উচ্চমাধ্যমিক প্রকল্প : সত্যজিৎ রায় - জীবন ও সাহিত্য :- H.S. Project : Satyajit Ray

by - December 30, 2021

উচ্চমাধ্যমিক প্রকল্প : সত্যজিৎ রায় - জীবন ও সাহিত্য :- 

সাহিত্যকর্মে সত্যজিৎ রায়ের অবদান :- 

H.S. Project : Satyajit Ray 



 
ভূমিকা :- 

বাংলা সাহিত্যে উচ্চস্থানীয় প্রতিভাবান লেখকদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যতিক্রমী লেখক হলেন সত্যজিৎ রায়। তিনি একদিকে যেমন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে বিশ্বজুড়ে প্রসিদ্ধ , ঠিক তেমন ভাবেই বাংলা সাহিত্যকেও তিনি তাঁর অনন্য লেখনীর দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব হল তিনি বাংলা সাহিত্যে ছোটদের জন্য এক আশ্চর্য কল্পনার জগৎ খুলে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর লেখা '' প্রফেসর শঙ্কু '' র কথা উল্লেখ করতে হয়। বাংলা গোয়েন্দা চরিত্রকে তিনি এক উচ্চতম ও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর সৃষ্ট ফেলুদা আজও বাংলা সাহিত্যে , চলচ্চিত্র জগতে ও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের ন্যায় বিরাজমান। এছাড়াও তাঁর এমন কিছু অনুবাদ কর্ম আছে যেগুলি প্রতিটি বয়সের মানুষকে কল্পবিজ্ঞানের ডানা মেলে উড়ে যেতে সাহায্য করে। এই অনুবাদ কর্মগুলির মধ্যে অন্যতম হল '' মঙ্গলই স্বর্গ ''।  

বর্তমান প্রতিবেদনমূলক প্রকল্পটিতে সত্যজিৎ রায়ের জীবন , সাহিত্যকর্ম ও বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এর সাথে সাথে সত্যজিৎ রায়ের লেখনশৈলী , শিক্ষার্থীদের ওপর তাঁর সাহিত্যকীর্তির প্রভাব ও বর্তমান সময়ে তাঁর সাহিত্যকীর্তিগুলির প্রাসঙ্গিকতা - এ সকল বিষয়গুলির প্রতিও আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে। 



যে সকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রচনা করা হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. সত্যজিৎ রায়ের জীবন ও সাহিত্যকর্মগুলি সম্পর্কে জানা। 
২. সত্যজিৎ রায় কর্তৃক সৃষ্ট চরিত্রগুলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। 
৩. সত্যজিৎ রায়ের লেখনীশৈলী বিচার করা। 
৪. বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা। 
৫. বর্তমান সময়ে সত্যজিৎ রায় ও তাঁর সাহিত্যকীর্তিগুলির প্রাসঙ্গিকতা বিচার করা। 
৬. শিক্ষার্থীরা তাঁর রচনা দ্বারা কতটা প্রভাবিত - সে সম্পর্কে অবগত হওয়া। 
৭. তাঁর রচনার বিশেষ বৈশিষ্টগুলি উন্মোচন করা। 
৮. সর্বোপরি , সত্যজিৎ রায় ও তাঁর সাহিত্যকীর্তি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তোলা। 

প্রকল্পটির গুরুত্ব :- 

যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে , সেগুলি হল - 
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে খুব সহজেই সত্যজিৎ রায়ের জীবন ও তাঁর সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা সম্ভব। 
২. প্রকল্পটির মাধ্যমে সত্যজিৎ রায়ের রচনাশৈলী সম্পর্কে জানা সম্ভব। 
৩. বর্তমান কালে সত্যজিৎ রায় ও তাঁর সাহিত্যকীর্তিগুলি কতটা প্রাসঙ্গিক - সে সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। 
৪. প্রত্যেক লেখকের সাহিত্যসৃষ্টির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট থাকে। প্রকল্পটির মাধ্যমে সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যসৃষ্টিগুলির বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্টগুলি সম্পর্কে জানা সম্ভব। 
৫. সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকীর্তিগুলি চলচ্চিত্র জগৎকে কতটা প্রভাবিত করেছে - প্রকল্পটি থেকে তা জানা যায়। 
৬. শিক্ষার্থীরা সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যসৃষ্টিগুলি দ্বারা কতটা প্রভাবিত - সে সম্পর্কেও প্রকল্পটিতে আলোচনা করা হয়েছে। 
৭. সর্বোপরি , সত্যজিৎ রায় ও তাঁর সাহিত্যকীর্তিগুলি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তুলতে প্রকল্পটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 


তথ্য সংগ্রহ / পরীক্ষামূলক উপাদান :- 

সত্যজিৎ রায় : জীবন ও সাহিত্য :- 

জন্ম ও বংশপরিচয় :- ১৯২১ সালের ২ রা মে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম হয়। পিতার নাম সুকুমার রায় ও পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। মাতার নাম সুপ্রভা রায়। এই মহান বংশে জন্ম নেওয়ার ফলে পূর্বসূরীদের সহজাত গুণগুলি সত্যজিৎ রায় বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত করেন। পরিচিত মহলে তিনি মানিক নামেও পরিচিত ছিলেন। 

শিক্ষাজীবন :- তিনি বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতি অনার্স নিয়ে বি এ পাশ করেন। এরপর তিনি শান্তিনিকেতনের কলাভবনে ভর্তি হন। এই সময় তিনি বিভিন্ন ধরণের সংগীত ,সাহিত্য ও কৃষ্টিমূলক কর্মের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। শান্তিনিকেতনে তাঁর শিক্ষাগুরু ছিলেন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়। 

কর্মজীবন :- তিনি ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ডি জে কিমার নামক বিজ্ঞাপন সংস্থায় ভিসুয়ালাইজার পদে যোগদান করেন। এরপর সিগন্যাস প্রেসের প্রতিষ্ঠা হলে তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকা শুরু করেন। মৌচাক পত্রিকায় তাঁর প্রথম অলংকরণ চিত্র প্রকাশিত হয়। এরপর ধীরে ধীরে তিনি ডি জে কিমার - এ আর্ট ডিরেক্টরের পদে উন্নীত হয়েছিলেন। 

চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদান :- চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এবং তাঁর কাজের পরিমাণ বিপুল। তিনি ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী (১৯৫৫) ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া Best Human Documentary পুরস্কার। পথের পাঁচালী, অপরাজিত (১৯৫৬) ও অপুর সংসার (১৯৫৯) – এই তিনটি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত, এবং এই চলচ্চিত্র-ত্রয়ী সত্যজিতের জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে বহুল স্বীকৃত। চলচ্চিত্র মাধ্যমে সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করাসহ নানা কাজ করেছেন।  বর্ণময় কর্মজীবনে তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে বিখ্যাত হল ১৯৯২ সালে পাওয়া অ্যাকাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার বা অস্কার, যা তিনি সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন। তিনি এছাড়াও ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।     

সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকীর্তি :- বাংলা সাহিত্য জগতে সত্যজিৎ রায় এক অনন্য ও বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর প্রতিটি সাহিত্যকীর্তি আজও সমানভাবে সকল বয়সের পাঠকবৃন্দের কাছে জনপ্রিয়। সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকীর্তিগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন :- (ক) প্রফেসর শঙ্কুর গল্পসমূহ , (খ) গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদার গল্পসমূহ , (গ) তারিণীখুড়োর গল্পসমূহ , (ঘ) মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্পসমূহ , (ঙ) আত্মজীবনী , (চ) প্রবন্ধ , (ছ) কবিতা , (জ) অন্যান্য সাহিত্য সৃষ্টি , (ঞ) অনুবাদ গল্প ও (ঝ) অসমাপ্ত রচনাসমূহ। 

(ক) প্রফেসর শঙ্কুর গল্পসমূহ :- প্রফেসর শঙ্কু হলেন সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন বাঙালি বৈজ্ঞানিক। শঙ্কুর গল্পগুলি মূলতঃ কল্পবিজ্ঞান ও রহস্যগল্প। প্রফেসর শঙ্কুকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় মোট আটটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য গল্পগুলি হল - ব্যোমযাত্রীর ডায়রি , স্বর্ণপর্ণী , প্রফেসর শঙ্কু ও রক্তমৎস্য রহস্য , প্রফেসর শঙ্কু ও আশ্চর্য পুতুল , শঙ্কুর পরোলোকচর্চা , ডক্টর শেরিং এর স্মরণশক্তি - ইত্যাদি।

(খ) গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদার গল্পসমূহ :- সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি হলেন গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা। এই চরিত্রটি সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি গোয়েন্দা গল্পকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিয়েছেন। ফেলুদা চরিত্রটি নিয়ে তিনি প্রায় ১৮ টি ছোটগল্প ও ১৭ টি উপন্যাস রচনা করেন। এই সকল রচনাগুলির মধ্যে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল - ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি , শেয়াল দেবতা রহস্য , সমাদ্দারের চাবি , গোলোকধাম রহস্য , নেপোলিয়নের চিঠি , জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা , বাদশাহী আংটি , সোনার কেল্লা , কৈলাসে কেলেঙ্কারি , জয়বাবা ফেলুনাথ , বোম্বাইয়ের বোম্বেটে , ছিন্নমস্তার অভিশাপ , দার্জিলিং জমজমাট - ইত্যাদি। 

(গ) তারিণীখুড়োর গল্পসমূহ :- তারিণীখুড়ো হলেন সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট বিচিত্র ও বহুবিধ অভিজ্ঞতাসমন্ন একজন মানুষ। তারিণীখুড়োকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন গল্পগুলি হল -  মহারাজা তারিণীখুড়ো, তারিণীখুড়ো ও ঐন্দ্রজালিক, নরিস সাহেবের বাংলো, গণৎকার তারিণীখুড়ো , গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো, ডুমনিগড়ের মানুষখেকো ,কনওয়ে কাস্‌লের প্রেতাত্মা , শেঠ গঙ্গারামের ধনদৌলত , লখ্‌নৌর ডুয়েল , ধুমলগড়ের হান্টিং লজ , খেলোয়াড় তারিণীখুড়ো , টলিউডে তারিণীখুড়ো , তারিণীখুড়ো ও বেতাল , মহিম সান্যালের ঘটনা - ইত্যাদি। 

(ঘ) মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্পসমূহ :- মধ্যপ্রাচ্যের মোল্লা নাসীরুদ্দীন হলেন এক জনপ্রিয় চরিত্র। তার অনেকগুলি গল্প সংগ্রহ করে সত্যজিৎ রায় মোল্লা নাসীরুদীনের গল্প নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেন।

(ঙ) আত্মজীবনী :- সত্যজিৎ রায় নিজের আত্মজীবনীও লিখে গেছেন। এই আত্মজীবনীটির নাম হল - ''যখন ছোট ছিলাম'' । 

(চ) প্রবন্ধ :- সত্যজিৎ রায় রচিত প্রবন্ধগুলি হল - আওয়ার ফিল্ম - দেয়ার ফিল্ম , বিষয় চলচ্চিত্র , একেই বলে সুটিং। 

(ছ) কবিতা :- কিছু অনুবাদ ও লিমেরিক কবিতা '' তোরায় বাঁধা ডিম '' নামে প্রকাশিত হয়। 

(জ) অন্যান্য সাহিত্য সৃষ্টি :- একের পিঠে দুই , এগারো-বারো - ইত্যাদি। 

(ঞ) অনুবাদ গল্প :- মঙ্গলই স্বর্গ। 

(ঝ) অসমাপ্ত রচনাসমূহ :- বাক্স রহস্য (প্রথম খসড়া) , তোতা রহস্য (প্রথম খসড়া) ও আদিত্য বর্ধনের আবিষ্কার। 



উপরোক্ত তথ্যগুলিকে নীচে বিশ্লেষণ আকারে উপস্থাপন করা হল। 

১. সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম পরিচয় তিনি একজন মহান চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অস্কার বিজয়ী পরিচালক। কিন্তু অপরদিকে তাঁর সাহিত্য সাধনার ইতিহাসও সুদীর্ঘ। শঙ্কু , ফেলুদা , তারিণীখুড়ো , বঙ্কুবাবু ইত্যাদি চরিত্রগুলিকে নিয়ে বিভিন্ন সাহিত্য সৃষ্টি করে তিনি বাঙালি তথা ভারতীয় পাঠক হৃদয়ে চিরস্থায়ী স্থান দখল করে নিয়েছেন। 

২. ফেলুদা চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে তিনি এক অনবদ্য গোয়েন্দা চরিত্র নির্মাণ করেছেন এবং গোয়েন্দা চরিত্রকে তিনি আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিয়েছেন। ফেলুদার স্বভাবগত বৈশিষ্ট , তার বাঙালিয়ানা , মগজাস্ত্রের প্রয়োগ বাঙালি পাঠকবর্গকে তীব্রভাবে আকৃষ্ট করে। 

৩. প্রফেসর শঙ্কু চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে তিনি পাঠকবর্গের কল্পবিজ্ঞানের চেতনাকে বলিষ্ঠ করেছেন। শঙ্কুর আবিষ্কৃত বিভিন্ন রক্তপাতহীন অস্ত্র , সর্বরোগনাশক মিরাকিউরল - ইত্যাদি যেন ভবিষ্যত বিজ্ঞান সাধনার দিশারী। এছাড়াও শঙ্কুর কিছু গল্প বিশ্ব - ব্রম্মান্ড সম্পর্কে পাঠকবর্গের কৌতূহল উদ্রেক করে। 

৪. সত্যজিৎ রায়ের অপর এক মহান সৃষ্টি হলেন তারিণীখুড়ো। এই চরিত্রটি বিচিত্র ও বহুবিধ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তার মধ্যে গল্প বলিয়ে এবং মজলিসি একটি চরিত্র বর্তমান। এই গল্পগুলির মাধ্যমে পাঠক বর্গের বিচিত্র ও বহুবিধ অভিজ্ঞতালাভ সম্ভব। এছাড়াও তারিণীখুড়োর বেশিরভাগ গল্প দুর্দান্ত রহস্যময়। 

৫. সত্যজিৎ রায়ের প্রায় প্রতিটি সাহিত্য সৃষ্টি আজও পাঠকমহলে সমানভাবে জনপ্রিয় এবং সমাদৃত। ফেলুদা , শঙ্কু , তারিণীখুড়ো - এই গল্পগুলির জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। 

৬. সত্যজিৎ রায়ের লেখা বিভিন্ন গল্প ও উপন্যাস চলচ্চিত্র জগৎকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি নিজে তাঁর বিভিন্ন গল্প থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু আজও সেই ধারা প্রবহমান এবং বহু সৃজনশীল পরিচালকেরা তাঁর রচিত গল্প ও উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন এবং সেগুলি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত সফল হচ্ছে। এ থেকেই সত্যজিৎ রায়ের জনপ্রিয়তা ও তাঁর সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় মেলে।       

৭. সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যসৃষ্টিগুলির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট হল ভাষার সরলতা। অত্যন্ত রোমহর্ষক বা মানবীয় আবেদন পরিবেশের উপস্থাপনের সময়ও তিনি সহজ সরল ভাষার মাধ্যমে তা উপস্থাপন করেছেন। 

৮. সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যসৃষ্টি বিচিত্র অভিজ্ঞতার সমাহারের সৃষ্ট। ভৌতিক পরিবেশ , রোমহর্ষক রহস্য , হাস্যরস ও কৌতুক , ভ্রমণ , খাদ্য , জীবনবোধ এবং সর্বোপরি কল্পবিজ্ঞান - ইত্যাদি সবকিছুই তাঁর রচনায় সংযোজিত হয়েছে। 

৯. তাঁর রচনার সাহিত্যমূল্য অপরিসীম। তাঁর সাহিত্যগুলির মধ্যে তরুণ পাঠককুল ও শিশু মনস্তত্বের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটার সমস্তরকম উপাদান বর্তমান। 

১০. সত্যজিৎ রায়ের সমস্ত সাহিত্য সৃষ্টি উচ্চ মানের রুচির পরিচায়ক। তাঁর সাহিত্যসৃষ্টিগুলির মধ্যে কোথাও অশ্লীলতা , চটকদারি বিষয় , চটুলতা - ইত্যাদির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এজন্যই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে তাঁর সাহিত্যকীর্তিগুলি পাঠ করা অবশ্যই প্রয়োজন এবং পাঠক্রমে সেগুলি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। 

উপসংহার :- 

পরিশেষে বলা যায় যে , সত্যজিৎ রায়ের রচনা কোনো বিশেষ শ্রেণি , বিশেষ বয়সের পাঠকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সকলপ্রকার পাঠকবর্গ সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকীর্তিগুলির সাথে পরিচিত হয়েছেন এবং নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন। বর্তমানে সাহিত্য , চলচ্চিত্র , সামাজিক মাধ্যম , টেলিভিশন - সর্বক্ষেত্রেই তাঁর অবাধ গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা। পাঠকবর্গের কুসুম কোমল মননের বিকাশে সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকীর্তিগুলি অনন্য ভূমিকা পালন করে - এখানেই তার মূল কৃতিত্ব। 

গ্রন্থপঞ্জি :- 

যে সকল গ্রন্থগুলি থেকে প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে , সেই গ্রন্থগুলি হল - 

১. প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি - পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। 
২. বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি : একাদশ শ্রেণি - পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। 
৩. বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস : দ্বাদশ শ্রেণি - পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।     




উচ্চমাধ্যমিক প্রকল্প : সত্যজিৎ রায় - জীবন ও সাহিত্য :- 

সাহিত্যকর্মে সত্যজিৎ রায়ের অবদান :- 


You May Also Like

0 comments