Pages

Powered by Blogger.

Pages

Pages

Pages

facebook twitter instagram pinterest bloglovin Email
Career CLASS 11 (XI) Class XI 1st Semester CLASS XI 2nd Semester H.S. 3rd SEM H.S. 4th SEM H.S. EDUCATION H.S. HISTORY HS SOCIOLOGY HS SUGGESTION INDIAN HISTORY NCERT POLITY PROJECT Sociological Studies Teaching & Education TEST PAPERS SOLVE TEST PAPERS SOLVE 2020 WORLD HISTORY XI EDUCATION XI HISTORY XI POL SC XI SOCIOLOGY XII Bengali XII Sanskrit

Pages

Nandan Dutta

School project and education news.

Pages

Dramatisation Aloukik

অলৌকিক গল্পের নাট্যরূপ


দৃশ্য ১
মঞ্চ পরিকল্পনা :-
দিনের আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও দৃশ্যটিতে দুটি পাথরের প্রয়োজন। একটি পাথর মানুষের হাঁটুর উচ্চতার সমান ও অন্যটি হবে মানুষের উচ্চতার সমান। পাথরটি তৈরী করতে হবে থার্মোকল দিয়ে এবং তার আকার হবে গোল।
[ মঞ্চে নানক। মর্দানা সহ নানকের অন্যান্য অনুচররা তাঁর সাথে আছেন। তাঁরা মঞ্চে ধীর পায়ে প্রদক্ষিণ করছেন - যেন অনেকটা পথ তাঁরা হেঁটে চলেছেন। সকলেই খুব ক্লান্ত। ]
মর্দানা -- ( অত্যন্ত ক্লান্ত স্বরে ) -- জল ........ , একটু জল ......... । ভয়ানক তেষ্টা ..........
নানক -- কোথায় জল ?
মর্দানা -- জলের অভাবে গলাটা যেন ফেটে যাচ্ছে। জল না পেলে একপা'ও চলতে পারছি না।
নানক -- ভাই মর্দানা , সবুর করো। পরের গায়েঁ গেলেই জল পাবে।
মর্দানা -- নাঃ , আমি আর পারছি না .............
নানক -- দ্যাখো মর্দানা , কোথাও জল নেই , খানিক্ষন অপেক্ষা করো। এটাকে ভগবানের অভিপ্রায় বলেই মেনে নাও।
[ এ কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মর্দানা অজ্ঞান হয়ে মঞ্চে পড়ে গেল। গুরুনানক ও অন্যান্য অনুচররা অবাক হলেন এবং তারপর তারাও বসে পড়লেন। এক মুহূর্ত পর মর্দানা জ্ঞান ফিরে পেল এবং জলের অভাবে ডাঙায় তোলা মাছের মতো ছটফট করতে লাগলো এবং '' একটু জল , একটু জল '' করে কাতরভাবে চিৎকার করতে লাগলো। ]
নানক -- ভাই মর্দানা , এখানে পাহাড়ের চূড়োয় বলী কান্ধারী নামে এক দরবেশ কুটির বেঁধে থাকেন। ওঁর কাছে জল পেতে পারো। এ তল্লাটে ওঁর কুয়ো ছাড়া আর কোথাও জল নেই।
মর্দানা ( কাতর কণ্ঠে ) -- ঐ পাহাড়ের চূড়োয় উঠবার শক্তি আমার নেই।
নানক -- একটু চেষ্টা করো মর্দানা। চেষ্টা করলেই সব পারবে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখো।
[ মর্দানা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো , তারপর দুর্বলভাবে চলতে লাগলো। বারে বারে চোখের উপর হাত রাখলো যেন সে এমন একটা ভাব ফুটিয়ে তুলতে চাইছে যে পাহাড় খুব উঁচু। আলো ধীরে ধীরে নিভে এলো। ]

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।


দৃশ্য - ২
মঞ্চ পরিকল্পনা :-
বিশেষ কোনো সাজ - সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। বলী কান্ধারী মঞ্চে উপবিষ্ট। দর্শকদের দিকে মুখ করে তিনি ধ্যানমগ্ন। ধীরে ধীরে মর্দানা মঞ্চে প্রবেশ করলো। কাতর কণ্ঠে
'' জল ........... একটু জল '' বলতে বলতে সে বলী কান্ধারীর দিকে এগোতে লাগলো। ]
মর্দানা -- জল .......... একটু জল।
বলী কান্ধারী -- ( মর্দানার উপস্থিতি টের পেয়ে ) -- হে পথিক কে তুমি ?
মর্দানা -- আমি মর্দানা , অনেক দূর থেকে আসছি , আরো অনেকটা পথ যেতে হবে। খুব তেষ্টা পেয়েছে। একটু জল ............ একটু জল না পেলে প্রাণটা যেন বেড়িয়ে যাবে।
বলী কান্ধারী -- ঐ..... ঐ দিকে ( একটি নির্দিষ্ট দিকে ইঙ্গিত করে ) কুয়ো রয়েছে। ওখানে যাও , জল পান করো।
[ মর্দানা ধীরে ধীরে একটি নির্দিষ্ট দিকে অগ্রসর হতে থাকলো। হঠাৎ বলী কান্ধারী যেন কিছু একটা সন্দেহ করে ]
তুমি কোথা থেকে আসছো ? কাদের সাথে আসছো ?
মর্দানা -- ( বলী কান্ধারীর দিকে ফিরে ) -- হে তপস্বী , আমি নানকের সঙ্গী। ঘুরতে ঘুরতে এদিকে এসে পড়েছি। বড্ড তেষ্টা পেয়েছে ; কিন্তু নীচে কোথাও জল নেই।
বলী কান্ধারী -- ( প্রচন্ড রেগে গিয়ে ) -- কী বললে তুমি .......... তুমি নানকের অনুচর , বেড়িয়ে যাও , বেড়িয়ে যাও এখান থেকে।
[ মর্দানা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আলো ধীরে ধীরে নিভে এল। ]

Dramatisation Aloukik

অলৌকিক গল্পের নাট্যরূপ

দৃশ্য - ৩
[ প্রথম দৃশ্যের অনুকরণে। নানক ও তাঁর সঙ্গীরা একইভাবে বসে আছেন। মর্দানা ধীরে ধীরে আরো ক্লান্ত ও কাতরভাবে প্রবেশ করলো। ]
নানক -- ( মর্দানা প্রবেশের পরে ) -- কি মর্দানা জল পেলে ?
মর্দানা -- নাঃ , আপনার নাম কানে যেতেই  বলী কান্ধারী সঙ্গে সঙ্গে আমায় তাড়িয়ে দিলেন।
নানক -- মর্দানা , তুমি আর একবার বলী কান্ধারীর কাছে যাও। এবার নম্রভাবে বলবে - ''আমি নায়ক নানক দরবেশের অনুচর। ''
মর্দানা -- নাঃ , আমি আর পাহাড়ে চড়তে পারবো না ; প্রাণটা এখানেই চলে যাবে মনে হচ্ছে।
নানক -- একবার আর চেষ্টা করে দেখো মর্দানা। এভাবে হাল ছাড়তে নেই।
[ মর্দানা আবার ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলো। ]

দৃশ্য - ৪
[ দ্বিতীয় দৃশ্যের অনুরূপ। আবার বলী কান্ধারী ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে আছেন। মঞ্চে আবার মর্দানা ধীরে ধীরে প্রবেশ করলো। ]
মর্দানা -- হে তপস্বী , বিনীত অনুরোধ আপনাকে , আমি নানক দরবেশের অনুচর , দয়া করে আমায় একটু জল দিন।
বলী কান্ধারী ( প্রচন্ড রেগে গিয়ে ) -- তুমি আবার এসেছো ? ঐ নানক নিজেকে পির বলে জাহির করে ,আর নিজের চেলার জন্য সামান্য খাবার জলও জোগাড় করতে পারে না। আমি ঐ কাফেরের শিষ্যকে এক গন্ডুষ জলও দেবোনা। তুমি বেরিয়ে যাও এখান থেকে।
দৃশ্য - ৫
[ প্রথম দৃশ্যের অনুরূপ। নানক তাঁর অনুচরবৃন্দসহ বসে আছেন। আবার মর্দানা ধীরে ধীরে অসহায়ভাবে মঞ্চে প্রবেশ করলো। সে ধীরে ধীরে নানকের সামনে গিয়ে একেবারে মূর্ছিত হয়ে পড়লো।
নানক ( মর্দানার পিঠে হাত বুলিয়ে ) -- আশা ছেড়ো না মর্দানা , যাও ঐ সামনের পাথরটা তোলো।
মর্দানা ( কাতর কণ্ঠে ) -- এখন আবার পাথর তুলে কী হবে ?
নানক ( মৃদু হেঁসে ) -- তোলোই না !
[ মর্দানা ধীরে ধীরে মঞ্চে রাখা ছোট পাথরটির দিকে এগিয়ে গেল। তারপর অনেক কষ্ট করে পাথরটিকে সরিয়ে ফেললো। পাথরটা সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মর্দানা সহ অন্যান্য অনুচররা সকলেই চমকৃত। কেবল নানক মৃদু হাসছেন। সকলেই সেই পাথরটার দিকে  '' জল ..... জল ....... জল '' বলে চিৎকার করে আনন্দে উচ্ছসিত হয়ে সেদিকে ছুটে যেতে শুরু করলো। এক্ষেত্রে নেপথ্য থেকে জল ঝরে পড়ার শব্দ সৃষ্টি করতে পারলে ভালো হয়। তাতে দৃশ্যটিকে আরো প্রাণবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা যাবে। সবাই যেন আনন্দে উচ্ছসিত হয়ে অঞ্জলিভরে জল পান করতে লাগলো। ]

দৃশ্য - ৬
[ দ্বিতীয় দৃশ্যের অনুরূপ। বলী কান্ধারী ধ্যানমগ্ন। এক মুহূর্ত পর তিনি নিজের ধ্যান ভঙ্গ করলেন। ]
বলী কান্ধারী -- ( স্বগোতক্তি ) -- যাই , কুয়োর কাছে একবার যাই , প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে , একটু জল পান করি।
[ বলী কান্ধারী যেদিকে কুয়ো আছে বলে মর্দানাকে ইঙ্গিত করেছিলেন , সেদিকে যেতে শুরু করলেন। কিন্তু কুয়োর কাছে পৌঁছে তিনি আশ্চর্য হয়ে পড়লেন। ]
এ কী ! কুয়োতে এক ফোঁটা জল নেই ! কোথায় গেল সব জল ? [ দর্শকদের দিকে ফিরে ] বুঝেছি , এ সবই ঐ নানকের কীর্তি। দাঁড়া দরবেশ তোর মজা দেখাচ্ছি।
[ এই বলে বলী কান্ধারী নিজের পুরোনো জায়গায় ফিরে গেলেন। তারপর সেখান থেকে বড়ো পাথরটিকে অতি কষ্টে ঠেলতে ঠেলতে মঞ্চের একদিক থেকে অন্য দিকে নিয়ে যেতে শুরু করলেন। ]
তোদের ....................... তোদের সবকটাকে পিষে মারবো।
[ একটা শেষ ঠেলা দিয়ে ]
যাঃ মর সবকটা এবার।

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।


Dramatisation Aloukik

অলৌকিক গল্পের নাট্যরূপ


দৃশ্য - ৭
পঞ্চম দৃশ্যের শেষ অংশের অনুরূপ। সবাই '' জল ....... জল '' বলে আনন্দ করছে। অঞ্জলি ভরে জলপান করছে। নেপথ্যে জল গড়িয়ে পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন সময় বড় পাথরটি গড়িয়ে গড়িয়ে মঞ্চে প্রবেশ করলো। নানকের একজন অনুচর সেটি লক্ষ্য করলো।
জনৈক অনুচর -- সাবধান সকলে ! ওই দেখো একটা বড়ো পাথর গড়িয়ে আসছে।
নানক -- এ নিশ্চই ঐ বলী কান্ধারীর কাজ।
[ সকলেই সেই পাথরের দিকে তাকিয়ে ভীত হয়ে পড়লো। পাথর ধীরে ধীরে গড়িয়ে গড়িয়ে তাদের দিকেই আসছে। পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই - এমন পরিস্থিতি ফুটিয়ে তুলতে হবে। এমন সময় নানক হঠাৎ '' জয় নিরঙ্কার '' বলতে বলতে সেই পাথরটির দিকে এগিয়ে গেলেন এবং একহাত দিয়ে পাথরটিকে থামিয়ে দিলেন। সকলেই '' জয় নিরঙ্কার '' ধ্বনি দিতে শুরু করলো। আলো নিভে এল।
দৃশ্য - ৮
সাধারণ গৃহস্থের একটি ঘরের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে হবে। কিছু বাসনপত্র , একটি খাটিয়া - ইত্যাদি। মঞ্চে উপস্থিত মা আর তার ছেলে , মেয়ে। দুজনেই মায়ের কোল ঘেঁষে বসে।
মা -- কেমন লাগলো গল্পটা তোদের ?
ছেলে -- ভালো ; কিন্তু অবাস্তব।
মা -- অবাস্তব ! কেন ?
ছেলে -- পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে পড়া অত বড় পাথর একটা মানুষ কীভাবে হাত দিয়ে থামাবে ? ব্যাপারটা মনে হতেই হাসি পায়।
মা -- এতে অসম্ভবের কী আছে ? যা ঘটেছে তা'ই বললাম।
মেয়ে -- জানো মা , গল্পটা ইস্কুলেও মাস্টারমশাই আমাদের বলেছিলেন। কিন্তু আমি আর আমার বান্ধবীরা এই হাত দিয়ে গড়িয়ে পড়া পাথর থামিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে মাস্টারমশাইয়ের সাথে একমত হতে পারিনি। দাদাতো মাস্টারমশাইয়ের সাথে তর্ক জুড়ে  দিয়েছিল !
ছেলে -- তর্ক করবো না ! অত বড় গড়িয়ে আসা পাথর কেউ কী করে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় ? অসম্ভব।


দৃশ্য - ৯
অষ্টম দৃশ্যের অনুরূপ। মা আর মায়ের বান্ধবী একসাথে বসে কথা বলছেন। দুজনেই বেশ আতঙ্কিত ও কথা বলতে বলতে আঁচলে চোখ মুছছেন। এই সময় ছেলে ও মেয়ে মঞ্চে প্রবেশ করে।
ছেলে -- মা , তোমরা কাঁদছো কেন ?
মেয়ে -- কী হয়েছে মা ?
মা -- ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে।
ছেলে -- কী হয়েছে মা ?
মায়ের বান্ধবী -- দূরের শহরের ফিরিঙ্গিরা নিরস্ত্র ভারতীয়দের ওপর গুলি করেছে। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই আছে মৃতদের মধ্যে। বাকীদের অন্য শহরের জেলে পাঠানো হচ্ছে। কয়েদিদের সব ক্ষুধায় - তেষ্টায় মৃতের মতো অবস্থা। তা'ও আবার ফিরিঙ্গিরা হুকুম করেছে - তাদের ট্রেন যেন কোথাও না থামে। পাঞ্জাসাহেবের লোকজন খবরটা পেয়ে খুবই উত্তেজিত। এই পাঞ্জাসাহেবেই গুরুনানক মর্দানার তেষ্টা মিটিয়েছিলেন। সেই শহর দিয়ে খিদে - তেষ্টায় কাতর বিপ্লবীদের ট্রেন চলে যাবে - এ হতে পারেনা। আমরা সবাই যে কোনো মূল্যে ট্রেন থামিয়ে বিপ্লবীদের খিদে - তেষ্টা নিবারণ করবো।
[ একটু থেমে ] চলো দিদি , সময় তো হয়ে এলো।
মা -- হ্যাঁ চলো।
[ এই বলে মা একটা ঢাকা হাঁড়ি নিয়ে তাঁর বান্ধবীর সাথে বেড়িয়ে পড়লেন। ধীরে ধীরে আলো নিভে এল। ]

দৃশ্য - ১০
নবম দৃশ্যের অনুরূপ। ছেলে ও মেয়ে মঞ্চে উপবিষ্ট। তাদের মধ্যে প্রচন্ড ভয়ের ভাব ফুটে উঠছে।
মেয়ে -- দাদা ,আমারতো খুব ভয় করছে। মা আর মাসীর যাওয়া তো অনেক্ষন হয়ে গেল। কী হলো ওখানে কে জানে !
[ ঠিক এই সময় মা আর মায়ের বান্ধবী মঞ্চে প্রবেশ করলো। তাদের ক্লান্ত ও আতঙ্কিত দেখাচ্ছে। ]
মেয়ে -- মা , কী হয়েছে তোমাদের ? ওখানে কী হলো ? বলো না মা , তোমাদের এমন দেখাচ্ছে কেন ?
মা -- ( কান্না ভেঁজা কণ্ঠে ) -- যা হলো , ভাবা যাচ্ছে না।
ছেলে -- মাসি তুমি বলো না কী হয়েছে ?
মায়ের বান্ধবী -- ঝড়ের গতিতে আসা ট্রেনকে কিভাবে থামানো যাবে - সেই নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় ছিলাম। এরপর ট্রেন আসার আগের মুহূর্তে আমরা সবাই , আমার ছেলেপুলের বাবা ও তারপর ওঁর সঙ্গীরা সকলেই ট্রেন লাইনে শুয়ে পড়লেন। ওঁদের পেছনে এক একজন করে আমরা বউ - বাচ্চারা। তীক্ষ্ণ হুইসেল দিতে দিতে ট্রেন এলো। গতি আগেই  কমিয়েছে ; কিন্তু থামলো অনেক দূরে এসে। ............. দেখি ওঁর বুকের উপর দিয়ে চাকা , তারপর ওঁর সঙ্গীদের উপর দিয়ে ; আমি চোখ বুঁজলাম। চোখ খুলে দেখি ট্রেনটা একেবারে আমার মাথার কাছে এসে থেমেছে। পাশে থাকা সকলের মুখ থেকে '' নিরঙ্কার '' ধ্বনি '' বেরুচ্ছে। ট্রেনটা পিছোতে লাগলো , লাশগুলো কেটে দুমড়ে - মুচড়ে গেল। স্বচক্ষে দেখেছি , খালপাড়ের সেতুটির দিকে রক্তের স্রোত।
[ মা আর মায়ের বান্ধবী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। ছেলে ও মেয়ে মঞ্চের সামনের দিকে এগিয়ে গেল। তারা এখন দর্শকদের দিকে মুখ ফিরে।
ছেলে -- গুরুনানক যেভাবে পাথরের চাঙড়  থামিয়েছিলেন , ইচ্ছে থাকলে , বিশ্বাস থাকলে ঝড়ের গতিতে আসা ট্রেনকেও থামানো সম্ভব।
মেয়ে -- কিন্তু দাদা গুরুনানক গড়িয়ে আসা অত বড় পাথরকে হাত দিয়ে কিভাবে থামাবেন ? এটা অসম্ভব।
ছেলে -- ঝড়ের বেগে ছুটে আসা ট্রেনকে থামানো গেল , আর পাথরের চাঁই থামানো যাবে না কেন ?
মেয়ে -- ( দাদার মুখ ভালো করে লক্ষ্য করে ) -- দাদা তোর চোখে জল !
ছেলে -- যাঁরা জীবন তুচ্ছ করে ট্রেন থামিয়ে খিদে - তেষ্টায় কাতর দেশবাসীকে রুটি - জল পৌঁছে দিল , চোখের জলটা হয়তো তাঁদের জন্য।
[ পর্দা নেমে এল। ]       

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।         
Share
Tweet
Pin
Share
2 comments

Dramatisation of Thank You Ma'am

HS ENGLISH PROJECT THANK YOU MA'AM

THANK YOU MA'AM - DRAMATISATION 


Characters -
Mrs Jones - a large woman .
Roger -  a fourteen or fifteen years old boy with frail and willow - wild , in tennis shoes and blue jeans .

Stage Preparation -

A single door in the left of the stage . Some of the house hold furniture should be there . Two or three chairs at the center of the stage with a center table . There should be a sink at the right of the stage . All the stage should be lighted properly and all the other efforts should have taken to maintain a homely atmosphere .

Dramatisation of Thank You Ma'am


SCENE : ONE

[ Mrs Jones grabs the boy and dragging slowly to the center of the stage . ]
Mrs Jones -- Come ........... come here , ......... you are just a little boy and you already become a pocket picker ! ........... come ......... come [ when they reached at the center ] ..... now sit down on the chair ..... come sit.
 [ Mrs Jones force him to sit on the chair . After his sitting Mrs Jones take a breath of relief and then she also sits down on the opposite chair . ]
What is your name ?

Roger -- Roger .

Mrs Jones -- Ain't you ashamed of your - self ?

Roger -- Yes Ma'am .

Mrs Jones -- Ain't you got nobody in your home to tell you to wash your face ?

Roger -- No ma'am . There's nobody in my home .

[ After a little pause ]
Mrs Jones -- ( in a motherly voice ) -- I think you are hungry . Just go to the sink , wash your face and during this I will prepare some coka with milk .
[ Roger stands up and slowly goes to the sink ]

Mrs Jones -- ( loud voice ) -- Let the water run until it gets warm , there is a clean towel also .

Roger ( Bending over the sink ) -- You gonna take me to jail ?

Mrs Jones ( Surprised for a second and then replied with a motherly smile ) -- No , with that face , I would not take you anywhere . Clean your face properly son .

Dramatisation of Thank You Ma'am

LIST OF ALL PROJECTS.

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.



SCENE : TWO

[ Two middle sized bawls in the hand of Mrs Jones and Roger is drying his face with the towel .]
Mrs Jones -- Hay Roger , my son , come here ....... your dinner is ready .
[ Mrs Jones put down the bowls on the table and they both sit on the chairs . ]
Now start ..... [ A motherly command by Mrs Jones ]
[ Now they start eating and after a few second ..... ]
Now tell me why were you trying to snatch my purse ?

Roger -- I wanted to buy a pair of blue suede shoes .
[ Mrs Jones looking at him angrily for a moment . Then left her spoon and stands up and come to the front of the stage . ]

Mrs Jones ( after a long pause ) -- You know my son ............ I were young once and I wanted things I could not get .
[ Another long pause . Roger is in opened mouth in surprise .]
But I did't snatch people's pocketbooks . I have done things , too , which I would not tell you , son - neither tell God , if he did't already know .
[ A short pause .]
However , ( breaking the ice ) I will give you something ( she takes some money from her pocket )
here .......... ( turn to Roger and comes near him ) ....... take this ten dollars and buy yourself some blue suede shoes ............... And next time , do not make the mistake of latching onto my pocketbook nor nobody's else's ................ because ............ shoes come by devilish like that , will burn your feet .
[ Roger is looking at Mrs Jones surprisingly . ]
Now take this and help me .
[ Roger takes the money and hold them in his hand for some time .]

[ A long pause . ]
I think either your dinner is finished or , you are not interested in it . However , as you wish . But now I have to get some rest . So I got to get my rest now . ........ But I wish you would behave yourself , son .... from here on in .
[ Roger puts the money into his pocket and stands up slowly , surprisingly looking at Mrs Jones . Then Mrs Jones gets up from her chair . ]
Now let's move .
[ She led him towards a door which is pre sated on the stage in such a way that the audience can see both of them . Mrs Jones opened the door . ]
Good night ! Behave yourself boy !
[ She said the last words looking at the outdoor and not at the Roger . The motherly face and smile are vanished now . Roger exits through the door and then turned up and looking at Mrs Jones .

Roger -- Thank......... [ Mrs Jones banged the door . ]
[ Tears from Roger's eyes and in another side tears from Mrs Jones's eyes too . She is completely exhausted and she sits down in a chair , hides her face with her hands and started weeping . In the other side of the door Roger is still there and say ....]

Roger -- Thank you ma'am . 

LIST OF ALL PROJECTS.

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.     
Share
Tweet
Pin
Share
1 comments

HS BENGALI PROJECT LEELA MAJUMDAR 

উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প লীলা মজুমদার 

লীলা মজুমদার জীবন ও সাহিত্য  



প্রকল্প রচনার উদ্দেশ্য :-
যে সকল উদ্দেশ্য গুলি সামনে রেখে প্রকল্পটি রচনার কাজে মনোনিবেশ করা হয়েছে , সেগুলি হলো -
১. সাহিত্যিক লীলা মজুমদারের পূর্ণাঙ্গ জীবন সম্পর্কে জানা।
২. তাঁর সাহিত্যকর্মগুলি সম্পর্কে অবগত হওয়া।
৩. লীলা মুজুমদারের সাহিত্য কর্ম গুলির মধ্যে শিশু সাহিত্য অনেকটা স্থান দখল করে আছে। শিশু সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর ভূমিকা পর্যালোচনা করাও প্রকল্পটির অপর একটি উদ্দেশ্য।
৪. তাঁর লেখনীর রচনা শৈলী ও রচনা বৈশিষ্ট সম্পর্কে আলোচনা করা।
৫. বর্তমান প্রজন্মের কাছে লীলা মজুমদার কর্তৃক সাহিত্য সৃষ্টিগুলি কতটা প্রাসঙ্গিক - সে সম্পর্কে আলোচনা করা।
৬. গ্রন্থ সাহিত্য ছাড়াও আরো অন্যান্য গণমাধ্যমগুলির ওপর লীলা মজুমদারের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা।
৭. সর্বোপরি সুস্থ সাহিত্য পরিবেশের বিকাশ ঘটাতে লীলা মজুমদারের সাহিত্য কীর্তিগুলির প্রতি শিক্ষার্থীদের কৌতুহলী করে তোলা।

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

প্রকল্পটির গুরুত্ব :-
যে সকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে , সেগুলি হলো -
প্রথমতঃ - প্রকল্পটির মাধ্যমে লীলা মজুমদারের পূর্ণাঙ্গ জীবন সম্পর্কে জানা যাবে।
দ্বিতীয়তঃ - লীলা মজুমদারের সম্পূর্ণ সাহিত্যকর্ম গুলি সম্পর্কে জানা যাবে প্রকল্পটির মাধ্যমে।
তৃতীয়তঃ - এই প্রকল্পটি পাঠের মধ্যে দিয়ে শিশু সাহিত্য জগতে লীলা মজুমদারের অবস্থান সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা গঠন করা সম্ভব।
চতুর্থতঃ - বর্তমান প্রজন্মের কাছে লীলা মজুমদার কতটা প্রাসঙ্গিক - সে সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকর হতে পারে।
পঞ্চমতঃ - লীলা মজুমদারের রচনা শৈলী ও রচনা বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি সহায়ক হবে।
ষষ্ঠত :- সর্বোপরি , লীলা মজুমদারের সাহিত্য কীর্তিগুলির প্রতি শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তুলতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

HS BENGALI PROJECT LEELA MAJUMDAR 

উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প লীলা মজুমদার 


তথ্য সংগ্রহ 


                                       লীলা মজুমদার : শ্রেষ্ঠ শিশু সাহিত্যিক    

 (ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯০৮ - এপ্রিল ৫, ২০০৭)

    ভূমিকা :-         আমাদের দেশে ‘শতায়ু হও’ বলে আশীর্বাদ করা হয়ে থাকে। বাঙ্গালী লেখক-লেখিকাদের মধ্যে মাত্র দুজন এই একশ বছরের আয়ু স্পর্শ করেছেন বা স্পর্শ করার কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছেছিলেন। তাঁরা হলেন - নীরদ চন্দ্র চৌধুরী এবং লীলা  মজুমদার। তবে শত বর্ষের কাছাকাছি আয়ুতে পৌঁছালে অনেক ক্ষেত্রেই সুখের চেয়ে দুঃখ বেদনাই বেশী থাকে। নীরদ চন্দ্র চৌধুরী প্রায় পুরো সময়টাকেই লেখা পড়ার কাজে লাগিয়েছিলেন।  লীলা মজুমদার শেষের প্রায় এক দশক বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু লীলা মজুমদার নিজের কর্মজীবনে এমন কিছু কালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যে অমর করে রেখেছে। বিশেষতঃ শিশু সাহিত্যে লীলা মজুমদার একটি অপ্রতিদ্বন্দী নাম। বর্তমান প্রকল্পটিতে লীলা মজুমদারের পূর্ণাঙ্গ জীবন , তাঁর সাহিত্য কর্মগুলির আলোচনার সাথে সাথে তাঁর রচনা বৈশিষ্ট ও বর্তমান প্রজন্মে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদি বিষয়গুলির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।

 জন্ম ও জন্মস্থান :- ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি   লীলা মজুমদার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা জেলার বিখ্যাত রায় পরিবারের গড়পাড় রোডের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

 পেশা :- ছোটোগল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক।

 পারিবারিক পরিচয় :- তিনি একজন ভারতীয় বাঙালি লেখিকা। তিনি কলকাতার রায় পরিবারের প্রমদারঞ্জন রায় ও সুরমাদেবীর সন্তান। তাঁর বিবাহের পূর্বে নাম ছিল লীলা রায়। তাঁর জন্ম রায় পরিবারের গড়পাড় রোডের বাড়িতে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (যাঁর পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়) ছিলেন প্রমদারঞ্জনের ভাই এবং লীলা মজুমদারের কাকা। সেইসূত্রে লীলা হলেন সুকুমার রায়ের খুড়তুতো বোন এবং সত্যজিৎ রায়ের পিসি।

 কর্মজীবন :- তাঁর শৈশব অতিবাহিত হয়েছিল শিলং-এ। এখানে তিনি ১৯১৯ সাল পর্যন্ত লরেটো কনভেন্টে Loreto Convent তিনি পড়াশোনা করেন। ১৯১৯ সালে তাঁর পিতা কলকাতায় চলে এলে, ইনি সেন্ট জন'স ডাইয়োসেসান স্কুলে ভর্তি হন এবং এখান থেকে ১৯২৪ সালে মেয়েদের ভিতর দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর ইনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষায় বিএ অনার্স এবং এমএ পাশ করেন। উল্লেখ্য উভয় পরীক্ষাতেই তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজী পরীক্ষায় তিনি ইংরাজীতে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেন।


                ১৯৩১ সালে তিনি দার্জিলি-এর মহারাণী বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এরপর রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে তিনি শান্তিনিকেতন স্কুলে চলে আসেন। এখানে এক বৎসর থাকার পর তিনি কলকাতার অস্টাস কলেজের মহিলা শাখায় যোগ দেন। এখানেও তিনি বেশি থাকেন নি। মাঝে কিছুদিন তিনি অল-ইন্ডিয়া রেডিতে সাত-আট বছর কাজ করেছেন।

 দাম্পত্য জীবন :- ১৯৩৩ সালে লীলা মজুমদার বিবাহ করেন দন্ত চিকিৎসক ডাঃ সুধীর কুমার মজুমদারকে। এই বিবাহে তাঁর পিতার প্রবল বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও তিনি তার স্বনির্বাচিত পাত্রকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেন। পিতৃ পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট থাকলেও পিতার সঙ্গে সম্পর্ক চিরকালের মতো ছিন্ন হয়। বিবাহিত জীবনে লীলা-সুধীর খুব সুখী দম্পতি ছিলেন। স্বামী আজীবন লীলার সাহিত্য চর্চায় উৎসাহী ছিলেন। তাঁদের এক পুত্র ডাঃ রঞ্জন মজুমদার ১৯৩৪ সালে এবং এক কন্যা কমলা মজুমদার ১৯৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করে।

 সাহিত্যজগতে আত্মপ্রকাশ :- মাত্র ১৪-১৫ বছর বয়সে তাঁর প্রথম গল্প 'লক্ষ্মীছাড়া' ১৯২২ সালে 'সন্দেশ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই গল্পের মধ্য দিয়েই তিনি সাহিত্যজগতে পদার্পণ করেন। ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় 'সন্দেশ' পত্রিকা পনর্জীবিত করলে তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৪ অবধি সাম্মানিক সহ-সম্পাদক হিসাবে পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, ১৯৯৪-এ তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য অবসর নেন। তাঁর সাহিত্য জীবন প্রায় আট দশকের।

 সাহিত্যকর্ম :- তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা ১৩০-১৫০ -এর মতো। 'সন্দেশ', 'শিশু সাথী', 'মৌচাক', 'খোকাখুকু', 'প্রবাসী', 'ভারতবর্ষ', 'শনিবারের চিঠি', 'বিচিত্রা' ইত্যাদি পত্রিকায় ছোটোদের জন্য গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন লীলা মজুমদার। কৌতুক-কৌতূহল --- আর জীবন অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে লীলা মজুমদারের কথা সাহিত্য। চলচ্চিত্রায়িত হওয়ার জন্য 'পদি পিসীর বর্মী বাক্স' খুব জনপ্রিয় হয়। 'নাকুগামা'-র নাকু, পাইলট সমরেশ কাকু, ইঞ্জিনিয়ার হামিদ কাকুকে আমরা কখনও ভুলতে পারি না। নানান বেড়ালদের নিয়ে লিখেছেন, 'বেড়ালের বই'। 'কুঁকড়ো' গল্প আমাদের মনুষ্যেতর জীবের প্রতি ভালোবাসা সঞ্চার করে। 'শেলটার' গল্পে পাহাড়ের মাথায় সাহেবদের শেলটারের রোমহর্ষক বর্ণনা আমাদের মুগ্ধ করে। চোখ আর মনের সুসম সমন্বয়ে তাঁর গল্প ও উপন্যাস সার্থক হয়ে উঠেছে।


                 লীলা মজুমদার বলেছেন, 'সাতটা রঙের খেলা নিয়ে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের হাজার রঙের মেলা বসে। তেমনি মনের জগতেও নয়টা রস দিয়ে দুনিয়ার সাহিত্য ভাণ্ডার ভরা হয়েছে। তারমধ্যে গোটা দুই বাদ দিলে, বাকি সবগুলি দুনিয়ার নয় থেকে নিরানব্বুই সব বয়সিদের জন্য। তার বদলে শুধু চোখ আর মন তার হৃদয়ের দোর খোলা রাখা চাই।'

HS BENGALI PROJECT LEELA MAJUMDAR 

উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প লীলা মজুমদার 


 গল্পগ্রন্থ :-
১) 'বদ্যিনাথের বড়ি' (১৯৪০)
২) 'দিন দুপুরে' (১৯৪৮)
৩) 'ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প' (১৯৫৫)
৪) 'মনিমালা' (১৯৫৬)
৫) 'লাল নীল দেশলাই' (১৯৫৯)
৬) 'বাঘের চোখ' (১৯৫৯)
৭) 'ইষ্টকুটুম' (১৯৫৯)
৮) 'টাকাগাছ' (১৯৬১)
৯) 'ছোটোদের ভালো ভালো গল্প' (১৯৬২)
১০) 'হাস্য ও রহস্যের গল্প' (১৯৭১)
১১) 'বড়পানি' (১৯৭২)
১২) 'হাসির গল্প' (১৯৭৪)
১৩) 'গুণু পণ্ডিতের গুণপনা' (১৯৭৫)
১৪) 'নতুন ছেলে নটবর' (১৯৭৬)
১৫) 'সব সেরা গল্প' (১৯৭৬)
১৬) 'বহুরূপী' (১৯৭৬)
১৭) 'ভূতের গল্প' (১৯৭৮)
১৮) 'কাগ নয়' (১৯৮১)
১৯) 'সেজো মামার চন্দ্র যাত্রা' (১৯৮২)
২০) 'ময়না শাখিল' (১৯৮২)
২১) 'আজগুবি' (১৯৮২)
২২) 'বহুরূপী' (১৯৮২)
২৩) 'বাঁশের ফুল' (১৯৮২)
২৪) 'গুপের গুপ্তধন' (১৯৮২)
২৫) 'ছোটোদের বেতাল বত্রিশ' (১৯৮২)
২৬) 'সব ভুতুড়ে' (১৯৮৩)
২৭) 'গুপী পানুর কীর্তিকলাপ' (১৯৮৩)
২৮) 'কুকুর ও অন্যান্য' (১৯৮৪)
২৯) 'অন্য গল্প' (১৯৮৪)
৩০) 'ছোটোদের শ্রেষ্ঠ গল্প' (১৯৮৪)
৩১) 'শুধু গল্প নয়' (১৯৮৫)
৩২) 'ভুতের বাড়ি' (১৯৮৬)
৩৩) 'ছোটোদের পুরাণের গল্প' (১৯৮৬)
৩৪) 'ছোটোদের দশ দিগন্ত' (১৯৮৮)
৩৫) 'মামাদাদুর ঘোড়াবাজি' (১৯৮৯)
৩৬) 'ত্রিমুকুট' (১৯৯০)
৩৭) 'আগুনি বেগুনি'
 ৩৮) 'আম গো আম' (১৯৯১)
৩৯) 'টিপুর উপর টিপ্পুনি' (১৯৯১)
৪০) 'জানোয়ার গল্প' (১৯৯১)
৪১) 'পটকা চোর' (১৯৯১)
৪২) 'কুশলদার কৌশল' (১৯৯২)
৪৩) 'বেড়ালের বই' (১৯৯২)
৪৪) 'গোলু' (১৯৯২)
৪৫) 'লীলা মজুমদারের শ্রেষ্ঠ হাসির গল্প' (১৯৯২)
৪৬) 'আষাড়ে গল্প' (১৯৯৩)
৪৭) 'মহাভারতের গল্প' (১৯৯৪)
৪৮) 'চিচিং ফাঁক' (১৯৯৪)
৪৯) 'কল্পবিজ্ঞানের গল্প'
৫০) 'আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ'
৫১) 'নেপোর বই'
৫২) 'নোটোর দল'
৫৩) 'ফুলমালা'
৫৪) 'মিঠুর ডেয়ারি'
৫৫) 'বাঘ শিকারী বামুন'
৫৬) 'বাঘিয়ার গল্প'
৫৭) 'মণি মানিক' (২০০০)
৫৮) 'চিরদিনের গল্প' (২০০০)
৫৯) 'হীরে মোতি পান্না' [অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে একত্রে] (১৯৭৮)
৬০) 'টাকা গাছ' [জয়ন্ত চৌধুরীর সঙ্গে যুগ্মভাবে] (১৯৬১)
৬১) 'হট্টমালার দেশে' [প্রেমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে যুগ্মভাবে] (১৯৭৭)

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

 উপন্যাস :-
১) 'পদিপিসীর বর্মী বাক্স' (১৯৫৩)
২) 'হলদে পাখির পালক' (১৯৫৭)
৩) 'জোনাকী' (১৯৫৮)
৪) 'শ্রীমতী' (১৯৫৮)
৫) 'ঝাঁপতাল' (১৯৫৮)
৬) 'গুপির গুপ্ত কথা' (১৯৫৯)
৭) 'বক ধার্মিক' (১৯৬০)
৮) 'চীনে লণ্ঠন' (১৯৬৩)
৯) 'মাকু' (১৯৬৯)
১০) 'নেপোর বই' (১৯৬৯)
১১) 'ফেরারী' (১৯৭১)
১২) 'নাকুগামা' (১৯৭৩)
১৩) 'বাতাস বাড়ি' (১৯৭৪)
১৪) 'দুলিয়া' (১৯৭৭)
১৫) 'টংলিং' (১৯৮১)
১৬) 'হাওয়ার দাঁড়ি' (১৯৮৩)
১৭) 'চকমকি মন' (১৯৯০)
১৮) 'মণিকাঞ্চন' (১৯৯৩)

 প্রবন্ধ-নিবন্ধ :-
১) 'হাতি হাতি' (১৯৫৭)
২) 'রান্নার বই' (১৯৭৯)
৩) 'ভুতোর ডাইরি' (১৯৭৯)
৪) 'জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি' (১৯৮৬)
৫) 'পাকদণ্ডী' (১৯৮৬)
৬) 'ঘরকন্নার বই' (১৯৮৮)
৭) 'আমি নারী' (১৯৮৯)
৮) 'আমিও তাই' (১৯৮৯)
৯) 'সংসারের খুঁটিনাটি ও শিশুদের নামকরণ' (১৯৯০)
১০) 'যে যাই বলুক' (১৯৯২)
১১) 'হালকা খাবার' (১৯৯৩)
১২) 'আনন্দ ঝর্ণা' (১৯৯৭)
১৩) 'রহস্য ভেদী পাঁচ'
১৪) 'নাটঘর'
১৫) 'ভারতের লোককথা'
১৬) 'মধুকুঠির মারকুটে মৌমাছি'
১৭) 'ঠাকুমার ঠিকুজি'
১৮) 'দেশ বিদেশের বিচিত্র উপকথা'
১৯) 'ভারতের উপকথা' (১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ খণ্ড)

 নাটক :-
১) 'বক বধ পালা' (১৯৫৯)
২) 'গাওনা' (১৯৬০)
৩) 'মোহিনী' (১৯৬৩)
৪) 'লঙ্কা দহন পালা' (১৯৬৪)
৫) 'লীলা মজুমদারের ছোটোদের নাটক সমগ্র'

 জীবনী মূলক গ্রন্থ :-
১) 'এই যা দেখ' (১৯৬১)
২) 'কবি কথা' (১৯৬১)
৩) 'উপেন্দ্রকিশোর' (১৯৬৩)
৪) 'অবনীন্দ্রনাথ' (১৯৬৬)
৫) 'সুকুমার' (১৯৮৯)
৬) 'মহামানব চরিত'

 স্মৃতিচারণা মূলক গ্রন্থ :-
১) 'আর কোনোখানে' (১৯৬৭)
২) 'খেরোর খাতা' (১৯৮২)

 আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ :-
 ১) 'পাকদণ্ডী' (১৯৮৬)

 রচনা সংগ্রহ :-
১) 'ছোটোদের অমনিবাস' (১৯৬৫)
২) 'লীলা মজুমদারের রচনাবলী' (৬ খণ্ড, ১৯৭৬-১৯৮৬)
৩) 'লীলা অমনিবাস' (১ম - ১৯৮৫, ২য় - ১৯৮৫)
৪) 'চিরকালের সেরা' (১৯৯৭)
৫) 'রায় পরিবারের চার পুরুষের লেখা'
৬) 'ঠাকুরমার ঝুলি' (২০০৪)

 অনুবাদ গ্রন্থ :-
১) 'নদী কথা' [মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে যুগ্মভাবে]
২) 'ভারতে বিদেশী যাত্রা'(১৯৭১)
৩) 'চার বিচারকের দরবার'(১৯৭৪)
৪) 'বাঘদাঁত'(১৯৭৫)
৫) 'অ্যাণ্ডারসন রচনাবলী'(১৯৭৬)
৬) 'গালিভারের ভ্রমণ বৃত্তান্ত'(১৯৮৩)
৭) 'সরস গল্প'

 উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রায়িত বই :-
১) 'পদিপীসির বর্মী বাক্স' (১৯৫৩) উপন্যাস। এর অনেক সংলাপের মধ্যে একটি সংলাপ সবার মুখস্ত বলা যায়। ‘চুপ! চোখ ইজ জ্বল জ্বলিং’। সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাসটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কোনো কারণে তা সম্ভব হয়নি। তাই অন্য চলচ্চিত্রকার এই উপন্যাসটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দিয়েছেন।

 সম্পাদিত পত্রিকা :-
১) 'সন্দেশ' [সত্যজিতের রায়ের সঙ্গে যুগ্মভাবে]।

 মৃত্যু :- ২০০৭ সালের ৫ এপ্রিল তিনি কলকাতার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

HS BENGALI PROJECT LEELA MAJUMDAR 

উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প লীলা মজুমদার 


তথ্য বিশ্লেষণ :-
উপরোক্ত আলোচনায় যে সকল তথ্য পাওয়া গেল তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো।

( i ) 'পাকদণ্ডী' (১৯৮৬) নামে তাঁর লেখা আত্মজীবনীতে তাঁর শিলঙে ছেলেবেলা, শান্তিনিকেতন ও অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গে তাঁর কাজকর্ম, রায়চৌধুরী পরিবারের নানা মজার ঘটনাবলী ও বাংলা সাহিত্যের মালঞ্চে তাঁর দীর্ঘ পরিভ্রমণের কথা বর্ণিত হয়েছে।
( ii )  একবার এক বৈঠকী আড্ডায় লীলা মজুমদারের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে ছোট্ট একটা ঘটনার অবতারনা করেছিলেন সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি কোনো একটা উৎসব উপলক্ষ্যে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন। দুটি অপরিচিত ছেলেমেয়ে এসে বললো, লীলা মজুমদার একবার আপনাকে দেখা করতে বলেছেন। শুনে তিনি বেশ অবাক। লীলা মজুমদার কেন ডাকবেন আমাকে? সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তখন তিনি ‘সন্দেশ’ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক। সত্যজিৎ রায়ের চিঠি নিয়ে মাঝে মধ্যে সে পত্রিকায় দু’একবার লিখেছেন - 'কোনো লেখায় কি কিছু ভুল হয়েছে?' শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জে একটা চেয়ারে তিনি বসেছিলেন। তাঁর লেখায় যত মজা ও রঙ্গরস থাকে মুখের ভাবে কিন্তু তার কিছুই নেই। বরং একটু কঠোর ভাব, ভ্রু কোঁচকানো। তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার পর তিনি বললেন, 'শোন, তুমি গল্প উপন্যাস কবিতা লেখো টেখো, তা আমি কিছুই পড়িনি। তবে তুমি ছোটদের জন্য কিছু লেখালেখি করছে দেখে খুশী হয়েছি। সব লেখকদেরই শিশু সাহিত্যের সেবার জন্য খানিকটা সময় দেওয়া উচিৎ। আর শোন, এইসব লেখার মধ্যে যেন খুনোখুনি, রক্তারক্তি বেশী এনোনা।' অবশ্য সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সারাজীবন উনার নির্দেশ মেনে চলার চেষ্টা করেছেন। শুধুমাত্র একশ ছোয়া বাঙ্গালী নয়, লীলাদেবীর জীবন পটে শতবর্ষের একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। ১৯০৮ থেকে ২০০৭ - এই সেঞ্চুরী জানাবে, এই কালপর্বে জড়িয়ে আছে দুটি শতাব্দী। বিশ এবং একুশ। কিন্তু বাঙ্গালীর জীবনবৃত্তান্ত যারা জানেন, তারা বুঝবেন এই সময়টুকুর ভিতরে কী বিপুল পাল্টেছে বাংলা ও বাঙ্গালী। লীলা মজুমদারের শতক জোড়া জীবন যেন এক আয়না। সেই দর্পনে সময়ের বিবর্তন, কিংবা সময়ের পাল্টে যাওয়ার ছবি ভেসে উঠেছে। আয়নাটি ছোট, কিন্তু তার মধ্যেই জেগে আছে একশ বছরের উত্থান পতন। সেই একশ বছরের মধ্যে বাঙ্গালীর ঘরকন্না আছে। বাঙ্গালীর বিশ্বরূপ দর্শণও আছে। যে বাঙ্গালী ঘর এবং বাহির, দেশ আর বিদেশকে মিলিয়েছিল নিজস্ব শিক্ষায়, গত একশ বছর ধরে সেই বৃহৎ বাঙ্গালীরই প্রতিমূর্তি লীলা মজুমদার। কোন অন্তিম সংস্কারেই একশ বছরের দীর্ঘ সৃষ্টিশীলতা ফুরায়না। শতায়ুর আলো এক সময় নিভে যায়, কিন্তু একশ বছরের একটি মৃত্যু মাইলফলকের মতো জেগে থাকে জনজীবনে। সুতরাং, একশ বছর ছুঁয়ে একটি যাত্রা শেষ করলেন লীলা মজুমদার। সেই সঙ্গে থেকে গেল বেশ কিছু অসামান্য বই। একটি একশ বছরের উত্তরাধিকার।

( iii )  সবার মঝে মূলত শিশু সাহিত্যিক হিসেবেই খ্যাতি, কিন্তু সারা জীবনই মেনেছেন সি. এস. লুইসের কথা - ‘এ গুড চিলড্রেনস বুক ইজ দ্যাট হুইচ এ্যান এডাল্ট ক্যান এনজয়।’ কালি কলম এবং পরিনত একটা মন নিয়ে ছোটদের  মনোরাজ্যে ডুব দিয়েছিলেন।

( iv )  লীলা মজুমদারের গল্পে প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক চিত্র  স্পষ্ট রূপে ফুটে ওঠে। যেমন তাঁর বকধার্মিক গল্পে বলা হয়েছে '' ছোটবেলায় পাহাড়ের দেশে থাকতুম। সেখানে বাড়ির পেছনে ঢালুর নিচে নুড়ি পাথরের ওপর দিয়ে ছলছল করে পাহাড়ি নদী বয়ে যেত। সরল গাছের বনের মধ্যে দিয়ে হু হু করে হাওয়া বইতো। রাতে নদীর ধারে ধারে ঝোপে ঝোপে হাজার হাজার জোনাকি জ্বলতো। ''
( v )  লীলা মজুমদারের গল্প ও উপন্যাসগুলির মধ্যে ভাষার সহজ সরল অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। তিনি অহেতুক জটিল ভাষার প্রয়োগ করে তাঁর লেখাকে ভারাক্রান্ত করতে চান নি।
( vi )  লীলা মজুমদারের সর্বাধিক জনপ্রিয় সাহিত্য কীর্তিগুলির মধ্যে '' পদী পিসির বর্মী বাক্স '' সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য।
( vii )  তিনি ভুতের গল্প লেখাতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন এবং তাঁর রচিত ভূতেরা ততটা ভয়ঙ্কর ছিল না। এ ক্ষেত্রে তাঁর রচিত '' পেনেটিতে '' গল্পটি উল্লেখ করা যেতে পারে। এই গল্পে শিশু - কিশোর মনের স্বাভাবিক চাহিদা , সমস্যার সমাধান - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে সহজ ভাষায় , কিছুটা মজার ছলে এবং বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে উপস্থাপন করেছেন। গল্পটিতে বন্ধুত্ব ও বন্ধুত্বের বিভিন্ন টানাপোড়েন সুন্দরভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে।

( viii )  ভূতের গল্প লেখার অপর একটি ধারাও সমানভাবে জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে প্রথমদিকে গল্পটিকে অলৌকিক ভূতের গল্প মনে হলেও ঘটনার পরিণতিতে দেখা যায় সেখানে ভূতের পরিবর্তে অলৌকিকতার অন্য কোনো মনুষ্যসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। এই ধরণের গল্প লেখার ক্ষেত্রেও লীলা মজুমদার মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা হলো - '' হানাবাড়ি '' । এই গল্পে দেখা যায় বাজি জেতার জন্য একজন ব্যাক্তিকে ভূত সাজিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
( ix )  লীলা মজুমদারের গল্পে মানবত্ব ; মানুষ ও প্রাণীর স্বাভাবিক বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক - এই বিষয়গুলিরও প্রকাশ ঘটেছে। এক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা হলো '' দুই মা '' নামক গল্পটি। গল্পটিতে মানুষ ও হাতির সুমধুর সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে। এই গল্পের এক জায়গায় লেখিকা বলেছেন - '' সেকালে হাতির দেশ ছিল ওটা। মানুষে - হাতিতে মিলেমিশে বেশ ছিল। ''
( x )  সেকালের গ্রামবাংলার কিছু অংশের মানুষ বাঘের ভয়ে কতটা ভীত ছিলেন এবং হিংস্র প্রাণীদের বিরুদ্ধে তাদের কতটা সংগ্রাম করতে হতো তারও উল্লেখ পাওয়া যায় তাঁর লেখাতে। যেমন '' দুই মা '' গল্পে লেখা আছে - '' সেই ফাঁকে একটা কালো বাঘ এসে প্রধানের পাঁচ মাসের ছেলেকে গায়ে জড়ানো কাঁথা শুদ্ধ তুলে নিয়ে দে ছুট।.............চ্যাঁচাতে চ্যাঁচাতে প্রধানের বউ বাঘের পেছনে ছুটলো।  ''
( xi )  সাধারণতঃ বাংলা সাহিত্যে নিজের গল্পের নিজেই নাট্যরূপ নির্মাণ করেছেন - এমনটা দেখা যায় না। কিন্তু লীলা মজুমদার এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। তিনি তাঁর রচিত '' আঁধারমণি'' গল্পের নাট্যরূপ প্রদান করেছেন এবং সেই নাটকের নাম দিয়েছেন '' আলো '' ।
( xii )  লীলা মজুমদারের রচনাতে বিভিন্ন ছোট ছোট ছড়ার উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। যেমন '' আলো '' নাটকে রচিত তাঁর একটি ছড়া হলো -
হুতুমরা :
হুতুম থুম হুতুম থুম
কে যায় রেতে ?
চোখে নেই ঘুম ?
বাঁকা ঠোঁট , ভাঁটা চোখ ,
জোরালো পাখা , ধারালো নোখ। 
লক্ষ্মী পেঁচারা :
আমরা প্যাঁচা ,প্যাঁচা ,প্যাঁচা,
এবার প্রাণের ভয়ে চ্যাঁচা !
পাসনি ভয় -
তাই কি হয় ?
হুতুম থুম হুতুম থুম।
( xiii )   লীলা মজুমদারের গল্পের মধ্যে মহাকাশ সম্পর্কে আলোচনাও পাওয়া যায় এবং এই আলোচনা শিশু ও কিশোর মনকে কল্পনার ডানা মেলে উড়ে যেতে সহায়তা করে। যেমন তাঁর রচিত '' নেপোর বই '' গল্পটিতে চাঁদ সম্পর্কে ও চাঁদে অবস্থানের সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।   

( xiv )  পুরস্কার ও সম্মাননা :-
১) 'আর কোনোখানে' (১৯৬৭) স্মৃতিচারণা মূলক গ্রন্থের জন্য তিনি ১৯৬৯ সালে 'রবীন্দ্র পুরস্কার' পেয়েছেন।
২) 'বক বধ পালা' (১৯৫৯) নাটকের জন্য তিনি 'সঙ্গীত নাটক একাডমী পুরস্কার' পেয়েছেন।
৩) 'হলদে পাখির পালক' (১৯৫৭) উপন্যাসের জন্য তিনি 'স্টেট পুরস্কার' ও 'শিশু সাহিত্য পুরস্কার' লাভ করেন।

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

Share
Tweet
Pin
Share
1 comments

নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION : NIRUDDES



মূল গল্প -- নিরুদ্দেশ।
লেখক -- প্রেমেন্দ্র মিত্র।
চরিত্রবর্গ -
সুদীপ - বছর ৩০ এর যুবক।
সোমেশ - বছর ৩০ এর যুবক , সুদীপের বন্ধু।
বাবু -- ১৬ - ১৭ বছরের একটি ছেলে।
বাবা -- বাবুর বাবা।
মা -- বাবুর মা।
নায়েবমশাই।
খাজাঞ্চিমশাই।
দুজন সরকার ( কর্মচারী )।
জমিদারমশাই। 
প্রতিটি চরিত্রকে চরিত্রের প্রয়োজন অনুসারে পরিধান করতে হবে।

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

দৃশ্য ১ :-
মঞ্চ পরিকল্পনা - ঘরে সাধারণ একটি টেবিল , দুটি সাধারণ চেয়ার। ঘরের পরিবেশ থমথমে। নেপথ্যে বৃষ্টি ও বাজ পড়ার শব্দ। গল্পের প্রধান দুজন চরিত্র সুদীপ ও সোমেশ চেয়ারে বসে খবরের কাগজের পাতা ওল্টাচ্ছে।
সুদীপ -- এই শীতের দিনে বৃষ্টি পড়ছে দেখছিস !
সোমেশ -- হ্যাঁ , মেঘাচ্ছন্ন পৃথিবী যেন মৃতের মতো অসার হয়ে আছে।
সুদীপ -- তুই না আসলে আজ দুপুরটা কিভাবে কাটাতাম , বুঝতে পারছি না। তবে ........ ( খবরের কাগজটা ভাঁজ করে সোমেশকে ধরিয়ে ) একটা আশ্চর্য ব্যাপার দেখেছিস ?
সোমেশ -- কী ?
সুদীপ -- আজকের কাগজে একসঙ্গে সাত - সাতটা নিরুদ্দেশ এর বিজ্ঞাপন।
[ সোমেশ কোনো কৌতূহল প্রকাশ করলো না , কেবল উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ]
আসলে কী জানিস , নিরুদ্দেশের এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে আমার কিন্তু হাসি পায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা কী হয় জান তো ? ছেলে হয়তো রাত করে থিয়েটার দেখে বাড়ি ফিরেছেন। এমন তিনি প্রায়ই ফিরে থাকেন আজকাল ..............
[ আলো আস্তে আস্তে কমতে থাকলো এবং একসময় বন্ধ হয়ে গেল। ]

নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION : NIRUDDES

দৃশ্য -২
মঞ্চ পরিকল্পনা -- এই দৃশ্যটিতে প্রথম দৃশ্যের তুলনায় খুব বেশি পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় ; কেননা প্রথম দৃশ্য শেষ হওয়ার পর অতি দ্রুত এই দৃশ্যটি শুরু করতে হবে। খুব বেশি হলে প্রথম দৃশ্যের মঞ্চ সজ্জার সাথে একটি কাপড়ে ভর্তি আলনা এনে রাখা যেতে পারে। ঘরে বাবা অতি চিন্তিতভাবে পায়চারি করছেন। মা আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদো কাঁদো ভাব।
বাবা -- কোথায় গেলেন বাবু ! তোমার গুণধর পুত্রটি ?
[ মা চুপ করে থাকলেন। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে বাবা গর্জে ওঠেন। ]
চুপ করে থেকো না ; কথার উত্তর দাও।
মা ( ফুঁপিয়ে ) -- অনেক পেড়াপিড়ি করছিলো বাবু। তাই আমি ক'টা টাকা বার করে দিয়েছিলাম।
বাবা -- টাকা ? তা সেই টাকা নিয়ে কোথায় গেছে তোমার গুণধর পুত্র ?
মা -- রাতের শো'তে থিয়েটার দেখতে গেছে।
বাবা -- ( প্রচন্ড রেগে গিয়ে ) -- তা এত রাতেও বাবুর আসার সময় হলো না ! আরবারে তো ফেল করে মাথা কিনেছেন। এবারও কী করে কৃতার্থ করবেন বুঝতেই পারছি। আর পয়সাগুলো আমার তো খোলামকুচি কি'না , তাই নাবাবপুত্তুর যা খুশি তাই করছেন। দূর করে দেবো , আসুক এবার দূর করে দেবো।
[ ঠিক এইসময় সেই পুত্র অর্থাৎ বাবুর প্রবেশ। তাকে প্রবেশ করতে দেখে মা আনন্দিত হয়ে উঠলেন। কিন্তু বাবা হঠাৎ করে কী করবেন , কী বলবেন বুঝতে পারলেন না। হঠাৎ তিনি  বলে উঠলেন -]
বাবা -- ( গর্জে উঠে ) -- এমন ছেলের আমার দরকার নেই - বেরিয়ে যা।
[ বাবু হঠাৎ থমকে যায় ; দ্রুত পায়ে সে আলনার দিকে এগিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে একটি ব্যাগ বের করে নিজের জামা কাপড় ওই ব্যাগের ভেতর পুরতে থাকে। ]
মা ( আশঙ্কিত হয়ে ) -- আরে করো কী ? এতক্ষন পর এলো ছেলেটা ; আগে খেয়ে তো নিক। পরে বললেই তো হতো।
বাবা ( মারমুখী হয়ে ) -- তোমার আস্কারাতেই তো উচ্ছন্নে গেছে ! মাথাটি তো তুমিই খেয়েছো আদর দিয়ে।
[ মা আঁচল দিয়ে চোখ মোছেন। বাবু ব্যাগ নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। ]

দৃশ্য - ৩
মঞ্চ পরিকল্পনা - দ্বিতীয় দৃশ্যের অনুরূপ।
মা এবং বাবা দুজনেই থমথমে মুখে বসে আছেন।
বাবা -- কাল সারারাত কিছু মুখে তোলোনি শুনলাম।
মা -- ( ফুঁপিয়ে কেঁদে ) -- বাবু ...........
বাবা -- মিছিমিছি প্যানপ্যান করো না। অমন ছেলে যাওয়াই ভালো।
[ মা আরো জোরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। ]
তা'ও গেলে তো বাঁচতাম। এ বেলাই দেখো সুড়সুড় করে আবার ফিরে আসবে। এমন বিনি পয়সার হোটেলখানা পাবে কোথায় ?
মা -- এই দারুন শীতে কাল সারারাত ছেলেটা কোথায় রইলো কে জানে ! কী করে বসে আমার তা'ই ভয়।
বাবা -- ( ব্যাঙ্গ করে ) -- হ্যাঁ ভয় ! তোমার ছেলে কিছুই করে নি গো , কিছুই করে নি। দিব্যি আছে কোনো বন্ধুর বাড়ি। অসুবিধে হলেই এসে দেখা দেবে।
মা ( কাঁদতে কাঁদতে ) -- কীরকম অভিমানী জানো তো ? ( রাগত স্বরে , দৃঢ় কণ্ঠে ) ও না এলে আমি কিচ্ছুটি খাবো না।
বাবা -- ( বিরক্ত হয়ে ) -- না ! আর থাকতে দিলে না ! এ অশান্তির চেয়ে বনবাস ভালো।
[ এই বলে বাবা উঠে বেরিয়ে গেলেন ] 

নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION : NIRUDDES

  দৃশ্য ৪
মঞ্চ পরিকল্পনা - পূর্ববর্তী দৃশ্যের ন্যায়।
মা একইভাবে বসে আছেন। বাবা প্রবেশ করলেন।
বাবা -- বুঝলে আর চিন্তার কোনো কারণ নেই। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে এসেছি। তোমার ছেলের নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনে লিখেছি - বাবু , তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসো ; তোমার মা কাল থেকে জল গ্রহণ করেন নি।
[ মা সঙ্গে সঙ্গে আবার কেঁদে উঠলেন। ]
আহা , চিন্তা কোরোনা , বললাম তো , ....... কাল সকালের কাগজেই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হবে। সে বিজ্ঞাপন দেখে তোমার ছেলে নিশ্চই ফিরে আসবে।
[ এই কথা বলা মাত্রই হঠাৎ বাবুর প্রবেশ। বাবুকে দেখে বাবার মধ্যে আনন্দ ও বিস্ময়ের প্রকাশ। মা কান্না থামিয়ে বাবুর দিকে এগিয়ে গেলেন। ]
মা -- এই তো বাবা , আমার বাবু ফিরে এসেছে। কোথায় ছিলি বাবা ! তোর জন্য তোর বাবা ভেবে ভেবে অস্থির।
বাবু ( গম্ভীর ভাবে ) -- আমি ফিরে আসার জন্য আসি নি।
মা - ( অবাক হয়ে ) -- বলিস কি তুই ! তাহলে কী করতে এসেছিস তুই ?
বাবু -- আমার গোটা কতক বই নিয়ে যেতে এসেছি।
মা ( চোখের জল মুছে , ক্ষুব্ধ হয়ে ) -- তা যাবি বই কি ; অমনি কুলাঙ্গার তুই তো হয়েছিস। কোনো ছেলে যেন আর বকুনি খায় না। তুই একেবারে পির হয়েছিস ? কাল সারারাত তোর বাবা দুচোখের পাতা এক করেননি তা জানিস ? ভেবে ভেবে চেহারাটা আজ কী হয়েছে দেখ একবার ! বই নিয়ে যেতে এসেছি ! .........
বাবা ( মৃদুস্বরে ) -- আঃ আর বকাবকি করো কেন ?
মা  ( ধমকের স্বরে ) -- তুমি থামো। অত আদর ভালো নয় ! একটু বকুনি খেয়েছেন বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে এত বড়ো আস্পর্ধা।

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

দৃশ্য ৫
মঞ্চ পরিকল্পনা - প্রথম দৃশ্যের অনুরূপ।
সুদীপ ও সোমেশ একই ভাবে বসে আছে।
সুদীপ -- দেখলে তো অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাস এই।
( কিছুক্ষন সোমেশের দিকে  তাকিয়ে থেকে ) কী হয়েছে তোর বলতো ? মিছিমিছিই আমি একলা বকে মরছি।
সোমেশ ( কিছুক্ষন পর ) -- তুমি হয়তো জানো না , এই বিজ্ঞাপনগুলোর পেছনে অনেক সময় সত্যকার ট্রাজেডি থাকে।
সুদীপ -- তা থাকে যে তা আমি অস্বীকার করছি না। কখনো কখনো সত্যিই যে যায় সে আর ফেরে না।
সোমেশ -- ( ঈষৎ করুন হেসে ) -- না , আমি ফিরে না আসার ট্রাজেডির কথা বলছি না।
সুদীপ -- তাহলে ?
সোমেশ -- ফিরে আসারই ভয়ানক একটা ট্রাজেডির কথা আমি জানি।
সুদীপ -- তার মানে !
সোমেশ -- শোনো বলছি। ( একটু থেমে সোমেশ আবার শুরু করলো ) পুরোনো খবরের কাগজের ফাইল যদি উল্টে দেখো , তাহলে দেখতে পাবে বহু বছর আগে এখানকার একটি প্রধান সংবাদপত্রের পাতায় দিনের পর দিন একটি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন বেড়িয়েছে। সে বিজ্ঞাপন নয় , সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস। সেই বিজ্ঞাপনের প্রথম দিকে দেখা যায় মায়ের কাতর অনুরোধ ছেলের প্রতি ফিরে আসার জন্য। ধীরে ধীরে মায়ের কাতর অনুরোধ হতাশ দীর্ঘশ্বাসের মতো খবরের কাগজের পাতায় যেন মিলিয়ে যেতেও দেখা গেল। তারপর সেই বিজ্ঞাপনে শোনা গেল পিতার গম্ভীর স্বর , একটু যেন কম্পিত , তবু ধীর ও শান্ত - '' শোভন ফিরে এস। তোমার মা শয্যাগত। তোমার কি এতটুকু কর্তব্যবোধও নেই !''
সুদীপ -- তারপর , তারপর কী হলো ?
সোমেশ -- বিজ্ঞাপন তারপরও কিন্তু থামলো না। তারপর দেখা গেল বিজ্ঞাপনে পিতার স্বর ভারী হয়ে আসছে যেন ; মনে হয় গলাটা যেন ধরা -'' শোভন , এখন না এলে তোমার মা'কে আর দেখতে পাবে না। ''
সুদীপ -- তারপর কী হলো ? শোভন ফিরে এলো ?
সোমেশ -- নাহ , শোভনের হৃদয় এতে গললো না। এরমধ্যে বিজ্ঞাপনে বাবার গলার স্বর ভারী হয়ে আসছে।
সুদীপ -- বিজ্ঞাপন কি তারপরেও চলতে লাগলো ?
সোমেশ -- হ্যাঁ , বিজ্ঞাপন সমানভাবে চলতে লাগলো। শুধু পিতার নিজেকে সামলাবার ক্ষমতা আর নেই। এবার তাঁর স্বরে কাতরতা , শুধু কাতরতা নয় , একান্ত দুর্বলতা - ''শোভন , জানো না আমাদের কেমন করে দিন যাচ্ছে ! এসো , আর আমাদের দুঃখ দিও না।''
সুদীপ -- তারপর ?
সোমেশ -- তারপর বিজ্ঞাপন ক্রমশঃ হতাশ হাহাকার হয়ে উঠলো। তারপর একেবারে গেল বদলে। আর শোভনকে উদ্দেশ্য করে কিছু লেখা নাই। সাধারণ একটি বিজ্ঞপ্তি মাত্র। এই ধরণের , এই চেহারার , এই বয়সের একটি ছেলে। আজ একবছর তার কোনো সন্ধান নেই। সন্ধান দিতে পারলে পুরস্কার পাওয়া যাবে।
( কিছুক্ষন থেমে ) তারপর থেকে পুরস্কারের পরিমান ক্রমশই বাড়তে লাগলো খবরের কাগজের পাতায়। দোহারা ছিপছিপে একটি বছর ষোলো - সতেরোর ছেলে। ডান কানের কাছে একটি বড় জড়ুল। জীবিত না মৃত এইটুকু যদি কেউ সন্ধান দিতে পারে , তাহলেও পুরস্কার পাওয়া যাবে।
সুদীপ -- এত গেল বিজ্ঞাপনের উপাখ্যান। আসল ব্যাপার কিছু জানিস নাকি ?
সোমেশ ( দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ) -- জানি ! শোভনকে আমি জানতাম। সে কোনো ভয়ঙ্কর অভিমানের বশে বাড়ি ছেড়ে এসেছিলো তা মনে কোরো না। বাড়ি ছাড়াটাই তার কাছে একান্ত সহজ। ছুতোটা যা হোক কিছু হলেই হলো। শুনলে আশ্চর্য হবে , খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনের সংবাদ জানলেও সেগুলো সে অনুসরণই করে নি। কোনোদিন চোখে পড়েছিল হয়তো , তারপর অনায়াসে সেগুলো গেছিলো ভুলে। বাড়ির বাইরে যে সমস্ত দুঃখ - অসুবিধায় অন্য কেউ হলে হয়রান হয়ে পড়ত , তার ভেতরই সে পেয়েছিলো মুক্তির স্বাদ।
সুদীপ -- ভাবা যায় না। এমনটাও হয় ! তারপর কী হলো ?
সোমেশ -- বিজ্ঞাপন যেদিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল , কেন জানি না শোভনের উদাসীন মনটাও বিচলিত হয়ে উঠলো। শেষ বিজ্ঞাপনের কথাগুলো ছিল '' শোভন , তোমার মার সঙ্গে আর বুঝি তোমার দেখা হলো না। তিনি শুধু তোমারই নাম করছেন এখনো। '' ব্যাস তারপর আর কোনো বিজ্ঞাপন দেখা গেল না।
সুদীপ -- তারপর ?

সোমেশ -- প্রায় দুই বৎসর তখন কেটে গেছে। শোভন একদিন হঠাৎ গিয়ে হাজির তার দেশে ..................
একটা কথা আগে বলিনি , শোভন সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে নয় , তাদের প্রাচীন জমিদারি অনেক দুর্দিনের মধ্যে দিয়ে এসেও তখনও তেমন ক্ষয় পায়নি। শোভনই তার একমাত্র  উত্তরাধিকারী।
সুদীপ -- যাক শেষটুকু আর না বললেও চলবে , বুঝতে পেরেছি।
সোমেশ -- তুমি যেরকম ভাবছো সেরকমটা নয়। দুবছর স্বাধীন জীবনের দুঃখ কষ্ট গায়ে না মাখলেও তার ছাপ শোভনের উপর এসে পড়েছে। দুবছরে সে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু তাই বলে তার কর্মচারীরা তাকে চিনতে পারবে না এমনটা আশঙ্কা সে করেনি।
সুদীপ -- বল কী ?
সোমেশ -- পুরোটা শোনো তাহলে ................ 
( আলো আস্তে আস্তে নিভে এলো। ) 

নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION : NIRUDDES

দৃশ্য ৬
মঞ্চ পরিকল্পনা - এই দৃশ্যে একটি প্রাচীন জমিদারবাড়ির কাছারির অবতারণা করা হবে। সেজন্য আরো  কিছু চেয়ার টেবিল এবং দৃশ্যের অনুরূপ সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে।
দৃশ্যের শুরুতে  নায়েবমশাই , দুজন সরকার ও খাজাঞ্চিমশাই নিজ নিজ আসনে উপবিষ্ট হয়ে কাজে ব্যাস্ত। এমন সময় নেপথ্যে শোভনের গলা শোনা গেল।
শোভন ( নেপথ্যে ) -- এই কে আছো , দরজা খোলো।
( নায়েবমশাই উঠে দরজা খুলে দিলেন। সাথে সাথে শোভন মঞ্চে প্রবেশ করলো। মঞ্চে প্রবেশ করেই সে সোজা হাঁটা শুরু করলো। )
নায়েবমশাই ( শোভনকে বাধা দিয়ে ) -- আরে করেন কি , কোথায় চললেন , কাকে চান ?
শোভন -- কাউকে না , ভেতরে যাবো।
নায়েবমশাই ( শোভনকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে তারপর স্মিত হেসে ) -- ওঃ , কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কেন , আসুন এখানে একটু বিশ্রাম করুন।
শোভন ( অবাক হয়ে ) কেন কী হয়েছে নায়েবমশাই ?
নায়েবমশাই -- না না হয়নি কিছুই।
শোভন -- মা ভালো আছেন ?
নায়েবমশাই -- ( অদ্ভুত হেসে ) -- ভালো আছেন বইকি !
শোভন -- তাহলে ভেতরে গেলেই তো হতো।
নায়েবমশাই ( কঠিন স্বরে ) -- না , আপনি এখানে বসুন।
( খাজাঞ্চীবাবুকে উদ্দেশ্য করে ) ইনি ভেতরে যেতে চাইছেন।
খাজাঞ্চীবাবু ( শোভনকে একবার দেখে নিয়ে ) -- ওঃ ইনি আজই এসেছেন বুঝি !
নায়েবমশাই -- হ্যাঁ , এইমাত্র।
শোভন ( অধীর ভাবে ) -- আপনারা কী বলতে চান স্পষ্ট করে বলুন ! মার কি কিছু হয়েছে ? বাবা কেমন আছেন ?
( সকলেই শোভনকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখছে )
নায়েবমশাই -- তাঁরা সবাই ভালো আছেন ; কিন্তু এখন তো আপনার সঙ্গে দেখা হবে না।
শোভন ( অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ) -- কেন দেখা হবে না ? আপনাদের কি মাথা খারাপ হয়েছে ! আমি চললাম।
নায়েবমশাই ( শান্ত ঠান্ডা স্বরে ) -- দেখুন মিছিমিছি কেলেংকারি করে লাভ নেই ; এতে ফল হবে না কিছু।
শোভন ( অবাক হয়ে ) -- আপনারা কি আমায় চিনতে পারছেন না ?
( সকলে নীরব )
আমি শোভন , বুঝতে পারছেন না  আমি শোভন ?
( নায়েবমশাই পিছনে ফিরে টেবিলের দিকে গেলেন , সেখান থেকে একটা ছবি নিয়ে এসে শোভনের হাতে ধরালেন। )

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।


শোভন ( ছবি নিয়ে , অত্যন্ত বিস্মিত কণ্ঠে ) -- এতো আমারই ফটো , দেখুন ভালোকরে আপনারাই মিলিয়ে................. নাঃ এ অসহ্য।
নায়েবমশাই -- দেখুন কিছু মনে করবেন না। আপনার সঙ্গে একটু মিল আছে সত্যি। কিন্তু এর আগেও দুজনের সঙ্গে এমনই মিল ছিল। এমনকি জরুল পর্যন্ত। আমাদের এ নিয়ে গোলমাল করতে মানা আছে। আমরা কিছু হাঙ্গামা করবো না , আপনি এখন চলে যেতে পারেন।
শোভন ( একটু থেমে , কাতরভাবে ) -- একবার শুধু আমি মা বাবার সাথে দেখা করবো। আপনারা বিশ্বাস করছেন না। কিন্তু একবার আমায় শুধু দেখা করতে দিন।
নায়েবমশাই ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) শুনুন তাহলে , সাতদিন আগে শোভন মারা গেছে।
শোভন ( ব্যাঙ্গের হাসি হাসতে হাসতে ) -- কেমন করে মারা গেল ?
নায়েবমশাই -- রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে , অপঘাতে। নাম , ধাম , পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়নি , কিন্তু দুর্ঘটনার সময় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাদের কয়েকজন আমাদের বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের সব জানিয়েছেন। হাসপাতালেও আমরা খবর নিয়েছি। সেখানকার ডাক্তারদের বর্ণনাও আমাদের সঙ্গে মিলে গেছে।
( এই সময় শোভন যেদিক দিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করেছিল তার উল্টো দিক দিয়ে তার বাবা মঞ্চে প্রবেশ করলো )
শোভন ( বাবাকে লক্ষ্য করে ) বাবা ! ( এই বলে সে বাবার দিকে ছুটে গেল ) বাবা আমায় চিনতে পারছো !
বাবা ( কিছুক্ষন থেমে থেকে ) -- কে ?
নায়েবমশাই ( দ্রুত পায়ে শোভনের কাছে এসে শোভনকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ) -- না না , কেউ না , সেই সেবারের মতো। এই নিয়ে তিনবার হলো।
জনৈক সরকারমশাই -- আমরা আসতে দিইনি , হঠাৎ আমাদের হাত ছাড়িয়ে ........
( শোভনের বাবা হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিলেন , তারপর একদৃষ্টে শোভনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন )
শোভনের বাবা -- নায়েবমশাই আপনি একবার অন্দরে আসুন।
( শোভনের বাবা প্রস্থান করলেন , তার পেছন পেছন নায়েবমশাইও প্রস্থান করলেন। শোভন হতাশ ও অবাক হয়ে আবার তার আসনে হতাশ হয়ে বসে পড়লো। কিছুক্ষন বাদে নায়েবমশাই ফিরে এলেন। )
নায়েবমশাই ( শোভনের উদ্দেশে ) -- আপনাকে দয়াকরে একটা কাজ করে দিতে হবে।
শোভন ( হতাশ ও আহত কণ্ঠে ) -- কী কাজ ?
নায়েবমশাই -- বাড়ির কর্ত্রী মুমূর্ষু , ছেলের মৃত্যু সংবাদ তিনি শোনেননি। তাকে কিছু জানানো হয়নি। এখনো তিনি শোভনকে দেখবার আশা করে বসে আছেন। আপনাকে তাঁর হারানো ছেলে হয়ে দেখা দিতে হবে। মুমূর্ষুর দৃষ্টিতে কিছু ধরা পড়বে না। হারানো ছেলের সাথে সত্যি আপনার সাদৃশ্য আছে।  এজন্য জমিদারবাবু নিজে আপনাকে কাতর অনুরোধ জানিয়েছেন। আপনাকে দশ হাজার টাকাও দেওয়া হবে। ( পকেট থেকে দুটি টাকার বান্ডিল বের করে শোভনের হাতে গুঁজে দিলেন ) ।

নিরুদ্দেশ গল্পের নাট্যরূপ :-

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION : NIRUDDES




দৃশ্য ৭
মঞ্চ পরিকল্পনা - প্রথম দৃশ্যের অনুরূপ।
সুদীপ ও সোমেশ সেই একইভাবে বসে আছে। দুজনেই চুপ। হঠাৎ সুদীপ সোমেশের মুখে কিছু একটা লক্ষ্য করে বললো -
সুদীপ ( আশ্চর্য হয়ে ) -- সোমেশ তোমার কানের কাছেও তো একটা জরুল আছে।
সোমেশ ( রহস্যের হাসি হেসে ) -- সেজন্যই তো গল্প বানানো সহজ হলো। উঠি বুঝলে ; বৃষ্টি থেমে গেছে।
( সোমেশ সঙ্গে সঙ্গে উঠে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করলো। সুদীপ অবাক হয়ে বসে থাকলো। )
সুদীপ ( আসন থেকে উঠে পরে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে অবাক ও আশ্চর্য কণ্ঠে ) --সোমেশই তাহলে শোভন !
( ধীরে ধীরে পর্দা নেমে এলো )

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

HS BENGALI PROJECT DRAMATISATION OF A STORY : MONTUR MASTER


বাংলা প্রকল্প : নির্বাচিত গল্প থেকে নাট্যরূপ নির্মাণ :-

মূলগল্প - মন্টুর মাস্টার
লেখক - শিবরাম চক্রবর্তী
মন্টুর মাস্টার


চরিত্রবর্গ :-
মিহির - বছর তিরিশের এক যুবক। 
মন্টু - দশ বারো বছর বয়সের একটি ছেলে। 

মন্টুর বাবা -- বছর চল্লিশ - পঁয়তাল্লিশের এক ব্যাক্তি।    

দৃশ্য ১
মঞ্চ পরিকল্পনা
প্রথম দৃশ্যে মঞ্চে সাধারণ একটি পড়ার টেবিল ; তাতে কিছু বই পত্র , কিছু কাগজপত্র। টেবিলের পাশে একটি সাধারণ চেয়ার। মঞ্চে সাধারণ আলো। পর্দা উঠলে দেখা গেল মিহিরকে। মিহির চেয়ারে বসে আছে।
মিহির -- জীবনে আর কিছু হলো না। তিরিশ বছর হয়ে গেল। কোনো কাজ নেই , চাকরি নেই। ধূর........... বিরক্তি ধরে গেল। ......... এখন প্রতিদিন বসে থাকা খবরের কাগজের অপেক্ষায় ............... যদি কোনো নতুন কাজের বিজ্ঞাপন দেখা যায়........... আজ আবার খবরের কাগজের কী হলো ! এখনো আসছে না !
[ এই সময় নেপথ্যে কলিং বেলের শব্দ। পরপর দুইবার। ]
ওই এলো বোধহয়।
[ মিহির উঠে পড়লো চেয়ার থেকে। উঠে মঞ্চের বামদিকে গেল। ]
কী হলো আজ এত দেরী যে !
নেপথ্য কণ্ঠ -- ও সাইকেল খারাপ হয়ে গেছিলো দাদাবাবু।
মিহির -- ও আচ্ছা আচ্ছা।
[ এইবলে মিহির খবরের কাগজটি নিলো ; তারপর আবার চেয়ারের পাশে আসলো আর খবরের কাগজের পাতা ওল্টাতে লাগলো। ]
একটা মোটামুটি কাজ পেলে বেঁচে যাই। .................. বীরভূমে রাজনৈতিক সংঘর্ষ....... দিনদুপুরে ব্যাঙ্ক ডাকাতি ................ সিনেমায় অভিনয়ের নামে প্রতারণা .............. ধূর ........... ওলিম্পিকে .... আরে এটা কী ! গৃহশিক্ষক চাই , আহার ও বাসস্থান দেওয়া হইবে , তাছাড়া বেতন মাসিক পাঁচ হাজার টাকা .............
[মিহির খবরের কাগজটা ভাঁজ করতে শুরু করলো , দর্শকদের দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে  -]
এইরকম , ঠিক এইরকমটাই খুঁজছিলাম আমি ; থাকা - খাওয়া এমনিই হবে , তার উপর মাসে পাঁচ হাজার টাকা ! বাড়িতেও পাঠাতে পারবো কিছু আর এম এ টাও পড়া হয়ে যাবে। সিনেমা , পকেট খরচ কোনোকিছুরই অভাব হবে না। তবে [ একটু চিন্তিত ] এই বিজ্ঞাপনটা আগেও যেন কাগজে দেখেছি , খুব সম্ভব ছেলেটি একটি গবাকান্ত - তাই বেতন ভারী দেখে কেও এগোলেও ছেলে আবার তার চেয়ে ভারী দেখে পিছিয়ে পরে। [ নতুন উদ্যমে ] কিন্তু আমি পিছোবো না। প্রাণপণে পড়াবো ছেলেটাকে। পড়াতে গিয়ে যদি পাগল হয়ে  যেতে হয় তবুও পড়াবো। পাঁচ হাজার টাকা কম কথা নয়। তার জন্য গাধা পিটিয়ে মানুষ করা - আর বেশি কথা কি ! মানুষ পিটিয়েও গাধা বানানো যায়। ভদ্রলোক কি অতগুলো টাকা মাগনা দিচ্ছেন নাকি ? ............ আজই ...... আজই আমি দেখা করতে যাবো।

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

দৃশ্য ২
মঞ্চ পরিকল্পনা -
মন্টুর বাড়ি। বসার ঘর। একটি টেবিল , তাতে একটি ফুলদানি। টেবিলের পাশে তিন চারটি চেয়ার। মোটামুটিরূপে ঘরটিতে আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রকাশ থাকবে। ঘরে উজ্জ্বল আলো। চেয়ারে উপবিষ্ট মন্টু ও মন্টুর বাবা।
মন্টুর বাবা -- কি'রে মন্টু , একটা মাস্টারতো টানা একমাস তোকে পড়াতে পারলো না। আবার কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছি ; দেখা যাক নতুন কোনো মাস্টারের খোঁজ পাওয়া যায় কি'না।
[ একথা বলতে বলতে নেপথ্যে কলিং বেলের শব্দ পাওয়া গেল। ]
মন্টু দেখ , কে আবার এলো ; নতুন কোনো মাস্টার এলো না'কি !
[ মন্টু উঠে পড়লো। মন্টুর বাবা একটু গুছিয়ে বসলেন। মন্টু ও মিহির মঞ্চের মাঝে উপবিষ্ট হলো। মিহিরের হাত নমস্কারের ভঙ্গিতে। ]
মিহির -- ( আমতা আমতা করে ) নমস্কার , আমি ওই কাগজে গৃহশিক্ষকের বিজ্ঞাপন দেখে এসেছিলাম।
মন্টুর বাবা -- হ্যাঁ , হ্যাঁ আসুন আসুন বসুন।
[ মিহির একটি ফাঁকা চেয়ারে বসলো। মন্টুর বাবা মিহিরকে আপাদ মস্তক পরীক্ষা করতে লাগলো ]
মিহির -- এই যে আমার সার্টিফিকেট গুলো।
[ মিহির সার্টিফিকেটগুলো মন্টুর বাবার হাতে তুলে দেয়। মন্টুর বাবা একটি কভার ফাইল মিহিরের হাত থেকে নেয় এবং না দেখেই টেবিলে রেখে দেয়। কিছুক্ষন চুপচাপ থাকার পর ]
মন্টুর বাবা -- তোমার জামাটা একবার খোল তো বাপু !
মিহির -- জামা ! জামা কেন খুলতে হবে ?
মন্টুর বাবা -- আপত্তি আছে তোমার ?
মিহির -- না না ( জামা খুলতে খুলতে ) পাঁচ হাজার টাকার চাকরির জন্য জামা খোলা কেন জামাই হতেও আমি রাজি। ( বলতে বলতে সম্পূর্ণ জামা খুলে ফেললো )
মন্টুর বাবা -- তুমি এক্সারসাইজ করো ?
মিহির ( অবাক হয়ে ) -- একটু আধটু।
মন্টুর বাবা -- বেশ , বেশ।
মিহির -- ( ইতস্ততঃ করে ) -- অভয় দিলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
মন্টুর বাবা -- নিশ্চই।
মিহির -- গৃহশিক্ষকের সাথে শরীর চর্চার সম্পর্কটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
মন্টুর বাবা - ( হাসতে হাসতে ) - ও কিছু নয় , এমনিই জিজ্ঞেস করলাম। আর একটা শেষ প্রশ্ন করবো তোমায়।
মিহির - ( টেবিলে রাখা কভার ফাইল খুলে একটি সার্টিফিকেট মন্টুর বাবাকে দিতে দিতে ) -- হ্যাঁ , হ্যাঁ নিশ্চই।
[ মন্টুর বাবা সার্টিফিকেট টি নিয়ে কোনো উৎসাহ না দেখিয়ে , একবারও না দেখে সেটাকে আবার টেবিলে রেখে দেয়। ]
মন্টুর বাবা -- তোমার শরীরটা নেহাত মন্দ নয়। ওজোন কত তোমার ?
মিহির ( প্রচন্ড আশ্চর্য হয়ে ) -- ওজোন ! ......... তা হবে দু মণের কাছাকাছি।
মন্টুর বাবা ( উৎসাহিত হয়ে ) -- বেশ , বেশ ; কিছুদিন টিকতে পারবে বলেই মনে হয়। 
মন্টু ( উৎসাহিত হয়ে ) -- হ্যাঁ বাবা , এ মাস্টারমশাইয়ের গায়ে অনেক রক্ত আছে।
মন্টুর বাবা - কিছুদিন টেকা আশার কথা ; কিন্তু বেশ কিছুদিন টেকাটাই হলো আশঙ্কার। যাক , সবই শ্রী ভগবানের হাত।
মন্টু -- ভগবানের হাত নয় বাবা , শ্রী ছার্...............
মন্টুর বাবা -- চুপ ! কথার উপর কথা ক'স কেন ? কিছু  বুদ্ধি - শুদ্ধি হলো না তোর। (মিহিরের উদ্দেশ্যে ) হ্যাঁ , দেখো বাপু , পড়াশোনার সাথে সাথে একে শিষ্টতাও শেখাতে হবে। পিতামাতা , গুরুজনদের কথার উপর কথা বলা , অতিরিক্ত হাসা - এইসব মহৎ দোষ সারাতে হবে এর।
মিহির ( ইতস্ততঃ করে ) -- তাহলে কবে থেকে আমি ............
মন্টুর বাবা -- না না কবে থেকে না ; কাল থেকে ; কাল থেকেই শুরু করো।
মিহির -- বেশ তাহলে।
মন্টুর বাবা -- হ্যাঁ , আরেকটা কথা ; ওই পাঁচ হাজার টাকাই বেতন নির্ধারিত হলো। কিন্তু একটা শর্ত আছে। পুরো একমাস না পড়ালে , এমনকি একদিন কম হলেও একটা টাকাও পাবে না তুমি। পাঁচ দিন , দশ দিন পড়িয়ে অনেক প্রাইভেট টিউটর ছেড়ে চলে গেছে ; সে   রকম হলে আমি বেতন দিতে পারি না। সেকথা আমি আগেই বলে রাখছি।
মন্টু - একজন তো ঊনত্রিশ দিন পর্যন্ত ছিলেন। আরেকটা দিন যদি থেকে যেতে পারতেন ! কিন্তু কিছুতেই পারলেন না।
মন্টুর বাবা - তুই থাম। বারবার বলেছিনা কথার উপর কথা না বলতে।
( মিহিরের উদ্দেশ্যে ) তা তোমার জিনিসপত্র সব নিয়ে এসোগে। আজ সন্ধ্যে থেকেই ওকে পড়াবে ; ( মন্টুর উদ্দেশ্যে ) যা মন্টু মাস্টার মশাইয়ের ঘরটা দেখিয়ে দে।

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

দৃশ্য ৩
মঞ্চ পরিকল্পনা -
একটি ছোট বিছানা। পাশে একটি টেবিল ও তার পাশে একটি চেয়ার। মিহির বিছানায় বসে আছে।
মিহির - পাঁচ হাজার টাকা , পাঁচ হাজার টাকা , পয়লা তারিখে পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া কম কথা নয়। চিরকাল মাস গেলে টাকা দিয়েই এসেছি ; কলেজের টাকা , মেসের টাকা , খবরের কাগজ ওয়ালার টাকা , আরো কত টাকা .............. এই প্রথম আমি মাস গেলে নিজে টাকা পাবো। না , এরা যথার্থই ভদ্রলোক , যত্ন নিয়ে পড়াতে হবে। কাজটা ফস্কে গেলে হবে না।
[ এই সময় নেপথ্য থেকে - ]
মন্টু (নেপথ্য কণ্ঠ ) -- আসবো স্যার ?
মিহির -- কে মন্টু , এসো , এসো।
[ মন্টু ঘরে প্রবেশ করলো। হাতে দু - একটা বই খাতা। তারপর চেয়ারটিতে বসলো ]
মিহির -- আহা চেয়ারে কেন ! এই , এইখানে এসো বিছানাতে।
মন্টু ( চমকে উঠে ) -- না না স্যার , আমি ওই বিছানায় বসবো না।
মিহির ( অবাক হয়ে ) -- কেন ? এত সুন্দর বিছানা !
মন্টু -- না স্যার , আপনি মাস্টার মশাই , গুরুজন।  আপনার বিছানায় কি পা ঠেকাতে আছে আমার ? বাবা বারণ করেছেন।
মিহির - ও আচ্ছা। ঠিক আছে তাহলে , চেযারে গিয়েই বোসো তাহলে। কিন্তু যা'ই বলো বিছানাটি তোমাদের খাসা ; কী নরম ; বেশ আরাম হবে ঘুমিয়ে। .............. যাক গে , তোমার বই বের করতো দেখি।
[ একটি বই হাতে নিয়ে দু - একটা পাতা উল্টে ]
আচ্ছা মন্টু Beans মানে জানো ?
মন্টু -- না স্যার।
মিহির -- Beans মানে হলো বরবটি , একধরণের সবজি , তরকারি হয় , আমরা খাই।Beans দিয়ে একটা সেনটেন্স করো দেখি। পারবে ?
মন্টু -- হ্যাঁ , I had been there ।
মিহির -- ( প্রচন্ড অবাক হয়ে )  আচ্ছা এবার বুঝতে পারলাম তোমার সব মাস্টাররা কেন পালিয়ে যায় ! গবাকান্ত বলে গবাকান্ত ! এর মানেটা কী ?
মন্টু -- এর মানেতো খুব সোজা স্যার ; এর মানে হলো সেখানে আমার বরবটি ছিল।
মিহির -- থাম ,  থাম , আর ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবেনা আমাকে। I had been there  মানে হলো - আমি সেখানে ছিলাম।
মন্টু -- তবে আপনি যে বললেন Beans  মানে বরবটি ? তাহলে কি আমি সেখানে বরবটি ছিলাম ?
মিহির -- (প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ) খুব সম্ভব তা'ই ছিলে তুমি। আরে বানানের তফাৎ দেখছো না ! Been হলো  Be ধাতুর form । আর Beans  মানে বরবটি। তা দিয়ে সেনটেন্স তৈরী করলে হয় - Peasants grow beans । অর্থাৎ চাষীরা বরবটি উৎপন্ন করে। বুঝলে এবার।
মন্টু ( অনেকটা ঘাড় নেড়ে ) হ্যাঁ স্যার।
মিহির -- অতটা ঘাড় নেড়ো না , ভেঙে যেতে পারে। আচ্ছা বুঝেছো যখন , তখন Beans  দিয়ে আরেকটা সেনটেন্স বানাওতো দেখি।
মন্টু -- পারবনা স্যার।
মিহির ( হতাশ হয়ে ) -- ওহ ! এই ধরো যেমন - Our cook cooks beans । আমাদের ঠাকুর বরবটি রাঁধে।
মন্টু ( উৎসাহিত হয়ে ) -- হ্যাঁ স্যার এবার Beans ব্যাপারটা আমার বোধগম্য হয়েছে স্যার।
মিহির -- তাহলে একটা সেনটেন্স করো।
মন্টু -- We are all human beans ।
মিহির ( প্রচন্ড অবাক হয়ে ) -- কী ? এর মানে কী ? আমরা সবাই মানুষ বরবটি !
মন্টু - কেন বাবাকে তো অনেকবার বলতে শুনেছি হিউম্যান বীনস !
মিহির ( মাথায় হাত দিয়ে প্রায় চুল ছেঁড়ার অবস্থা ) -- ওহ ! আর পারছিনা।  দিনের পর দিন ; মাসের পর মাস এভাবেই পড়াতে হবে তোমাকে ? .............. যাও , যাও , আজকের মত তোমার ছুটি।
মন্টু ( বইপত্র গোছাতে গোছাতে ) -- যাই তবে স্যার , খিদেটাও পেয়েছে খুব , আপনিও চলে আসুন খাবার ঘরে।
মিহির -- ঠিক আছে , তুমি যাও আমি আসছি।

BENGALI DRAMATISATION : MONTUR MASTER

দৃশ্য - ৪
মঞ্চ পরিকল্পনা - তৃতীয় দৃশ্যের অনুরূপ।
মিহির - নাহ ! ছেলেটা বাচাল হলেও , এদের অতিথি সেবা চমৎকার। এতো সুন্দর খাওয়া কতদিন যে খাওয়া হয়নি ! না না না ছেলেটার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে কাজটা ছাড়া যাবে না।
[ বিছানায় বসে ] আর বিছানাটা কী সুন্দর , কী নরম , খুব সুন্দর ঘুম আসবে তাতে।
যাক ঘুমিয়েই পড়ি তাহলে।
[ মিহির বিছানায় শুয়ে পড়লো। আলো প্রায় নিভে এলো। কিছক্ষন পর প্রচন্ড চিৎকার করে মিহির প্রচন্ড এক লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে পড়লো। লাফ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলো জ্বলে উঠলো। মিহির তার সারা গা প্রচন্ড ভাবে চুলকোতে লাগলো। বিছানা থেকে এক লাফ দিয়ে নিচে নেমে এল ; এখনো সে প্রচন্ডভাবে গা চুলকোচ্ছে। ]
মিহির -- কী এসব ? এসব কী ? আমার সারা গা এভাবে চুলকোচ্ছে কেন ? চাদরের তলে কী আছে ? দেখি তো একবার।
[ চাদরের একপ্রান্ত তুলে ] বাপরে বাপ্ , এ যে হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি কোটি ছারপোকা। কী করি এবার ! আচ্ছা এবার সব বুঝতে পারলাম। কিছুদিন পড়িয়ে , টাকা না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা ; দাঁড়া ব্যাটারা , তোরা তো আমাকে চিনিস না , দেখাচ্ছি মজা তোদের। আজকের রাতটা এই টেবিলটাতেই শুয়ে কাটিয়ে দিই ; কাল দেখছি তোদের।

দৃশ্য - ৫
মঞ্চ পরিকল্পনা - দ্বিতীয় দৃশ্যের অনুরূপ।
[ মন্টু আর মন্টুর বাবা দুটি চেয়ারে বসে আছে। মন্টুর বাবা বসে বসে সংবাদপত্র পড়ছে। সকালের পরিবেশ। ঘরে উজ্জ্বল আলো। ]
মিহির ( নেপথ্যে থেকে ) আসতে পারি ?
মন্টুর বাবা ( খবরের কাগজ থেকে চোখ তুলে ) কে মিহির , আরে এস এস।
[ মিহির ঘরে প্রবেশ করলো ]
বোসো , বোসো , কাল ঘুম হয়েছিলোতো ভালো ? না মানে নতুন জায়গা তো তাই জিজ্ঞেস করছি !
মিহির -- খাসা ! অমন বিছানায় ঘুম হবে না , বলেন কি আপনি ?
মন্টুর বাবা -- ( অপ্রস্তুত হয়ে ) -- বেশ , বেশ , ঘুম ভালো হলেই ভালো। জীবনের বিলাসই হলো গিয়ে ঘুম।
মন্টু -- আর ব্যাসন হলো বেগুনি , না বাবা ?
মন্টুর বাবা -- তা তোমার ঘুমটা বোধহয় বেশ জমাট ? ঘুমিয়ে আয়েস পাও খুব ?
মিহির -- আজ্ঞে সে কথা আর বলবেন না। একবার আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পাশের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু মোটেই টের পাইনি।
মন্টুর বাবা -- বল কি ?
মিহির -- আমাদের বাড়ি বর্ধমানে। শুনেছেন বোধহয় সেখানে বেজায় মশা , মশারি না খাটিয়ে শোবার জো নেই। একদিন খুব ক্লান্ত ছিলাম মশারি খাটালাম না। পরের দিন যখন ঘুম ভাঙলো , কী বলবো মশাই , দেখি পাশের বাড়িতে শুয়ে আছি।
মন্টুর বাবা -- কী রকম ?
মিহির -- মশায় টেনে নিয়ে গেছে মশাই। সেই জন্যইতো আমি মশারি খাটাই না ; রাত বিরেতে পাশের বাড়ি যাওয়ার ওইটাই সহজ উপায় কি'না !
মন্টুর বাবা ( বেজায় মুষড়ে পড়ে ) -- মশাতেই যখন কিছু করতে পারে নি , তখন কিসে আর কী করবে তোমার ! তুমি দেখছি টিকেই গেলে এখানে।
মিহির -- আমার কিন্তু একটা নিবেদন আছে।
মন্টুর বাবা -- বলে ফেলো।
মিহির -- বলছিলাম , আমার কয়েকটা টাকা আমায় দিতে হবে আগাম , ছারপোকার অর্ডার দেব।
মন্টুর বাবা -- ( অত্যন্ত অবাক হয়ে ) -- ছারপোকার অর্ডার ! বলছো কী ?
মিহির -- ও আপনি জানেন না দেখছি ! ছারপোকার মতো এমন মস্তিষ্কের উপকারী মেমরি বাড়ানোর মহৌষধি আর নেই। বিলেতে ছারপোকার চাষ হয় এইজন্য। ( মন্টুর দিকে তাকিয়ে ) গাধা ছেলে সব দেশেই আছে তো , তাদের জন্য। ( একটু থেমে ) আমার এক বন্ধু তো পুরোদস্তুর ছারপোকার ব্যবসাতেই লেগে গেল ; রেলের সিট্ থেকে , বিছানার তোশক থেকে - যত পারলো ছারপোকা সংগ্রহ করলো , তারপর তাদের দিয়ে শুরু করলো ছারপোকার চাষ , এখন তো কোটিপতি।
মন্টুর বাবা -- বলো কী !
মিহির -- তবে আপনাকে একটা সিক্রেট বলি। ছারপোকার ব্যবসা তো পরে ; আমি তো নিজের জন্যই ছারপোকা চাই। মন্টুর বাবা -- কিরকম ?
মিহির -- ফাইনাল পরীক্ষার আগে ; কিচ্ছুটি পড়া হয়নি ; তখনি আমি জানলাম ছারপোকার কথা। ব্যাস , সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাজার ছারপোকা জোগাড় করে শিলনোড়া দিয়ে বেটে জুস্ করে খেয়ে ফেললাম।
মন্টুর বাবা -- তারপর কী হলো ?
মিহির -- তার ফল তো হাতে নাতেই পেলাম ; ফাইনাল পরীক্ষায় একেবারে ফার্স্ট ক্লাস। 
মন্টুর বাবা -- সত্যিই ?
মিহির -- সত্যি বলে সত্যি ; একেবারে তিন সত্যি।
মন্টুর বাবা -- আগে বলোনি কেন ? অনেকখানি ব্রেন করে ফেলতাম। এমন কাজের জিনিস ছারপোকা ! ইশ আগে জানতে পারলে ............
মন্টু -- বাবা আমাদের তো ছারপোকা কিনতেও হবে না বলো ; বিছানাতেই তো .......
মন্টুর বাবা -- ( মন্টুকে থামিয়ে দিয়ে ) -- চুপ কর হতভাগা ; কতবার বলেছি বড়দের কথার মাঝে কথা বলবে না।
মিহির -- যাক গে বাদ দিন সে সব কথা ; আজ দুপুরে ভবানীপুরে একটা নেমন্তন্ন আছে। একেবারে সন্ধ্যেয় আসবো , তারপর পড়াতে বসবো।
মন্টুর বাবা -- ও আচ্ছা আচ্ছা , সাবধানে যেও আর ঠিক সময়ে এস কিন্তু।
মিহির -- নিশ্চই নিশ্চই , এখন উঠি তাহলে।
মন্টুর বাবা -- ঠিক আছে।
[ এই কথা বলে মিহির উঠে পড়লো ও মঞ্চের বাইরে চলে গেল। সে চলে যেতেই মন্টুর বাবা অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। আসন ছেড়ে উঠে পড়লো। ]
মন্টুর বাবা -- ওরে মন্টু , এযে হাতে একেবারে সোনার চাঁদ রে ; তোর তো ব্রেনের খুবই দরকার ; আর আজকাল আমারও একটু ব্রেনের দরকার পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।
মন্টু -- বাবা তোমারও !
মন্টুর বাবা -- চুপ কর ! জানিস না বয়স বাড়লে ব্রেনের একটু দরকার হয়ে পড়ে। কিছুই তো জানিস না দেখছি ; সেজন্যই তো বলছি তোর ব্রেনের দরকার।
মন্টু -- তাহলে আমরা এখন কী করবো বাবা ?
মন্টুর বাবা -- আরে তোর মাস্টারের বিছানাটাই তো ছারপোকার তীর্থভূমি। আমরা ওই বিছানার সমস্ত ছারপোকা ধরে ফেলবো ......
মন্টু ( তাকে থামিয়ে দিয়ে ) -- আর স্যার এর মতো শিলনোড়া দিয়ে বেটে জুস্ করে খেয়ে ফেলবো।
মন্টুর বাবা -- আরে না না ; এত সময় নেই ; শিলনোড়ার আর দরকার নেই। আমরা সরাসরি বিছানা থেকে ছারপোকা ধরবো আর টপাটপ মুখে পুড়ে ফেলবো।
মন্টু -- চলো চলো তাই চলো ; আমি কিন্তু বেশি খাবো ; আমার বেশি ব্রেনের দরকার।
মন্টুর বাবা -- আরে কথা ছাড় , তাড়াতাড়ি চল ; তোর স্যার আসার আগেই সব ছারপোকা খেয়ে ফেলতে হবে।
[ তারা মঞ্চ থেকে দ্রুত প্রস্থান করলো। ]

দৃশ্য - ৬ 
তৃতীয় দৃশ্যের অনুরূপ। সেখানে মন্টু আর মন্টুর বাবা ভয়ানক ব্যাস্ত। তারা ঘরে এসেই প্রথমেই বিছানার চাদরটি উঠিয়ে ফেললো। তারপর তারা অত্যন্ত ব্যাগ্রভাবে বিছানা থেকে কি যেন খুঁটে খুঁটে তুলে তুলে মুখে পুরতে লাগলো।
মন্টুর বাবা -- খেতে খারাপ নয় বল ; মনে হচ্ছে ব্রেন একটু একটু করে বাড়ছে।
মন্টু -- আমারও তাই মনে হচ্ছে বাবা , ব্রেন যেন একটু একটু করে বাড়ছে।
মন্টুর বাবা -- খা খা , তাড়াতাড়ি খা ; তোর মাস্টারের আসার সময় হয়ে এলো ; এই এলো বলে।
[ আবার তারা অত্যন্ত ব্যাগ্রভাবে বিছানা থেকে খুঁটে খুঁটে মুখে পুড়তে লাগলো। কিছুক্ষন পর হঠাৎ মঞ্চের ভেতর দ্রুত পায়ে প্রবেশ ; কিন্তু মন্টু ও মন্টুর বাবার কান্ড কারখানা দেখে মিহিরের গতি খুব ধীর হয়ে গেল। ধীরে ধীরে সে তার বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। অবাক তার দৃষ্টি। ওদিকে মন্টু আর মন্টুর বাবা অত্যন্ত ব্যাগ্র ভাবে এখনও ছারপোকা খেয়ে চলেছে। তারা এখনও মিহিরকে দেখতে পায়নি। হঠাৎ ]
মিহির ( অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে ) -- একি , একি করছেন  আপনারা......
[ হঠাৎ মিহিরের উপস্থিতি টের পেয়ে মন্টু ও মন্টুর বাবা ছারপোকা খাওয়ার কাজে বিরতি দিলো। এমন একটা ভাব দেখালো যেন কিছুই হয় নি। ]
মিহির -- কি করছেন আপনারা , আমার বিছানা পরিষ্কার করছিলেন নাকি ?
মন্টুর বাবা ( ভালোমানুষ সেজে ) -- না না ওই একটু। মন্টুই বিছানা পরিষ্কার করছিলো ; আমি একটু হাত লাগিয়েছিলাম মাত্র ; হাজার হোক মাস্টার মশাইয়ের বিছানা বলে কথা ; সেতো দেবতার বেদীর তুল্য। ( বলে হাত কচলাতে কচলাতে বোকার মতো হাসতে লাগলো ) ।
মিহির ( কৌতুক করে ) -- তা পুরো বিছানা পরিষ্কার হলো তো ?
মন্টুর বাবা -- হ্যাঁ হ্যাঁ , একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেছে। অনেক্ষন আগেই হয়ে গেছে। আমরা একটু চেক করে দেখে নিচ্ছিলাম আর'কি।
মিহির -- তা বেশ , তবে একটু সমস্যা হয়েছে।
মন্টুর বাবা -- সমস্যা , কী সমস্যা ?
মিহির -- আজ নেমন্তন্নে খুব জোর খাওয়া হয়েছে ; শরীর একেবারে ভারী হয়ে আছে। আজ আর পড়ানোর ইচ্ছে নেই। বুঝতে পারছি , মন্টুর পড়াশোনার খুব ক্ষতি হয়ে গেল।
মন্টুর বাবা -- না না কোনো ক্ষতি হয় নি ; আমরা তো ইতিমধ্যেই অনেক ব্রেন ......
থাক সে কথা ; কাল সকাল থেকে পড়াবে নাহলে। এখন আসি তাহলে ; তুমি বিশ্রাম নাও।
মিহির -- আচ্ছা ঠিক আছে।
[ মন্টু ও মন্টুর বাবার আনন্দের সাথে প্রস্থান। তাদের প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গে মিহির অত্যন্ত আনন্দের সাথে বিছানা ঠিক করতে লাগলো। ]
বাহ্ কী আনন্দ ; কাল সারারাত ঘুম হয়নি। আজ বিছানায় একটাও ছারপোকা নেই। সব খেয়ে ফেলেছে ওরা ; আজ নিশ্চিন্তের ঘুম। ধন্যবাদ মন্টু , ধন্যবাদ মন্টুর বাবা ছারপোকা খেয়ে ফেলার জন্য।
[ এই কথা বলা মাত্র মিহির বিছানার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। পর্দা নেমে এলো। ]

XI & XII অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর। CLICK HERE.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hellow viewers, myself Nandan Dutta reside at Maheshpur ,Malda, West Bengal, India.

My intent to make the website is to share my view and knowledge to the HS students. They can easily find projects, HS suggestion and many more here.


Categories

  • Career (2)
  • CLASS 11 (XI) (1)
  • Class XI 1st Semester (7)
  • CLASS XI 2nd Semester (16)
  • H.S. 3rd SEM (9)
  • H.S. 4th SEM (5)
  • H.S. EDUCATION (5)
  • H.S. HISTORY (1)
  • HS SOCIOLOGY (2)
  • HS SUGGESTION (1)
  • INDIAN HISTORY (30)
  • NCERT (1)
  • POLITY (61)
  • PROJECT (96)
  • Sociological Studies (79)
  • Teaching & Education (128)
  • TEST PAPERS SOLVE (11)
  • TEST PAPERS SOLVE 2020 (7)
  • WORLD HISTORY (53)
  • XI EDUCATION (7)
  • XI HISTORY (3)
  • XI POL SC (1)
  • XI SOCIOLOGY (1)
  • XII Bengali (1)
  • XII Sanskrit (1)

recent posts

Sponsor

Facebook

Blog Archive

  • August 2025 (5)
  • July 2025 (14)
  • June 2025 (4)
  • May 2025 (23)
  • April 2025 (75)
  • March 2025 (32)
  • December 2024 (5)
  • November 2024 (70)
  • October 2024 (1)
  • September 2024 (1)
  • July 2024 (5)
  • June 2024 (3)
  • April 2024 (2)
  • March 2024 (3)
  • February 2024 (11)
  • January 2024 (1)
  • November 2023 (4)
  • October 2023 (8)
  • September 2023 (10)
  • April 2023 (9)
  • March 2023 (18)
  • February 2023 (2)
  • January 2023 (1)
  • December 2022 (3)
  • November 2022 (3)
  • October 2022 (4)
  • September 2022 (16)
  • August 2022 (3)
  • July 2022 (5)
  • June 2022 (5)
  • April 2022 (23)
  • March 2022 (10)
  • February 2022 (18)
  • January 2022 (30)
  • December 2021 (8)
  • November 2021 (12)
  • October 2021 (2)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (2)
  • July 2021 (2)
  • June 2021 (5)
  • May 2021 (1)
  • April 2021 (2)
  • November 2020 (1)
  • October 2020 (1)
  • August 2020 (2)
  • June 2020 (3)
  • May 2020 (1)
  • October 2019 (3)
  • September 2019 (5)
  • August 2019 (3)
  • June 2019 (3)
  • May 2019 (3)
  • April 2019 (1)
  • March 2019 (2)
  • February 2019 (3)
  • December 2018 (1)
  • November 2018 (3)
  • October 2018 (4)
  • August 2018 (1)

Total Pageviews

Report Abuse

About Me

subhankar dutta
View my complete profile

Sponsor

Pages

  • Home
  • Project
  • জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 SAQ
  • EDU FINAL A 2020
  • Class XI ( Class 11 ) Sociology chapter wise MCQ &...
  • Class 12 (H.S.) History Chapter Wise MCQ & SAQ
  • Class 11 (XI) Sociology 1st chapter MCQ & SAQ
  • H.S. Sociology notes .
  • H.S. Sociology 1st chapter MCQ & SAQ ( only reduce...
  • H.S. Education 10th chapter SAQ & MCQ
  • H.S. Education 10th chapter MCQ & SAQ
  • CLASS 12 SOCIOLOGY 4TH CHAPTER SAQ WITH ANSWER

Pages

  • About Me
  • Contact
  • Privacy Policy
  • Disclaimer

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates