উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রকল্প : বিভিন্ন ধরণের জাদুঘর :- hs history project
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রকল্প : বিভিন্ন ধরণের জাদুঘর :-
বিভিন্ন ধরণের জাদুঘর / জাদুঘরের প্রকারভেদ।
ভূমিকা : -
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আজ অসংখ্য জাদুঘরের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন জাদুঘর বিভিন্ন ধরনের, যেমন—শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের সামগ্রী সংরক্ষণ করে , সেসব বিষয়ের প্রতি আলােকপাত করে। আবার কোনাে কোনাে জাদুঘর নির্দিষ্ট কোনাে একটি বা গুটিকয় বিষয়ের সামগ্রী সংগ্রহ করে এবং সেগুলির প্রতি আলােকপাত করে। প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে জাদুঘরে সংরক্ষিত বস্তুগুলির ভিত্তিতে এসব জাদঘরকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা যায়। অবশ্য কোনাে একটি জাদুঘর একই সঙ্গে একাধিক শ্রেণিবিভাগের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
বর্তমান প্রকল্পটিতে বিভিন্ন প্রকারের জাদুঘর সম্পর্কে আলােচনা করা হল এবং তার সাথে সাথে প্রতিটি জাদুঘরের বিশেষ বৈশিষ্ট ও তাদের নিদর্শন ও উদাহরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
যে সকল উদ্দেশ্যগুলিকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রচনা করা হয়েছে , সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
১. পৃথিবীর বিভিন্ন ধরণের জাদুঘর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।
২. জাদুঘরগুলির বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্টগুলি সম্পর্কে অবগত হওয়া।
৩. বিভিন্ন ধরণের জাদুঘরগুলিতে কোন ধরণের নিদর্শন সংরক্ষিত থাকে - সে সম্পর্কে আলোচনা করা।
৪. বিভিন্ন প্রকার জাদুঘরগুলি কিভাবে ঐতিহাসিক উপাদান হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ - সে বিষয়ে আলোচনা করা।
৫. ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে জাদুঘরগুলির ভূমিকা পর্যালোচনা করা।
৬. সর্বোপরি বিভিন্ন ধরণের জাদুঘর সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতুহলী করে তোলা।
প্রকল্পটির গুরুত্ব :-
যে সকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে সেগুলি হল -
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন ধরণের জাদুঘর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে প্রকল্পটি কার্যকর।
২. প্রতিটি ধরণের জাদুঘর ঠিক কোন কোন ধরণের নিদর্শন সংরক্ষণ করে - তা এই প্রকল্পটি থেকে সহজেই জানা যায়।
৩. জাদুঘর কিভাবে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে - তা জানতে প্রকল্পটি উপযোগী।
৪. ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে জাদুঘরের ভূমিকার মূল্যায়ন করতে প্রকল্পটি বিশেষ সহায়ক হতে পারে।
৫. সর্বোপরি , ইতিহাস ও জাদুঘর বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কৌতুহলী করে তুলতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকল্পের জন্য তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা - র নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করা হয়। যে সকল গ্রন্থ প্রকল্পটি রচনার কাজে বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে , তার মধ্যে অন্যতম হল - ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস - জীবন মুখোপাধ্যায় ও সুভাষ বিশ্বাস। তথ্য সংগ্রহে সময় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ধরণের জাদুঘর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ধরণের জাদুঘরের বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট ও তাদের নিদর্শন সম্পর্কেও তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। জাদুঘর গুলির বর্ণনা ছাড়াও ইতিহাসের উপাদান হিসাবে জাদুঘরের ভূমিকা , অতীত ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে জাদুঘর কিভাবে ভূমিকা পালন করে সে সকল বিষয়গুলি সম্পর্কেও তথ্য সংগৃহীত হয়েছে ও প্রকল্পটিতে সংযোজিত হয়েছে।
প্রকল্পের বর্ণনা : তথ্য বিশ্লেষণ : -
জাদুঘরের প্রকারভেদ :-
১. বিশ্বকোশ জাদুঘর : - বিশ্বকোশ জাদুঘর (Encyclopedic Museums) বলতে সুবৃহৎ, বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের জাতীয় জাদুঘরকে বােঝায় ; যেখানে বিপুল সংখ্যক দর্শকের প্রবেশের সুযােগ থাকে এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিষয়ের বিপুল ও অসাধারণ সংগ্রহ থাকে। উদাহরণ : বিশ্বকোশ জাদুঘরের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল ব্রিটিশ মিউজিয়াম। ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে সর্বজনীন জাদুঘর’ (universal museum) বলা হয়।
২. প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর : প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে (Archaeology Museums) কেবলমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করা হয়। এই ধরনের জাদুঘরকে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়, যথা— খােলা জায়গায় ও অট্টালিকার অভ্যন্তরে। প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের উদাহরণ হল ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম। এখানে বিভিন্ন প্রাচীন নৌযানের সংগ্রহ রয়েছে।
৩. শিল্প জাদুঘর: শিল্প জাদুঘরে (Art Museums) বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এসব শিল্পকলা মৃৎশিল্প, আসবাবপত্র, ধাতুর ফলকে খােদিত শিল্প, ভাস্কর্য, চিত্র, নকশা, শিল্প-সংক্রান্ত পুস্তক, প্রাচীন মুদ্রণ প্রভৃতি নানা ধরনের হতে পারে। উদাহরণ : ১৬৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসমােলিয়ান জাদুঘর (Ashmolean Museum) হল পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিল্প জাদুঘরের উদাহরণ।
৪. ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর : কোনাে প্রাচীন ঐতিহাসিক গৃহকে কেন্দ্র করে যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়, তা ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর (Historic House Museums) নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক গৃহ বলতে কোনাে বিশেষ স্থাপত্যরীতি সমন্বিত অট্টালিকা, কোনাে খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্মস্থান বা কোনাে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ছিল এমন বাড়ি হতে পারে। উদাহরণ : মুরশিদাবাদ জেলার লালবাগে অবস্থিত হাজার দুয়ারি একটি ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘরের উদাহরণ।
৫. জীবন্ত জাদুঘর : ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীনযুগের মানুষের জীবনযাত্রা অনুকরণ করে যেসব জাদুঘরে দর্শকদের দেখানাে হয় সেগুলিকে জীবন্ত জাদুঘর (Living Museums) বলা হয়। এই ধরনের জাদুঘরে প্রাচীন সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, ঐতিহাসিক সময়কাল ইত্যাদি কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করে দর্শকদের দেখানাে হয়। উদাহরণ ; প্রথম জীবন্ত জাদুঘর হল ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে সুইডেনের স্টকহােমের কাছে আর্থার হ্যাজেলিয়াস (Arthur Hazelius) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।
৬. সমুদ্র জাদুঘর : সমুদ্র জাদুঘর (Maritime Museums) হল প্রাচীনকালের সমুদ্রজীবন সংক্রান্ত সংগ্রহশালা। এই ধরনের জাদুঘরে সমুদ্র সংক্রান্ত ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রত্নতত্ত্ব প্রভৃতি বিশেষ করে জাহাজ সংক্রান্ত নিদর্শন প্রদর্শন করা হয়। উদাহরণ : ভার্জিনিয়ার মেরিনার্স মিউজিয়াম, সান ফ্রান্সিসকো মেরিটাইম মিউজিয়াম।
৭. সামরিক জাদুঘর : সামরিক জাদুঘরে (Military Museums) কোনাে দেশের সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধসংক্রান্ত নানা নিদর্শন সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। সাধারণত কোনাে দেশের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সেদেশে এ ধরনের জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। উদাহরণ : দ্য ন্যাশনাল ফাস্ট ওয়ার্ল্ড ওয়ার মিউজিয়াম’, কানাডিয়ান ওয়ার মিউজিয়াম’ প্রভৃতি হল সামরিক জাদুঘরের উদাহরণ।
৮. প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর : প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর (Natural History Museums) প্রাকৃতিক পৃথিবীর বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে থাকে। এই ধরনের জাদুঘরগুলি বিশ্বপ্রকৃতি এবং সংস্কৃতির ওপর বেশি আলােকপাত করে। উদাহরণ : লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, অক্সফোর্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভারসিটি মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি।
৯. বিজ্ঞান জাদুঘর : বিজ্ঞান জাদুঘর (Science Museums) বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, বিস্ময় প্রভৃতি বিষয়ের নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে থাকে। বিজ্ঞানের জাদুঘরগুলি অধিকাংশ সময়ই একটি গম্বুজের চতুর্দিকে বৃত্তাকার অট্টালিকায় গড়ে ওঠে। উদাহরণ : শিকাগাের ‘মিউজিয়াম অব সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ হল একটি বিজ্ঞান জাদুঘর।
১০. খোলা আকাশের নীচে জাদুঘর : অতীতের কোনাে প্রাচীন অট্টালিকার অনুকরণে খােলা জায়গায় যখন পরবর্তীকালে নতুন করে অট্টালিকা নির্মাণ করে তা দর্শকদের প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে খুলে দেওয়া হয় তখন তাকে খােলা আকাশের নীচে জাদুঘর (Open-air Museums) বলা হয়। উদাহরণ : নরওয়ের অসলাে শহরের কাছে নির্মিত (১৮৮১ খ্রি.) দ্বিতীয় অস্কারের জাদুঘরটি হল খােলা আকাশের নীচে স্থাপিত প্রথম জাদুঘর।
১১. চলমান জাদুঘর : যখন কোনাে চলমান যানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ঐতিহাসিক বা দুর্লভ নিদর্শনসমূহ দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করা হয় তখন তাকে চলমান জাদুঘর (Mobile Museums) বলে।
উদাহরণ: ২০১১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবি রবীন্দ ঠাকরের জন্মের সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর জীবনকাহিনিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় রেল এক ট্রেনে জাদুঘর তৈরি করে।
১২. ক্ষণস্থায়ী জাদুঘর : ক্ষণস্থায়ী জাদুঘর (Pop-up Museums) বলতে অস্থায়ী প্রেক্ষাপটে অল্প সময়ের জন্য নির্মিত জাদুঘরকে বোঝায়। এই ধরনের জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রবণতা ১৯৯০-এর দশকে প্রসার লাভ করে। মানুষের সঙ্গে নিবিড় যােগাযােগ গড়ে তােলার উদ্দেশ্যে স্থায়ী জাদুঘরগুলিই অনেক সময় বিভিন্ন স্থানে ক্ষণস্থায়ী জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। উদাহরণ : ক্ষণস্থায়ী জাদুঘরের উদাহরণ হল মিচিগানের মিউজিয়াম অব নিউ আর্ট’ (১৯৯৬ খ্রি.) ।
১৩. বিশেষ জাদুঘর : কিছু কিছু জাদুঘর বিভিন্ন ধরনের পৃথক এবং বিশেষ বিষয়ের নিদর্শন সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে থাকে। এই ধরনের জাদুঘর বিশেষ জাদুঘর (Specialized Mueums) নামে পরিচিত, যেমন— উদাহরণ : সুরকারদের জীবন ও কর্মের ওপর আলােকপাত করে ক্লীভল্যান্ডের রক অ্যান্ড রােল হল অব ফেম’ এবং খ্যাতনামা ব্যক্তিদের মােমের মূর্তি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে লন্ডনের মাদাম তুসাের জাদুঘর।
১৪. নেট জাদুঘর : সাম্প্রতিককালে দেখা যায় যে, বিভিন্ন জাদুঘর বা অন্য কোনাে সংস্থা তাদের বিভিন্ন নিদর্শনগুলির ছবি তুলে সেগুলি ইন্টারনেটে প্রকাশ করছে। দর্শকরা প্রত্যক্ষভাবে বাস্তব নিদর্শনগুলি না দেখতে পেলেও জাদুঘরের ওয়েবসাইটগুলি দেখে তাদের চাহিদা অনেকটাই মেটাতে পারছেন। এই ধরনের জাদুঘরকে নেট জাদুঘর (Net Museums) বা তাত্ত্বিক জাদুঘর (Virtual Museums) বলা হয়। উদাহরণ : ভারচুয়াল মিউজিয়াম অব কানাডা’।
১৫. জৈব পার্ক ও বৃক্ষের বাগান : জৈব পার্ক অর্থাৎ চিড়িয়াখানা এবং বৃক্ষের বাগান (Zoological Parks and Botanic Gardens) এক ধরনের জাদুঘর বলে বিবেচিত হয়। কেননা, জাদুঘরের মতাে এগুলিরও লক্ষ্য হল বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, শিক্ষাদান প্রভৃতি। উদাহরণ : কলকাতা চিড়িয়াখানা’ প্রভৃতি।
১৬. স্থানীয় জাদুঘর : স্থানীয় এলাকা থেকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন সংগ্রহ করে ছােটো শহর।
বা গ্রামাঞলে জাদুঘর গড়ে উঠতে দেখা যায়। এগুলি স্থানীয় জাদুঘর নামে পরিচিত। উদাহরণ : আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রিমন্ট শহরে এরূপ জাদুঘর রয়েছে।
১৭. ব্যক্তিগত জাদুঘর : বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি বা পরিবার নিজস্ব উৎসাহ ও ব্যয়ে ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ করে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলি ব্যক্তিগত জাদুঘর নামে পরিচিত। উদাহরণ : ব্যক্তিগত জাদুঘরের একটি উদাহরণ হল নদীয়া জেলার কৃয়নগরে মােহিত রায়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘর।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। যেমন -
প্রথমতঃ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ধরণের জাদুঘরের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। একেক ধরণের জাদুঘর একেক ধরণের উদ্দেশ্য নিয়ে নির্মিত হয়।
দ্বিতীয়তঃ যে উদ্দেশেই প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন , জাদুঘরগুলিকে ইতিহাস ও পুরাবস্তুর সংরক্ষণে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। ঐতিহাসিক লিপি , প্রাচীন মুদ্রা , শিল্পকর্ম - ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের প্রত্নবস্তুর সংরক্ষণ করা হল জাদুঘরের প্রধান কাজ।
তৃতীয়তঃ জাদুঘরগুলি শুধুমাত্র প্রত্নবস্তু সংরক্ষণ করেই নিজের ভূমিকা সমাপ্ত করে না। প্রত্নবস্তুগুলিকে সংরক্ষণের সাথে সাথে নাগরিকদের উদ্দেশ্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করাও জাদুঘরের প্রধান কাজ।
চতুর্থতঃ একই প্রত্নবস্তুকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জাদুঘর ওই প্রত্নবস্তুটির প্রতিকৃতি বা মডেল নির্মাণ করে।
পঞ্চমতঃ প্রতিটি জাদুঘর ইতিহাসের উপাদান হিসাবে , সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসাবে তার ভূমিকা পালন করে।
ষষ্ঠতঃ এইভাবে বিভিন্ন উপায়ে জাদুঘর সাধারণ মানুষের মধ্যে ঐতিহাসিক জ্ঞানের প্রসার ঘটায়।
সপ্তমতঃ জাদুঘর শুধুমাত্র যে ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুগুলিই সংরক্ষণ করে এমনটা নয় ; তার সাথে সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশ , মানব সংস্কৃতি , মহান ঘটনা , গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা , খ্যাতনামা ব্যক্তি - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়েও সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ করে থাকে।
অষ্টমতঃ অতীত ও বর্তমানের সেতুবন্ধক রূপে জাদুঘর অতীতের সভ্যতার জ্ঞান প্রদান করে বর্তমান সভ্যতার গঠনে ও তার প্রসারে সহায়তা করে।
উপসংহার : -
পরিশেষে বলা যায় যে , বিভিন্ন বিষয়ের বিভিন্ন জাদুঘর মানুষের জ্ঞানের আঙ্গিক ও চেতনাকে পরিপূর্ণ করে তোলে। মানব জাতিকে তার অতীত , সমাজ ও সংস্কৃতির পরিচয় প্রদান করে মানব সমাজকে গড়ে উঠতে সাহায্য করে ও ইতিহাসের উপাদান হিসাবে ইতিহাস রচনা করতে সাহায্য করে।
গ্রন্থপঞ্জি :-
যে সকল গ্রন্থ থেকে প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগৃহীত হয়েছে সেগুলি হল -
১. ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস - জীবন মুখোপাধ্যায় ও সুভাষ বিশ্বাস।
২. ভারত ইতিহাসের সন্ধানে - দিলীপ কুমার গঙ্গোপাধ্যায়।
৩. Helps to the study of WBCS optional HISTORY - Oriental Publication .
1 comments
Hhkuhnuhh4
ReplyDelete