বাংলা প্রকল্প : চন্দ্রনাথ গল্পের নাট্যরূপ।
বাংলা প্রকল্প : চন্দ্রনাথ গল্পের নাট্যরূপ।
চন্দ্রনাথ গল্পের নাট্যরূপ।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প : গল্পের নাট্যরূপ।
বাংলা গল্পের নাট্যরূপ : চন্দ্রনাথ।
নিম্নলিখিত বাংলা প্রকল্পকর্মটি উচ্চ্যমাধমিক শিক্ষার্থীদের ( একাদশ ও দ্বাদশ ) জন্য ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা SEC বিষয়ের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। মূল গল্পের লেখক - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। গল্পে বর্ণিত চরিত্র ও ঘটনাকে অপরিবর্তিত রাখা হলেও নাট্যরূপ প্রদানের স্বার্থে কিছু কিছু জায়গায় সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে।
চন্দ্রনাথ গল্পের নাট্যরূপ :-
চরিত্রবর্গ :-
নরেশ বা নরু - ১৫-১৬ বছর বয়সের একজন ছাত্র।
হারু - ১৫-১৬ বছর বয়সের একজন ছাত্র।
চন্দ্রনাথ - ১৫-১৬ বছর বয়সের একজন ছাত্র।
নিশানাথবাবু - চন্দ্রনাথের দাদা। চন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর বয়সের পার্থক্য অনেকটাই।
হেডমাস্টারমশাই - বয়স্ক ব্যক্তি।
মঞ্চসজ্জা : মঞ্চের মধ্যে একটি সাধারণ টেবিল ও দুটি সাধারণ চেয়ার। খুব মৃদু আলো। পর্দা উঠতেই দেখা যাবে চন্দ্রনাথ টেবিলের মধ্যে ঝুঁকে টেবিলে লেখালিখিতে ব্যাস্ত। নরুর প্রবেশ।
নরু : ( মঞ্চে প্রবেশ করার পর ) চন্দ্রনাথ .................. চন্দ্রনাথ ......................
[ চন্দ্রনাথ কোনো উত্তর করল না বা নরুর দিকে ফিরেও তাকাল না। ]
নরু : ( টেবিলের একেবারে কাছাকাছি এগিয়ে এসে ) - কী লিখছিস ?
[ নরু বিপরীত চেয়ারটি টেনে বসে পড়ল। চন্দ্রনাথ নরুর দিকে না তাকিয়ে নিজের হাতের কাগজগুলি দেখতে দেখতে নরুর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। ]
চন্দ্রনাথ : ইউনিভার্সিটি এগ্জামিনের রেজাল্ট তৈরী করছি। কে কত নম্বর পাবে তা'ই দেখছি।
নরু : ( বিস্মিত হয়ে ) ওমা , তাই নাকি ! তা কে কত পেলো ?
চন্দ্রনাথ : ( লিখতে থাকা একটি কাগজ নরুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চন্দ্রনাথ বলতে শুরু করলো ) আমার যদি সাড়ে - পাঁচশো বা তার বেশি ওঠে , তবে স্কুলের এই রেজাল্ট হবে - মানে দুটো ফেল , অমিয় আর শ্যামা ; তা ছাড়া সব পাশ হবে। আর আমার যদি পাঁচশো - পঁচিশের নীচে হয় , তবে দশটা ফেল।
নরু : ( আগ্রহের সঙ্গে ) - আর আমি !
চন্দ্রনাথ : ( দৃঢ়ভাবে ) - তুই তাহলে থার্ড ডিভিশনে যাবি।
নরু ( প্রচন্ড রেগে গিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে যায় ) : আমি থার্ড ডিভিশনে যাবো মানে ! .................. বড্ড দাম্ভিক হয়েছিস তুই .................... আমি থার্ড ডিভিশনে যাবো আর তুই ফার্স্ট হবি ! .........ফেল করবি তুই। ........ ফেল .............হ্যাঁ ফেল। ( একটু থেমে ) মানছি তুই জীবনে কখনো সেকেন্ড হোসনি , সবসময় ফার্স্ট হয়েছিস , তার মানে এই না যে তুই যা যা বলবি সব ঠিক হবে আর আমি থার্ড ডিভিশনে যাবো ................... কক্ষনো না।
চন্দ্রনাথ ( দৃঢ় ও শান্ত কণ্ঠে , একটু হেসে ) : তুই বোধ হয় রাগ করছিস ! কিন্তু অনুপাতের আঙ্কিক নিয়মে যার মূল্য যতবার কষে দেখবে , একই হবে। একের মূল্য কমে , তো সকলের নম্বর কমবে। দিস ইজ ম্যাথমেটিকস।
[ এইসময় হঠাৎ করে চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথবাবু মঞ্চে প্রবেশ করলেন। তাঁর হাতে একটি চিঠি। তাঁর শরীরি ভাষায় প্রচন্ড ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। তিনি সরাসরি চন্দ্রনাথের দিকে এগিয়ে গেলেন। ]
নিশানাথবাবু : ( হাতের চিঠিখানা চন্দ্রনাথকে ধরিয়ে দিয়ে ) কী এটা ?
চন্দ্রনাথ : ( চিঠিটি হাতে নিয়ে এক মুহূর্ত স্তব্ধ থাকার পর ) - আমি সেকেন্ড প্রাইজ রিফিউজ করেছি।
নিশানাথবাবু : কারণ ?
চন্দ্রনাথ : কারণ , সেকেন্ড প্রাইজ নেওয়া আমি বিনিথ মাই ডিগনিটি বলে মনে করি।
নিশানাথবাবু : ( আরো বেশি রেগে গিয়ে ) - কথাটা বলতে তোমার লজ্জায় বাধলো না ? ডিগনিটি ! একে তুমি ডিগনিটি বল ? তোমার অক্ষমতার অপরাধ !
চন্দ্রনাথ ( নিশানাথবাবুকে বাধা দিয়ে ) : তুমি জান না দাদা।
নিশানাথবাবু : কী জানি না ? জানবার এতে আছে কী ?
চন্দ্রনাথ ( ধীর ও দৃঢ় কণ্ঠে ) : স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো ফার্স্ট হয়েছে , সে আমারই সাহায্যে হয়েছে। আর ওর যে প্রাইভেট মাস্টার - স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার - তিনি , কী বলব , প্রশ্নপত্র ছাত্রটির কাছে গোপন রাখেননি। তারও ওপর উত্তর বিচারের সময় ইচ্ছাকৃত ভুলও করেছেন তিনি এবং আরও দু - একজন।
[ চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথবাবু হতবাক ও বিমূঢ় হয়ে চন্দ্রনাথের মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। চন্দ্রনাথ বলে চললো ......... ]
চন্দ্রনাথ : অংকের পরীক্ষার দিন সে আমার মিনতি করলে , আমি তাকে তিনটে অঙ্ক আমার খাতা থেকে টুকতে দিলাম। মাস্টার পূর্বে বলে দেওয়া সত্ত্বেও সে সময় তার মনে ছিল না।
নিশানাথবাবু ( বজ্রগম্ভীর কণ্ঠে ) : তোমার সঙ্গে তর্ক করে ফল নেই। তুমি ওই পত্র প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমা চেয়ে হেডমাস্টার মহাশয়কে পত্র লেখো , বুঝলে ?
চন্দ্রনাথ ( অবিচলভাবে ) : না।
নিশানাথবাবু ( বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে ) : না ?
চন্দ্রনাথ : না।
নিশানাথবাবু ( কম্পিত কণ্ঠে ) : করবে না ?
চন্দ্রনাথ : না।
[ নিশানাথবাবু চন্দ্রনাথের এইরকম আচরণে হতবাক , ক্ষুব্ধ এবং মর্মাহত। কিছুক্ষন নীরবে দাঁড়িয়ে রইলেন। ]
নিশানাথবাবু : তোমার বউদি বলত , আমি বিশ্বাস করিনি , কিন্তু তুমি এতদূর স্বাধীন হয়েছ ? ভালো , আজ থেকে তোমার সঙ্গে আমার আর কোনো সংস্রব রইল না। আজ থেকে আমরা পৃথক।
চন্দ্রনাথ ( একটুও বিচলিত না হয়ে ) : বেশ।
[ নিশানাথবাবু স্বভাবতই এমন উত্তর পেয়ে হতবাক। অতি চেষ্টায় তিনি নিজেকে সংবরণ করছেন। ঠোঁটে দাঁত চেপে তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলেন। তারপর দ্রুত মঞ্চ পরিত্যাগ করলেন। ]
নরু ( নিশানাথবাবু প্রস্থানের পর ) : এই ছোট্ট ঘটনার জন্য তোরা পৃথক হয়ে গেলি !
চন্দ্রনাথ ( আগের মতই অবিচলিতভাবে ) : পৃথক মানে কী ? সম্পত্তি তো কিছুই ছিল না , মাত্র বাড়িখানা আর বিঘে কয় জমি , কিছু বাসন। সে ভাগ হয়ে গেল। আমাকে তো এইবার নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হতো , এ ভালোই হলো
নরু ( উত্তেজিত হয়ে ) : তুই একটা যাচ্ছেতাই। [ এই বলে নরু উঠে পড়তে যাচ্ছিল। চন্দ্রনাথ তাকে থামিয়ে দিল। ]
চন্দ্রনাথ : আরে দাঁড়া , দাঁড়া , এখনো শেষ হয়নি ; এর পরেরটা জানলে তুই আমার সঙ্গে কোনো সংস্রব রাখবি না।
নরু ( কণ্ঠে বিরক্তি ) : কী ?
চন্দ্রনাথ ( হাসতে হাসতে ) : হীরু এসেছিল আজ আমার কাছে। বলে , কাকা বলেছেন তিনি আমাকে একটা স্পেশাল প্রাইজ দেবেন।
নরু ( কৌতূহলী হয়ে ) : তা , কী বললি তুই ?
চন্দ্রনাথ : তার কাকাকে ধন্যবাদ দিয়ে পাঠালাম , আর বলে দিলাম , একান্ত দুঃখিত আমি , সে গ্রহণ করতে আমি পারিনা। এই প্রস্তাবই আমার পক্ষে অপমানজনক।
[ নরু অবাক হয়ে চন্দ্রনাথের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ]
চন্দ্রনাথ : কী হল , অবাক হলি ? এরপর যেটা বলবো সেটা শুনলে তো .......................
নরু : কী ?
চন্দ্রনাথ : হেডমাস্টারমশাইও ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
নরু : যাবিনা ?
চন্দ্রনাথ : আরে ধুর ........ তাঁকেও উত্তর দিয়ে দিলাম , গুরুদক্ষিণার যুগ আর নেই। স্কুলের সঙ্গে দেনা - পাওনা আমার মিটে আছে , দু - তিন মাসের মাইনে বাড়তি দিয়ে এসেছি আমি। সুতরাং যাওয়ার প্রয়োজন নেই আমার।
নরু : নাহঃ , তোর সঙ্গে সত্যিই আর কোনো সম্পর্ক রাখা যাবেনা , অমানুষ হয়ে গেছিস তুই।
[ বলামাত্র নরু চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল এবং মঞ্চ পরিত্যাগ করলো। চন্দ্রনাথ ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ]
মঞ্চ পরিকল্পনা : হেডমাস্টার মহাশয়ের অফিসঘর। সেই মত মঞ্চে আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী উপস্থিত করতে হবে। একটি টেবিল। টেবিলের একদিকে কাঠের হাতলওয়ালা চেয়ার। অন্যদিকে দুটি সাধারণ চেয়ার। টেবিলে কয়েকটি ফাইল , কিছু কাগজপত্র , পেনদানি , পেপার ওয়েট - ইত্যাদি থাকবে।এই দৃশ্যটি শুরু হতেই দেখা যায় হেডমাস্টারমহাশয় হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে একমনে কাগজ পত্রের উপর ঝুঁকে কাজ করে চলেছেন। এই সময় নরু মঞ্চে প্রবেশ করলো।
নরু : আসতে পারি স্যার ?
হেডমাস্টারমহাশয় : ( আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে ) : কে , ও নরেশ , এসো এসো .......... তা কী খবর ?
[ নরু হেডমাস্টারমহাশয়ের সামনের দিকে এগিয়ে এল। ]
হেডমাস্টারমহাশয় : তা বলো নরেশ , গিয়েছিলে চন্দ্রনাথের কাছে ?
নরু : হ্যাঁ , স্যার।
হেডমাস্টারমহাশয় ( কৌতূহলী হয়ে ) : তা কী বললো চন্দ্রনাথ , আসবে ও ?
নরু : না স্যার , ও আসবে না। ও বললো স্কুলের সঙ্গে ওর আর কোনো সম্পর্ক নেই। আগাম বেতন দিয়ে রেখেছে সে ; তাই পাওনা - গন্ডার হিসাবও পরিষ্কার। .................. নিশানাথবাবু চন্দ্রনাথকে বলেছিলেন সেকেন্ড প্রাইজ রিফিউজ করা চন্দ্রনাথের অপরাধ হয়েছে ; তাই ক্ষমা চেয়ে স্কুলে চিঠি লিখতে ; কিন্তু ........................
হেডমাস্টারমহাশয় : কিন্তু কী ?
নরু : এই ছোট্ট ঘটনা নিয়ে নিশানাথবাবু আর চন্দ্রনাথ পৃথক হয়ে গেল।
হেডমাস্টারমহাশয় ( বেদনাহত ও বিস্মিত ) : পৃথক হল , ওমা সে'কি , পৃথক হবে কেন ! না , না , না , ছিঃ , ছিঃ , আমারই অন্যায় হয়েছে নিশানাথকে সবকিছু জানিয়ে।
[ কিছুক্ষন থেমে। তারপর যেন বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারলেন না। ]
হেডমাস্টারমহাশয় : না , না , না পৃথক হবে কেন ! ( নরুর দিকে চেয়ে ) নরু , কী বল তুমি , আমি যাবো একবার চন্দ্রনাথের কাছে ?
নরু : না স্যার , আপনি যাবেন না। যদি কথা না শোনে ?
হেডমাস্টারমহাশয় ( মর্মাহত হয়ে ) : শুনবে না , আমার কথা শুনবে না ! ( মর্মাহত হয়ে মাথা নীচু করে বসে থাকলেন। )
নরু : আমি আসি স্যার।
[ নরু পিছনে ঘুরে প্রস্থান করতে উদ্যত হল। হেডমাস্টারমহাশয় ধীরে ধীরে মাথা তুললেন। ]
হেডমাস্টারমহাশয় : ( বেদনার্ত কণ্ঠ ) : নরেশ , তুমি বলছো , আমার যাওয়া ঠিক হবে না ! আমার কথা শুনবে না !
[ নরু কোনো উত্তর করল না। ধীর পায়ে মঞ্চ পরিত্যাগ করল। হেডমাস্টারমহাশয় আবার মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলেন। ]
তৃতীয় দৃশ্য :-
মঞ্চসজ্জা :- মঞ্চে বহু মানুষের সমাগম। সকলেই খুব ব্যাস্ত। সকলেই ব্যাস্ততার সঙ্গে মঞ্চের এদিক - ওদিক ছোটাছুটি করছে। একটা অনুষ্ঠানের আমেজ পুরো মঞ্চ জুড়ে। মঞ্চে এই অনুষ্ঠানের আমেজ আনতে বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করা যেতে পারে ; যেমন - রঙিন ছাতা , ফুলের মালা , রঙিন কাগজের কারুকার্য , রঙিন লণ্ঠন - ইত্যদি। মঞ্চে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের পোশাক আভিজাত্যপূর্ণ। মঞ্চে হীরু একটি ছাতার তলে বসে আছে। এমন সময় নরু মঞ্চে প্রবেশ করে।
হীরু : আরে , নরু যে ............ আয় , আয়।
[ নরু হীরুর কাছে এগিয়ে এসে একটি চেয়ার টেনে বসে পড়ে। ]
হীরু : অনেকটা দেরী করে ফেললি যে , সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
নরু : আরে , চন্দ্রনাথের বাড়ি গিয়েছিলাম।
হীরু : তা কী দেখলি ওখানে , চন্দ্রনাথ আছে বাড়িতে ?
নরু : নাহঃ , কেউ কোথাও নেই। নির্জন বাড়িখানা খাঁ খাঁ করছিল। কাউকে কোথাও দেখলাম না। শয়নঘরখানার দুয়ার বন্ধ , কড়ায় একটা অতি সামান্য দামের তালা ঝুলছে।
হীরু : আজকের অনুষ্ঠানে আমি চন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ওকে বলেছিলাম আমি স্কুল ফাইনালে ফার্স্ট হয়েছি , সরকার থেকে স্কলারশিপ পেয়েছি ; তাই কাকা ভোজসভার আয়োজন করেছেন , তোর আসা চাই।
নরু : তারপর কী হল ?
হীরু : আজ সকালে এই চিঠিটা এসেছে , এই দেখ। [ এই বলে হীরু জামার পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে নরুকে দিল।
নরু ( চিঠিটা জোরে জোরে পড়তে শুরু করে ) : প্রীতিভাজনেষু , আজই আমার যাত্রার দিন , সুতরাং থাকবার উপায় নেই , আমাকে মার্জনা করিও। তোমার সফলতায় আনন্দ প্রকাশ করছি। কিন্তু একটা কথা বারবার মনে হচ্ছে , এই উৎসবটা না করলেই পারতে। স্কলারশিপটা কী এমন বড়ো জিনিস ! ভালোবাসা জানবে। ইতি - চন্দ্রনাথ।
হীরু : আজই দুপুরে সে চলে গেল। আমি তো তাকে কত আগেই নেমন্তন্ন করেছিলাম , তবুও সে চলে গেল ! একটা দিন থেকে গেলে কী হতো ?
[ এমন সময় মঞ্চে হেডমাস্টারমহাশয় প্রবেশ করলেন। হীরু ও নরু দুজনেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। ]
হীরু : ( হেডমাষ্টারমহাশয়ের উদ্দেশ্যে ) : আসুন স্যার , আসুন।
হেডমাস্টারমহাশয় : ( নরুর উদ্দেশ্যে ) : আজই এলে নরেশ ?
নরু : হ্যাঁ , স্যার।
হেডমাস্টারমহাশয় : একটা কথা মনে রেখো বাবা - পড়াশোনাটা কিন্তু চালিয়ে যেও। কিন্তু সাহিত্যচর্চাটা পড়ার সময় একটু কম করো বাবা। তবে ছেড়ো না , ও একটা বড়ো জিনিস। জেনো , Shame in crowd but solitary pride - এমনটাই হওয়া উচিত।
হীরু : নরুর লেখা যে কাগজে বেরিয়েছে এবার স্যার।
হেডমাস্টারমহাশয় : হ্যাঁ ? বেশ , বেশ। আমাকে লেখাটা দেখাবে তো নরেশ , পড়ব আমি। [ একটু থেমে ] আর , তারপর তোমার খবর কী হীরু ? তোমার কাকার মুখে শুনলাম তুমি নাকি আই সি এস হতে চাও।
হীরু : হ্যাঁ , কাকা বলেছেন আই সি এস - এর জন্য তৈরী হতে। পড়াশোনার জন্য তিনি বিলেতে পাঠাবেন আমাকে।
হেডমাস্টারমহাশয় : বাঃ , দারুন , খুব ভালো ভালো। মন দিয়ে পড়াশোনা কর। [ একটু থেমে ] আচ্ছা , একটা কথা বলোতো , চন্দ্রনাথের কোনো খবর .................................
নরু : না স্যার , ও আজই চলে গেছে।
হেডমাস্টারমহাশয় : চলে গেছে ! আজই ! কাউকে কিছু বলে যায়নি ? পত্র - টত্র লিখে কিছু জানায়নি ?
হীরু ( একবার নরুর দিকে চেয়ে তারপর হেডমাস্টারমহাশয়ের দিকে মুখ ফিরিয়ে ) : না স্যার , কাউকেই কিছু জানিয়ে যায়নি।
[ লাঠির উপর ভর দিয়ে হেডমাস্টারমহাশয় কিছুক্ষন নীরবে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করলেন। ]
নরু ( হেডমাস্টারমহাশয় মঞ্চ ত্যাগের পর ) : চিঠিটার কথা হেডমাস্টারমহাশয়কে বললি না যে !
হীরু ( চিঠিটা নরুর হাত থেকে নিয়ে ভাঁজ করে নিজের পকেটে রাখতে রাখতে ) : চিঠিখানা রেখে দিলাম আমি। থাক , এইটেই আমার কাছে তার স্মৃতিচিহ্ন। [ একটু থেমে ] আচ্ছা , একটা কথা বলতো , কোথায় গেল চন্দ্রনাথ ?
নরু ( ধীরে ধীরে দর্শকদের দিকে ফিরে , দৃষ্টি ক্রমশঃ উপরে তুলে , যেন সে আকাশ দেখছে - এমনভাবে বলতে শুরু করলো ) : জানি না ; .......................... হয়তো কাঁধে লাঠির প্রান্তে পোটলা বেঁধে জনহীন রাতে এক পথ চলছে ; দুই পাশে ধীর গতিতে প্রান্তর যেন পিছনের দিকে চলছে ; মাথার উপর গভীর নীল আকাশে ছায়াপথ , পার্শ্বে কালপুরুষ নক্ষত্র সঙ্গে সঙ্গে চলছে .................. এইভাবেই চন্দ্রনাথ পথ চলছে ......................... একা।
[ ধীরে ধীরে আলো কমে এল ; পর্দা নেমে এল। ]
0 comments