সংস্কৃত প্রকল্প : উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির :-

by - February 28, 2023

সংস্কৃত প্রকল্প :  উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির :- 

উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত প্রকল্প :  উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির :- 

উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির :-

ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরের গুরুত্ব। 

H. S. Sanskrit Project.   




ভূমিকা : - 
ভারত সারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির আধার। যুগে - যুগে এদেশে বিভিন্ন জাতির আগমন ঘটেছে এবং সেইসকল সংস্কৃতির সংমিশ্রনে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধশালী হয়েছে। প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শন , মন্দির , সৌধ - ইত্যাদি ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এরকমই একটি ঐতিহ্যমন্ডিত স্থাপত্য নিদর্শন হল উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির। ভারতীয় সভ্যতা ও সভ্যতার চমৎকারিত্বে উল্লিখিত স্থাপত্য নিদর্শনটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। প্রাচীনত্ব , গঠনশৈলী , অভিনবত্ব , ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট - ইত্যাদি ক্ষেত্রে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির সমগ্র বিশ্ববাসীর মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। 

বর্তমান প্রকল্পটিতে উল্লিখিত স্থাপত্য নিদর্শনটির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী গুরুত্ব এবং বর্তমান ভারতীয় সভ্যতা এই স্থাপত্য নিদর্শনটির দ্বারা কতখানি প্রভাবিত হয়েছে - সে সম্পর্কে তথ্য - সমৃদ্ধ আলোচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানার ক্ষেত্রে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির কীভাবে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করে - সে সম্পর্কেও আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বোপরি , প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য , প্রাচুর্য ও বৈভবের ইতিহাস এবং তার সঙ্গে সঙ্গে উন্নত ও সমৃদ্ধ শিল্পরীতির ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে এই প্রতিবেদনমূলক প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে - এমনটা আশা করা যেতে পারে। 

প্রকল্পটির উদ্দেশ্য :- 
যেসকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। 
২. উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরের স্থাপনা ও সেই সংক্রান্ত ইতিহাস সম্পর্কে জানা। 
৩. ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির কতটা তাৎপর্যপূর্ণ - তা বিচার করা।  
৪. উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরের গঠনশৈলী ও শিল্প বিচার করা। 
৫. বর্তমান ভারতীয় সভ্যতায় উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরের অবস্থান নির্ণয় করা। 
৬. প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যরীতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। 
৭. প্রাচীন ভারতীয় শিল্প - স্থাপত্যের উৎকর্ষতার ইতিহাস আলোচনা করা। 
৮. প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যরীতিতে ধর্মীয় প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা। 
৯. মন্দিরের দৈনন্দিন কার্যাবলী ও সাধারণ প্রশাসন সম্পর্কে অবহিত হওয়া। 
১০. সর্বোপরি , প্রাচীন ভারতীয় শিল্প সংস্কৃতি ও উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তোলা। 

প্রকল্পের গুরুত্ব :- 
যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে , সেগুলি হল - 
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব। 
২. প্রকল্পটিতে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরের শিল্পরীতি ও গঠনশৈলী আলোচনা করা হয়েছে। তাই প্রকল্পকর্মটি গুরুত্বপূর্ণ। 
৩. প্রকল্পটির মাধ্যমে তৎকালীন সময়ের জীবনযাত্রা ও আর্থ - সামাজিক ব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। তাই ঐতিহাসিক উপাদান হিসাবেও প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। 
৪. বর্তমান সময়কালে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরের প্রভাব সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকর। 
৫. প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও স্থাপত্য উৎকর্ষতা সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

কর্মপরিকল্পনা / পদ্ধতিগত দিক :- 

প্রকল্পটি নির্মাণ করতে যেসকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলি হল -   

>> বিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা X মহাশয় / মহাশয়া কর্তৃক প্রকল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন। 

>> বিষয় নির্বাচনের পর মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত দিকগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - র নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

>> সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা করে সেটি মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নিকট উপস্থাপন করা হয় এবং তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর পুনরায় প্রকল্পটি প্রস্তুত করা হয়। 

>> প্রয়োজনীয় চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলি প্রতিবেদনে সংযোজিত করা হয়। 

>> পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। 


তথ্য সংগ্রহ / পরীক্ষামূলক উপাদান :- 

উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির। 

পরিচয় :- 
উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির  বা মহাকাল মন্দির হল হিন্দু দেবতা শিবের একটি মন্দির এবং বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। এই মন্দিরটি ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উজ্জয়িনী শহরে রুদ্রসাগর হ্রদের তীরে অবস্থিত। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গটিকে স্বয়ম্ভু বা শিবের সাক্ষাৎ-মূর্তি মনে করা হয়। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে এর প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে মন্দিরটি আজও ভারতীয় সমাজে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়। 

পৌরাণিক কিংবদন্তি
শিবপুরাণ অনুসারে, একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ও রক্ষাকর্তা বিষ্ণু তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে বিবাদে রত হন। তাদের পরীক্ষা করার জন্য শিব ত্রিভুবনকে ভেদ করে জ্যোতির্লিঙ্গ নামে এক বিশাল অন্তহীন আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হন। বিষ্ণু ও ব্রহ্মা এই লিঙ্গের উৎস অনুসন্ধান করতে যান। ব্রহ্মা যান উপর দিকে এবং বিষ্ণু নামেন নিচের দিকে। কিন্তু তারা কেউই এই লিঙ্গের উৎসটি খুঁজে পাননা। ব্রহ্মা মিথ্যা বলেন যে তিনি উৎসটি খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু বিষ্ণু তার পরাজয় স্বীকার করে নেন। শিব তখন একটি দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়ে মিথ্যা বলার জন্য ব্রহ্মাকে শাপ দেন যে অনুষ্ঠানে তার কোনো স্থান হবে না। অন্যদিকে সত্য কথা বলার জন্য তিনি বিষ্ণুকে আশীর্বাদ করে বলেন যে সৃষ্টির অন্তিমকাল পর্যন্ত তিনি পূজিত হবেন। জ্যোতির্লিঙ্গ হল সেই অখন্ড সর্বোচ্চ সত্যের প্রতীক, যার অংশ শিব নিজে। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলিতে শিব স্বয়ং অগ্নিময় আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। 

জ্যোতির্লিঙ্গ সম্পর্কিত আলোচনা :- 
শিবের ৬৪টি রূপভেদ রয়েছে। তবে এগুলির সঙ্গে জ্যোতির্লিঙ্গকে এক করা হয় না। প্রত্যেক জ্যোতির্লিঙ্গের নির্দিষ্ট নাম আছে – এগুলি শিবের এক এক রূপ। প্রতিটি মন্দিরেই শিবলিঙ্গ শিবের অনন্ত প্রকৃতির প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের প্রতিনিধিত্ব করে। বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির হল গুজরাতের সোমনাথ, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীশৈলমের মল্লিকার্জুন, মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর, মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর, হিমালয়ের কেদারনাথ, মহারাষ্ট্রের ভীমশংকর, উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বিশ্বনাথ, মহারাষ্ট্রের ত্র্যম্বকেশ্বর, ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ, গুজরাতের দ্বারকায় নাগেশ্বর, তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের রামেশ্বর এবং মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদের ঘৃষ্ণেরশ্বর। 

মন্দিরের বৈশিষ্ট ও গঠনপ্রণালী :- 
মহাকালেশ্বরের মূর্তিটি দক্ষিণামূর্তি নামে পরিচিত। ‘দক্ষিণামূর্তি’ শব্দের অর্থ ‘যাঁর মুখ দক্ষিণ দিকে’। এই মূর্তির বিশেষত্ব এই যে তান্ত্রিক শিবনেত্র প্রথাটি বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একমাত্র মহাকালেশ্বরেই দেখা যায়। ‘ওঙ্কারেশ্বর মহাদেবে’র মূর্তিটি মহাকাল মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে স্থাপিত। গর্ভগৃহের পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিকে যথাক্রমে গণেশ, পার্বতী ও কার্তিকের মূর্তি স্থাপিত। দক্ষিণ দিকে শিবের বাহন নন্দীর মূর্তি স্থাপিত। মন্দিরের তৃতীয় তলে নাগচন্দ্রেশ্বর মূর্তি আছে। এটি একমাত্র নাগপঞ্চমীর দিন দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। 

স্থাপত্য :- 
মন্দিরের পাঁচটি তল আছে, তার মধ্যে একটি ভূগর্ভে অবস্থিত। এছাড়া মন্দিরে একটি বিশাল প্রাঙ্গণ রয়েছে। হ্রদের দিকে অবস্থিত এই প্রাঙ্গণটি প্রাচীরবেষ্টিত। মন্দিরের শিখর বা চূড়াটি শাস্ত্রে উল্লিখিত পবিত্র বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। ভূগর্ভস্থ কক্ষটির পথটি পিতলের প্রদীপ দ্বারা আলোকিত হয়। মনে করা হয়, দেবতাকে এই কক্ষেই প্রসাদ দেওয়া হয়। এটি মন্দিরের একটি স্বতন্ত্র প্রথা। কারণ, এই রকম প্রথা অন্য কোনো মন্দিরে দেখা যায় না। 

সংস্কৃতি ও উৎসব :- 
হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, এই মন্দিরের প্রধান উপাস্য দেবতা শিব অনন্তকাল ধরে উজ্জয়িনীর শাসক। এই শহরের অধিবাসীদের ধর্মবিশ্বাসে মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের প্রভাব অপরিসীম। শিবরাত্রি উৎসবের দিন মন্দিরের কাছে একটি বিশাল মেলা বসে। মহাকালেশ্বর মন্দিরের কাছে স্বপ্নেশ্বর মহাদেব মন্দির আছে। এই মন্দিরে ভক্তেরা পূজা করেন তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্নটি অনুধাবন করার জন্য। এখানে স্বপ্নেশ্বর শিবের শক্তির নাম স্বপ্নেশ্বরী।

শক্তিপীঠ সংক্রান্ত বিষয় :- 
মহাকালেশ্বর মন্দিরটিকে ১৮টি মহাশক্তিপীঠের একটি বলে মনে করা হয়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, শিব যখন সতীর দেহ বহন করে নিয়ে চলেছিলেন, তখন সতীর অঙ্গগুলি খণ্ডবিখণ্ড হয়ে ৫১টি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই স্থানগুলিকে শক্তিপীঠ বলা হয়। মহাকালেশ্বর মন্দিরে সতীর উপরোষ্ঠ পড়েছিল। এখানে শক্তির নাম মহাকালী বা হরসিদ্ধি।

প্রচলিত বিশ্বাস :- 
পুরাণ অনুসারে, উজ্জয়িনী শহরটির নাম ছিল অবন্তিকা। এই শহরটি ছিল অত্যন্ত সুন্দর এবং ধর্মীয় চিন্তার কেন্দ্র। দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে আসত হিন্দুশাস্ত্র শিক্ষা করতে। কিংবদন্তি অনুসারে, উজ্জয়িনীতে চন্দ্রসেন নামে এক শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শিবভক্ত। একদিন শ্রীখর নামে এক কৃষকবালক প্রাসাদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে শুনতে পায় রাজা শিবের নাম করছেন। সেও ছুটে মন্দিরে গিয়ে তার সঙ্গে প্রার্থনা শুরু করে দেয়। প্রহরীরা তাকে টেনে সেখান থেকে বের করে শহরের বাইরে শিপ্রা নদীর তীরে রেখে দিয়ে আসে। উজ্জয়িনীর পার্শ্ববর্তী দুই শত্রুরাজ্যের রাজা রিপুদমন ও সিংহাদিত্য সেই সময় উজ্জয়িনীর সম্পদের লোভে রাজ্য আক্রমণের কথা ভাবছলেন। এই কথা শুনে শ্রীখর প্রার্থনা শুরু করে। সেই খবর পৌঁছায় বৃধি নামে এক পুরোহিতের কাছে। তিনি এই কথা শুনে ভয় পেয়ে যান এবং ছেলেদের একান্ত অনুরোধে শিপ্রা নদীর তীরে গিয়ে শিবের কাছে প্রার্থনা শুরু করেন। ব্রহ্মার আশীর্বাদে দূষণ নামে এক দৈত্য অদৃশ্য হয়ে যাবার ক্ষমতা পেয়েছিল। শত্রুরাজারা দূষণের সাহায্যে উজ্জয়িনী আক্রমণ করেন। যুদ্ধে তাদেরই জয় হয় এবং তারা সকল শিবভক্তের উপর অত্যাচার শুরু করে দেন। অসহায় ভক্তদের প্রার্থনা শুনে শিব মহাকালের রূপে উজ্জয়িনীতে আবির্ভূত হয়ে চন্দ্রসেনের শত্রুদের ধ্বংস করেন। শ্রীখর ও বৃধির অনুরোধে শিব উজ্জয়িনীতে বাস করতে রাজি হন। তিনিই হন রাজ্যের প্রধান দেবতা এবং শিবভক্তদের রক্ষাকর্তা। সেই থেকে উজ্জয়িনীতে মহাকাল রূপে শিব তার শক্তি পার্বতীকে নিয়ে বাস করছেন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট :- 
১২৩৪-৩৫ সালে সুলতান শাসুদ্দিন ইলতুৎমিস উজ্জয়িনী লুণ্ঠনকালে মহাকালেশ্বর মন্দির চত্বর ধ্বংস করেছিলেন। ১৭৩৬ সালে হিন্দু পাদ পাদশাহির ছত্রপতি শাহু মহারাজ ও পেশোয়া বাজি রাওয়ের সেনাপতি রানোজিরাও সিন্ধে মহারাজ (সিন্ধিয়া) বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করান। পরবর্তীকালে মহাদজি সিন্ধে মহারাজ (প্রথম মাধবরাও সিন্ধে, ১৭৩০-১৭৯৪) ও মহারানি বায়জাবাই রাজে সিন্ধে (১৮২৭-১৮৬৩) এই মন্দিরের সংস্কার ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

মন্দির প্রশাসন :- 
১৮৮৬ সাল পর্যন্ত রাজা জয়াজিরাও সাহেব সিন্ধে আলিজার শাসন পর্যন্ত তৎকালীন গোয়ালিয়র রিয়াসতের প্রধান অনুষ্ঠানগুলি এই মন্দিরে অনুষ্ঠিত হত। ভারতের স্বাধীনতার পর দেবস্থান ট্রাস্টের পরিবর্তে উজ্জয়িনী পৌরসংস্থা এই মন্দিরের ভার নেয়। বর্তমানে এটি একটি কালেক্টরয়েটের অধীনে রয়েছে। 


তথ্য - বিশ্লেষণ :- 

উপরোক্ত তথ্যগুলিকে নীচে বিশ্লেষণ আকারে উপস্থাপন করা হল। 

(ক) উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরটি ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মন্দিরটি আজও তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রাসঙ্গিক। 

(খ) শিবের ৬৪টি রূপভেদ রয়েছে। তবে এগুলির সঙ্গে জ্যোতির্লিঙ্গকে এক করা হয় না। প্রত্যেক জ্যোতির্লিঙ্গের নির্দিষ্ট নাম আছে – এগুলি শিবের এক এক রূপ। প্রতিটি মন্দিরেই শিবলিঙ্গ শিবের অনন্ত প্রকৃতির প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের প্রতিনিধিত্ব করে।   

(গ) এই মন্দিরের শিবলিঙ্গটিকে স্বয়ম্ভু বা শিবের সাক্ষাৎ-মূর্তি মনে করা হয়। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে এর প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(ঘ) হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলিতে শিব স্বয়ং অগ্নিময় আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। 

(ঙ) মহাকালেশ্বরের মূর্তিটি দক্ষিণামূর্তি নামে পরিচিত। ‘দক্ষিণামূর্তি’ শব্দের অর্থ ‘যাঁর মুখ দক্ষিণ দিকে’। এই মূর্তির বিশেষত্ব এই যে তান্ত্রিক শিবনেত্র প্রথাটি বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একমাত্র মহাকালেশ্বরেই দেখা যায়। 

(চ) শিবরাত্রি উৎসবের দিন মন্দিরের কাছে একটি বিশাল মেলা বসে। মহাকালেশ্বর মন্দিরের কাছে স্বপ্নেশ্বর মহাদেব মন্দির আছে। এই মন্দিরে ভক্তেরা পূজা করেন তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্নটি অনুধাবন করার জন্য। 

(ছ)  মহাকালেশ্বর মন্দিরটিকে ৫১টি মহাশক্তিপীঠের একটি বলে মনে করা হয়। শক্তিপীঠ হিসাবে তীর্থযাত্রীদের মধ্যে মন্দিরটি প্রবল জনপ্রিয়। 

(জ) ১২৩৪-৩৫ সালে সুলতান শাসুদ্দিন ইলতুৎমিস উজ্জয়িনী লুণ্ঠনকালে মহাকালেশ্বর মন্দির চত্বর ধ্বংস করেছিলেন। তবে পরবর্তীকালে হিন্দু রাজাদের দ্বারা তা সংস্কার করা হয়। 

(ঝ) ভারতের স্বাধীনতার পর দেবস্থান ট্রাস্টের পরিবর্তে উজ্জয়িনী পৌরসংস্থা এই মন্দিরের ভার নেয়। বর্তমানে এটি একটি কালেক্টরয়েটের অধীনে রয়েছে। 

(ঞ) উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির ভারতীয় সভ্যতা ও সভ্যতার চমৎকারিত্বে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। প্রাচীনত্ব , গঠনশৈলী , অভিনবত্ব , ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট - ইত্যাদি ক্ষেত্রে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির সমগ্র বিশ্ববাসীর মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। 

উপসংহার / সিদ্ধান্তগ্রহণ :- 
ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে  উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির উৎকৃষ্ট উপাদান। স্থাপত্য শিল্পের ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতের স্থাপত্যকীর্তিগুলি বিশ্বের অপরাপর স্থাপত্যকীর্তিগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির সেই দাবীকে আরো দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে। নির্মাণকাল থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত তার গুরুত্ব আজও অমলিন।  

সীমাবদ্ধতা :- 
প্রকল্পটি রূপায়নকালে এবং রূপায়িত হওয়ার পর যেসকল ত্রুটি - বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. প্রকল্প রচনার ক্ষুদ্র পরিসরে  উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির সংক্রান্ত প্রতিবেদনমূলক প্রকল্প রচনার সময় সকল বিষয়গুলি যথার্থ ও বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি। 
২. তথ্যের উপস্থাপন সংক্ষিপ্ত আকারে করা হয়েছে। 
৩. বর্তমান সময়কালে ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতায়  উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা অতি সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। 
৪.  উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির সম্পর্কে সংস্কৃত পন্ডিতবর্গের মতামত সীমিত আকারে উপস্থাপিত হয়েছে। 

গ্রন্থপঞ্জি / তথ্য সূত্র :- 
যেসকল গ্রন্থগুলি থেকে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে - সেগুলি হল - 
(ক ) A Textbook of Medieval Indian History - শৈলেন্দ্র সেন। 
(খ ) উইকিপেডিয়া। 


You May Also Like

0 comments