বাংলা প্রকল্প : কাতুকুতু বুড়োর সাথে কাটানো একদিনের অভিজ্ঞতা।

by - November 17, 2023

কাতুকুতু বুড়োর সাথে কাটানো একদিনের অভিজ্ঞতা।

বাংলা প্রকল্প : কাতুকুতু বুড়োর সাথে কাটানো একদিনের অভিজ্ঞতা।



কাতুকুতু বুড়োর সাথে কাটানো একদিনের অভিজ্ঞতা।

বাংলা প্রকল্প : কাতুকুতু বুড়োর সাথে কাটানো একদিনের অভিজ্ঞতা।

ভূমিকা :- 
কাতুকুতু বুড়ো সুকুমার রায়ের এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। এই চরিত্রটি একদিকে যেমন মনের মধ্যে হাসির উদ্রেক জোগায়, তেমনই অন্যদিকে সুকুমার রায়ের লিখনশৈলীর গভীরতার পরিচয় প্রকাশ করে।বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের প্রকল্প হিসাবে সুকুমার রায়ের যে কোনও একটি চরিত্রের সঙ্গে কদিনের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে বলা হয়েছে। এই প্রকল্পে সুকুমার রায় কর্তৃক সৃষ্ট অমর চরিত্র কাতুকুতু বুড়োর সাথে কল্পনিকভাবে কাটানো একদিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেওয়া হল।


প্রকল্পের উদ্দেশ্য :- 

যেসকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রচনা করা হয়েছে , সেগুলি হল - 
(ক ) শিক্ষার্থীর কল্পনা দক্ষতার বিকাশ ঘটানো। 
(খ ) সুকুমার রায়ের অমর চরিত্র কাতুকুতু বুড়ো সম্পর্কে আলোচনা। 
(গ ) কাতুকুতু বুড়োর চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলি প্রকল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করা। 
(ঘ ) নিপাট - নিৰ্ভেজাল হাস্যরস সৃষ্টিতে সুকুমার রায়ের দক্ষতার উপর আলোকপাত করা। 
(ঙ ) সর্বপরি , সুকুমার রায়ের অমর সৃষ্টি কাতুকুতু বুড়ো চরিত্রটি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী ও উৎসাহিত করে তোলা। 

প্রকল্পের গুরুত্ব :- 

যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে , সেগুলি হল - 
(ক ) প্রকল্পটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর কল্পনাশক্তির বিস্তার ঘটানো সম্ভব। 
(খ ) সুকুমার রায় হাস্যরস সৃষ্টিতে কতটা দক্ষ ছিলেন - তা এই প্রকল্পের মাধ্যমে সহজেই জানা যেতে পারে। 
(গ ) কাতুকুতু বুড়ো ছড়াটি সকলেই পড়েছে। এই চির পরিচিত চরিত্রটি সম্পর্কে প্রকল্পটিতে সারগর্ভ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। 
(ঘ ) বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবলোকন করাতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। 
(ঙ ) কাতুকুতু বুড়ো নামক অমর চরিত্রটি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা কৌতূহলী হয়ে উঠবে। 

কর্ম পরিকল্পনা / পদ্ধতিগত দিক :- 

প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে যেসকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে - সেগুলি নিম্নরূপ। 

>> বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা প্রকল্পের জন্য বিষয় নির্বাচন করলেন। 

>> বিষয় নির্বাচনের পর মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা প্রকল্প রূপায়ণের বিভিন্ন পদ্ধতিগত দিকের উপর আলোকপাত করেন। 

>> বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হল। 

>> সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা করা হল। 

>> খসড়া প্রতিবেদনটি মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নিকট উপস্থাপন করলে তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা - র নির্দেশমত প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর পুনরায় প্রতিবেদনটি লিপিবদ্ধ করা হল। 

>> প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় চিত্র সংযোজিত করা হল। 

>> পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হল।    

তথ্য সংগ্রহ / পরীক্ষামূলক উপাদান / উপকরণ :- 

[ এখানে '' কাতুকুতু বুড়ো '' ছড়াটি লিখতে হবে। ] 


তথ্য - বিশ্লেষণ / প্রকল্পের বর্ণনা :-        

কাতুকুতু বুড়োর সাথে কাটানো একদিনের অভিজ্ঞতা।

গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম কাতুকুতু বুড়োর বাড়ি। তাঁর বাড়ি গিয়ে তার সঙ্গে দেখাও হল ; কিন্তু যা অভিজ্ঞতা হল , তাতে মনে হচ্ছে এরপর থেকে সপ্তসাগর পার গেলেও কাতুকুতু বুড়োর বাড়ি আর যাবো না। না , সেই অভিজ্ঞতা বিষাদ বা কষ্টের নয় ; বরং সে অভিজ্ঞতা হল এক তীব্র হাসির। এবং এই হাসির বহর এতটাই তীব্র যে হাসির ঠেলায় প্রাণ প্রায় বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল। সে বৃদ্ধ বড়ই সর্বনেশে। তার কাতুকুতুর চোটে পেটের নাড়ি যেন ছিঁড়ে যায়। 

সকাল সকাল কাতুকুতু বুড়োর বাড়ি পৌঁছে দরজায় কড়া নাড়লাম। তিনি নিজেই অভ্যর্থনা জানালেন এবং তাঁর এই অভ্যর্থনা জানানোর বিষয়টি বড়ই চমকপ্রদ ও অভিনব। তিনি আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন কাতুকুতু দিয়ে। সেই শুরু হল তাঁর কাতুকুতু দেওয়া ; তারপর থেকে কথায় কথায় , যেকোনো অজুহাতে তিনি আমাকে কাতুকুতু দিয়েই চললেন। তার এই কাতুকুতু দেওয়াটা এমন বিচিত্র ভঙ্গিতে যে - তার থেকে না যায় পালানো না যায় তাকে ছাড়ানো। 

কাতুকুতু বুড়োর বাড়ি কোথায় তা কেউ জানে না। কিন্তু আমি হঠাৎ করে তাঁর বাড়ির ঠিকানা কীভাবে পেয়ে গেলাম - তা আমি নিজেও জানি না। সম্ভবতঃ সুকুমার রায় তার কোনো জাদুবলে সে ঠিকানা আমার অজান্তেই আমাকে জানিয়েছিলেন। যাইহোক , কাতুকুতু খেয়ে অভ্যর্থনা লাভের পর আমি তাঁর বসার ঘরে প্রবেশ করলাম। সেখানে তিনি একের পর এক বিদঘুটে গল্প বলতে শুরু করলেন। কোন দেশের সেই গল্পগুলো - তা আমি জানিনা। তবে গল্পগুলো শুনে হাসির চেয়ে কান্না আসছিল বেশি ; কেননা , সেই গল্পের তীব্র হাসির উপাদানে প্রভাবিত হয়ে হাসতে হাসতে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। যদিও গল্পগুলোর কোনো মাথা মুন্ডু নেই , তবুও কাতুকুতু বুড়োর সামনে সেগুলি মন দিয়ে শুনতে হত এবং বুড়োর দিকে তাকিয়ে থাকতে হত।       

শুধু যদি তিনি গল্প বলতেন তাও নাহয় রক্ষে ছিল ; গল্পের সঙ্গে চলতো গায়ের উপর সুড়সুড়ি দেওয়া। গল্প বলতে বলতে কাতুকুতু বুড়ো একটি লম্বা পালক দিয়ে সুড়সুড়ি দিতেন। একদিকে তার কাতুকুতু , তারপর তার বিদঘুটে গল্প , তার উপর সুড়সুড়ি - এই তিনের সম্মিলিত আক্রমণে আমি রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। তাঁর গল্পগুলো কতটা উদ্ভট ছিল তা তাঁর একটি গল্প শুনলেই বোঝা যায়। গল্পটি হল কেষ্টদাসের পিসির গল্প। কেষ্টদাসের পিসি নাকি কুমড়ো , কচু , হাঁসের ডিম আর তিসি বিক্রি করত। ডিমগুলো ছিল লম্বা , কুমড়োগুলো ছিল বাঁকা , আর কচুর গায়ে রং বেরঙের আলপনা আঁকা থাকতো। সেই পিসি নাকি অষ্টপ্রহর মিহি আওয়াজে '' ম্যাও ম্যাও ম্যাও বাকুম বাকুম ভৌ ভৌ ভৌ চিঁহি '' - গানটি করত। কাতুকুতু বুড়োর কাছে এইরকম পিসির বর্ণনা শুনে আর তার গানের কথা শুনে তো হাসতে হাসতে পেটের সমস্ত নাড়ি জড়িয়ে যাবেই। 

একটু আগে পর্যন্ত কাতুকুতু বুড়ো আমাকে কাতুকুতু দিয়েছিলেন , সুড়সুড়ি দিয়েছিলেন আর উদ্ভট গল্প শুনিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর হাসির অত্যাচার এখানেই শেষ হয়নি। কেষ্টদাসের পিসির গল্প শেষ করে তিনি তিনি আমার ঘাড়ে একটি জোরালো চিমটি কাটলেন। এখানেই শেষ নয়। তারপর তিনি তাঁর খ্যাংরা কাঠির মত আঙুল দিয়ে আমার পাঁজর ও হাড়ে খোঁচা দিতে শুরু করলেন। কাতুকুতু বুড়োর এই সাঁড়াশি আক্রমণ চলতেই থাকল যতক্ষণ না আমি হেসে লুটোপুটি খেলাম। হাসতে হাসতে যখন প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হল - তখন আমার ছুটি হল। 

যাইহোক , সারাটা দুপুর কাতুকুতু বুড়োর সঙ্গে কাটালাম এবং হাসির তীব্রতায় প্রানটাকে কোনমতে বাঁচিয়ে ঘরে ফিরে এলাম। তাই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি যে , আর যেখানেই যাই না কেন , কাতুকুতু বুড়োর কাছে আর কখনই যাব না। বাড়ি ফিরে এসেই আমি আমার পরিচিত সকলকেই কাতুকুতু বুড়োর কাছে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু সকলেই তো দেখছি হাসতে ভালোবাসে ; তারা সকলেই কাতুকুতু বুড়োর কাছে যেতে চায়। এখন তারা সকলেই আমার কাছে কাতুকুতু বুড়োর ঠিকানা চাইছে ; কিন্তু তাঁর ঠিকানা এই মুহূর্তে আমার মনে নেই। সুকুমার রায় যদি আবার আমাকে কাতুকুতু বুড়োর ঠিকানা বলে দেন , তাহলে আমি সকলকে সেই ঠিকানা দেব।   

উপসংহার :- 
বাংলা সাহিত্যের সুবর্ণ সম্ভারের মধ্যে একটি অন্যতম সৃষ্টি হল কাতুকুতু বুড়ো। কাল্পনিক সৃষ্টিশীলতায় কাতুকুতু বুড়ো এক অনন্য চরিত্র। তাঁর চরিত্রের মধ্যে সংযোজিত হয়েছে বিচিত্র বৈশিষ্টের সমাবেশ। কাতুকুতু বুড়োর সঙ্গে একটি দিন কাটানোর কাল্পনিক অভিজ্ঞতা - র বিষয়ে প্রকল্প রচনা শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীলতাকে ডানা মেলে উড়ে যেতে সাহায্য করে।         

গ্রন্থপঞ্জি :- 

সুকুমার সাহিত্য সমগ্র ( প্রথম খন্ড ) - প্রকাশক : সত্যজিৎ রায়।   

You May Also Like

0 comments