সমাজতত্ত্ব প্রকল্প : দুর্নীতি।

by - September 17, 2022

সমাজতত্ত্ব প্রকল্প : দুর্নীতি। 

উচ্চমাধ্যমিক সমাজতত্ত্ব প্রকল্প : দুর্নীতি। 

Sociology Project : দুর্নীতি। 

দুর্নীতি বিষয়ক প্রকল্প রচনা। 



সমাজতত্ত্ব প্রকল্প : দুর্নীতি। 


ভূমিকা :- 
দুর্নীতি হল একপ্রকার বিচ্যুত আচরণ ও একটি সামাজিক ব্যাধি। দুর্নীতির বিষয়ে সর্বদা দুটি উপাদান প্রধান - (ক ) ক্ষমতা ও (খ ) আর্থিক ও অন্যান্য স্বার্থ। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ক্ষমতার অধিকারী না হলে দুর্নীতিগ্রস্থ হওয়া যায়না এবং এর সঙ্গে জড়িত থাকে নির্দিষ্ট আর্থিক লেনদেন বা অন্যান্য স্বার্থ। এই দুই উপাদান ব্যতীত দুর্নীতি সংগঠিত হওয়া সম্ভব নয়। দুর্নীতির মাধ্যমে একশ্রেণির মানুষ অলব্ধ স্বার্থকে প্রাপ্ত করতে উদ্যত হয় এবং অপর এক শ্রেণির মানুষ নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। দুর্নীতি সকল সমাজে , সর্বকালে বিদ্যমান। দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও এর প্রাদুর্ভাব থেকে সমাজকে বিন্দুমাত্র মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতি সমাজের সকল অংশকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য এই যে , দুর্নীতি সর্বদা ব্যক্তি ও সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক ফল প্রদান করে। 

বর্তমান প্রকল্পটিতে দুর্নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতির ধারণা , দুর্নীতির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট , দুর্নীতির বিভিন্ন কারণ এবং সমাজে তার প্রভাব এবং সর্বোপরি ভারতীয় সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির গতি - প্রকৃতি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপগুলির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। 


যেসকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হয়েছে , সেগুলি হল - 
১. দুর্নীতি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা অর্জন। 
২. দুর্নীতির কারণগুলি অনুসন্ধান করা। 
৩. দুর্নীতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট ও প্রকৃতি নির্ধারণ করা। 
৪. দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও আইনগত বিষয়গুলিকে আলোচনা করা। 
৫. ভারতীয় সমাজে দুর্নীতির গতি - প্রকৃতি আলোচনা করা। 
৬. ভারতে ইতিপূর্বে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন প্রণীত হয়েছে। সেই সকল আইনগুলি সম্পর্কে পরিচয় প্রদান করা। 
৭. দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করা। 
৮. দুর্নীতির প্রকৃত স্বরূপ শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরে দুর্নীতিমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার প্রচেষ্টা। 

প্রকল্পটির গুরুত্ব :- 
যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে সেগুলি হল - 
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে দুর্নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা গঠন সম্ভব। 
২. প্রকল্পটির মাধ্যমে দুর্নীতির বৈশিষ্ট ও প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন সম্ভব। 
৩. সমাজে দুর্নীতি সংগঠনের কারণগুলি সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকরী। 
৪. ভারতে দুর্নীতি প্রতিরোধে যেসকল আইন গৃহীত হয়েছে - সেগুলি সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 
৫. লোকপাল বিল হল ভারতে দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। প্রকল্পটিতে লোকপাল বিল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সংযোজিত হয়েছে। এদিক দিয়ে বিচার করলে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। 
৬. সর্বোপরি , প্রকল্পটিতে দুর্নীতির প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে প্রয়াসী হবে। এক্ষেত্রে প্রকল্পটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 

কর্মপরিকল্পনা / পদ্ধতিগত দিক :- 

প্রকল্পটি নির্মাণ করতে যেসকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলি হল -   

>> বিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা X মহাশয় / মহাশয়া কর্তৃক প্রকল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন। 

>> বিষয় নির্বাচনের পর মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত দিকগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - র নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

>> সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা করে সেটি মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নিকট উপস্থাপন করা হয় এবং তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর পুনরায় প্রকল্পটি প্রস্তুত করা হয়। 

>> প্রয়োজনীয় চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলি প্রতিবেদনে সংযোজিত করা হয়। 

>> পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।  



তথ্য সংগ্রহ / পরীক্ষামূলক উপাদান :- 

[ এখানে যেকোনো সমাজতত্ত্ব পাঠ্যবই বা নোটবইয়ের চতুর্থ অধ্যায় থেকে দুর্নীতি সম্পর্কে লিখতে হবে। অরুনাংশু প্রধানের পাঠ্য বইতে ৪.১০.১১ নং টপিক দুর্নীতির ধারণা , ৪.১০.২ নং টপিক দুর্নীতির কারণ , ৪.১০.৩ নং টপিক দুর্নীতি প্রতিরোধে সাম্প্রতিক আইনি পদক্ষেপ। এই পয়েন্টে ক - চ পর্যন্ত সবগুলি লিখতে হবে এবং তারপর লোকপাল বিল সম্পর্কে যতটা সম্ভব লিখতে হবে। ] 

তথ্য - বিশ্লেষণ / প্রকল্পের ব্যাখ্যা :- 

(i) দুর্নীতি হল একটি বিচ্যুত সামাজিক আচরণ এবং এটি ন্যায়নীতি , মানবাধিকার - ইত্যাদিকে খর্ব করে বিশেষ কিছু দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের অন্যায় ও অন্যায্য স্বার্থ চরিতার্থ করে। 
(ii) কেবলমাত্র নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিবর্গই দুর্নীতিমূলক ক্রিয়াকলাপকে সংগঠিত করতে পারেন। 
(iii)  প্রতিটি দুর্নীতিমূলক আচরণের সঙ্গে আর্থিক বা অন্যান্য স্বার্থের সংযোগ থাকবেই। এইসকল স্বার্থের কারণেই একশ্রেণির মানুষ কিছু মানুষের অন্যায্য দাবী বা স্বার্থকে চরিতার্থ করতে সাহায্য করে। 
(iv) দুর্নীতি সকল সমাজেই , সর্বকালেই বিদ্যমান। এমন কোনো সমাজের অস্তিত্ব নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। 
(v) দুর্নীতি সর্বদা সমাজের পক্ষে পরোক্ষভাবে বা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিকারক ফল প্রদান করে। 
(vi) উৎকোচ বা ঘুষ - ইত্যাদির দাবী , কাজ ফেলে রাখা বা আটকে রাখা , সেবাপ্রার্থী ব্যক্তিদের অযথা হয়রানি করা - এসবই দুর্নীতির পরিচায়ক। 
(vii) মূলতঃ নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় , সীমাহীন আর্থিক চাহিদা , প্রলোভন - ইত্যাদি হল দুর্নীতির প্রধান কারণ। 
(viii) দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন থাকলেও সেগুলি যথাযথভাবে কার্জকর ও প্রয়োগ না হওয়ায় সমাজে সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতি দমন সম্ভব হয়নি এবং তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। 
(ix) সরকারি কর্মচারী , নেতা - মন্ত্রী - আমলা - প্রমুখের উপর নজরদারির অভাব দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে। 
(x) দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অভাব - মানুষকে দুর্নীতিপরায়ণ কর্মে লিপ্ত হতে নির্ভিক করে তুলছে। 
(xi) ভারতীয় প্রেক্ষাপটে ভোট - রাজনীতি দুর্নীতির একটি বড় কারণ। প্রতিটি রাজনৈতিক দল জয়লাভের জন্য নির্বাচনের পূর্বে প্রচুর অর্থ খরচ করে। এটি তাদের কাছে একপ্রকার বিনিয়োগ। নির্বাচনে জয়লাভ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর সেই বিনিয়োগকৃত অর্থ সুদে আসলে উঠিয়ে নেওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। 
(xii) এছাড়াও রাজনৈতিক নেতা , কর্মীদের বিভিন্ন অন্যায় আবদার মেটাতে এমনকি ভোটের পূর্বে অর্থ খরচ করে ভোট কিনে নেওয়ার মানসিকতাও দুর্নীতির জন্ম দেয়। 
(xiii) সাধারণ মানুষ অজ্ঞতার কারণে বা দ্রুত কাজ হাসিল করে নেওয়ার জন্য বা নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়। 
(xiv) জনগণের প্রতিবাদহীন মানসিকতা সমাজে দুর্নীতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। 
(xv) দুর্নীতির প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন কানুন থাকলেও সাধারণ মানুষ সেগুলি সম্পর্কে জ্ঞাত না হওয়ায় বা সচেতন না হওয়ায় আইনগুলি কাগজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে , বাস্তবে রূপায়িত হয়না। 
(xvi) অনেকসময় ক্ষমতা প্রাপ্তির জন্য অশুভ ও অনৈতিক সমঝোতা দুর্নীতির জন্ম দেয়। 
(xvii) বর্তমান সময়কালে দুর্নীতির প্রতিরোধে যৌথ প্রতিরোধী মঞ্চের অভাব সমাজে দুর্নীতির বাড়বাড়ন্তের একটি অন্যতম কারণ। 
(xviii) একটি বিশেষ ক্ষেত্রে সকলেই যে দুর্নীতিগ্রস্থ হবে - এমন কোনো কথা নেই। যেমন কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দুর্নীতিগ্রস্থ হলেও সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ দুর্নীতিগ্রস্থ নয়।
(xix) ভারতে দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি অন্যতম কার্যকরী পদক্ষেপ হল লোকপাল বিল। 
(xx) সর্বোপরি , দুর্নীতি একটি সামাজিক সমস্যা এবং সমাজের সর্বস্তরে তা ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। তাই শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন করে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয় ; এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং আইনের যথার্থ প্রয়োগ। 


বিশ্বের প্রতিটি সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি সদা বর্তমান। বর্তমানে এটি সামাজিক ব্যধির রূপ ধারণ করেছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে একাধিক আইন প্রণীত হলেও তার যথার্থ প্রয়োগের অভাবে সমাজ থেকে দুর্নীতির অপসারণ সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ভোট রাজনীতি থেকে শুরু করে সরকারি ও বেসরকারি চাকুরী , টেন্ডার , সাধারণ সরকারি কাজকর্ম এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রেও দুর্নীতির ব্যাপক ক্ষতিকর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

পাঠের সীমাবদ্ধতা :- 
প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে গিয়ে এবং রূপায়ণ করার পর যেসকল ত্রুটি - বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে - সেগুলি হল - 
(ক ) প্রকল্প রচনার সীমাবদ্ধ পরিসরে দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়টিকে আলোচনা করা হয়েছে। তাই প্রতিটি অংশকে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। বহু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন ছিল - কিন্তু তা করা হয়নি। 
(খ ) বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধক আইনগুলি আরো বিশদে আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল। 
(গ ) বর্তমান যুগে বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে - যারা দুর্নীতিমূলক আচরণ ও তার প্রতিকারের জন্য কাজ করে থাকেন। এই প্রতিবেদনটিতে সেই সকল সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যাবলীর বিষয়ে কোনো আলোচনা উপস্থাপন করা হয়নি। 
(ঘ ) দুর্নীতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদনটি রচিত হলেও তার বাস্তব অবস্থা জানার জন্য নিজস্ব এলাকায় সমীক্ষা করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।
(ঙ ) লোকপাল বিল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন ছিল।  

গ্রন্থপঞ্জি :- 
প্রতিবেদনটি রচনার জন্য তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে সকল গ্রন্থের সাহায্য নেওয়া হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. উচ্চমাধ্যমিক সমাজতত্ত্ব - ডক্টর অরুনাংশু প্রধান। 
২. উচ্চমাধ্যমিক সমাজবিদ্যা - ডক্টর মৃনাল কান্তি দত্ত। 
৩. বি এ ভারতীয় সামাজিক সমস্যা - বাণী প্রকাশন। 
৪. রাজনীতিক সমাজতত্ত্ব ( স্নাতক ) - অনাদিকুমার মহাপাত্র। 
৫. ভারতীয় সমাজ ( স্নাতক ) - অনাদিকুমার মহাপাত্র।  

[ কৃতজ্ঞতা স্বীকার , অভিজ্ঞানপত্র বা শংসাপত্র - ইত্যাদি যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তা এই ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। '' সমস্ত প্রকল্পের তালিকা '' - Page - টি তে একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবে। ]





You May Also Like

0 comments