h.s. sociology project ব্যক্তিত্ব গঠনে বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা :-

by - December 08, 2021

H.S. Sociology project 

Class 11 Sociology Project 

ব্যক্তিত্ব গঠনে বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা :- 




ভূমিকা :- 

 প্রাকৃতিক ও সামাজিক—উভয় প্রকার পরিবেশই মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠনে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। এটিকে বলা হয় ব্যক্তিত্বের নির্ণায়ক। প্রাকৃতিক পরিবেশ একদিকে যেমন ব্যক্তিত্বের কিছুকিছু দিককে সীমাবদ্ধ করে, তেমন কিছুকিছু দিকের বিকাশও ঘটিয়ে থাকে। | ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের গঠন ও তার প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভূমিকা আলােচনা করলে দেখা যায় যে, সাধারণত উত্তপ্ত ও আর্দ্র ভৌগােলিক আবহাওয়ায় বসবাসকারী লােকজন দুর্বল ও ভীরুপ্রকৃতির হয়ে থাকে। কারণ উত্তাপ ব্যক্তিকে অল্পতেই ক্লান্ত করে তােলে। আবার অতিরিক্ত শীত মানুষের কর্মকাণ্ডের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। অতএব, নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়াই মানুষের কর্মক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার জন্য উপযুক্ত। উষ্ণতার পাশাপাশি ভূমিরূপের গঠনও ব্যক্তিত্ব গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত দেখা গেছে। সমতলে বসবাসকারী ব্যক্তিগণ অপেক্ষাকৃত বেশি শিক্ষিত হন, তাদের ললিতকলাসমূহের বিকাশ অগ্রগতি লাভ। করে, তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত প্রকৃতির হয়।



আবার , প্রত্যেক ব্যক্তিই তার কিছুকিছু জৈবিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য তার পিতা-মাতার কাছ থেকে পেয়ে থাকে। এগুলিকে আমরা বলি বংশগতি সূত্রে পাওয়া। অর্থাৎ পিতা-মাতার কাছ থেকে তাদের সন্তান-সন্ততিতে বংশগত বৈশিষ্ট্যসমূহের সঞ্চারণকে বলা হয় বংশগতি বা Heredity। অস্ট্রিয়াবাসী ধর্মযাজক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে বংশগতির মূল সূত্রগুলি আবিষ্কার করেন। তার এই সূত্রগুলিকে মেণ্ডেলিজ বা মেণ্ডেলতত্ত্ব বলা হয়। মেণ্ডেলের মতে, মানুষের যাবতীয় বৈশিষ্ট্যাদি কেবলমাত্র একজোড়া নির্ধারকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই নির্ধারক হল ‘জিন’ (জিন কথাটি প্রথম ১৯০৬ সালে জোহানসেন ব্যবহার করেন। প্রত্যেক কোশের নিউক্লিয়াসে যে ক্রোমােজোম থাকে, সেটাই হল জীনের বাহক। এই জিনগুলিই শিশুর দৈহিক ও মানসিক প্রকৃতি নির্ধারণ করে।

প্রকল্পটি রচনার উদ্দেশ্য :- 

যে সকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হয়েছে সেগুলি হল - 
১. ব্যক্তিত্বের ওপর পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে জানা। 
২. বংশগতি কাকে বলে - সে সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা। 
৩. ব্যক্তিত্বের ওপর বংশগতির প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা। 
৪. ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবেশ ও বংশগতির প্রভাব সম্পর্কে তুলনামূলক আলোচনা করা। 
৫. সর্বপরি , '' ব্যক্তিত্বের ওপর পরিবেশ ও বংশগতির প্রভাব '' বিষয়টির প্রতি শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তোলা। 

প্রকল্পটির গুরুত্ব :- 

যে সকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে , সেগুলি হল - 
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের ওপর পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। 
২. ব্যক্তিত্বের ওপর বংশগতির প্রভাব সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকর। 
৩. ব্যক্তিত্বের ওপর বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাবের তুলনামূলক আলোচনার ফলে প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সমাজতত্ত্বের শিক্ষার্থীদের নিকট বিবেচিত হতে পারে। 
৪. সর্বপরি , ব্যক্তিত্বের ওপর পরিবেশ ও বংশগতির প্রভাব সম্পর্কিত বিষয়টির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তোলা সম্ভব। 



প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহের জন্য বিদ্যালয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করা হয়। যে সকল প্রকল্পটির জন্য তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সেই গ্রন্থটি হল - উচ্চমাধ্যমিক সমাজতত্ত্ব ( একাদশ ) - অরুনাংশু প্রধান। 
তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা - র নির্দেশমত ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবেশ ও বংশগতি উভয় উপাদানগুলির ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। তার সাথে সাথে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টিকে আরও যুক্তিনির্ভর ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। 

তথ্য বিশ্লেষণ :- 

ব্যক্তিত্ব গঠনে কার ভূমিকা বেশি—এটি সমাজতত্ত্বে একটি বির্তকমূলক আলােচনা। উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হলেও আজও এর উত্তর মেলেনি। আসলে ব্যক্তিত্ব গঠনে এই দুইয়ের ভূমিকা আছে। একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে থাকে। সেই কারণে এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর প্রদানও খুব সহজ নয়।
একাধিক গবেষণায় দেখানাে হয়েছে যে, বংশগতি ব্যক্তিত্ব গঠনে অধিক ভূমিকা পালন করে। জিউক এডওয়ার্ড-কাল্লিকাক পরিবার নিয়ে সমীক্ষা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে I.Q. Test  - প্রভৃতির ফলগুলি দেখলে স্বাভাবিক ভাবেই মনে হয় যে, বংশগতিই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ব্যক্তিত্ব গঠনে বংশগতির ভূমিকা সম্পর্কিত পরীক্ষা ও সে সম্পর্কিত মতামতগুলিকে নিম্নলিখিতভাবে সমালােচনা করা যেতে পারে।

১. বংশগতি দ্বারা দৈহিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নির্ণীত হলে দেখা যেত যে, কোনাে ব্যক্তির মাতা - পিতা  সুঠামদেহী, সুদর্শন হলেই তার সন্তানও অনুরূপ হবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। কোনাে সন্তান যদি অস্বাস্থ্যকর ও প্রতিকূল পরিবেশে মানুষ হয়, তাহলে তার উক্ত বৈশিষ্ট্যটি পুরােপুরিভাবে ফুটে উঠবে, এটা আশা করা যায় না।

২. ব্যক্তিত্ব গঠনে সাংস্কৃতিক পরিবেশেরও অবদান আছে। ব্যক্তি সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সংস্কৃতির উপাদানগুলিকে আয়ত্ত করে ব্যক্তিত্ববান হয়ে ওঠে। কারুর ঠিকমতাে সামাজিকীকরণ না হলে তার পিতা যতই শিক্ষিত বা বুদ্ধিধারী হন না কেন, তার সন্তানের ওই গুণগুলি প্রকাশ পায় না। 

৩. ব্যক্তির সকল মানসিক বৈশিষ্ট্যাদি বংশগতি সূত্রে প্রাপ্ত নয়। যদি তাই হত, তাহলে ভালাে ব্যক্তির সন্তান ভালােই হত, অপরাধীর সন্তান অপরাধীই হত। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না, আসলে ব্যক্তির মানসিক বৈশিষ্ট্যাদি , শিক্ষাগ্রহণ, সামাজিক পরিবেশ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

৪. জিউক পরিবারের উত্তরসুরিদের সকলের খুঁটিনাটি জানা সম্ভব হয়েছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাছাড়া আমরা জানি বংশগতি সূত্রে পিতা-মাতার উভয়েরই গুণাগুণ শিশুর মধ্যে সঞ্চারিত হয়। জিউক পরিবারের প্রথম পিতা-মাতার গুণাগুণ পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হলেও, তার পরবর্তী প্রজন্মগুলিতে প্রবাহিত হয়েছিল, এটা মানা যায় না। কারণ ওই পরিবারের পরবর্তী পুরুষেরা অন্য ভালাে পরিবারের মহিলাদের বিয়ে করে থাকলে তখন সেই ভালাে মায়ের গুণগুলিই পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হওয়ার কথা। ফলে ওই পরিবারের উত্তরপুরুষদিগের প্রত্যেকেই মূল পূর্বপুরুষের দোষগুলিই বয়ে চলেছে, পরবর্তী পুরুষেরা যাদের কে বিয়ে করেছিল, সেই মায়েদের গুণগুলির কোনাে প্রভাব ছিল না, এটা ঠিক নয়।।

৫. অনুরূপ ভাবে বলা যায়, এডওয়ার্ড পরিবারের উত্তরসূরিদের মধ্যে সবাই মূল পূর্ব পুরুষের গুণগুলিই বয়ে চলেছিল, তার মাঝে অন্য কোনাে পরিবারের মহিলার দোষাবলি কাজ করেনি, এটা বলা যায় না।

৬. বুদ্ধাঙ্ক পরীক্ষার ক্ষেত্রে বলা যায়, যে সকল সম্রান্ত, শিক্ষিত ব্যক্তিদের সন্তানদের বুদ্ধাঙ্ক অন্যদের তুলনায় বেশি বলা হয়েছে—তাদের ওই বৃদ্ধাঙ্ক বেশি হওয়ার কারণ শুধুমাত্র বংশগতি নয়, তারা পড়াশােনার উপযুক্ত পরিবেশ, সুযােগ-সুবিধা পেয়েছে, যেটা হয়ত অন্যরা পায়নি। 

৭. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ ও নিগ্রোদের মানসিক বয়স নির্ণয়ের পরীক্ষাটি কতখানি নিরপেক্ষ ছিল বলা মুশকিল, কারণ ওই দেশের কৃষাঙ্গ বিদ্বেষের কথা সকলেরই জানা।

৮. মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে তােলার ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ অভিজ্ঞতা, মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ, ব্যক্তি যাদের সাথে আন্তঃক্রিয়ায় যুক্ত, পরিবার, শিক্ষাব্যবস্থা প্রভৃতি অনেক বিষয় দায়ী। এটি শুধুমাত্র বংশগতি নির্ণীত নয়। 

৯. ব্যক্তির দৈহিক বৈশিষ্ট্য অনেকখানি বংশগতি সূত্রে প্রাপ্ত হলেও তার সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলি বিকাশে ও প্রকাশে বংশগতির খুব বেশি ভূমিকা নেই। সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলি সামাজিক পরিবেশেই উন্মােচিত হয়।



উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। আমরা বংশগতি সূত্রে যা পাই তা আমাদের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কালক্রমে শিশু বড়াে হওয়ার সাথে সাথে এগুলি বিকশিত হয়। সামাজিক পরিবেশের ক্ষেত্ৰতেই তা জন্ম নেয়। বংশগতি হল বীজ, পরিবেশ হল সেই বীজের অঙ্কুরােদগমের জন্য প্রয়ােজনীয় জল, উষ্মতা, বাতাস। অর্থাৎ বংশগতি হল অভ্যন্তরীণ প্রাণশক্তি এবং পরিবেশ হল তার বাহ্যিক শর্তাদি। উল্লেখ্য, সমাজ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় যে বালক-বালিকারা পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারেনি, তাদের হয়ত বংশগতি সূত্রে পাওয়া কিছু গুণাগুণ ছিল কিন্তু তা উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। বলা যায়, ব্যক্তিত্ব পুরােপুরি জন্মসূত্রেই বা বংশগতিসূত্রে নির্দিষ্ট নয়। এটি ব্যক্তির নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব লাভের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে, যে সম্ভাবনা পরবর্তীকালে বাস্তবায়িত হতেও পারে, নাও পারে। | পরিবেশ ও বংশগতির মধ্যে কার ভূমিকা বেশি তা নির্ধারণ করার মতাে কোনাে পদ্ধতি নেই। এটুকু বলা যায়, ব্যক্তিত্ব গঠনে দুটিরই ভূমিকা আছে। একটি অন্যটির পরিপূরক। বংশগতি সূত্রে প্রাপ্ত সম্ভাবনাদি পরিবেশের হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়, আবার এই সম্ভাবনা না থাকলে শুধুমাত্র পরিবেশও সফল হয় না। তাই বলা হয় Heredity determines what we can do, and environment what we do do. INGE 10,- It is not heredity or environment, but heredity and environment.

উপসংহার :- 

বংশগতি ও পরিবেশ উভয়েই প্রয়ােজনীয় ও পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। মূল কথাটি হল বংশগতি বা পরিবেশ কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ - তা নয়, তারা কিভাবে আমাদের ব্যক্তিত্বকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে সেটাই মূল আলােচ্য হওয়া উচিত।
সবশেষে বলা চলে, পরিবেশ ও বংশগতির মধ্যেকার ভূমিকা বেশি তা নির্ধারণ করার মতাে সর্বজনগ্রাহ্য কোনাে পদ্ধতি নেই। এটুকু বলা যায়, ব্যক্তিত্ব গঠনে দুটিরই ভূমিকা আছে। একটি অন্যটির পরিপূরক। বংশগতিসূত্রে প্রাপ্ত সম্ভাবনাদি পরিবেশের হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়, আবার এই সম্ভাবনা না থাকলে শুধুমাত্র পরিবেশও সফল হয় না। তাই ব্যক্তিত্ব = বংশগতি x পরিবেশ x সময়।

গ্রন্থপঞ্জি :- 

যে সকল গ্রন্থ প্রকল্পটি রচনা করতে সহায়ক হয়েছে , সেগুলি হল - 
১. উচ্চমাধ্যমিক সমাজতত্ব ( একাদশ ) - অরুনাংশু প্রধান। 
২. বি এ প্রারম্ভিক সমাজতত্ত্ব - বাণী প্রকাশন। 
৩. সমাজতত্ত্ব পরিচয় - অনাদিকুমার মহাপাত্র।  


You May Also Like

0 comments