Dramatisation : Dakater Maa নাট্যরূপ : ডাকাতের মা

by - August 03, 2020

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প

Dramatisation : Dakater Maa 

নাট্যরূপ : ডাকাতের মা 


নাট্যরূপ  :  ডাকাতের মা
চরিত্রবর্গ :-
সৌখীর মা - ৫০ - ৬০ বছরের একজন প্রৌঢ়া। পোশাকে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট।
সৌখী - ৩০-৩৫ বছরের একজন সুঠাম ও দীর্ঘদেহী যুবক। সারা মুখ দাড়ি -গোঁফ এ ঢাকা। গায়ে শীতের জন্য একটা চাদর জড়ানো।
মাতাদীন পেশকার - একজন ধনী ব্যাক্তি। পরনে উনিশ শতকের শীতকালীন গ্রামীণ পোশাক ; কিন্তু তাতে আর্থিক স্বচ্ছলতার ছাপ স্পষ্ট।
বাসনের দোকানদার -- একজন সাধারণ গ্রামীণ দোকানি।
দারোগা
দুজন হাবিলদার।

প্রথম দৃশ্য : -
মঞ্চ পরিকল্পনা :-
একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘর। তাতে একটি খাটিয়া। খাটিয়াতে শোবার উপক্রম করতে করতে সৌখীর মায়ের দর্শকদের উদ্দেশ্যে কথোপকথন শুরু হবে।

সৌখীর মা ( খাটিয়াতে শোবার উপক্রম করছেন , টুকটাক কাপড় - চোপড় গোছাচ্ছেন ) --- নাঃ ,দিন কাল বড়োই বদলে যাচ্ছে। এ কি কখনো হতে পারতো আগেকার কালে ? ন্যায় - অন্যায় , কর্তব্য - অকর্তব্যের পাটই কি একেবারে উঠে গেল দুনিয়া থেকে ? সৌখীর বাপ কতবার জেলে গিয়েছে ; সৌখীরও তো এর আগে দুবার কয়েদ হয়েছে ; কখনো তো দলের লোক এমন ব্যবহার করেনি। মাস না যেতে যেতেই হাতে টাকা এসে পৌঁচেছে - কখনো বা আগাম - তিন চার মাসের একসঙ্গে। কিন্তু এবার দেখো তো কান্ড ! সৌখীর জেলে যাওয়ার প্রথম দুই বছর তাও কিছু কিছু টাকা দিয়েছিলো। কিন্তু গত তিন বছর থেকে টাকা দেওয়া তো দূরের কথা একটা খোঁজ খবর পর্যন্ত নিল না কেউ। আসতে দাও না সৌখীকে। দলের ওই বদগুলোকে শায়েস্তা করতে হবে। ওরা কি ডাকাত নামের যুগ্যি ; চোর , ছিঁচকে চোর ! সবকটাকে তাড়াতে হবে। আসুক একবার সৌখী।
................. এদিকে আমার হয়েছে আরেক জ্বালা। সৌখী যখন এবার ধরা পড়লো , তখন বৌমার ছেলে পেটে। হ্যাঁ , নাতিটার বয়স পাঁচ হলো বৈকি। কী কপাল নিয়ে এসেছিলো ! যার বাপের নামে চৌকিদারসাহেব কাঁপে , দারোগাসাহেব পর্যন্ত যার বাপকে তুই তোকারি করতে সাহস করেন নি কোনোদিন , তারই কিনা দুবেলা ভাত জোটে না। হায় রে কপাল ! .........
.................. সৌখীর এবারের বউটা রোগা রোগা। তার উপর ছেলে হবার পর থেকে ভেঙে গিয়েছে শরীর। আমি বুড়ো মানুষ। কোনোরকমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুটো খই - মুড়ি বেচে আসি। তা দিয়ে নিজের পেট চালানোই শক্ত। সাধে কি আর বৌমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হলো ! তাছাড়া গয়লাবাড়ির মেয়ে আমরা ; ঝি চাকরের কাজতো আর করতে পারি না ! করলেই বা রাখতো কে ? সৌখী ডাকাতের মা বৌকে কি কেউ বিশ্বাস পায় ! নইলে আমার কি ইচ্ছে করে না যে বৌ নাতিকে নিয়ে ঘর করি ! বেয়াইয়ের দুটো মোষ আছে। তবু বৌ - নাতিটার পেটে একটু দুধ পড়ছে। ওদের শরীরে দরকার দুধের। আর বছর খানেক বাদেই তো সৌখী ছাড়া পাবে। তখন বউকে নিয়ে এসে রুপোর গয়না দিয়ে মুড়ে দেবে। দেখিয়ে দেব পাড়ার লোকেদের যে , সৌখীর মায়ের নাতি পথের ভিখিরি নয়। ............... আসতে দাও না সৌখীকে একবার ! 

[ হঠাৎ নেপথ্যে শুকনো পাতার ওপর হেঁটে যাওয়ার আওয়াজ হলো। এই আওয়াজ অত্যন্ত জোরালো হতে হবে। ]

সৌখীর মা ( শুকনো পাতার  আওয়াজে শঙ্কিত হয়ে ) -- বাইরে শুকনো পাতার ওপর কার যেন হেঁটে যাওয়ার আওয়াজ হলো না ! কে এল এখন আবার ! পুলিশ ! যাঃ , কী যে ভাবছি ! পুলিশ আবার কী করতে আসবে ! ........ গন্ধগোকুল বা শিয়াল টিয়াল হবে বোধ হয় !

[ আবার বিছানা গোছানো , শোয়ার উদ্যোগ ইত্যাদি করতে করতে হঠাৎ টিনের দরজায় জোরে জোরে টোকা পড়ার আওয়াজে সৌখীর মা আবার সচকিত হয়। ]

তাহলে কি টিনের দরজার ওপর টিকটিকির শব্দ !

[ আবার দরজায় টোকা পড়ার আওয়াজ ]

নাঃ , এ টিকটিকি নয়। তাহলে কি দলের লোকগুলো আসলো টাকা নিয়ে ! এতদিনে কি হতভাগাগুলোর মনে পড়েছে সৌখীর মায়ের কথা !  ......( আরো শঙ্কিত হয়ে ) তাহলে কি পুলিশ ! ........ যাক যে'ই আসুক , টাকা দিলে নিয়ে নেব। তারপর অন্য কথা। যাই দরজাটা খুলি ......................

[ সৌখীর মা মঞ্চের একদিকে সরে গিয়ে দরজা খোলার ভঙ্গি করে ]

ও মা সৌখী তুই !  জেল ভেঙে পালিয়ে এলি না'কি ! তোর তো এখন ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল না !

সৌখী -- ( ঘরের চারদিকে কী যেন খুঁজতে খুঁজতে ) -- না না ছাড়া পেয়েই এসেছি। লাটসাহেব জেল দেখতে গিয়েছিল। আমার কাজ দেখে খুশী হয়ে ছেড়ে দেবার হুকুম দিয়ে দিল। খুশী আর কী। হেড জমাদার সাহেবকে টাকা খাইয়েছিলাম। সে'ই সুপারিশ করে দিয়েছিল জেলারবাবুর কাছে। তাই বেশি রেমিশন পেয়ে গেলাম। .........................    আচ্ছা , ঘর এত অন্ধকার কেন ? তুই আগে কুপিটা জ্বাল তো , তারপর সব কথা হবে।

 [ সৌখীর মা ঘরে রাখা একটি কুপি জ্বালে ; কুপি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে আলোটা একটু বাড়াতে হবে।  সৌখী এদিক ওদিক কী যেন খুঁজতে থাকে। এইসময় সৌখীর মা সৌখীকে খুব ভালো করে দেখতে থাকে। ]

সৌখীর মা -- ( অত্যন্ত অবাক ও আশ্চর্য হয়ে ) হ্যাঁ রে জেলে তোর অসুখ বিসুখ করেছিল নাকি ? কি রোগা রোগা লাগছে ! চুলেও পাক ধরেছে  ........

সৌখী ( মায়ের কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে ) --- এরা কোথায় ? এদের কাউকে দেখছি না যে !

সৌখীর মা -- বউ বাপের বাড়ি গেছে।

সৌখী -- হঠাৎ বাপের বাড়ি ?

সৌখীর মা -- ( একটু থতমত খেয়ে ) -- কেন , মেয়েদের কি মা বাপকে দেখতে ইচ্ছে করে না একবারও ?
সৌখী -- না , না , তাই বলছি নাকি ?

[ কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ থাকার পর ]

সৌখীর মা -- নে , হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নে।

সৌখী -- না না , আমি খেয়ে এসেছি। এই রাত করে তোকে আর রাঁধতে বসতে হবে না।
সৌখীর মা -- না না , রাঁধছে কে ; খই মুড়ি আছে , খেয়ে নে। তুই যে কত খেয়ে এসেছিস , সে আর আমি জানি না !

[ হঠাৎ সৌখীর নজর গেল মায়ের ছেঁড়া কম্বলটার দিকে। ]

সৌখী -- তোর কম্বলখানা তো একেবারে ছিঁড়ে গেছে। দে ওখান আমাকে দে।

[ এই বলে সৌখী নিজের কম্বলটা খুলে মায়ের গায়ে জড়িয়ে দেয়। তারপর সৌখী একটানে খাটিয়াতে শুয়ে পরে। সৌখীর মা মঞ্চের সামনে দিকে এগিয়ে আসে। এখন আলো বা ফুটলাইট শুধুমাত্র সৌখীর মায়ের উপর থাকবে। সৌখী বা মঞ্চের অন্যান্য অংশ তখন অন্ধকারে ঢাকা থাকবে। সৌখীর মা তারপর ধীরে ধীরে দর্শকদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে শুরু করবে। ] 
     
সৌখীর মা -- ( দর্শকদের উদ্দেশ্যে ) -- কী করে ছেলেকে সব কথা খুলে বলি ! বাড়ির অবস্থার কথা ; দলের কথা। এতদিন পর ছেলে এল। একটু জিরিয়ে নিক , তারপর বলা যাবে সব কথা। এখন বললে হয়তো এখনই দলের লোকেদের সাথে বোঝাপড়া করতে চলে যাবে। .........
কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হল আমি না বললেও কি আর জানতে কিছু বাকি থাকবে ! ঘরে খাবার একটা দানা পর্যন্ত নেই। কাল সকালে খেতে চাইলে কী দেবো খেতে ! যদি বলে বসত দুটো ভাত খেতে ইচ্ছে করছে ? তাহলেই আর উপায় ছিল না সবকথা না বলে। আলু চচ্চড়ি খেতে কী ভালোই বাসে ছেলেটা !  আলু , চাল , সরষের তেল সবকিছুই কিনতে হবে। কিন্তু ......... অত পয়সা পাবো কোথায় ? ভোরে উঠেই কি ছেলেকে বলা যায় যে , আগে পয়সা যোগাড় করে আন , তবে রেঁধে দেব !  .............

[  ঠিক এই সময় নেপথ্য থেকে ঢং ঢং করে দুটো বাজার শব্দ হল।  এই শব্দ শোনার পর সৌখীর মা আরও সচকিত হয়ে ................ ]

দুটো বেজে গেল ; ভোর হতে আর বিশেষ দেরি নেই ; কী যে করি ............... হ্যাঁ , হ্যাঁ  ...... মনে পড়েছে পেশকার সাহেবের বাড়িতে রাজমিস্ত্রি লেগেছে। আজ যখন মুড়ি বেচতে গিয়েছিলুম তখন দেখেছিলাম উত্তর দিকের পাঁচিলটা গাঁথা হচ্ছে। হাত দুয়ের বেশি গাঁথা হয়নি নিশ্চই।  পেশকার সাহেবের বাড়ি থেকেই কিছু একটা  ................ ( অত্যন্ত সচকিত হয়ে ) যেতে হবে  ....... এক্ষুনি বেড়িয়ে পড়তে হবে আমাকে। 
[ সৌখীর মা ধীরপদে মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেল।     
আলো আস্তে আস্তে নিভে এল।]



দ্বিতীয় দৃশ্য :-
মঞ্চ পরিকল্পনা - একটি বাসন পত্রের দোকান। দৃশ্যটিকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় বাসনপত্র ব্যবহার করতে হবে। বাসনের দোকানদার নিজ স্থানে , অর্থাৎ দোকানের ভেতর থাকবেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না মাতাদীন পেশকার দোকানে প্রবেশ করছেন ততক্ষন পর্যন্ত বাসনের দোকানী একটি ন্যাকড়া জাতীয় কাপড় দিয়ে বাসনপত্র ঝেড়ে ঝেড়ে রাখছে। কিছুক্ষন পর মাতাদীন পেশকার ধীরে ধীরে দোকানে প্রবেশ করে।

মাতাদীন পেশকার ( দোকানির উদ্দেশ্যে ) -- একটা ভালো লোটা 
দেখাও দেখি বাপু।

দোকানি -- ( লোটা খুঁজতে খুঁজতে ) কী ব্যাপার পেশকার সাহেব , সাত সকালে লোটা কিনতে এসেছেন যে ?

মাতাদীন পেশকার -- আর বলিসনি বাপু , গতকাল রাতে আমার লোটাটা চুরি হয়ে গেছে।

দোকানি -- বলেন কি ! একেবারে চুরি !

মাতাদীন পেশকার -- তা আর বলছি কী !

দোকানি -- তা কেমন লোটা দেব বলুন ?

মাতাদীন পেশকার -- আমি বাপু লোটার ব্যাপারে বড় খুঁতখুঁতে। বুঝলে কি'না এই  ...... এই এত বড় ( হাত দিয়ে দেখিয়ে ) সাইজের , মুখ হওয়া চায় বেশ ফাঁদালো , যাতে বেশ হৃষ্টপুষ্ট মেয়েমানুষের এতখানি মোটা রুপোর কাঁকনসুদ্ধ হাত অনায়াসে ঢোকানো যায় , ভিতরটা মাজবার জন্য।

দোকানি -- ( অনেক্ষন খোঁজার পর ) -- পেশকার সাহেব , এইরকম তো  পাচ্ছি না ........... তবে আছে একটা ........... পুরোনো হলে চলবে ? ........ নামেই পুরোনো। সস্তায় পাবেন। আড়াই টাকায়।

মাতাদীন পেশকার ( বিস্মিত হয়ে ) -- পুরোনো বাসনও বিক্রি হয় নাকি এখানে ? দেখি।

দোকানি ( একটু খুঁজে একটা লোটা মাতাদীন পেশকারকে দিয়ে ) -- এই নিন।

[ লোটাটা দেখেই মাতাদীন পেশকারের খটকা লাগে। পকেট থেকে চশমা জোড়া বার করে নাকের ডগায় বসলেন। লোটাটা বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে থাকলেন। তারপর হঠাৎ অত্যন্ত রেগে গিয়ে দোকানদারের টুঁটি চেপে ধরলেন। ]

মাতাদীন পেশকার -- বল , বল হতভাগা ! এই লোটা তুই কোথায় পেলি ? দিনে করিস দোকানদারি , আর রাতে বার হস সিঁদকাঠি নিয়ে !

দোকানি -- আরে করেন কী , করেন কী ?

মাতাদীন পেশকার ( আরো রেগে গিয়ে , দ্বিগুন জোরে চিৎকার করে ) -- এই শেষবারের মত বলছি , বল তুই এই লোটা তুই কোথায় পেলি ?

দোকানি -- আজ্ঞে এই কিছুক্ষন আগে কিনলাম , চোদ্দ আনায়।

মাতাদীন পেশকার -- চোদ্দ আনায় ! চোদ্দ আনায় এই ঘটি পাওয়া যায় ? চোরাই মাল জেনেই কিনেছিস। বল ....... বল কার কাছ থেকে কিনলি ?

দোকানি ( আমতা আমতা করে ) -- আজ্ঞে সৌখির মায়ের কাছ থেকে।

মাতাদীন পেশকার ( দোকানির গলা ছেড়ে দিয়ে , দর্শকদের দিকে মুখ করে ) -- সৌখির মা ! আচ্ছা , দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। 
[ ধীরে ধীরে আলো নিভে এলো। ] 



তৃতীয় দৃশ্য :-
[ মঞ্চ পরিকল্পনা : এই দৃশ্যটিতে সৌখির বাড়ির বারান্দাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। দৃশ্যটিতে সাধারণ কিছু গৃহস্থালির আসবাব দেখতে পাওয়া যাবে যা অত্যন্ত দারিদ্রক্লিষ্ট। এই বারান্দায় কোনোভাবেই খাটিয়া বা ওই ধরণের আসবাব যেগুলি সাধারণতঃ ঘরে রাখা হয় - সেগুলি রাখা যাবে না। বারান্দার সামনে একটি ভাঙাচোরা উনুন , তাতে একটি করাই চাপানো থাকবে। ] 
( পর্দা উঠতেই দেখা যাবে সৌখির মা বারান্দায় বসে উনুনে কিছু একটা রান্না করছে। এইসময় নেপথ্যে রান্না করার শব্দ পরিবেশন করতে পারলে দৃশ্যটিকে অনেকবেশি বাস্তবভাবে ফুটিয়ে তোলা যাবে। )

সৌখির মা -- ( রান্না করতে করতে ) -- যাক বাবাঃ ভাগ্যক্রমে ক'টা টাকা পাওয়া গেল। তাই দিয়ে একটু আলুর চচ্চড়ি আর ভাত রান্না করতে পারছি। আমার সৌখিটা আলুর চচ্চড়ি খেতে কতই না ভালোবাসে !
( ঠিক এইসময় একজন দারোগা ও দুজন পুলিশ মঞ্চে প্রবেশ করলেন ; তাদের একজন কাছে একটি সাইকেল। পুলিশ দেখে সৌখির মা আঁতকে ওঠে। )

সৌখির মা -- কী ব্যাপার পুলিশ  ................ পুলিশ কেন ?

দারোগা -- ( ব্যাঙ্গ করে ) পুলিশ  ...... পুলিশ কেন ! তা জানোনা বুঝি ?

সৌখির মা -- ( ভয় পাওয়া গলায় ) -- কেন দারোগা সাহেব ! সৌখি তো কাল রাতেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এসেছে !

দারোগা -- হ্যাঁ , আর তার সঙ্গে পেশকার সাহেবের বাড়ি থেকে দামী ঘটিটা চুরি করে এনেছে।

সৌখির মা -- ( একটু রাগের ভান করে ) -- এসব কথা বলবেন না দারোগাসাহেব , আমরা ছিঁচকে চোর নই , আমরা ডাকাতের পরিবার ; ডাকাতি করা আমার স্বামী - পুত্রের হকের পেশা।

দারোগা -- এক্ষুনি তোমার দেমাগ মাটিতে ধুইয়ে দিচ্ছি। আমরা সম্পূর্ণ তদন্ত করেই এসেছি। বাসনওয়ালা পরিষ্কার স্বীকারোক্তি করেছে আজ সকালে তুমি পেশকার সাহেবের লোটা তাঁর কাছে বিক্রি করেছো। কই ডাকো সৌখিকে।

( কথাটা শুনে সৌখির মা ভয়ে কাঁপতে থাকে ) 
দারোগা -- সৌখি , বেরো ব্যাটা ঘর থেকে !

( সৌখির মা দারোগার পায়ে পরে যায়। এইসময় সৌখি ঘুম ঘুম চোখে মঞ্চে প্রবেশ করে। )

সৌখির মা -- ( দারোগার পায়ে পড়া অবস্থাতেই ) -- আপনার দুটি পায়ে পড়ি দারোগাসাহেব , সৌখি চুরি করেনি।

দারোগা -- ( ব্যাঙ্গ করে হেসে ) -- সৌখি চুরি করেনি ! তো কে করেছে চুরি ?

সৌখির মা -- আমি  ........... আমি চুরি করেছি দারোগা সাহেব।

দারোগা -- তো এই যে বলছিলি আমরা ডাকাত , ছিঁচকে চোর নই। ( সৌখির দিকে তাকিয়ে ) এই সৌখি চল , থানায় চল ; তোর চুরি করা ঘুঁচিয়ে দিচ্ছি।

সৌখি ( আহত ও গম্ভীর স্বরে ) -- দাঁড়ান , আসছি।

( এই বলে সৌখি মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায়। সৌখির মা ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে। ঠিক কয়েক মুহূর্ত পর সৌখি পুনরায় মঞ্চে প্রবেশ করে। হাতে একটা বটুয়া। ]     

( সৌখির মা অবাক হয়ে সৌখির দিকে তাকিয়ে থাকে। সৌখি মায়েল কোলে বটুয়াটা ছুঁড়ে দেয়। )

সৌখি -- টাকা ছিল না , বললেই পারতি  ................................. এতে নব্বই টাকা আছে।

( দারোগা ও দুজন পুলিশ সৌখিকে নিয়ে মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেল। সৌখির মা চুপ করে এবং মাথা নীচু করে বসে থাকলো। এইবার পর্দা আসতে আসতে নেমে আস্তে থাকলে সৌখির মা ডুকরে কেঁদে উঠলো।  ) 


You May Also Like

3 comments