উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রকল্প : মার্শাল পরিকল্পনা।
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রকল্প : মার্শাল পরিকল্পনা।
H.S. History project : মার্শাল পরিকল্পনা।
মার্শাল পরিকল্পনা : গ্রহণের কারণ , বাস্তবায়ন ও বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব।
মার্শাল পরিকল্পনা।
ভূমিকা :-
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্ব রাজনীতিতে দ্বিমেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একদিকে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও অন্যদিকে ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোট। পরস্পর বিরোধী এই দুই জোটের আদর্শগত ছায়াযুদ্ধ ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত। মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোটের মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব ইউরোপ তথা পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশগুলিতে সাম্যবাদী ভাবধারার প্রসার রোধ করা। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ ই জুন মার্কিন পররাষ্ট্র - সচিব জর্জ সি মার্শাল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে বলেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আর্থিক পুনরুজ্জীবনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি এই পদক্ষেপের নাম দেন European Recovery Programme । কিন্তু বাস্তবে জন মার্শালের মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলিতে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সোভিয়েত সাম্যবাদের প্রসার রোধ করা। এই পরিকল্পনাই মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত।
বর্তমান প্রকল্পটিতে মার্শাল পরিকল্পনার বিভিন্ন দিকগুলির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণের কারণ , উদ্দেশ্য , পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব - এই সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
যেসকল উদ্দেশ্যগুলিকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হয়েছে - সেগুলি হল -
১. মার্শাল পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করা।
২. মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণের কারণ , উদ্দেশ্য , পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব - এই সকল বিষয়গুলি সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা অর্জন।
৩. ঠান্ডা লড়াইয়ের একটি উপাদান হিসাবে মার্শাল পরিকল্পনার ভূমিকা পর্যালোচনা করা।
৪. মার্শাল পরিকল্পনার আলোকে ঠান্ডা লড়াইয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন।
৫. মার্শাল পরিকল্পনার ঘোষিত ও প্রকৃত উদ্দেশ্যগুলিকে অনুধাবন করা।
৬. মার্শাল পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল - তা পর্যালোচনা করা।
৭. সর্বোপরি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস ও মার্শাল পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জনের জন্য শিক্ষর্থীদের উৎসাহিত করে তোলা।
প্রকল্পের গুরুত্ব :-
যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে , সেগুলি হল -
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে মার্শাল পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অর্জন সম্ভব।
২. প্রকল্পের আলোচনাতে মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণের কারণ , উদ্দেশ্য এবং বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকরি।
৩. ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব ও প্রসারের ক্ষেত্রে মার্শাল পরিকল্পনা ভূমিকা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ।
৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে পূর্ব ইউরোপ সাম্যবাদের প্রসার রোধ করতে চেয়েছিল - সে ইতিহাস জানতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ।
৫. প্রকল্পটির মাধ্যমে মার্শাল পরিকল্পনার ঘোষিত ও প্রকৃত উদ্দেশ্যগুলিকে জানা সম্ভব।
৬. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মার্শাল পরিকল্পনার প্রভাব সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকর।
৭. প্রকল্পটির মাধ্যমে মার্শাল পরিকল্পনার আলোকে ঠান্ডা লড়াইয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানা সম্ভব।
কর্মপরিকল্পনা / পদ্ধতিগত দিক :-
প্রকল্পটি নির্মাণ করতে যেসকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলি হল -
>> বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা X মহাশয় / মহাশয়া কর্তৃক প্রকল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন।
>> বিষয় নির্বাচনের পর মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত দিকগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - র নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
>> সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা করে সেটি মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নিকট উপস্থাপন করা হয় এবং তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করেন।
>> মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর পুনরায় প্রকল্পটি প্রস্তুত করা হয়।
>> প্রয়োজনীয় চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলি প্রতিবেদনে সংযোজিত করা হয়।
>> পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।
[ যেকোনো পাঠ্যবই বা নোট বই থেকে মার্শাল পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখতে হবে। মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণের কারণ ও উদ্দেশ্য , মার্শাল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন , ফলাফল - এই টপিকগুলো লিখতে হবে। যেকোনো পাঠ্যবই বা নোট বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ের একেবারে প্রথম দিকেই পেয়ে যাবে। ]
তথ্য বিশ্লেষণ :-
উপরোক্ত তথ্যগুলিকে বিশ্লেষণ আকারে উপস্থাপন করা হল।
(i) মার্শাল পরিকল্পনাটি গ্রহণ করেন মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ সি মার্শাল।
(ii) মার্শাল পরিকল্পনার ঘোষিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয় যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলির আর্থিক পুনরুজ্জীবন ঘটানোই ছিল মার্শাল পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।
(iii) কিন্তু মার্শাল পরিকল্পনার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে এই সকল দেশগুলিতে সোভিয়েত সাম্যবাদের প্রসার রোধ করা।
(iv) মার্শাল পরিকল্পনার উদ্ভবের মূলে ছিল আদর্শগত দ্বন্দ্ব। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট এবং অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোট। মূলতঃ পরস্পর বিরোধী এই দুই জোটের আদর্শগত দ্বন্দ্বই মার্শাল পরিকল্পনার উদ্ভবের মূল কারণ।
(v) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ইউরোপের দেশগুলিতে সোভিয়েত সাম্যবাদের আগ্রাসন বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট আগ্রাসন রোধ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রধান হয়ে উঠতে চেয়েছিল।
(vi) সোভিয়েত আগ্রাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক ছিল। অবিলম্বে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে না পারলে সমগ্র ইউরোপে রুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরী হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করেছিল এর ফলে রাশিয়া সামরিক দিক দিয়ে সমগ্র বিশ্বে সর্বশক্তিমান হয়ে উঠবে - যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার পক্ষে ছিল বিপজ্জনক। এই পরিস্থিতিতে মার্শাল পরিকল্পনা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক কৌশল।
(vii) মার্শাল পরিকল্পনা আদর্শ ও নীতিকে সামনে রেখে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট NATO গড়ে ওঠে। এরপর আরো অন্যান্য সামরিক ও বাণিজ্যিক জোট ও চুক্তি গড়ে ওঠে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল - SEATO , CENTO , ANZUS - ইত্যাদি।
(viii) উক্ত সামরিক ও বাণিজ্যিক জোট ও চুক্তিগুলির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সারা পৃথিবীতে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও রুশ সম্প্রসারণ রোধ।
(ix) পশ্চিম ইউরোপ মার্শাল পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের উত্তেজনা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়। তবে ব্রিটেন মার্শাল পরিকল্পনাকে কল্যাণকারী ফল প্রদানকারী হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল।
(x) মার্শাল পরিকল্পনা ঠান্ডা লড়াইকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। মার্শাল পরিকল্পনার ফলেই ইউরোপীয় রাজনীতি ও অর্থনীতি পরস্পরবিরোধী সুস্পষ্ট দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায় এবং সুদীর্ঘ প্রায় অর্ধ - শতাব্দীকাল যাবৎ এই আদর্শগত দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে।
(xi) মার্শাল পরিকল্পনা বাস্তবিক ভাবেই পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছিল। মার্কিন সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক মন্দা দূর হয় এবং রাষ্ট্রীয় উৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। সমগ্র ইউরোপের বাণিজ্যিক উৎপাদন ২৫% বৃদ্ধি পায়।
(xii) মার্শাল পরিকল্পনার অনিবার্য পরিণতি হিসাবে ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব ঘটে। মার্শাল পরিকল্পনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছিল। এর প্রত্যুত্তরে রাশিয়াও বিভিন্ন শক্তিজোট গঠন করে ও ইউরোপে সাম্যবাদী আগ্রাসন বহুগুন বৃদ্ধি পায়। এরফলে উভয় শক্তিজোটের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ আরো বৃদ্ধি পায়।
(xiii) মার্শাল পরিকল্পনা পক্ষান্তরে দ্বি - মেরুকেন্দ্রিক রাজনীতির জন্ম দেয়। ধনতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী জোটের বিরোধ এতটাই চরমে ওঠে যে উভয় শক্তি নিজেদের সামরিক শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বৃদ্বি করে। উভয় শক্তিরই নিজস্ব অনুগত গোষ্ঠী তৈরী হয়।
(xiv) মার্শাল পরিকল্পনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক কর্মকান্ডকে বহুগুন বৃদ্ধি করে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটলে পণ্যের জন্য তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে মার্কিন বাণিজ্যের যথেষ্ট প্রসার ঘটে।
(xv) মার্শাল পরিকল্পনা সমগ্র বিশ্বে শক্তির ভারসাম্য রক্ষা করে। বিশ্বের প্রায় সবগুলি শক্তি মার্কিন জোট ও সোভিয়েত জোটের অঙ্গীভূত হওয়ার ফলে বিশ্বের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শক্তিসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দুটি শিবিরই চরম শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে। ফলে সুয়েজ সংকট , কিউবা সংকট - ইত্যাদি কয়েকটি ক্ষুদ্র ঘটনা ছাড়া দুটি পরস্পর বিরোধী শিবির কখনই নিজেদের সর্বশক্তি নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে মার্শাল পরিকল্পনা ছিল অন্যতম একটি প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান। এর সাহায্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতিতে নিজ প্রভাব বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল। মার্শাল পরিকল্পনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে লাভদায়ক হয়েছিল। যেমন -
প্রথমতঃ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিহত করতে পেরেছিল।
দ্বিতীয়তঃ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে সাম্যবাদের প্রসার প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।
তৃতীয়তঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাশ্চাত্যের প্রায় সকল বৃহৎ শক্তিগুলিকে নিজ অনুকূলে জোটবদ্ধ করতে পেরেছিল।
চতুর্থতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে নিজ বাণিজ্যিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল।
পঞ্চমতঃ পশ্চিম ইউরোপের দেশুগুলি মার্কিন আর্থিক সহায়তা লাভ করে নিজেদের আর্থিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল।
ষষ্ঠতঃ মার্শাল পরিকল্পনার ফলেই বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গ স্পষ্ট দুটি শক্তিশিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়ে স্পষ্টভাবে দ্বিমেরুকরণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে।
উপসংহার :-
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে গৃহীত মার্শাল পরিকল্পনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বিশেষকরে পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারকারী অন্যতম উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়। একদিকে সোভিয়েত সাম্যবাদের প্রসার রোধ ও অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতিতে নিজ প্রভাব বৃদ্ধি - মূলতঃ এই দুই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মার্শাল পরিকল্পনা গৃহীত হয় যা পরবর্তী প্রায় অর্ধশতাব্দী কাল যাবৎ বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা বজায় রাখে।
পাঠের সীমাবদ্ধতা :-
প্রতিবেদনটি রূপায়নকালে এবং রূপায়িত হওয়ার পর যেসকল ত্রুটি - বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হয় - সেগুলি নিম্নরূপ -
(ক ) প্রকল্প রচনার সংক্ষিপ্ত পরিসরে মার্শাল পরিকল্পনার মত একটি তাৎপর্যপূর্ণ একটি বিষয় সম্পর্কে সমস্ত দিকগুলির আলোচনা বিস্তারিতভাবে করে ওঠা সম্ভব হয়নি।
(খ ) প্রতিবেদনটিতে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমূহ ও সোভিয়েত রাশিয়ার পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে মার্শাল পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছিল - সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি মার্শাল পরিকল্পনা দ্বারা কীভাবে এবং কতটা প্রভাবিত হয়েছিল - সে বিষয়ে আলোচনা অনুপস্থিত।
(গ ) মার্শাল পরিকল্পনার পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তিজোটগুলি সম্পর্কে এবং তাদের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা অনুপস্থিত।
(ঘ ) প্রকল্পটিতে সোভিয়েত সাম্যবাদের আগ্রাসনের উল্লেখ থাকলেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন সম্পর্কে আলোচনা অতি সংক্ষিপ্ত আকারে করা হয়েছে।
(ঙ ) সর্বোপরি মার্শাল পরিকল্পনা ও তার প্রভাব সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মতামত প্রকল্পটিতে অনুপস্থিত।
গ্রন্থপঞ্জি :-
বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক ও সহায়ক গ্রন্থ থেকে প্রকল্পের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এইসকল গ্রন্থগুলি হল -
১. ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস ( দ্বাদশ ) - জীবন মুখোপাধ্যায় ও ডক্টর সুভাষ বিশ্বাস।
২. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক : তত্ত্ব এবং সমসাময়িক বিশ্ব - প্রণব কুমার দালাল।
৩. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস - প্রণব কুমার চট্টোপাধ্যায়।
৪. আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস - অতুল চন্দ্র রায়।
৫. Helps to the study of WBCS History optional - Oriental Publication.
0 comments