উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প : জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি :-

by - February 05, 2022

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প : জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি :- 

উচ্চমাধ্যমিক প্রকল্প : জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। 

H.S. Bengali Project : Jorasankor Thakurbari . 



জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। 


ভূমিকা :- 

ভারতে নবজাগরণের সূচনা ঘটেছিল বাংলাতে। যেসকল উপাদানগুলি বাংলার নবজাগরণকে তরান্নিত করেছিল তাদের মধ্যে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি অন্যতম। আধুনিক শিল্প ও সাহিত্য চর্চা , চিত্রকলায় আধুনিকতার প্রবর্তন , বিজ্ঞান ও উদারপন্থী ভাবধারার বিস্তার - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভারতে আধুনিক শিক্ষার বিস্তারে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি একটি প্রধান প্রতিষ্ঠানরূপে তার ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে ঠাকুরবাড়ি ভবনটি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

বর্তমান প্রকল্পটিতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস , ভারতীয় নবজাগরণে তার ভূমিকা , আধুনিক শিক্ষা বিস্তারে তার ভূমিকা - ইত্যাদি বিষয়গুলি আলোচনা করার সাথে সাথে বর্তমান ভারতের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জগতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে সে সম্পর্কেও আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে। 


যেসকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. বাংলার নবজাগরণের একটি অন্যতম পীঠস্থান হিসেবে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অবদানের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা। 
২. ভারতে আধুনিক চিন্তাধারার বিকাশের ইতিহাসে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ - সে সম্পর্কে তথ্য সমৃদ্ধ আলোচনা। 
৩. বিজ্ঞানমনস্কতা ও উদারনৈতিক চিন্তাভাবনার বিকাশের ক্ষেত্রে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অবদান সম্পর্কে আলোচনা। 
৪. জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি সমৃদ্ধ হয়েছে বিশেষ বিশেষ প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের দ্বারা। এই সকল ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে জ্ঞানঅর্জন করা - প্রকল্পটির একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। 
৫. আধুনিক ভারতে উচ্চশিক্ষার বিস্তারে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ভূমিকা পর্যালোচনা করা। 
৬. শিল্প - সাহিত্য - চিত্রকলা - ভাস্কর্য - বিজ্ঞান - সর্বক্ষেত্রেই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি ভারতে আধুনিকতার প্রবর্তন করে। এই বিষয়ে সাধারণ ধারণা গঠন - প্রকল্পটির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। 
৭. সর্বপরি , জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি বাংলা তথা ভারতের শিক্ষা - সংস্কৃতি ও নবজাগরণের অন্যতম পীঠস্থান। এই ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উপাদানটি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তোলা - প্রকল্পটি রচনার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। 

প্রকল্পটির গুরুত্ব :- 

যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে - সেগুলি হল - 

১. জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে ও ঠাকুরবাড়ি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। 
২. জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির যেসকল মহান ও প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ ভারতের শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশের ইতিহাসে অভাবনীয় ভূমিকা পালন করেছিল - তাঁদের সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
৩. শিল্প - সাহিত্য - চিত্রকলা - ভাস্কর্য - বিজ্ঞান - ইত্যাদি ক্ষেত্রে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি কিভাবে আধুনিকতার সূচনা ঘটিয়েছিল - প্রকল্পটির মাধ্যমে সে ইতিহাস সহজেই জানা যায়। 
৪. বাংলার নবজাগরণের সাথে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সম্পর্ক ও ভূমিকা সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকর। 
৫. প্রকল্পটির মাধ্যমে বর্তমান কালে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি উচ্চশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে - তা জানা সম্ভব। 
৬. সর্বোপরি , জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্যবাহী উপাদান। এই ঐতিহ্যবাহী উপাদান সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তুলতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 



তথ্য সংগ্রহ / পরীক্ষামূলক উপাদান :- 

ভারতের নবজাগরণ , উচ্চশিক্ষা , সাহিত্য - সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চার অন্যতম পীঠস্থান হল জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। বর্তমানে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অষ্টাদশ শতকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িটি নির্মাণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বর্তমানে এর ঠিকানাটি হল ৬ বি দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন। বর্তমানে জোড়াসাঁকোর ঠাকরবাড়িটির পরিচালনার দায়িত্বে আছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

১৯৬২ সালের ৮ ই মে তারিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। বর্তমানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ টি ভবনে মোট ১৮ টি গ্যালারি জুড়ে অবস্থান করছে একটি মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তথা ঠাকুর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের বিভিন্ন ব্যবহৃত সামগ্রী। এছাড়া এই ক্যাম্পাসে দুটি আর্ট গ্যালারিও আছে। এই আর্ট গ্যালারি দুটির মধ্যে একটিতে ভারতীয় ও অন্যটি পাশ্চাত্য ধারার বিভিন্ন চিত্রকলা সংগৃহীত ও সংরক্ষিত হয়েছে। আর্ট গ্যালারি দুটিতে নন্দলাল বসু ও ঠাকুর বাড়ির বিভিন্ন সদস্যের বিভিন্ন অমূল্য চিত্রকলা সংরক্ষিত আছে।

এছাড়াও ১৮৯৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠাকুরবাড়িতে নির্মাণ করেন - '' মহর্ষি ভবন '' ও '' বিচিত্রা ভবন ''।ইতিপূর্বে ১৮২৩ সালে দ্বারকানাথ ঠাকুর নির্মাণ করেছিলেন অতিথিদের জন্য নির্মাণ করেছিলেন '' বৈঠকখানা বাড়ি '' এবং এই অংশেই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর বসবাস করতেন। এরপর বৈঠকখানা বাড়ি ভেঙে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নির্মাণ করেন মহর্ষি ভবন ও বিচিত্রা ভবন। 

নবজাগরণের যুগ থেকে শুরু করে বর্তমানকাল পর্যন্ত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি ভারতের শিক্ষা - সংস্কৃতি , শিল্পচর্চা ও আধুনিকতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। বর্তমানে বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন অংশের বহু মানুষ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। ভারতের উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রগুলির মধ্যে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একটি অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। বর্তমানে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি শিক্ষার্থী ও ভ্রমণার্থীদের নিকট একটি তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।   



তথ্য - বিশ্লেষণ :- 

উপরোক্ত তথ্যগুলিকে নীচে বিশ্লেষণ আকারে উপস্থাপন করা হল। 

প্রথমতঃ ভারত তথা বাংলার নবজাগরণের কেন্দ্রগুলির মধ্যে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি হল একটি অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। 

দ্বিতীয়তঃ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর , গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর - প্রমুখ প্রতিভাধর মনিষীগণ বাংলার শিল্প - সাহিত্য - চিত্রকলা - বিজ্ঞান চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছেন। 

তৃতীয়তঃ ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ই মে জোড়াসাঁকোর ঠাকরবাড়িকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। 

চতুর্থতঃ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িটি বাঙালির হৃদয়ের খুব কাছের একটি স্থান। কেননা , এখানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন ও এখানেই তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে। 

পঞ্চমতঃ বর্তমানে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি তথা , রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একটি তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর বহু সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানে পরিভ্রমনে আসেন। 

ষষ্ঠতঃ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি আজ জগৎজুড়ে। সারা ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। শিক্ষার উচ্চমান , আধুনিক গবেষণার সুযোগ - ইত্যাদি কারণে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আজ ভারতের সর্বোৎকৃষ্ট উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম। 

সপ্তমতঃ বাংলার শিক্ষা - সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তথা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত গবেষণা ও রাবীন্দ্রিক চেতনার বিকাশে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তথা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অবদান প্রশ্নাতীত। 

উপসংহার :- 

পরিশেষে বলা যায় , শুধুমাত্র রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বললে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অবদানের কথা খুব কম করে বলা হবে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে ভারতের নবজাগরণের ইতিহাস ; রবীন্দ্রনাথ , অবনীন্দ্রনাথ , গগনেন্দ্রনাথ প্রমুখের সাহিত্য ও কৃষ্টিচর্চার ইতিহাস। এই ধরণের একটি বিষয় সম্পর্কে প্রকল্প রচনার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী খুব সহজেই ভারতের ঐতিহ্যবাহী ও সর্বোৎকৃষ্ট কেন্দ্রের সাথে পরিচিত হতে পারে। 

প্রকল্পের সীমাবদ্ধতা :- 

প্রকল্পটি রূপায়নকালে এবং রূপায়িত হওয়ার পর যেসকল ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে একাধিক মনীষীর নাম। কিন্তু প্রকল্পটিতে সেই সকল মনীষীদের সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ নেই। 
২. প্রকল্পটিতে নবজাগরণ ও আধুনিকতার বিকাশে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। 
৩. প্রকল্প রচনার সংক্ষিপ্ত পরিসরে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মত একটি বিষয়কে সম্পূর্ণভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। 

গ্রন্থপঞ্জি :- 

যে সকল গ্রন্থ থেকে প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলি হল - 

১. বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস ( দ্বাদশ শ্রেণী ) - পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। 

২. স্বদেশ পরিচয় - জীবন মুখোপাধ্যায়।    



You May Also Like

0 comments