্রবেশ।
নিরুপমা : বাবা তুমি !
[ এই কথা বলা মাত্র মঞ্চে রামসুন্দর মিত্রের তিন পুত্র , নাতি ও নাতনির প্রবেশ। সকলেই হাঁফাচ্ছে। ]
প্রথম পুত্র : বাবা তুমি এ'কি করলে ! আমাদেরকে যে একেবারে পথে বসালে।
দ্বিতীয় পুত্র : আমরা জেনে গেছি , তুমি বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছো।
তৃতীয় পুত্র : আর সেই টাকা তুমি নিরুপমার বাড়িতে কন্যাপণ দিতে এসেছ !
নিরুপমা ( বাবার উপর গর্জে ওঠে ) : এ তুমি কি করেছো , বাবা ! তুমি যদি আর এক পয়সা আমার শ্বশুরকে দাও তা হলে আর তোমার মেয়েকে দেখতে পাবে না। এই তোমার গা ছুঁয়ে বললাম।
রামসুন্দর মিত্র : ছি মা , অমন কথা বলতে নেই। আর , এ টাকাটা যদি আমি না দিতে পারি তাহলে তোর বাপের অপমান , আর তোরও অপমান।
নিরুপমা : না বাবা , টাকা যদি দাও , তবেই অপমান। তোমার মেয়ের কি কোনো মর্যাদা নেই। আমি কি কেবল একটা টাকার থলি , যতক্ষণ টাকা আছে ততক্ষন আমার দাম !
না বাবা , এ টাকা দিয়ে তুমি আমাকে অপমান কোরো না। আর তাছাড়া , আমার স্বামী তো এ টাকা চান না।
রামসুন্দর মিত্র : তা হলে তোমাকে যেতে দেবে না , মা।
নিরুপমা : না দেয় তো কী করবে বলো। তুমিও আর নিয়ে যেতে চেও না।
অষ্টম দৃশ্য : -
নিরুপমার শ্বশুরবাড়ি ; অর্থাৎ রায়বাহাদুর মশাইয়ের বাড়ি। মঞ্চে রায়বাহাদুর মশাই একটি চেয়ারে উপবিষ্ট। এমন সময় তার স্ত্রী হন্তদন্ত হয়ে মঞ্চে প্রবেশ করলেন।
রায়বাহাদুরের স্ত্রী : শুনেছ ?
রায়বাহাদুর : কী হয়েছে ?
রায়বাহাদুরের স্ত্রী : বৌমার বাবা টাকা দিতে এসেছিল। কিন্তু তোমার বৌমা তার বাবাকে বলেছে টাকা দিলে নাকি তার অপমান হচ্ছে।
রায়বাহাদুর : সেকি , এত বড় কথা ! আমাদের এইভাবে অপমান !
জনৈক পরিচারিকা : গিন্নিমা , আপনার বড় বৌমার শরীরটা খুব খারাপ হয়েছে , মনে হচ্ছে ডাক্তার ডাকতে হবে।
রায়বাহাদুরের স্ত্রী : নাটক নাটক সব নাটক , কোনো ডাক্তার দেখানোর দরকার নেই।
[ জনৈক পরিচারিকা সেখান থেকে প্রস্থান করে এবং কিছুক্ষন পর অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ফিরে আসে। ]
জনৈক পরিচারিকা : গিন্নিমা , ( কান্না ) নিরুপমা আর নেই। ..........
নবম দৃশ্য : -
রায়বাহাদুর মশাইয়ের বাড়ি। মঞ্চে রায়বাহাদুর মশাই একটি চেয়ারে উপবিষ্ট। পাশে তাঁর স্ত্রী।
রায়বাহাদুর : দেখলে গিন্নি , নিরুপমার শ্রাদ্ধ শান্তি কিরকম ধুম ধাম করে দিলাম। পুরো জেলায় ধন্য ধন্য পরে গেছে। চন্দন কাঠের চিতা - দেখেছে এ তল্লাটে কেউ ? ( প্রসন্নতা ) এরকম ঘটা করে শ্রাদ্ধ কেবলমাত্র রায়বাহাদুরের বাড়িতেই সম্ভব।
রায়বাহাদুরের স্ত্রী : তা আর বলতে ! ও হ্যাঁ , খোকাকে চিঠি লিখে দাও , তার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে , এবার বিশ হাজার টাকা পণ এবং হাতে হাতে আদায়।