উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। / বাংলা সাহিত্যে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান।

by - October 11, 2022

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। 

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী : জীবন ও সাহিত্য :- 

বাংলা সাহিত্যে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান। 

নির্বাচিত সাহিত্যিকের সাহিত্য - অবদান সম্পর্কিত প্রকল্প নির্মাণ। 




উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী : জীবন ও সাহিত্য। 


ভূমিকা :- 
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের এক প্রবাদপ্রতিম পুরুষ এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন একাধারে শিশু - সাহিত্যিক , সংগীতজ্ঞ , আলোকশিল্পী , প্রকাশক , মুদ্রণ গবেষক ও মুদ্রক এবং একজন কালজয়ী প্রকাশক। বিশেষ করে শিশু সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কর্ম রূপে বিবেচিত হয়। শিশুসাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি যে ধারার সূচনা করেছিলেন - তা আজও সমানভাবে সমাদৃত ও জনপ্রিয়। এছাড়াও মুদ্রণ শিল্পের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মুদ্রণ শিল্পের ক্ষেত্রে তাঁর বিভিন্ন গবেষণা , ইউ রায় অ্যান্ড সন্স প্রতিষ্ঠা , হাফটোন ব্লকের ব্যবহার - ইত্যাদি ভারতীয় মুদ্রণ শিল্পকে এক নতুন পথের সন্ধান দেয়। তবে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী শিশুসাহিত্যিক হিসাবে সর্বাধিক জনপ্রিয়। শিশুদের জন্য লেখা তাঁর বিভিন্ন গল্প ও উপন্যাসগুলি ছোট - বড় সকলের কাছেই আজও সমান জনপ্রিয়। 

বর্তমান প্রকল্পটিতে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জীবন ও সাহিত্যকীর্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান যুগের পাঠকদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা ও গহনযোগ্যতা , উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর রচনা বৈশিষ্ট , বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা এবং বাংলা সাহিত্যে তাঁর প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য :- 
যেসকল উদ্দেশ্যগুলিকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রচনা করা হয়েছে সেগুলি হল - 
১. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করা। 
২. শিশু সাহিত্যের ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা। 
৩. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর রচনা বৈশিষ্ট পর্যালোচনা করা। 
৪. বর্তমান যুগের পরিপ্রেক্ষিতে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সাহিত্যগুলির প্রাসঙ্গিকতা বিচার করা। 
৫. মুদ্রণ শিল্পের ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান আলোচনা করা। 
৬. বাংলা সাহিত্যে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা। 
৭. সর্বোপরি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তোলা। 

প্রকল্পের গুরুত্ব :- 
যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে , সেগুলি হল - 
১. প্রকল্পটিতে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই তাঁর সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি বিশেষভাবে কার্যকর। 
২. বাংলা সাহিত্য জগতে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। 
৩. শিশুসাহিত্য ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তাঁর বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। প্রকল্পটির মাধ্যমে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর রত্নত্তম শিশুসাহিত্যের ভান্ডার সম্পর্কে জানা যাবে। 
৪. ভারতীয় মুদ্রণ শিল্পের ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। 
৫. বর্তমান বাংলা সাহিত্য জগৎকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কর্তৃক রচিত সাহিত্যগুলি কতটা প্রভাবিত করেছে - সে সম্পর্কে প্রকল্পটিতে তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা করা হয়েছে। 
৬. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তাঁর সাহিত্য দ্বারা বাংলা চলচ্চিত্রকে কতটা প্রভাবিত করেছেন - সে সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকর। 
৭. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখনীর মৌলিকত্ব , স্বতন্ত্রতা ও রচনা বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 

কর্মপরিকল্পনা / পদ্ধতিগত দিক :- 
প্রকল্পটি নির্মাণ করতে যেসকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলি হল -   

>> বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা X মহাশয় / মহাশয়া কর্তৃক প্রকল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন। 

>> বিষয় নির্বাচনের পর মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত দিকগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - র নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

>> সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা করে সেটি মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নিকট উপস্থাপন করা হয় এবং তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর পুনরায় প্রকল্পটি প্রস্তুত করা হয়। 

>> প্রয়োজনীয় চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলি প্রতিবেদনে সংযোজিত করা হয়। 

>> পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। 


তথ্য সংগ্রহ / পরীক্ষামূলক উপাদান :- 
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী : জীবন ও সাহিত্য - সংক্রান্ত প্রকল্প রচনার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়ার নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে প্রতিবেদন রচনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহের সময় পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নির্দেশিত নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। 
(A) জন্ম ও বংশ পরিচয়। 
(B) শিক্ষাজীবন। 
(C) সাহিত্যিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ। 
(D) সাহিত্যসৃষ্টি ( প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত রচনার নাম )
(E) রচনাশৈলীর স্বতন্ত্রতা বিশ্লেষণ। 
(F) বর্তমান কালের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিকতা। 
(G) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদান। 
(H) স্বীকৃতি ও পুরস্কারলাভ। 
(I) অনুবাদক হিসেবে ভূমিকা এবং অনুবাদের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির প্রচার। 
(J) সাহিত্যিকের আলোকচিত্র বা অঙ্কিত প্রতিকৃতির সংযোজন।      

তথ্য বিশ্লেষণ / প্রকল্পের বর্ণনা :- 

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। 
জন্ম ও বংশপরিচয় :- 
ঔপনিবেশিক ভারতে অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত মসুয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ই মে বা ১২৭০ বঙ্গাব্দের ২৭শে বৈশাখ। তাঁর পিতার নাম ছিল কালিনাথ রায় এবং তিনি ছিলেন আরবি , ফারসি ও সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে সুপন্ডিত ব্যক্তি। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মাতা ছিলেন জয়তারা দেবী। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন আটজন পুত্রসন্তানের মধ্যে তৃতীয় এবং তাঁর পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়। তাঁর পিতার অপুত্রক আত্মীয় জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে দত্তক নেন এবং নতুন নাম দেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। 

শিক্ষাজীবন :- 
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছেলেবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন ; প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি ভালো ফল করতেন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে বৃত্তিলাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং প্রেসিডেন্সি কলেজে কিছুকাল অধ্যয়নের পর মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে ২১ বছর বয়সে স্নাতক হন। 

সাহিত্যিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ :- 
ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনার তুলনায় সংগীত , তবলা , বেহালা ও সাহিত্যচর্চার প্রতি অধিক আগ্রহী ছিলেন। তৎকালীন শিশুকিশোর পত্রিকা সখা, বালক, সাথী, সখা ও সাথী, মুকুল ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৮৮৩ সালে ছাত্রাবস্থায় সখা পত্রিকায় তাঁর প্রথম রচনা প্রকাশিত হয়। যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে তার প্রথম বই "ছেলেদের রামায়ণ" প্রকাশিত হয়।

সাহিত্যসৃষ্টি :- 
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছোটদের জন্য বহুসংখ্যক গল্প লিখে গেছেন। এই গল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -  ছেলেদের রামায়ণ (১৮৯৬)
সেকালের কথা (১৯০৩)
ছেলেদের মহাভারত(১৯০৮)
মহাভারতের গল্প (১৯০৯)
টুনটুনির বই(১৯১০)
ছোট্ট রামায়ণ(১৯১১)
গুপি গাইন বাঘা বাইন(১৯১৫)
এই গ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম হল টুনটুনির বই। এই বইটিতে আছে বিচিত্র স্বাদের ২৭টি গল্প।  
এছাড়া মুদ্রণ বিষয়ে তিনি বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধগুলি হল:
১) ফোকাসিং দ্য স্ক্রিন (১৮৯৭)
২) দা থিওরি অব হাফটোন ডট(১৮৯৮)
৩) দা হাফটোন থিওরি গ্র‍্যাফিক্যালি এক্সপ্লেইনড(১৮৯৯)
৪) অটোম্যাটিক অ্যাডজাস্টমেন্ট অব দা হাফটোন স্ক্রিন(১৯০১)
৫) ডিফ্র‍্যাকশান ইন হাফটোন(১৯০২-০৩)
৬) মোর অ্যাবাউট হাফটোন থিওরি(১৯০৩-০৪)
৭) দা সিক্সটি ডিগ্রি ক্রস লাইন স্ক্রিন (১৯০৫-০৬)
৮) মালটিপল স্টপস্ (১৯১১-১২)

ব্রাহ্মসমাজের সংস্পর্শে আসার পর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ব্রাহ্মধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করেন এবং কয়েকটি ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করেন। এই ব্রহ্মসঙ্গীতগুলি হল - 
১) কে ঘুচায় হায় প্রাণের কালিমারাশি
২) জয় দিন দয়াময় নিখিল ভুবনপতি
৩) বল দেখি ভাই এমন করে ভুবন কে বা গড়িল
৪) যাব পুরবাসী ভাগবত প্রেম পিয়াসি

সংগীত ছাড়াও বাদ্যযন্ত্র বিষয়েও তিনি কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তাঁর লেখা বাদ্যযন্ত্র বিষয়ক গ্রন্থগুলি হল - 
১) শিক্ষক ব্যতিরেকে হারমোনিয়াম শিক্ষা (১৮৮৮)
২) বেহালা শিক্ষার বই(১৯০৪)
৩) ভারতীয় সংগীত।

রচনাশৈলীর স্বতন্ত্রতা বিশ্লেষণ :- 
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখনী ছিল স্বতন্ত্র ও মৌলিক বৈশিষ্টে পরিপূর্ণ। তাঁর লেখনীর প্রধান বৈশিষ্টগুলি হল - 
(ক ) সহজ - সরল শব্দ চয়ন ও সাবলীল রচনারীতি। 
(খ ) প্রাঞ্জল ও গতিশীল ঘটনাক্রমের উপস্থাপন। 
(গ ) শিশুদের মন ছুঁয়ে যাবে এমন চরিত্র , ঘটনা ও বিষয়বস্তুর সংযোজন। 
(ঘ ) গ্রন্থগুলির প্রচ্ছদ ও গল্পগুলিতে চিত্রের বহুল ব্যবহার করতেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। 
(ঙ ) কোনো কোনো গল্পে তিনি বিচিত্র ও অলীক চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়েছেন এবং লেখনীর গুণে সেই অলীক চরিত্রগুলিকেও বাস্তবতার রঙে রাঙিয়ে তুলেছেন। 
(চ ) গল্পগুলির মধ্যে এমন সকল উপাদানের সংমিশ্রণ তিনি ঘটিয়েছেন যা পাঠকদের কল্পনাপ্রবণ করে তোলে। 
(ছ ) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কর্তৃক সৃষ্ট গল্প ও গল্পের চরিত্রগুলি সম্পূর্ণভাবে মৌলিক। ইতিপূর্বে বাংলা সাহিত্যে এধরণের চরিত্রের উদ্ভাবন ঘটেনি। 
(ঝ ) তাঁর নিজের হাতে আঁকা প্রচ্ছদ ও অন্যান্য ছবিগুলি গল্পগুলিকে প্রাণবন্ত করে তোলে ও শিশুমনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। 
(ঞ ) তাঁর লেখা প্রতিটি গল্পই বৈচিত্রপূর্ণ। কোনো গল্পেই একই ধরণের ঘটনাক্রম , প্রেক্ষাপট - ইত্যাদি অনুসরণ করা হয়নি। 

বর্তমান কালের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিকতা। 
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সাহিত্যসৃষ্টি বর্তমান কালের পরিপ্রক্ষিতেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। আজও শিশু থেকে শুরু করে জ্যেষ্ঠ সকলেই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গল্পগুলির গুণমুগ্ধ। শিশু ও কিশোরদের নিষ্পাপ ও কল্পনাপ্রবণ মনে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গল্পগুলি তাদেরকে কল্পনার অনাবিল আনন্দের জগতে ডানা মেলে উড়ে যেতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় , উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কর্তৃক রচিত '' গুপী গায়েন বাঘা বায়েন '' গল্পটি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রটি আজও শিশু , কিশোর , বয়স্ক - সকলের কাছেই সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র। 

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদান।
বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অপর একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হল 'সন্দেশ' পত্রিকার প্রকাশ। শিশু ও কিশোর পত্রিকার জগতে সন্দেশ পত্রিকাটি বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী সন্দেশ পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন এবং পরবর্তীকালে পুত্র সুকুমার রায় ও তারপর সুকুমার রায়ের পুত্র সত্যজিৎ রায় এবং তারপর সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় পত্রিকাটির সম্পাদনা করেন। পত্রিকাটি আজও প্রচলিত ও সমানভাবে জনপ্রিয়। শিশু ও কিশোর মনকে সুকুমার লালিত্যে পরিপূর্ণ করে তুলতে সন্দেশ পত্রিকাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 

উপসংহার :- 
বাংলা সাহিত্যে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এক বিরল প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি যে ধারার সূচনা করেছিলেন - তা সর্বকালে সবার নিকট প্রশংসিত ও জনপ্রিয়। তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরেও তাঁর রচনাগুলি আজও পাঠকবর্গের হৃদয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের ন্যায় বিরাজমান। তাঁর রচিত গল্পগুলি শিশু ও কিশোর মনকে সযত্নে সুকুমার লালিত্যে লালন করে - এখানেই তাঁর বিশিষ্টতা।    




প্রকল্পের সীমাবদ্ধতা :- 
প্রতিবেদনটি রচনাকালে ও রূপায়িত হওয়ার পর যেসকল ত্রুটি - বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে , সেগুলি হল -
প্রথমতঃ প্রতিবেদনটিতে শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সম্পর্কে তাঁর বিভিন্ন গবেষণা ও উদ্ভাবনগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি। 
দ্বিতীয়তঃ প্রকল্প রচনার সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সমগ্র সাহিত্য সৃষ্টি ও তার বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি ; আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত আকারে। 
তৃতীয়তঃ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখনী পরবর্তীকালের লেখকদেরও প্রভাবিত করেছিল ; কিন্তু এবিষয়ে প্রকল্পে আলোচনা অনুপস্থিত। 
চতুর্থতঃ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর রচনা বৈশিষ্ট আলোচনা করার সময় সাহিত্য ক্ষেত্রে পন্ডিত ব্যক্তিদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন ছিল - যা নেওয়া হয়নি। 
পঞ্চমতঃ পাঠ্যবইয়ে  উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী সম্পর্কে তথ্য অতি সংক্ষিপ্ত ; তাই তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশেষ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। 

গ্রন্থপঞ্জি / তথ্যসূত্র :- 
যেসকল গ্রন্থ থেকে প্রকল্পের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে , সেগুলি হল - 
১. বাংলা ভাষা  ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস ( দ্বাদশ শ্রেণি ) - পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। 
২. বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ( একাদশ শ্রেণি ) - পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। 
৩. বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা - ডক্টর প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডক্টর তারকনাথ রুদ্র। 
৪. টুনটুনির বই - উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। 
৫. উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র - তুলি কলম প্রকাশন।   


   

You May Also Like

0 comments