hs bengali project : professor sonku ( চরিত্র পর্যালোচনা : প্রফেসর শঙ্কু। )
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প
চরিত্র পর্যালোচনা : প্রফেসর শঙ্কু।
ভূমিকা :-
বাংলা সাহিত্যে সত্যজিৎ রায় একটি উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের নাম। যদিও তাঁকে আমরা চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবেই চিনি ; কিন্তু বাংলা সাহিত্যেও তাঁর অবদান অসামান্য। সত্যজিৎ রায় কর্তৃক সৃষ্ট বিভিন্ন চরিত্র বাংলা সাহিত্যে বর্তমান। তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হল প্রফেসর শঙ্কু। প্রফেসর শঙ্কুর উপর লেখা গল্পগুলি মূলতঃ কল্পবিজ্ঞান নির্ভর। এই গল্পগুলি কিশোর মনকে কল্পনার ডানা মেলে কাল্পনিক বিজ্ঞানের জগতে উড়তে সাহায্য করে এবং তার সাথে সাথে পৃথিবী এবং এই অনন্ত মহাবিশ্বের বিবিধ রহস্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে ভাবতে বাধ্য করে।
বর্তমান প্রকল্পটিতে একদিকে যেমন সাহিত্যিকরূপে সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তেমনি অন্যদিকে সত্যজিৎ রায় কর্তৃক সৃষ্ট চরিত্র প্রফেসর শঙ্কু সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার সাথে সাথে রচনার লেখনীশৈলী এবং বর্তমান কালের শিক্ষার্থী ও বর্তমান প্রজন্মের ওপর সত্যজিৎ রায় ও তাঁর সৃষ্ট অমর চরিত্র প্রফেসর শঙ্কুর কতটা প্রভাব বর্তমান - তার উপরেও আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
'' সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট সাহিত্য চরিত্র প্রফেসর শঙ্কু '' শীর্ষক প্রতিবেদনমূলক প্রকল্পটি বিবিধ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে রূপায়িত হয়েছে। উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপ :-
১. সাহিত্যিকরূপে সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রকল্পটিতে উপস্থিত করা।
২. বাংলা কল্পবিজ্ঞানের জগতে সত্যজিৎ রায়ের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা।
৩. সত্যজিৎ রায় কর্তৃক সৃষ্ট কাল্পনিক চরিত্র প্রফেসর শঙ্কু সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা।
৪. প্রফেসর শঙ্কু সম্পর্কিত বিভিন্ন সাহিত্যকীর্তিগুলি সম্পর্কে জানা।
৫. প্রফেসর শঙ্কুর ওপর নির্মিত গল্পগুলির রচনাশৈলী বিশ্লেষণ করা।
৬. কল্পবিজ্ঞানের জগতে প্রফেসর শঙ্কুর অবস্থান নির্ণয় করা।
৭. বর্তমান প্রজন্ম ও বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা প্রফেসর শঙ্কু ও সেইরূপ সাহিত্যগুলির প্রতি কতটা আগ্রহী তা অনুধাবন করা।
৮. সর্বপরি , বাংলা সাহিত্যের রত্নরূপী সাহিত্যকীর্তি প্রফেসর শঙ্কু সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তোলা ও বাংলা সাহিত্যপাঠে তাদের মনোনিবেশের প্রয়াস করা।
প্রকল্পটির গুরুত্ব :-
'' সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট সাহিত্য চরিত্র প্রফেসর শঙ্কু '' শীর্ষক প্রতিবেদনমূলক প্রকল্পটি যে সকল কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে - তা নীচে আলোচনা করা হল।
প্রথমতঃ - প্রকল্পটির মাধ্যমে সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকীর্তিগুলি সম্পর্কে জানা সম্ভব।
দ্বিতীয়তঃ - প্রফেসর শঙ্কু নামক কাল্পনিক চরিত্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞানলাভ করতে প্রকল্পটি কার্যকরী।
তৃতীয়তঃ - প্রকল্পটির মাধ্যমে সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কুর ওপর লেখা গল্পগুলির রচনাশৈলী সম্পর্কে জানা সম্ভব।
চতুর্থতঃ - বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা প্রফেসর শঙ্কু ও সেইরূপ কাল্পনিক সাহিত্য চরিত্রগুলির প্রতি কতটা আগ্রহী তা এই প্রকল্পটির মাধ্যমে সহজেই জানা সম্ভব।
পঞ্চমতঃ - বাংলা কল্পবিজ্ঞানের সাহিত্য জগতে প্রফেসর শঙ্কুর অবস্থান নির্ণয় - এই প্রকল্পটির মাধ্যমে সহজেই সম্ভব।
ষষ্টতঃ - বাংলা সাহিত্যে ও কল্পীবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে প্রকল্পের বিষয় সম্পর্কে যে সকল তথ্য সংগৃহীত হয়েছে - তা নীচে উপস্থাপন করা হল।
[ দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পর্ষদের তরফ থেকে একটি বই দেওয়া হয়েছে যার নাম '' বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস। '' এই বইয়ের ১৮২ নং পাতায় প্রফেসর শঙ্কু সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া আছে। ১৮২ , ১৮৩ ও ১৮৪ এই তিন পাতা জুড়ে আছে প্রফেসর শঙ্কুর বর্ণনা। এখান থেকে যতটা ইচ্ছে লিখতে হবে। তোমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক / শিক্ষিকা - গণ কতটা বড় বা ছোট প্রকল্প করতে বলেছেন সেই হিসেবে লিখবে। ]
তথ্য বিশ্লেষণ :-
প্রফেসর শঙ্কু ও তার নির্মাতা সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যগুলির ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ :-
১. বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের জগতে সত্যজিৎ রায় কর্তৃক সৃষ্ট প্রফেসর শঙ্কু চরিত্রটি একটি অমর সৃষ্টি। প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার এত বছর পরেও তার জনপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি।
২. সত্যজিৎ রায় প্রফেসর শঙ্কু চরিত্রটির ওপর যে সকল সাহিত্যকীর্তিগুলি নির্মাণ করেছিলেন - তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল - ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি , প্রফেসর শঙ্কু ও আশ্চর্য পুতুল , কর্ভাস , ডক্টর শেরিং এর স্মরণশক্তি , মহাকাশের দূত , স্বর্ণপর্ণী - ইত্যাদি।
৩. প্রফেসর শঙ্কুর প্রথম পূর্বাভাস পাওয়া যায় সুকুমার রায়ের লেখা '' হেসোরাম হুঁশিয়ার - এর ডায়রি '' - তে। বলা যেতে পারে সত্যজিৎ রায় এখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
৪. প্রফেসর শঙ্কুর বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপে নানাধরণের দেশজ উপাদানের ব্যবহার নজরে আসে। মহাকাশ অভিযানে যাওয়ার জন্য তৈরী রকেটেও রয়েছে নানা দেশজ উপাদানের ব্যবহার। যেমন - ব্যাঙের ছাতা , সাপের খোলস , কচ্ছপের ডিমের খোলা - ইত্যাদি।
৫. প্রফেসর শঙ্কুর ওপর নির্মিত প্রতিটি গল্পেরই একটি নৈতিক বার্তা বর্তমান। এজন্য প্রফেসর শঙ্কুর গল্পগুলি শিক্ষার্থীদের নিকট অবশ্যপাঠ্য হওয়া উচিত।
৬. প্রফেসর শঙ্কু একজন বিশ্ব - নাগরিক। বিশ্বের নৈতিক - মানবিক বাণী শঙ্কুর প্রতিটি গল্পেরই পটভূমি রচনা করেছে।
৭. সত্যজিৎ রায়ের কল্পিত প্রফেসর শঙ্কুর গল্পে বিশ্বাস - অবিশ্বাসের প্রশ্ন - তেমন একটা জড়িত নেই। প্রতিটি গল্পেই সভ্যতার ভবিষ্যঘোষকরূপে এক - একটি আবিষ্কারের কথা বলা হয়েছে।
৮. শঙ্কুর গল্পে কল্পবিজ্ঞানের সাথে মানবীয় মনস্তত্বের মোক্ষম প্রয়োগ। তার গল্পে পাঠককে সচেতন থাকতে হয়না। শঙ্কুই সেই গল্পের মূল যোগানদার।
৯. বয়স - ক্রম নিরপেক্ষ রেখে শঙ্কুই পারেন সব ধরণের পাঠককে বিশ্ব বিস্ময়ে নিরপেক্ষ ও একাগ্র রাখতে।
১০. সব অর্থেই শঙ্কু বৈজ্ঞানিক ও সত্যন্মেষী চরিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। তাঁর কোনো বিকল্প নেই।
১১. যথেষ্ট দক্ষতার সাথে শঙ্কুই বাঙালিকে আলিবাবার গুহা দেখিয়েছেন - যা আরব্যরজনীর অসম্ভব কাহিনীর মোড়ক ছেড়ে বিজ্ঞানীর বিস্ময়কর আবিষ্কারে পরিণত হয়েছে।
১২. বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির পাশাপাশি প্রাচীন সাহিত্য , সংস্কৃতি , কিংবদন্তী , তন্ত্রমন্ত্র , অতিপ্রাকৃত ঘটনা , হিপনোটিজম - এই সবকিছুর প্রতিই শঙ্কুর সমান আগ্রহ। শঙ্কু বিশ্বাস করেন যে , মানুষ এই মুহূর্তে যা বুঝতে বা ব্যাখ্যা করতে অসমর্থ - ভবিষ্যতে কোনো এক সময়ে তার অর্থ উদ্ভাসিত হতে পারে।
১৩. শঙ্কুর সমস্ত গল্পগুলি পাঠের পর একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় , তিনি এক আশ্চর্য চরিত্র যিনি পশ্চিমি আধুনিক ধ্যান - ধারণার পাশাপাশি প্রাচীন সভ্যতার স্বাদ নিতেও সমান আগ্রহী।
১৪. শঙ্কুর ২১ টি ডায়রির মধ্যে এই জাতীয় বিভিন্ন অভিযানের ব্যাখ্যা - বর্ণনা থেকে বোঝা যায় , শঙ্কু শুধুমাত্র একজন বৈজ্ঞানিক নন , তার সাথে সাথে তিনি একজন চমৎকার লেখক। ডায়রির ধরণে প্রমাণিত হয় যে তিনি ভ্রমণ - কাহিনী , রহস্য রোমাঞ্চ ও অ্যাডভেঞ্চারের বর্ণনায় সিদ্ধহস্ত। এভাবেই সত্যজিৎ রায় প্রফেসর শঙ্কুকে উপস্থাপন করেছেন।
১৫. সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র জগতে এক অনন্য সম্মানের অধিকারী। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সন্মান অস্কার বিজয়ী। কিন্তু তবুও সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকীর্তিগুলির তালিকা দীর্ঘ। এ থেকে সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ প্রমাণিত হয়।
১৬. প্রফেসর শঙ্কুর গল্পগুলি থেকে সত্যজিৎ রায়ের লেখনী কুশলতার পরিচয় পাওয়া যায়। গল্পগুলিতে তাঁর বর্ণনাকুশলতা অতি সহজবোধ্য কিন্তু তাতে অবিস্মরণীয় অনুভূতির সহজ প্রকাশ ঘটে।
১৭. গল্পগুলিতে ঋজুতা , সুগভীর দার্শনিক উপলব্ধি , রহস্যময়তার বিপুল বিস্তার , ভ্রমণ সাহিত্যের নানান উপাদান ও উপকরণ , বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা তথা রোমাঞ্চকর অনুভূতি এবং গবেষণামূলক বিশ্লেষণী মনোভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়।
১৮. সর্বপরি বলা যায় যে , প্রফেসর শঙ্কুর গল্পগুলি আজও সকল প্রজন্মের পাঠকদের নিকট সমান আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য। এই গল্পগুলি কিশোর মনকে কল্পনার ডানা মেলে কাল্পনিক বিজ্ঞানের জগতে উড়তে সাহায্য করে এবং তার সাথে সাথে পৃথিবী এবং এই অনন্ত মহাবিশ্বের বিবিধ রহস্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে ভাবতে বাধ্য করে।
সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট সাহিত্য চরিত্র প্রফেসর শঙ্কুকে কোনো নির্দিষ্ট জাতি , ধর্ম , বর্ণ বা সমাজের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। যদিও তিনি আপাদমস্তক বাঙালি কিন্তু তবুও একথা বলা যায় যে , প্রফেসর শঙ্কু একজন বিশ্ব নাগরিক। বিশ্ব মননের নৈতিক তাৎপর্যগুলি প্রফেসর শঙ্কুর গল্পগুলিতে লক্ষ্য করা যায়। গল্পগুলির অভ্যন্তরীণ দর্শন , ভবিষ্যৎ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের উৎসাহ প্রদান - ইত্যাদি পাঠক মনকে পূর্ণ অভিজ্ঞতার আস্বাদনে পুলকিত করে তোলে।
পাঠের সীমাবদ্ধতা :-
প্রকল্পটি রূপায়নকালে এবং রূপায়ণের পর যে সকল ত্রুটি - বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে সেগুলি হল -
১. প্রকল্পটিতে শঙ্কুর প্রতিটি গল্পের সংকিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হয়নি।
২. সাহিত্যিক হিসেবে সত্যজিৎ রায় নিজেই একটি বিরাট জগৎ। প্রকল্প রচনার সংক্ষিপ্ত পরিসরে সেই বিরাট জগৎকে উদ্ভাসিত করা সম্ভব হয়নি।
৩. প্রফেসর শঙ্কুর গল্পগুলি বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কতটা প্রভাবিত করেছে - সে বিষয়ে আলোচনা অতি সংক্ষিপ্ত।
গ্রন্থপঞ্জি :-
যে সকল গ্রন্থগুলি থেকে প্রকল্পটি রচনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলি হল -
১. বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস - দ্বাদশ শ্রেণি - পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
২. প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি - সত্যজিৎ রায় - নবম শ্রেণি - পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
0 comments