Dramatisation Aloukik
অলৌকিক গল্পের নাট্যরূপ
মঞ্চ পরিকল্পনা :-
দিনের আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও দৃশ্যটিতে দুটি পাথরের প্রয়োজন। একটি পাথর মানুষের হাঁটুর উচ্চতার সমান ও অন্যটি হবে মানুষের উচ্চতার সমান। পাথরটি তৈরী করতে হবে থার্মোকল দিয়ে এবং তার আকার হবে গোল।
[ মঞ্চে নানক। মর্দানা সহ নানকের অন্যান্য অনুচররা তাঁর সাথে আছেন। তাঁরা মঞ্চে ধীর পায়ে প্রদক্ষিণ করছেন - যেন অনেকটা পথ তাঁরা হেঁটে চলেছেন। সকলেই খুব ক্লান্ত। ]
মর্দানা -- ( অত্যন্ত ক্লান্ত স্বরে ) -- জল ........ , একটু জল ......... । ভয়ানক তেষ্টা ..........
নানক -- কোথায় জল ?
মর্দানা -- জলের অভাবে গলাটা যেন ফেটে যাচ্ছে। জল না পেলে একপা'ও চলতে পারছি না।
নানক -- ভাই মর্দানা , সবুর করো। পরের গায়েঁ গেলেই জল পাবে।
মর্দানা -- নাঃ , আমি আর পারছি না .............
নানক -- দ্যাখো মর্দানা , কোথাও জল নেই , খানিক্ষন অপেক্ষা করো। এটাকে ভগবানের অভিপ্রায় বলেই মেনে নাও।
[ এ কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মর্দানা অজ্ঞান হয়ে মঞ্চে পড়ে গেল। গুরুনানক ও অন্যান্য অনুচররা অবাক হলেন এবং তারপর তারাও বসে পড়লেন। এক মুহূর্ত পর মর্দানা জ্ঞান ফিরে পেল এবং জলের অভাবে ডাঙায় তোলা মাছের মতো ছটফট করতে লাগলো এবং '' একটু জল , একটু জল '' করে কাতরভাবে চিৎকার করতে লাগলো। ]
নানক -- ভাই মর্দানা , এখানে পাহাড়ের চূড়োয় বলী কান্ধারী নামে এক দরবেশ কুটির বেঁধে থাকেন। ওঁর কাছে জল পেতে পারো। এ তল্লাটে ওঁর কুয়ো ছাড়া আর কোথাও জল নেই।
মর্দানা ( কাতর কণ্ঠে ) -- ঐ পাহাড়ের চূড়োয় উঠবার শক্তি আমার নেই।
নানক -- একটু চেষ্টা করো মর্দানা। চেষ্টা করলেই সব পারবে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখো।
[ মর্দানা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো , তারপর দুর্বলভাবে চলতে লাগলো। বারে বারে চোখের উপর হাত রাখলো যেন সে এমন একটা ভাব ফুটিয়ে তুলতে চাইছে যে পাহাড় খুব উঁচু। আলো ধীরে ধীরে নিভে এলো। ]
দৃশ্য - ২
মঞ্চ পরিকল্পনা :-
বিশেষ কোনো সাজ - সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। বলী কান্ধারী মঞ্চে উপবিষ্ট। দর্শকদের দিকে মুখ করে তিনি ধ্যানমগ্ন। ধীরে ধীরে মর্দানা মঞ্চে প্রবেশ করলো। কাতর কণ্ঠে
'' জল ........... একটু জল '' বলতে বলতে সে বলী কান্ধারীর দিকে এগোতে লাগলো। ]
মর্দানা -- জল .......... একটু জল।
বলী কান্ধারী -- ( মর্দানার উপস্থিতি টের পেয়ে ) -- হে পথিক কে তুমি ?
মর্দানা -- আমি মর্দানা , অনেক দূর থেকে আসছি , আরো অনেকটা পথ যেতে হবে। খুব তেষ্টা পেয়েছে। একটু জল ............ একটু জল না পেলে প্রাণটা যেন বেড়িয়ে যাবে।
বলী কান্ধারী -- ঐ..... ঐ দিকে ( একটি নির্দিষ্ট দিকে ইঙ্গিত করে ) কুয়ো রয়েছে। ওখানে যাও , জল পান করো।
[ মর্দানা ধীরে ধীরে একটি নির্দিষ্ট দিকে অগ্রসর হতে থাকলো। হঠাৎ বলী কান্ধারী যেন কিছু একটা সন্দেহ করে ]
তুমি কোথা থেকে আসছো ? কাদের সাথে আসছো ?
মর্দানা -- ( বলী কান্ধারীর দিকে ফিরে ) -- হে তপস্বী , আমি নানকের সঙ্গী। ঘুরতে ঘুরতে এদিকে এসে পড়েছি। বড্ড তেষ্টা পেয়েছে ; কিন্তু নীচে কোথাও জল নেই।
বলী কান্ধারী -- ( প্রচন্ড রেগে গিয়ে ) -- কী বললে তুমি .......... তুমি নানকের অনুচর , বেড়িয়ে যাও , বেড়িয়ে যাও এখান থেকে।
[ মর্দানা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আলো ধীরে ধীরে নিভে এল। ]
Dramatisation Aloukik
অলৌকিক গল্পের নাট্যরূপ
দৃশ্য - ৩[ প্রথম দৃশ্যের অনুকরণে। নানক ও তাঁর সঙ্গীরা একইভাবে বসে আছেন। মর্দানা ধীরে ধীরে আরো ক্লান্ত ও কাতরভাবে প্রবেশ করলো। ]
নানক -- ( মর্দানা প্রবেশের পরে ) -- কি মর্দানা জল পেলে ?
মর্দানা -- নাঃ , আপনার নাম কানে যেতেই বলী কান্ধারী সঙ্গে সঙ্গে আমায় তাড়িয়ে দিলেন।
নানক -- মর্দানা , তুমি আর একবার বলী কান্ধারীর কাছে যাও। এবার নম্রভাবে বলবে - ''আমি নায়ক নানক দরবেশের অনুচর। ''
মর্দানা -- নাঃ , আমি আর পাহাড়ে চড়তে পারবো না ; প্রাণটা এখানেই চলে যাবে মনে হচ্ছে।
নানক -- একবার আর চেষ্টা করে দেখো মর্দানা। এভাবে হাল ছাড়তে নেই।
[ মর্দানা আবার ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলো। ]
দৃশ্য - ৪
[ দ্বিতীয় দৃশ্যের অনুরূপ। আবার বলী কান্ধারী ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে আছেন। মঞ্চে আবার মর্দানা ধীরে ধীরে প্রবেশ করলো। ]
মর্দানা -- হে তপস্বী , বিনীত অনুরোধ আপনাকে , আমি নানক দরবেশের অনুচর , দয়া করে আমায় একটু জল দিন।
বলী কান্ধারী ( প্রচন্ড রেগে গিয়ে ) -- তুমি আবার এসেছো ? ঐ নানক নিজেকে পির বলে জাহির করে ,আর নিজের চেলার জন্য সামান্য খাবার জলও জোগাড় করতে পারে না। আমি ঐ কাফেরের শিষ্যকে এক গন্ডুষ জলও দেবোনা। তুমি বেরিয়ে যাও এখান থেকে।
দৃশ্য - ৫
[ প্রথম দৃশ্যের অনুরূপ। নানক তাঁর অনুচরবৃন্দসহ বসে আছেন। আবার মর্দানা ধীরে ধীরে অসহায়ভাবে মঞ্চে প্রবেশ করলো। সে ধীরে ধীরে নানকের সামনে গিয়ে একেবারে মূর্ছিত হয়ে পড়লো।
নানক ( মর্দানার পিঠে হাত বুলিয়ে ) -- আশা ছেড়ো না মর্দানা , যাও ঐ সামনের পাথরটা তোলো।
মর্দানা ( কাতর কণ্ঠে ) -- এখন আবার পাথর তুলে কী হবে ?
নানক ( মৃদু হেঁসে ) -- তোলোই না !
[ মর্দানা ধীরে ধীরে মঞ্চে রাখা ছোট পাথরটির দিকে এগিয়ে গেল। তারপর অনেক কষ্ট করে পাথরটিকে সরিয়ে ফেললো। পাথরটা সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মর্দানা সহ অন্যান্য অনুচররা সকলেই চমকৃত। কেবল নানক মৃদু হাসছেন। সকলেই সেই পাথরটার দিকে '' জল ..... জল ....... জল '' বলে চিৎকার করে আনন্দে উচ্ছসিত হয়ে সেদিকে ছুটে যেতে শুরু করলো। এক্ষেত্রে নেপথ্য থেকে জল ঝরে পড়ার শব্দ সৃষ্টি করতে পারলে ভালো হয়। তাতে দৃশ্যটিকে আরো প্রাণবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা যাবে। সবাই যেন আনন্দে উচ্ছসিত হয়ে অঞ্জলিভরে জল পান করতে লাগলো। ]
দৃশ্য - ৬
[ দ্বিতীয় দৃশ্যের অনুরূপ। বলী কান্ধারী ধ্যানমগ্ন। এক মুহূর্ত পর তিনি নিজের ধ্যান ভঙ্গ করলেন। ]
বলী কান্ধারী -- ( স্বগোতক্তি ) -- যাই , কুয়োর কাছে একবার যাই , প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে , একটু জল পান করি।
[ বলী কান্ধারী যেদিকে কুয়ো আছে বলে মর্দানাকে ইঙ্গিত করেছিলেন , সেদিকে যেতে শুরু করলেন। কিন্তু কুয়োর কাছে পৌঁছে তিনি আশ্চর্য হয়ে পড়লেন। ]
এ কী ! কুয়োতে এক ফোঁটা জল নেই ! কোথায় গেল সব জল ? [ দর্শকদের দিকে ফিরে ] বুঝেছি , এ সবই ঐ নানকের কীর্তি। দাঁড়া দরবেশ তোর মজা দেখাচ্ছি।
[ এই বলে বলী কান্ধারী নিজের পুরোনো জায়গায় ফিরে গেলেন। তারপর সেখান থেকে বড়ো পাথরটিকে অতি কষ্টে ঠেলতে ঠেলতে মঞ্চের একদিক থেকে অন্য দিকে নিয়ে যেতে শুরু করলেন। ]
তোদের ....................... তোদের সবকটাকে পিষে মারবো।
[ একটা শেষ ঠেলা দিয়ে ]
যাঃ মর সবকটা এবার।
দৃশ্য - ৭
পঞ্চম দৃশ্যের শেষ অংশের অনুরূপ। সবাই '' জল ....... জল '' বলে আনন্দ করছে। অঞ্জলি ভরে জলপান করছে। নেপথ্যে জল গড়িয়ে পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন সময় বড় পাথরটি গড়িয়ে গড়িয়ে মঞ্চে প্রবেশ করলো। নানকের একজন অনুচর সেটি লক্ষ্য করলো।
জনৈক অনুচর -- সাবধান সকলে ! ওই দেখো একটা বড়ো পাথর গড়িয়ে আসছে।
নানক -- এ নিশ্চই ঐ বলী কান্ধারীর কাজ।
[ সকলেই সেই পাথরের দিকে তাকিয়ে ভীত হয়ে পড়লো। পাথর ধীরে ধীরে গড়িয়ে গড়িয়ে তাদের দিকেই আসছে। পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই - এমন পরিস্থিতি ফুটিয়ে তুলতে হবে। এমন সময় নানক হঠাৎ '' জয় নিরঙ্কার '' বলতে বলতে সেই পাথরটির দিকে এগিয়ে গেলেন এবং একহাত দিয়ে পাথরটিকে থামিয়ে দিলেন। সকলেই '' জয় নিরঙ্কার '' ধ্বনি দিতে শুরু করলো। আলো নিভে এল।
দৃশ্য - ৮
সাধারণ গৃহস্থের একটি ঘরের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে হবে। কিছু বাসনপত্র , একটি খাটিয়া - ইত্যাদি। মঞ্চে উপস্থিত মা আর তার ছেলে , মেয়ে। দুজনেই মায়ের কোল ঘেঁষে বসে।
মা -- কেমন লাগলো গল্পটা তোদের ?
ছেলে -- ভালো ; কিন্তু অবাস্তব।
মা -- অবাস্তব ! কেন ?
ছেলে -- পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে পড়া অত বড় পাথর একটা মানুষ কীভাবে হাত দিয়ে থামাবে ? ব্যাপারটা মনে হতেই হাসি পায়।
মা -- এতে অসম্ভবের কী আছে ? যা ঘটেছে তা'ই বললাম।
মেয়ে -- জানো মা , গল্পটা ইস্কুলেও মাস্টারমশাই আমাদের বলেছিলেন। কিন্তু আমি আর আমার বান্ধবীরা এই হাত দিয়ে গড়িয়ে পড়া পাথর থামিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে মাস্টারমশাইয়ের সাথে একমত হতে পারিনি। দাদাতো মাস্টারমশাইয়ের সাথে তর্ক জুড়ে দিয়েছিল !
ছেলে -- তর্ক করবো না ! অত বড় গড়িয়ে আসা পাথর কেউ কী করে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় ? অসম্ভব।
[ দ্বিতীয় দৃশ্যের অনুরূপ। বলী কান্ধারী ধ্যানমগ্ন। এক মুহূর্ত পর তিনি নিজের ধ্যান ভঙ্গ করলেন। ]
বলী কান্ধারী -- ( স্বগোতক্তি ) -- যাই , কুয়োর কাছে একবার যাই , প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে , একটু জল পান করি।
[ বলী কান্ধারী যেদিকে কুয়ো আছে বলে মর্দানাকে ইঙ্গিত করেছিলেন , সেদিকে যেতে শুরু করলেন। কিন্তু কুয়োর কাছে পৌঁছে তিনি আশ্চর্য হয়ে পড়লেন। ]
এ কী ! কুয়োতে এক ফোঁটা জল নেই ! কোথায় গেল সব জল ? [ দর্শকদের দিকে ফিরে ] বুঝেছি , এ সবই ঐ নানকের কীর্তি। দাঁড়া দরবেশ তোর মজা দেখাচ্ছি।
[ এই বলে বলী কান্ধারী নিজের পুরোনো জায়গায় ফিরে গেলেন। তারপর সেখান থেকে বড়ো পাথরটিকে অতি কষ্টে ঠেলতে ঠেলতে মঞ্চের একদিক থেকে অন্য দিকে নিয়ে যেতে শুরু করলেন। ]
তোদের ....................... তোদের সবকটাকে পিষে মারবো।
[ একটা শেষ ঠেলা দিয়ে ]
যাঃ মর সবকটা এবার।
Dramatisation Aloukik
অলৌকিক গল্পের নাট্যরূপ
দৃশ্য - ৭
পঞ্চম দৃশ্যের শেষ অংশের অনুরূপ। সবাই '' জল ....... জল '' বলে আনন্দ করছে। অঞ্জলি ভরে জলপান করছে। নেপথ্যে জল গড়িয়ে পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন সময় বড় পাথরটি গড়িয়ে গড়িয়ে মঞ্চে প্রবেশ করলো। নানকের একজন অনুচর সেটি লক্ষ্য করলো।
জনৈক অনুচর -- সাবধান সকলে ! ওই দেখো একটা বড়ো পাথর গড়িয়ে আসছে।
নানক -- এ নিশ্চই ঐ বলী কান্ধারীর কাজ।
[ সকলেই সেই পাথরের দিকে তাকিয়ে ভীত হয়ে পড়লো। পাথর ধীরে ধীরে গড়িয়ে গড়িয়ে তাদের দিকেই আসছে। পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই - এমন পরিস্থিতি ফুটিয়ে তুলতে হবে। এমন সময় নানক হঠাৎ '' জয় নিরঙ্কার '' বলতে বলতে সেই পাথরটির দিকে এগিয়ে গেলেন এবং একহাত দিয়ে পাথরটিকে থামিয়ে দিলেন। সকলেই '' জয় নিরঙ্কার '' ধ্বনি দিতে শুরু করলো। আলো নিভে এল।
দৃশ্য - ৮
সাধারণ গৃহস্থের একটি ঘরের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে হবে। কিছু বাসনপত্র , একটি খাটিয়া - ইত্যাদি। মঞ্চে উপস্থিত মা আর তার ছেলে , মেয়ে। দুজনেই মায়ের কোল ঘেঁষে বসে।
মা -- কেমন লাগলো গল্পটা তোদের ?
ছেলে -- ভালো ; কিন্তু অবাস্তব।
মা -- অবাস্তব ! কেন ?
ছেলে -- পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে পড়া অত বড় পাথর একটা মানুষ কীভাবে হাত দিয়ে থামাবে ? ব্যাপারটা মনে হতেই হাসি পায়।
মা -- এতে অসম্ভবের কী আছে ? যা ঘটেছে তা'ই বললাম।
মেয়ে -- জানো মা , গল্পটা ইস্কুলেও মাস্টারমশাই আমাদের বলেছিলেন। কিন্তু আমি আর আমার বান্ধবীরা এই হাত দিয়ে গড়িয়ে পড়া পাথর থামিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে মাস্টারমশাইয়ের সাথে একমত হতে পারিনি। দাদাতো মাস্টারমশাইয়ের সাথে তর্ক জুড়ে দিয়েছিল !
ছেলে -- তর্ক করবো না ! অত বড় গড়িয়ে আসা পাথর কেউ কী করে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় ? অসম্ভব।
দৃশ্য - ৯
অষ্টম দৃশ্যের অনুরূপ। মা আর মায়ের বান্ধবী একসাথে বসে কথা বলছেন। দুজনেই বেশ আতঙ্কিত ও কথা বলতে বলতে আঁচলে চোখ মুছছেন। এই সময় ছেলে ও মেয়ে মঞ্চে প্রবেশ করে।
ছেলে -- মা , তোমরা কাঁদছো কেন ?
মেয়ে -- কী হয়েছে মা ?
মা -- ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে।
ছেলে -- কী হয়েছে মা ?
মায়ের বান্ধবী -- দূরের শহরের ফিরিঙ্গিরা নিরস্ত্র ভারতীয়দের ওপর গুলি করেছে। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই আছে মৃতদের মধ্যে। বাকীদের অন্য শহরের জেলে পাঠানো হচ্ছে। কয়েদিদের সব ক্ষুধায় - তেষ্টায় মৃতের মতো অবস্থা। তা'ও আবার ফিরিঙ্গিরা হুকুম করেছে - তাদের ট্রেন যেন কোথাও না থামে। পাঞ্জাসাহেবের লোকজন খবরটা পেয়ে খুবই উত্তেজিত। এই পাঞ্জাসাহেবেই গুরুনানক মর্দানার তেষ্টা মিটিয়েছিলেন। সেই শহর দিয়ে খিদে - তেষ্টায় কাতর বিপ্লবীদের ট্রেন চলে যাবে - এ হতে পারেনা। আমরা সবাই যে কোনো মূল্যে ট্রেন থামিয়ে বিপ্লবীদের খিদে - তেষ্টা নিবারণ করবো।
[ একটু থেমে ] চলো দিদি , সময় তো হয়ে এলো।
মা -- হ্যাঁ চলো।
[ এই বলে মা একটা ঢাকা হাঁড়ি নিয়ে তাঁর বান্ধবীর সাথে বেড়িয়ে পড়লেন। ধীরে ধীরে আলো নিভে এল। ]
দৃশ্য - ১০
নবম দৃশ্যের অনুরূপ। ছেলে ও মেয়ে মঞ্চে উপবিষ্ট। তাদের মধ্যে প্রচন্ড ভয়ের ভাব ফুটে উঠছে।
মেয়ে -- দাদা ,আমারতো খুব ভয় করছে। মা আর মাসীর যাওয়া তো অনেক্ষন হয়ে গেল। কী হলো ওখানে কে জানে !
[ ঠিক এই সময় মা আর মায়ের বান্ধবী মঞ্চে প্রবেশ করলো। তাদের ক্লান্ত ও আতঙ্কিত দেখাচ্ছে। ]
মেয়ে -- মা , কী হয়েছে তোমাদের ? ওখানে কী হলো ? বলো না মা , তোমাদের এমন দেখাচ্ছে কেন ?
মা -- ( কান্না ভেঁজা কণ্ঠে ) -- যা হলো , ভাবা যাচ্ছে না।
ছেলে -- মাসি তুমি বলো না কী হয়েছে ?
মায়ের বান্ধবী -- ঝড়ের গতিতে আসা ট্রেনকে কিভাবে থামানো যাবে - সেই নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় ছিলাম। এরপর ট্রেন আসার আগের মুহূর্তে আমরা সবাই , আমার ছেলেপুলের বাবা ও তারপর ওঁর সঙ্গীরা সকলেই ট্রেন লাইনে শুয়ে পড়লেন। ওঁদের পেছনে এক একজন করে আমরা বউ - বাচ্চারা। তীক্ষ্ণ হুইসেল দিতে দিতে ট্রেন এলো। গতি আগেই কমিয়েছে ; কিন্তু থামলো অনেক দূরে এসে। ............. দেখি ওঁর বুকের উপর দিয়ে চাকা , তারপর ওঁর সঙ্গীদের উপর দিয়ে ; আমি চোখ বুঁজলাম। চোখ খুলে দেখি ট্রেনটা একেবারে আমার মাথার কাছে এসে থেমেছে। পাশে থাকা সকলের মুখ থেকে '' নিরঙ্কার '' ধ্বনি '' বেরুচ্ছে। ট্রেনটা পিছোতে লাগলো , লাশগুলো কেটে দুমড়ে - মুচড়ে গেল। স্বচক্ষে দেখেছি , খালপাড়ের সেতুটির দিকে রক্তের স্রোত।
[ মা আর মায়ের বান্ধবী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। ছেলে ও মেয়ে মঞ্চের সামনের দিকে এগিয়ে গেল। তারা এখন দর্শকদের দিকে মুখ ফিরে।
ছেলে -- গুরুনানক যেভাবে পাথরের চাঙড় থামিয়েছিলেন , ইচ্ছে থাকলে , বিশ্বাস থাকলে ঝড়ের গতিতে আসা ট্রেনকেও থামানো সম্ভব।
মেয়ে -- কিন্তু দাদা গুরুনানক গড়িয়ে আসা অত বড় পাথরকে হাত দিয়ে কিভাবে থামাবেন ? এটা অসম্ভব।
ছেলে -- ঝড়ের বেগে ছুটে আসা ট্রেনকে থামানো গেল , আর পাথরের চাঁই থামানো যাবে না কেন ?
মেয়ে -- ( দাদার মুখ ভালো করে লক্ষ্য করে ) -- দাদা তোর চোখে জল !
ছেলে -- যাঁরা জীবন তুচ্ছ করে ট্রেন থামিয়ে খিদে - তেষ্টায় কাতর দেশবাসীকে রুটি - জল পৌঁছে দিল , চোখের জলটা হয়তো তাঁদের জন্য।
[ পর্দা নেমে এল। ]