সমাজ ও মানব জীবনে কোভিডের প্রভাব।

by - March 28, 2022

সমাজ ও মানব জীবনে কোভিডের প্রভাব। 

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা রচনা - সমাজ ও মানব জীবনে কোভিডের প্রভাব। 

'' করোনা পাল্টে দিয়েছে জীবন ও সমাজ '' - রচনা। 

'' কোভিড বদলেছে জীবন। ''  




সমাজ ও মানব জীবনে কোভিডের প্রভাব। 


ভূমিকা :- ২০২০ সালের একেবারে শুরুর দিকে ফেব্রুয়ারী - মার্চ মাস থেকে মারণব্যাধি করোনা সমগ্র পৃথিবীকে নিজের অশুভ প্রশ্বাসের দূষিত বায়ুতে গ্রাস করতে থাকে। আর ঠিক তারপরেই শুরু হয় লক - ডাউন এবং লক ডাউনের পরবর্তীকালে সমাজ ও মানবজীবনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন সাধিত হয়। মানুষের সামাজিক জীবন , অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ও কর্মজীবনে পরিবর্তনগুলি অতিমাত্রায় প্রকট হয়ে ওঠে। এককথায় বলা যায় কোভিড সারা পৃথিবীর মৌলিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। 



১. পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা :- ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক নির্মাণ ও অন্যান্য কার্যে নিযুক্ত। কিন্তু করোনার প্রভাবে তারা নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। প্রথমতঃ তারা কর্মচ্যুত হন এবং দ্বিতীয়তঃ নিজ নিজ রাজ্যে প্রত্যাবর্তনকালে তাদের বহুবিধ সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়। বিশেষ ট্রেনে করে তাদের নিজ নিজ রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা হলেও সেই ট্রেন থেকেই প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হন। নিজ রাজ্যেও তাদেরকে ১৪ - ২১ দিন একান্তবাস থাকতে হয়। রাষ্ট্রের তরফে তাদের পুনর্বাসনের সেরকম কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে তারা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন।    

২. পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত সমস্যা :- করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় প্রতিটি নিত্য - ব্যবহার্য পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। একদিকে কর্মচ্যুতি , অর্থনৈতিক সমস্যা এবং অন্যদিকে প্রায় প্রতিটি পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। এক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করে মানবিকতার নজির গড়ে তোলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির ভূমিকাও এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবী রাখে। 

৩. স্বাস্থ্য - পরিষেবা ব্যবস্থার উপর চাপ বৃদ্ধি :- করোনার ফলে লক্ষ লক্ষ আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। সরকারি তরফে বাড়তি কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই সামান্য ছিল। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে , স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে আরো ব্যাপকভাবে সংস্কারসাধন প্রয়োজন। 

৪. বিপুল সংখ্যক কর্মচ্যুতি :- করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার লক ডাউন জারি করেন। কিন্তু এই লক ডাউন মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে অভিশাপস্বরূপ প্রতীত হয়। বহু সংখ্যক মানুষকে বিভিন্ন কর্মসংস্থান থেকে কর্মচ্যুত করা হয়। যারা পরিবহন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত , বা সিনেমা ও টেলিভিশন শিল্পের সাথে যুক্ত , বা সাধারণ হকার , খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য দোকানকর্মী , শ্রমিক ও মজুর - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু মানুষকে কর্মচ্যুত হতে হয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ শুন্যে পৌঁছে যায়। 



৫. শিক্ষা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব :- করোনার বৃদ্ধির পর লক ডাউন ঘোষণা করা হয় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সমস্ত বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও তার সুফল খুব কম সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীদের কাছে পৌঁছোয়। বহু সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীদের কাছে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার না থাকার জন্য অনলাইন ক্লাস তার আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। শিক্ষার্থীরা অনেকটা সময় ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় পঠন পাঠনে তাদের উৎসাহ ও আগ্রহ কমে যায়। 

৬. পরীক্ষা বাতিল ও শিক্ষার্থীদের মনোজগতে প্রভাব :- করোনার প্রভাবে বিদ্যালয়ে পঠন পাঠন ব্যাহত হয় এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন শ্রেণীর সাথে সাথে মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিক - ইত্যাদি পরীক্ষাও বাতিল করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের মনোজগতে এক গভীর প্রভাব পড়ে। পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য তাদের মূল্যায়ন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। 

৭. ডিজিটাল নির্ভরশীলতা :- করোনা ভাইরাসের বাড় - বাড়ন্তের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ডিজিটাল নির্ভরশীলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। অর্থের আদান - প্রদান , নিত্য - ব্যবহার্য পণ্যের ক্রয় - বিক্রয় , শিক্ষাক্ষেত্রে অনলাইন কোচিং , বিদ্যালয়ে অনলাইন প্রকল্পের কাজ , কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পরীক্ষা - এইভাবে করোনাকালে প্রকৃত অর্থে ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়। 

৮. শেয়ার মার্কেটে লগ্নিকারীর সংখ্যাবৃদ্ধি : অশনিসংকেত ! :- করোনা শুরু হওয়ার প্রথম মাত্র তিন মাসের মধ্যে দেশে শেয়ার মার্কেটে লগ্নিকারীর সংখ্যা প্রায় তিনগুন বেড়ে যায়। এটি একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু , এর মধ্যে প্রায় অধিকাংশ মানুষই কোনোপ্রকার প্রশিক্ষণ বা শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে না জেনেই লগ্নি করেন। ফলে এই ধরণের মানসিকতা যথেষ্ট বিপজ্জনক বলে শেয়ার মার্কেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। 

৯. করোনা বিধি ও জনগণের অসচেতনতা :- তবে এই ভয়াবহ আবহেও এক শ্রেণীর জনগণের মধ্যে করোনা বিধি পালন করার ক্ষেত্রে বিশেষ অসচেতনতা ও অসহযোগিতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। মাস্ক না পরা , সামাজিক দূরত্ববিধি পালন না করা - ইত্যাদি বহু মানুষের মধ্যেই দেখা গেছে। এর ফলে একাধিকবার করোনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে সারা দেশে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন করোনাবিধি সর্বদা পালন করা প্রতিটি ভারতবাসীর নাগরিক কর্তব্য। 

১০. স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ :- ইতিপূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে করোনার ঢেউ সারা দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তাই ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই সারা ভারতে করোনার প্রতিরোধের জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশের বহু জায়গায় বহু অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। করোনা প্রতিষেধক টিকা প্রদানের কাজ এখনও নিরলসভাবে চলছে। 

উপসংহার :- পরিশেষে বলা যায় যে , করোনাকে সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করতে মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধ প্রয়োজন। মাস্ক পরিধান করা , যথাসম্ভব সামাজিক দূরত্ববিধি পালন করা - ইত্যাদির মাধ্যমে করোনাকে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তারপর ভারতের প্রতিটি নাগরিককে করোনা প্রতিষেধক টিকা প্রদান করে করোনার প্রতিরোধ আরো জোরালো করা যেতে পারে। মানুষের সহযোগিতা , সুস্পষ্ট ও প্রগতিশীল সরকারি নীতি - ইত্যাদির মাধ্যমে করোনার ফলে উদ্ভব হওয়া সামাজিক সমস্যাগুলিকে অনেকটা সমাধান করতে পারে।  


       

You May Also Like

0 comments