উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত প্রকল্প : সংস্কৃত সাহিত্য সম্পর্কিত বিষয় : কালিদাস।
উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত প্রকল্প : সংস্কৃত সাহিত্য সম্পর্কিত বিষয় : কালিদাস।
উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত প্রকল্প : কালিদাস।
উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত প্রকল্প : সংস্কৃত সাহিত্য সম্পর্কিত বিষয় : কালিদাস।
ভূমিকা :-
প্রাচীন যুগের সাহিত্য স্রষ্টাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কালিদাস। তাঁর সৃষ্ট রচনাগুলি আজ বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে কালিদাসের নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে তিনি পর্দার আড়ালেই রেখেছেন। কালিদাসের সৃষ্টিগুলি থেকে তাঁর জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায়না। এমনকি সমসাময়িক বিভিন্ন গ্রন্থ ও সাহিত্য রচনাতেও কালিদাসের সম্পর্কে জানা যায় খুব সামান্য। একদিকে উৎকৃষ্টমানের সাহিত্যসৃষ্টি ও অন্যদিকে নিজের পরিচয়কে আড়ালে রেখে দেওয়া - এই দুই কারণে কালিদাস কিংবদন্তির আসন লাভ করেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে বহু কিংবদন্তি প্রচলিত হয়েছে।
বর্তমান প্রকল্পটিতে কালিদাসের বিভিন্ন সাহিত্য সৃষ্টি , তার বৈশিষ্ট ও রচনাশৈলী , সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর অবদান , বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা - ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
যেসকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হয়েছে - সেগুলি হল -
১. সংস্কৃত তথা ভারতীয় সাহিত্যে কালিদাসের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
২. কালিদাস রচিত বিভিন্ন নাট্য - কাব্য ও অন্যান্য সাহিত্য সৃষ্টিগুলি সম্পর্কে জানা।
৩. ভারতীয় তথা , সংস্কৃত সাহিত্যে কালিদাসের অবস্থান নির্ণয়।
৪. কালিদাসের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় সাহিত্যকীর্তিগুলির বিচার - বিশ্লেষণ ও তৎ সংক্রান্ত আলোচনা।
৫. কালিদাসের রচনাশৈলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন।
৬. কালিদাসের রচনাগুলি কালিদাস - উত্তর সময়ে ভারতীয় সাহিত্যকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে - তার সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রস্তুত করা।
৭. বর্তমান যুগে সাহিত্য ক্ষেত্রে কালিদাসের অবস্থান নির্ণয় করা।
৮. কালিদাস রচিত বিভিন্ন কাব্যসাহিত্যগুলি থেকে তৎকালীন সময়ের ইতিহাস ও সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে যা জানা যায় সে সম্পর্কে আলোকপাত করা।
৯. কালিদাসের রচনা বৈশিষ্ট সম্পর্কে সংস্কৃত পন্ডিতদের মতামত তুলে ধরা।
১০. সর্বোপরি , কালিদাসের জীবন ও রচনা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তোলা।
প্রকল্পের গুরুত্ব :-
যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে , সেগুলি হল -
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে কালিদাসের সকল সাহিত্যকীর্তিগুলি সম্পর্কে জানা সম্ভব।
২. প্রকল্পটিতে কালিদাসের রচনাশৈলী ও রচনা বৈশিষ্ট আলোচনা করা হয়েছে। তাই প্রকল্পকর্মটি গুরুত্বপূর্ণ।
৩. প্রকল্পটির মাধ্যমে তৎকালীন সময়ের জীবনযাত্রা ও আর্থ - সামাজিক ব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। তাই ঐতিহাসিক উপাদান হিসাবেও প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ।
৪. বর্তমান সময়কালে কালিদাসের প্রাসঙ্গিকতা এবং বর্তমান সাহিত্যে কালিদাসের প্রভাব সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকর।
৫. প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য উৎকর্ষতা সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কর্মপরিকল্পনা / পদ্ধতিগত দিক :-
প্রকল্পটি নির্মাণ করতে যেসকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলি হল -
>> বিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা X মহাশয় / মহাশয়া কর্তৃক প্রকল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন।
>> বিষয় নির্বাচনের পর মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত দিকগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - র নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
>> সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা করে সেটি মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নিকট উপস্থাপন করা হয় এবং তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করেন।
>> মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর পুনরায় প্রকল্পটি প্রস্তুত করা হয়।
>> প্রয়োজনীয় চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলি প্রতিবেদনে সংযোজিত করা হয়।
>> পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।
[ এখানে যেকোনো নোট বই থেকে কালিদাস সম্পর্কে যতটা সম্ভব লিখতে হবে। এছাড়া এই অংশে কালিদাসের নাটকগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় অবশ্যই দিতে হবে। ]
তথ্য বিশ্লেষণ / প্রকল্পের ব্যাখ্যা :-
যেসকল ব্যক্তিবর্গ প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যকে উৎকর্ষতার চরম শিখরে স্থাপন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রধান ও অন্যতম। কালিদাস রচিত সাহিত্যকীর্তিগুলি শুধুমাত্র ভারতেরই নয় ; সমগ্র বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। সাহিত্য ক্ষেত্রে কালিদাসের অবদান , বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা , রচনাশৈলী ও তার উৎকৃষ্টতা - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে বিভিন্নভাবে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন -
১. কালিদাস রচিত নাটকগুলিতে বহুচরিত্রের সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল অভিজ্ঞান শকুন্তলম। এই নাট্য সাহিত্যের চরিত্রের তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ। নাটকটিতে মোট ২৭ জন পুরুষ চরিত্র , ১৫ জন স্ত্রী চরিত্র ও প্রায় ১৬ ধরণের অন্যান্য চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে।
২. মানুষের একে অপরের উপর নির্ভরশীলতা কালিদাসের নাটকগুলিতে দেখা যায়। অভিজ্ঞান শকুন্তলম নাটকে এর উৎকৃষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা না থাকলে শকুন্তলার আশ্রম জীবন হয়তো দুর্বিসহ হয়ে উঠত। দুষ্যন্তের সঙ্গে পুনর্মিলন সম্ভব হত না এবং শকুন্তলা ঋষি দুর্বাসার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারতেন না।
৩. কালিদাসের নাটকগুলিতে বহুচরিত্রের সমাবেশ এবং চরিত্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা থাকলেও প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে স্বাতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়। এটি তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট।
৪. প্রাচীন সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন , হাত বাড়ালেই যা পাওয়া যায় - তা সত্যিকারের পাওয়া নয়। লাভ করার প্রকৃষ্ট প্রণালী সাধনা , তপস্যা। বহু আয়াস ও ক্লেশ স্বীকার করে যা পাওয়া যায় তার মূল্য সর্বাধিক। এই সত্য কালিদাসের নাটকগুলিতে সুপ্রতিষ্ঠিত।
৫. যৌবনের চাঞ্চল্যের প্রভাবে নরনারীর আকর্ষণজনিত যে মিলন , দেহজ রূপ - লাবণ্যের মোহে যে পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ - তা কখনো ভারতীয় গার্হস্থ্য জীবনের আদর্শ হয়না এবং তা কখনো কল্যাণকরও হয়না। এই আদর্শগত বক্তব্যকেও কালিদাস নিজ রচনাগুলিতে স্থান দিয়েছেন।
৬. কালিদাস নিজে একজন প্রকৃতি প্রেমিক। তাই তাঁর রচনাগুলির মধ্যেও প্রকৃতি প্রেমের চিত্র ফুটে ওঠে। তাঁর লেখনীর মধ্যে প্রকৃতি ও মানব মনের অন্তরঙ্গতার স্পষ্ট অনুভূতি লিপিবদ্ধ হয়েছে - যা এক অনন্যসুলভ কাব্যসুষমা লাভ করেছে।
৭. যে অপূর্ব কলাকৌশলে মহাকবি কালিদাস নাটকগুলির নায়ক - নায়িকার সম্মিলন ঘটিয়ে নাটকের প্রেক্ষাপট রচনা করেছেন , সেরূপ রমণীয় অবস্থা ও ঘটনা সৃষ্টি নাট্যসাহিত্যে শুধু বিরল নয় , দুর্লভও বটে।
৮. আবার অন্যদিকে গীতিকাব্য রচয়িতা হিসাবেও কালিদাস সমান প্রসিদ্ধ। তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকাব্য হল - মেঘদূতম।
৯. যদি গীতি প্রবণতা ও আত্মগত ভাবনার দ্বারা বহিঃর্জগৎকে আত্মসাৎ করা গীতিকারদের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে - তাহলে তার উৎকৃষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় কালিদাসের মেঘদূতম গীতিকাব্যে।
১০. বেদনার ব্যাপ্তি , দুঃখের ঐকান্তিক গভীরতা , প্রিয়ামিলনের ব্যাকুলতা , তন্ময়ীভাবের গভীর আবেগ - ইত্যাদি বিশিষ্টগুলি কালিদাসের রচনাগুলিকে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যে পরিণত করেছে।
১১. কালিদাসের রচনাগুলির অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হল - বিশেষ চরিত্রের উপস্থিতি। যেমন অভিজ্ঞান শকুন্তলম নাটকের একটি বিশেষ চরিত্র হল বিদূষক।
১২. গুরুগম্ভীর বিষয়ের বর্ণনা করতে করতে কালিদাস বিভিন্ন সময় নির্মল হাস্যরসের উপস্থাপন করেছেন। যেমন অভিজ্ঞান শকুন্তলম নাটকে বিদূষকের মাধ্যমে হাস্যরস পরিবেশন করেছেন। সমাজ জীবনের চিত্ত নীরস একঘেঁয়েমিতে মন যখন অবসাদগ্রস্ত হয় - ঠিক সেই সময় হাস্যরসের উপস্থাপন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
১৩. কালিদাসের রচনাগুলিতে তৎকালীন সময়ের যে বর্ণনা পাওয়া যায় - তা সেই আমলের আর্থ - সামাজিক অবস্থা , সংস্কৃতি , রাজনীতি - ইত্যাদি সকল দিকের প্রতিই আলোকপাত করে।
১৪. কালিদাসের রচনাগুলি থেকে সংশ্লিষ্ট সময়ের শ্রম - বিভাজন সম্পর্কে জানা যায়। সারথি , দ্বারপাল , বার্তাবহ , স্তুতিপাঠক , কোতোয়াল , নগর রক্ষী , পুরোহিত , পরিচারিকা , অমাত্য , বণিক - ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণির ও বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষের উল্লেখ পাওয়া যায়।
সরস্বতীর বরপুত্র কালিদাস। তাঁর নাটকগুলি সংস্কৃত তথা বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। রূপ - রস - গন্ধ ও বর্ণময় জগৎকে তিনি যেমন উপলব্ধি করেছেন তেমনি তাঁর অনুভূতিগুলোকে তাঁর লেখনীর অলৌকিক জাদুস্পর্শের ছোঁয়ায় লিপিবদ্ধ করেছেন। ভারতীয় সাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্ত্বকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার অন্যতম কৃতিত্ব যাঁদের তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কালিদাস। একদিকে যেমন তাঁর কবিখ্যাতি ভারতের সীমা অতিক্রম করে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে তেমনি আবার অন্যদিকে তাঁর রচনাগুলি সময়কালের গন্ডি পেরিয়ে সর্বকালের মধ্যে তার যাতায়াত অব্যাহত রেখেছে।
সীমাবদ্ধতা :-
প্রকল্পটি রূপায়নকালে এবং রূপায়িত হওয়ার পর যেসকল ত্রুটি - বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে - সেগুলি হল -
১. প্রকল্প রচনার ক্ষুদ্র পরিসরে মহাকবি কালিদাস সংক্রান্ত প্রতিবেদনমূলক প্রকল্প রচনার সময় সকল বিষয়গুলি যথার্থ ও বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি।
২. তথ্যের উপস্থাপন সংক্ষিপ্ত আকারে করা হয়েছে।
৩. কালিদাসের শ্রেষ্ঠ নাটক ও অন্যান্য সাহিত্যকীর্তিগুলির বিবরণ অতি সংক্ষিপ্ত।
৪. কালিদাস সম্পর্কে সংস্কৃত পন্ডিতবর্গের মতামত সীমিত আকারে উপস্থাপিত হয়েছে।
গ্রন্থপঞ্জি / তথ্য সূত্র :-
যেসকল গ্রন্থগুলি থেকে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে - সেগুলি হল -
১. সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস - ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
২. প্রাচীন ভারতের সংস্কৃত সাহিত্য - ডক্টর উদয়চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩. সংস্কৃত সাহিত্য কা ইতিহাস - বাচস্পতি গৈরালা।
0 comments