শিক্ষাবিজ্ঞান প্রকল্প : শিক্ষায় প্রযুক্তিবিদ্যা।

by - September 16, 2022

শিক্ষাবিজ্ঞান প্রকল্প : শিক্ষায় প্রযুক্তিবিদ্যা। 

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবিজ্ঞান প্রকল্প : শিক্ষায় প্রযুক্তিবিদ্যা। 

H.S. Education Project : শিক্ষায় প্রযুক্তিবিদ্যা। 



শিক্ষায় প্রযুক্তিবিদ্যা।  


ভূমিকা :- 
প্রযুক্তি বা Technology বলতে বোঝায় শিল্প বা দক্ষতার অধ্যয়ন যা ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করে। Technology শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ Technic থেকে , যার অর্থ হল শিল্প বা দক্ষতা এবং Logia - যার অর্থ হল - বিজ্ঞান বা অধ্যয়ন। বর্তমানে মানব সভ্যতার প্রতিটি ক্ষেত্র প্রযুক্তি দ্বারা প্রভাবিত ; তাই শিক্ষাও এর ব্যাতিক্রম নয়। শিক্ষাপ্রযুক্তি হল শিক্ষা সম্পর্কিত বিজ্ঞানসম্মত ও ব্যবহারিক জ্ঞান যা বাস্তব শিখন প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ করে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যগুলিকে চরিতার্থ করা হয়। অধ্যাপক শিবকুমার মিত্র বলেছেন - শিক্ষাপ্রযুক্তি হল কৌশল এবং পদ্ধতির বিজ্ঞান - যার সাহায্যে শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন করা যায়। তাই বলা যেতে পারে , শিক্ষা প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নীতি এবং সাম্প্রতিক আবিস্কারগুলিকে প্রয়োগ করাকেই শিক্ষা প্রযুক্তি বলে। 

বর্তমান প্রকল্পটিতে শিক্ষা প্রযুক্তি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা করা হয়েছে এবং শিক্ষা প্রযুক্তির ধারণা , শিক্ষা প্রযুক্তির বৈশিষ্ট ও ব্যবহারিক প্রয়োগ , শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা , শিক্ষা প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যম - ইত্যাদি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। 


যেসকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. শিক্ষাপ্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা অর্জন। 
২. শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন। 
৩. শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা। 
৪. শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা পর্যালোচনা করা। 
৫. শিক্ষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি ও শিক্ষা প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমগুলির উপর আলোকপাত করা। 
৬. শিক্ষার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে শিক্ষা প্রযুক্তির ভূমিকা আলোচনা করা। 
৭. শিক্ষায় শিক্ষাপ্রযুক্তি - এই বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তোলা। 

প্রকল্পটির গুরুত্ব :- 
যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে সেগুলি হল - 
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে শিক্ষা প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা অর্জন সম্ভব। 
২. শিক্ষা প্রযুক্তির বৈশিষ্ট , প্রকৃতি , সুবিধা - অসুবিধা - ইত্যাদি জানতে প্রকল্পটি সহায়ক। 
৩. শিক্ষায় শিক্ষাপ্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 
৪. শিক্ষাপ্রযুক্তি শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যপূরণে সহায়ক। এবিষয়ে জানতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। 
৫. প্রকল্পটির মাধ্যমে শিক্ষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার শিক্ষা প্রযুক্তি ও তার মাধ্যমগুলি সম্পর্কে জানা যায়। 
৬. সর্বোপরি , প্রকল্পটির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে শিক্ষার্থীদের সহজেই কৌতূহলী করে তোলা সম্ভব। 

কর্মপরিকল্পনা / পদ্ধতিগত দিক :- 

প্রকল্পটি নির্মাণ করতে যেসকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলি হল -   

>> বিদ্যালয়ের শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা X মহাশয় / মহাশয়া কর্তৃক প্রকল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন। 

>> বিষয় নির্বাচনের পর মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত দিকগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - র নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

>> সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা করে সেটি মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নিকট উপস্থাপন করা হয় এবং তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর পুনরায় প্রকল্পটি প্রস্তুত করা হয়। 

>> প্রয়োজনীয় চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলি প্রতিবেদনে সংযোজিত করা হয়। 

>> পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।    



তথ্য সংগ্রহ / পরীক্ষামূলক উপাদান :- 

[ এখানে যেকোনো পাঠ্যবই বা নোট বইয়ের দ্বাদশ অধ্যায় থেকে শিক্ষা প্রযুক্তি সম্পর্কে কয়েকটি টপিক লিখতে হবে। টপিকগুলি হল - (ক ) শিক্ষা প্রযুক্তির ধারণা ও সংজ্ঞা , (খ ) শিক্ষাপ্রযুক্তির বৈশিষ্ট , (গ ) শিক্ষা প্রযুক্তির পরিধি , (ঘ ) শিক্ষাপ্রযুক্তির উদ্দেশ্য , (ঙ ) শিক্ষাপ্রযুক্তির কার্যাবলি। তবে প্রতিটি টপিক টেক্সট বা পাঠ্যবই থেকে লিখলেই ভালো হয় , কেননা নোট বইতে টপিকগুলি খুব ছোট করে দেওয়া আছে। একান্তভাবেই পাঠ্যবই বা টেক্সট বই না থাকলে নোট বই ব্যবহার করতে হবে। ] 

তথ্য বিশ্লেষণ / প্রকল্পের ব্যাখ্যা :- 

[ এখানে যেকোনো পাঠ্যবই বা নোট বইয়ের দ্বাদশ অধ্যায় থেকে '' শিক্ষায় শিক্ষাপ্রযুক্তির অবদান '' টপিকটি লিখতে হবে। তবে টেক্সট বা পাঠ্যবই থেকে লিখলেই ভালো হয় , কেননা নোট বইতে টপিকগুলি খুব ছোট করে দেওয়া আছে। একান্তভাবেই পাঠ্যবই বা টেক্সট বই না থাকলে নোট বই ব্যবহার করতে হবে। ] 

সিদ্ধান্তগ্রহণ :- 
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যেসকল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় , সেগুলি হল - 
(i) শিক্ষা প্রযুক্তি শিক্ষন - শিখন প্রক্রিয়াকে একটি তন্ত্র হিসাবে বিবেচনা করে। এই তন্ত্রগুলি হল - ইনপুট , প্রক্রিয়া ও আউটপুট। এই তিনটি তন্ত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে উন্নত ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সঞ্চালন করা হয় , সঠিক প্রযুক্তির প্রয়োগ করে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর উন্নত পারদর্শিতা নিশ্চিত করা হয়। 
(ii) শিক্ষা প্রযুক্তির কয়েকটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক মাধ্যম হল - ভাষা পরীক্ষাগার , শিক্ষণযন্ত্র বা টিচিং মেশিন , দূরদর্শন - ইত্যাদি। 
(iii) শিক্ষাপ্রযুক্তির মাধ্যমে গণশিক্ষাদান ও ব্যক্তিভিত্তিক শিক্ষাদান - উভয়প্রকার শিখন পরিকল্পনায় বর্তমান। 
(iv) গণশিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বেতার , দূরদর্শন , ক্লোজড সার্কিট টিভি - ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় এবং ব্যক্তিভিত্তিক শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে স্লাইড , ফিল্ম স্ট্রিপ , রেকর্ড , মাইক্রোফিল্ম - ইত্যাদি শিক্ষাপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। 
(v) শিক্ষা বিজ্ঞানের প্রযুক্তি হল শিক্ষাকে প্রযুক্তিয়ান করা। পরিকল্পিত শিখন , শিক্ষণ মডেল , শিক্ষার তন্ত্রভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি - ইত্যাদি শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত। 
(vi) ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে শিক্ষাপ্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন বর্তমানে কম্পিউটারের বহুল ব্যবহারের ফলে কম্পিউটার শিক্ষা শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। 
(vii) শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিখনে ও পঠন - পাঠনে এবং শিক্ষকের ক্ষেত্রে শিক্ষন পরিচালনা - উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষা প্রযুক্তি সহায়ক। 

উপসংহার :- 
উন্নত দেশগুলিতে বিদ্যালয় স্তর থেকেই উচ্চমানের শিক্ষা প্রযুক্তি ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উন্নত দেশ হিসাবে দাবী করলেও ভারতে উচ্চমানের শিক্ষাপ্রযুক্তি দূরে থাক , বহুসংখ্যক বিদ্যালয়ে চক - বোর্ডেরও ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ন্যুনতম শিক্ষাপোকরণ সরবরাহ করার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন - তা বরাদ্দ করা হয়না। 1986 সালে অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড চালু হলেও তার সম্পূর্ণ সুফল এখনও লাভ করা যায়নি। তাই শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলিকে যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করতে এবং আধুনিক যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার প্রয়োজন। 

সীমাবদ্ধতা :- 
প্রকল্পটি রূপায়নকালে এবং রূপায়িত হওয়ার পর যেসকল ত্রুটি - বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে - সেগুলি হল - 
প্রথমতঃ প্রকল্প রূপায়ণের সংক্ষিপ্ত পরিসরে শিক্ষা প্রযুক্তির মত একটি বিষয়কে সম্পূর্ণরূপে আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। 
দ্বিতীয়তঃ প্রকল্পটিতে শিক্ষাপ্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যম - ভাষা পরীক্ষাগার , টিচিং মেশিন - ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা অনুপস্থিত। 
তৃতীয়তঃ শিক্ষা প্রযুক্তি ও শিক্ষকের সম্পর্ক বিষয়ে প্রতিবেদনে আলোচনা অতি সংক্ষিপ্ত। 
চতুর্থতঃ শিক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি। 
পঞ্চমতঃ ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহারের বর্তমান চালচিত্র অতি সংক্ষিপ্ত আকারে পর্যালোচনা করা হয়েছে। 

গ্রন্থপঞ্জি :- 
যেসকল গ্রন্থগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. শিক্ষাবিজ্ঞান (দ্বাদশ ) - ডক্টর দেবাশিস পাল ও ডক্টর সুশান্ত কুমার সাহু। 
২. শ্রেণিশিক্ষনে শিক্ষাবিজ্ঞান ( বি এড ) - ডক্টর চৈতন্য কুমার মন্ডল। 
৩. বি এ শিক্ষাবিজ্ঞান - অধ্যাপক কে ব্যানার্জী। 
৪. শিক্ষাতত্ত্ব ( স্নাতক ) - সুশীল রায়। 
৫. শিক্ষার দার্শনিক বৈজ্ঞানিক ভিত্তি - সুশীল রায়।  


List of Subjects - 


You May Also Like

0 comments