dramatisation of a bengali story : gaynchokhu ( জ্ঞানচক্ষু গল্পের নাট্যরূপ। )

by - November 17, 2021

জ্ঞানচক্ষু গল্পের নাট্যরূপ। 

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প : গল্পের নাট্যরূপ। 



নাট্যরূপ জ্ঞানচক্ষু। 


চরিত্রবর্গ :- 

তপন 
ছোটোমাসি 
নতুন মেসো 
তপনের মা 
তপনের মামা 
তপনের বাবা 

প্রথম দৃশ্য :- 

মঞ্চ - পরিকল্পনা :- 
একটি সাধারণ ঘরের দৃশ্য। ঘরে চেয়ার , টেবিল সহ কিছু আসবাব। ঘরে উজ্জ্বল আলো। 

[ দৃশ্যের শুরুতেই দেখা যায় ছোটোমাসি মঞ্চে উপবিষ্টা। ঘরের টুকিটাকি কিছু কাজ করছেন। এমন সময় তপন মঞ্চে প্রবেশ করলো। তপন সোজা ছোটোমাসির দিকে এগিয়ে গেল। ] 

তপন : ছোটোমাসি নতুন মেসো কই ? 

ছোটোমাসি ( হেসে ) নতুন মেসো ! 

তপন : না , মানে এই তোমাদের বিয়ে হল কি'না - তাই  নতুন মেসো। ..........বলো না ছোটোমাসি , নতুন মেসো কোথায় ? 

ছোটোমাসি : কেন , নতুন মেসোর সাথে তোর আবার কী কাজ ? 

তপন : না , কোনো কাজ নেই  ..............

ছোটোমাসি : তাহলে ! 

তপন : নতুন মেসো না'কি একজন লেখক ? 

ছোটোমাসি : হ্যাঁ। 

তপন : মানে , সত্যিকারের লেখক ? 

ছোটোমাসি : সত্যিকারের লেখক মানে ! ( হেসে )  ......... হ্যাঁ , সত্যিকারের লেখক। 

তপন : লেখকরা আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ হন ? 

ছোটোমাসি : হ্যাঁ , সেইরকমই তো মনে হচ্ছে। 

তপন : মানে , বাবা , ছোটমামা বা মেজকাকুর মতোই মানুষ ? 

ছোটোমাসি ( খিলখিল করে হেসে ) : হ্যাঁ , হ্যাঁ , তাদের মতোই মানুষ। .......... আচ্ছা ব্যাপারটা কী বলতো ? 

তপন : তার মানে লেখক কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব নয় , আমার মতোই মানুষ ? 

ছোটোমাসি ( আবার হেসে ) : আরে বাবা বললাম তো লেখকরা আমাদের মতোই মানুষ। ..... তুই কী বলতে চাইছিস বল তো ! 

তপন : তার মানে আমারও লেখক হতে কোনো বাধা নেই ? 

ছোটোমাসি ( ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ) : আচ্ছা , ........ তপনবাবু তাহলে ( তপনের গাল টিপে দিয়ে ) লেখক হবেন ! 

তপন : ( কপট রাগের ভঙ্গি ) : আমি কি তাই বলেছি না'কি ! 

[ বলেই তপন দৌড়ে মঞ্চ ত্যাগ করে। ছোটোমাসি খিলখিল করে হাসতে থাকে। ] 



মঞ্চ - পরিকল্পনা : প্রথম দৃশ্যের অনুরূপ। 

[ মঞ্চে প্রথম দৃশ্যের মতোই ছোটোমাসি টুকিটাকি কাজকর্ম করছেন। নতুন মেসোমশাই একটি খবরের কাগজ পড়তে পড়তে চেয়ার বা সোফার মধ্যেই ঘুমে ঢলে পড়েছেন। তপন মঞ্চে প্রবেশ করলো। হাতে একটা খাতা  ] 

তপন : ছোটোমাসি একটা কথা আছে। 

ছোটোমাসি : কথা ! কী কথা ? 

[ তপন ছোটোমাসির দিকে এগিয়ে গেল। হাতের খাতাটা ছোটোমাসির দিকে মেলে ধরলো। ছোটোমাসি খাতাটা হাতে নিল। ] 

ছোটোমাসি : কী এটা ? 

তপন : না , মানে একটা  .......... একটা গল্প লিখেছি  ........ ।  

ছোটোমাসি ( উচ্ছসিত হয়ে ) : ও মা ! তাই না'কি ! তপন বাবু গল্প লিখেছে ! কবে লিখলি ? কখন লিখলি ? 

তপন : দুপুরে সবাই যখন ভাতঘুম দিচ্ছিল , তখন তিনতলার সিঁড়িতে। 

ছোটোমাসি : কিন্তু এটা তো তোর হোমটাস্কের খাতা ! এটা এখানে কী'করে পেলি ? 

তপন : দেখোনা , এই বিয়ে বাড়িতেও মা বই আর হোমটাস্কের খাতা না আনিয়ে ছাড়েননি। 

ছোটোমাসি ( রসিকতা করে ) : তাহলে  ....... ! আমাদের তপনবাবু একজন লেখক হয়ে গেলেন ? 

তপন : গল্পটা তো আগে পড়ো। 

[ ছোটোমাসি খাতাটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলেন ; দুএকটা পৃষ্ঠা ওলট - পালট করলেন। ] 

ছোটোমাসি : ওমা , এ তো বেশ  লিখেছিস রে ! কোনোখান থেকে টুকলিফাই করিসনি তো ? 

তপন : আঃ ছোটোমাসি , ভালো হবে না বলছি। 

ছোটোমাসি : আরে বাবা খেপছিস কেন ? জিজ্ঞেস করছি বই তো নয় ! রোস , তোর নতুন মেসোমশাইকে দেখাই। ..............     

তপন ( প্রবল আপত্তি করে ) : না আ - আ - আ  ............

[ তপনের আপত্তি গ্রাহ্য না করেই ছোটোমাসি তপনের নতুন মেসোমশাইয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন। ছোটোমেসোকে ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙালেন। ] 

ছোটোমাসি ( উচ্ছসিত ) : তপন এখন তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী। 

নতুন মেসো ( ঘুম ভাঙা চোখে , কিছু বুঝতে না পেরে ) : মানে ? 

ছোটোমাসি : তপন একটা গল্প লিখেছে। 

নতুন মেসো : তাই না'কি ! দেখি তো গল্পটা। 

[ এই বলে নতুন মেসো ছোটোমাসির হাত থেকে খাতাটা নিলেন। পৃষ্ঠাগুলো একটু উল্টে - পাল্টে দেখলেন। ] 

নতুন মেসো : তপন তোমার গল্প তো দিব্যি হয়েছে। একটু কারেকশন করে ইয়ে করে দিলে ছাপতে দেওয়া চলে। 

[ তপনের আহ্লাদে কাঁদো কাঁদো ভাব। ] 

ছোটোমাসি : তা হলে বাপু তুমি ওর গল্পটা ছাপিয়ে দিও , মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা। 

নতুন মেসো ( করুণার অবতার হয়ে ) : তা দেওয়া যায় ! আমি বললে সন্ধ্যাতারার সম্পাদক না করতে পারবে না। ........... ঠিক আছে , তপন , তোমার গল্প আমি ছাপিয়ে দেবো। 

তৃতীয় দৃশ্য : - 

মঞ্চ - পরিকল্পনা : প্রথম দৃশ্যের অনুরূপ। 

[ দৃশ্যের শুরুতেই দেখা যায় , মঞ্চের মাঝে একটি গোলটেবিল। তার চারপাশে তপনের নতুন মেসো , ছোটোমাসি , তপনের মা , তপনের দুই মামা সকলেই উপস্থিত। তপন একটি চেয়ারে গোলটেবিল থেকে একটু দূরে বসে আছে। গোল টেবিলে তখন চা - জলখাবারের আয়োজন চলছে। তপনও প্লেটে করে কিছু একটা খাচ্ছে। ] 

নতুন মেসো : আজকের একটি বিশেষ ঘটনা শুনলে তোমরা সকলে অবাক হয়ে যাবে। 

তপনের মা : ঘটনা ! কী ঘটনা ? 

নতুন মেসো : ঘটনাটি তপনকে নিয়ে। 

তপনের মামা ( হেসে ) : তপনকে নিয়ে ঘটনা ! তাই না'কি ! 

নতুন মেসো : তাহলে আর বলছি কী। 

ছোটোমাসি : অত ভনিতা না করে  বলেই দাও না ব্যাপারটা। 


নতুন মেসো : আরে বলছি - বলছি। ........আসলে তপন একটি গল্প লিখেছে। 

সকলে ( অবাক ) : যাঃ , তাই আবার হয় না'কি ! তপন লিখেছে গল্প ! ( সকলেই হেসে উঠলো। ) 

নতুন মেসো : আরে দাঁড়াও দাঁড়াও ; তোমরা যেরকম ভাবছো তেমনটা না। তপন সত্যিই একটা খুব সুন্দর গল্প লিখেছে। .......... আমি বলছি - তপনের হাত আছে। চোখও আছে। নচেৎ এই বয়সের ছেলেমেয়েরা গল্প লিখতে গেলেই তো - হয় রাজারানির গল্প লেখে , নয় তো খুন জখম অ্যাকসিডেন্ট , অথবা না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া , এইসব মালমশলা নিয়ে বসে। তপন যে সেই দিকে যায়নি , শুধু ওর ভর্তি হওয়ার দিনের অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির বিষয় নিয়ে লিখেছে , এটা খুব ভালো। ওর হবে। 

চতুর্থ দৃশ্য : - 

তপন মঞ্চে একা। 

তপন ( দর্শকদের উদ্দেশ্যে ) : আমি তো ভাবতেই পারছি না। ছেলেবেলা থেকেই তো রাশি রাশি গল্প শুনেছি , আর এখন বস্তা বস্তা পড়ছি ; কাজেই গল্পটা যে কী সেটা জানতে তো আমার বাকি নেই। শুধু এইটাই জানা ছিল না , গল্প এমনিই সহজ যে সেটা মানুষই লিখতে পারে। নতুন মেসোকে দেখে জানলাম সেটা। এখন আর পায় কে আমাকে ! 

[ নেপথ্যে ''তপন , তপন '' ডাক শুনতে পাওয়া গেল। তপনের মা আসছেন। তপন মায়ের ডাক শুনতে পেয়ে দ্রুত টেবিলে বসে একটা বই খুলে পড়তে শুরু করে দিল। তপনের মা মঞ্চে প্রবেশ করলেন। ] 

তপনের মা : কি'রে কী করছিস ? 

তপন : পড়ছি ( বই থেকে মুখ না তুলেই ) 

তপনের মা : পড়ছিস না গল্প পড়ছিস ? না'কি আবার গল্প লিখছিস ? 

তপন ( প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে ) : আমার প্রথম গল্পটা ছাপবে না মা ? 

তপনের মা : আরে দূর , তোর নতুন মেসো নতুন শ্বশুরবাড়ির ছেলেকে খুশি করতে তোর লেখা ছাপিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এখন তোর গল্প লেখার বয়স হয়েছে না'কি ! এখন পড়াশোনা কর , নিজের পায়ে দাড়া - তারপর ওসব ভাববি। 

তপন : কিন্তু ইতিমধ্যে তো আমি আরো দু - তিনটে গল্প লিখে ফেলেছি ! 

তপনের মা : ওসব ছাড় , মন দিয়ে পড়াশোনা কর। ছুটি ফুরিয়ে আসছে। হোমটাস্ক করা হয়েছে কিছু ? 

তপন ( আমতা আমতা করে ) : করে নেবো। 

পঞ্চম দৃশ্য :- 

মঞ্চ - পরিকল্পনা : তৃতীয় দৃশ্যের অনুরূপ  .সকলে গোল টেবিলের পাশে উপবিষ্ট। কিন্তু এঁদের মধ্যে তপনের ছোটোমাসি আর নতুন মেসো নেই। 

তপনের মামা : তা আমাদের লেখক মানে কবি , সাহিত্যিক , কথাশিল্পী তপনের ছোটোমাসি আর নতুন মেসোর আসার কথা ছিল ! কী যেন একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা আছে ! 

তপনের মা : সারপ্রাইজ ! 

তপনের মামা : হ্যাঁ , সারপ্রাইজ। ........... ওই তো ওরা এসেছে। 

[ তপনের ছোটোমাসি ও নতুন মেসো মঞ্চে প্রবেশ করলেন। নতুন মেসোর হাতে একটি ম্যাগাজিন। তপনের অবাক নজর সেই ম্যাগাজিনের প্রতি। ] 

নতুন মেসো : কী , সকলে ভালো তো ? 

তপনের মা : হ্যাঁ , সে তো ভালো , কিন্তু তুমি আজ কী না'কি একটা সারপ্রাইজ দেবে একটা ! তা কী সেই সারপ্রাইজ ? 

[ নতুন মেসো তার হাতের ম্যাগাজিনটি সকলের সামনে মেলে ধরলেন। ]     

নতুন মেসো : এই দেখো সন্ধ্যাতারা ! 

[ প্রথমে তপন চমকে উঠলো ; তারপর সকলেই অবাক হল। তপনের মামা ম্যাগাজিনটি হাতে তুলে নেন। ] 



তপনের মামা ( প্রচন্ড অবাক হয়ে ) : পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে ? ( ম্যাগাজিনটি দেখতে দেখতেই ) তা তো ঘটেছে বলেই মনে হচ্ছে। এই তো সূচীপত্রেও নাম রয়েছে - প্রথম দিন - শ্রী তপন কুমার রায়। 

[ সকলের হাতে হাতে পত্রিকাটি ঘুরতে থাকলো। ]

তপনের মামা : বারে , চমৎকার লিখেছে তো। 

নতুন মেসো ( মৃদু হেসে ) : একটু আধটু কারেকশন করতে হয়েছে অবশ্য। নেহাত কাঁচা হাত তো ! 

ছোটোমাসি :  তা হোক , নতুন নতুন অমন হয়। 

তপনের বাবা : তাই , তা নইলে ফট করে একটা লিখল , আর ছাপা হলো ! ............ 

তপনের মেজোকাকু : তা ওরকম একটি লেখক মেসো থাকা মন্দ নয়। আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম। 

তপনের মামা : তপনের নতুন মেসো নিজে গিয়ে না দিলে কি আর সন্ধ্যাতারার সম্পাদক তপনের গল্প কড়ে আঙুল দিয়ে ছুঁতো ? 

[ এসব কথা বলতে বলতে সকলে হাসাহাসি করতে থাকে। তপন তাদের মাঝে নিজেকে অসহায় ও বিপন্ন বোধ করে। ] 

তপনের মা : কই , তুই নিজের মুখে একবার পড় তো তপন শুনি ! বাবা , তোর পেটে পেটে এত ! 

[ তপনের মামা ম্যাগাজিনটি তপনের হাতে এনে দিল। তপন বইটি নিল। তপন ম্যাগাজিনটি নিয়ে পাতা উল্টে প্রচন্ড অবাক হওয়ার ভঙ্গিমা করলো ; আরেকটা পাতা ওল্টালো , আরো অবাক হল তপন। ] 

তপনের মা : কই পড় ? লজ্জা কী ? পড় , সবাই শুনি। 

[ তপন গল্পটি পড়তে উদ্যত হয়। কিন্তু বই খুলেই আবার আরও অবাক হয়ে যায় সে। তারপর ধীরে ধীরে মঞ্চের গোলটেবিলের দিকের অংশটি ছেড়ে মঞ্চের সামনের দিকে এগিয়ে আসে , দর্শকদের দিকে। তপন দর্শকদের উদ্দেশ্যে কথা শুরু করে। পেছনে গোলটেবিলে সকলে উপস্থিত থাকে , কিন্তু তাদের অঙ্গভঙ্গি এখন নির্বাক। তপন দর্শকদের উদ্দেশ্যে কথা শুরু করে। ] 

তপন : আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন হওয়ার কথা ছিল , আমার গল্প ছেপেছে আজ। কিন্তু আজ আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন। বলছি আমার  গল্প , কিন্তু আমার গল্প আর কই ! গল্পের প্রত্যেকটা লাইন নতুন , আনকোরা - আমার পরিচিত নয়। এর মধ্যে আমি কোথায় ? সবটাই তো মেসোর কারেকশন। ............. তবে আজ আমি সংকল্প করলাম , যদি আর কখনো লেখা ছাপতে দিই তো আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো। নিজের কাঁচা লেখা। ছাপা হয় হোক , না হয় না হোক। ............ আর যেন কখনো শুনতে না হয় আমাকে - অমুকে তপনের লেখা ছাপিয়ে দিয়েছে। ..........আর যেন আমাকে নিজের গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন না পড়তে হয়। ........... তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই  .......... তার থেকে অপমানের !    

[ যবনিকা পতন। ]      

You May Also Like

2 comments