বহুরূপী গল্পের নাট্যরূপ।
বহুরূপী গল্পের নাট্যরূপ।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প : বহুরূপী গল্পের নাট্যরূপ।
বাংলা প্রকল্প : ছোট গল্পের নাট্যরূপ প্রদান।
বহুরূপী গল্পের নাট্যরূপ। সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা বহুরূপী গল্পের নাট্যরূপ রচনাকালে মূল গল্প , প্রেক্ষাপট ও চরিত্রগুলিকে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে নাট্যরূপ প্রদানের স্বার্থে কিছু কিছু জায়গায় সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। বহুরূপী গল্পের নাট্যরূপ প্রকল্পটি উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরের শিক্ষার্থীদের প্রকল্প রচনার কাজে সহায়ক হয়ে উঠবে।
বহুরূপী গল্পের নাট্যরূপ।
চরিত্রবর্গ :-
হরিদা - মাঝ বয়সী পুরুষ। সাধারণ চেহারা ও পোশাক। তবে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট।
অনাদি - হরিদার বন্ধু , তবে হরিদার চেয়ে বয়সে ছোট।
ভবতোষ - হরিদার বন্ধু , তবে হরিদার চেয়ে বয়সে ছোট।
জনৈক বন্ধু - হরিদার বন্ধু , তবে হরিদার চেয়ে বয়সে ছোট।
জগদীশবাবু - একজন সৌম্য দর্শন বৃদ্ধ। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ।
মঞ্চসজ্জা : অতিসাধারণ একটি ঘরের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে হবে। ঘরে একটি খাটিয়া , দু - তিনটি কাঠের বা প্লাস্টিকের টুল। ঘরে খুব সাধারণ মৃদু আলো।
পর্দা উঠতেই দেখা যাবে হরিদা , অনাদি , ভবতোষ ও তাঁদের অপর এক বন্ধু মঞ্চে উপস্থিত। হরিদা খাটিয়ার উপর বসে। উদাস দৃষ্টি। বাকিরা টুল ও খাটিয়ার মধ্যে বসে।
অনাদি : চারদিকে কত কান্ড ঘটে চলেছে , সেখবর রাখেন , হরিদা ?
হরিদা : কেন , কী হল আবার ?
অনাদি : জগদীশবাবু যে কী কান্ড করেছেন , শোনেননি হরিদা ?
হরিদা : না রে ভাই , বড়ো মানুষের কান্ডের খবর আমি কেমন করে শুনবো ? আমাকে বলবেই বা কে ?
ভবতোষ : সাতদিন হল এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন। খুব উঁচু দরের সন্ন্যাসী। হিমালয়ের গুহাতে থাকেন। সারা বছর শুধু একটি হরিতকি খান ; এ ছাড়া আর কিছুই খান না। সন্ন্যাসীর বয়সও হাজার বছরের বেশি বলেই অনেকে মনে করেন।
হরিদা : সন্ন্যাসী কি এখনও আছেন ?
ভবতোষ : না , চলে গিয়েছেন।
হরিদা : ( আক্ষেপ করে ) : থাকলে একবার গিয়ে পায়ের ধুলো নিতাম।
অনাদি : তা পেতেন না হরিদা ! সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস। শুধু ওই একা জগদীশবাবু ছাড়া আর কাউকে পায়ের ধুলো নিতে দেননি সন্ন্যাসী।
হরিদা : কেন ?
অনাদি : জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরলেন। তখন বাধ্য হয়ে সন্ন্যাসী পা এগিয়ে দিলেন , নতুন খড়ম পড়লেন আর সেই ফাঁকে জগদীশবাবু পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন।
হরিদা : বাঃ , এ তো বেশ মজার ব্যাপার !
ভবতোষ : হ্যাঁ , তা ছাড়া সন্ন্যাসীকে বিদায় দেবার সময় জগদীশবাবু একশো টাকার একটা নোট জোর করে সন্ন্যাসীর ঝোলার ভেতর ফেলে দিলেন। সন্ন্যাসী হাসলেন আর চলে গেলেন।
[ কিছুক্ষন সকলেই চুপ। ]
ভবতোষ : হরিদা , আপনার মাথায় কি নতুন কোনো মতলব ছটফট করে উঠেছে ?
[ হরিদা চুপ। শুধু নিস্পলক চোখে অনির্দিষ্ট দিকে তাকিয়ে থাকেন। ]
অনাদি : নতুন কিছু ভাবুন হরিদা , নতুন কিছু ভাবুন। নাহলে সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন বহুরূপীর সাজে কতই বা আয় হয় আপনার। হাড়িতে তো প্রায়ই চালের বদলে শুধু জল ফোটে। ............. ওই সেবার বাইজির সাজে যা একটু রোজগার করেছিলেন , .............. কিন্তু তাতেই বা কী হয় !
হরিদা : হ্যাঁ , বাইজির সাজে রোজগার হয়েছিল বটে , মোট আট টাকা দশ আনা। ............... আর তারপর ওই যে পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে দাঁড়িয়েছিলাম , চারটে স্কুল পালানো ছেলেকে ধরেছিলাম , ঐসময় আটআনা ঘুষ দিয়ে মাস্টারমশাই ছেলেগুলিকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। .............. তারপর ওই যে সেবার পাগল সেজে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলাম , সেখানেও কিছুটা রোজগার হয়েছিল।
ভবতোষ : হ্যাঁ , কিন্তু এরকম করে আর কতদিন হরিদা ! এবার বড় কিছু ভাবুন।
হরিদা ( একটু ভেবে ) : আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাবো।
অনাদি : আমাদের দেখিয়ে আপনার লাভ কি হরিদা ? আমাদের কাছ থেকে একটা সিগারেটের চেয়ে বেশি কিছু তো পাবেন না।
হরিদা : না , ঠিক তোমাদের দেখাবো না। আমি বলছি তোমরা সেখানে থেকো। তাহলে দেখতে পাবে।
ভবতোষ : কোথায় ?
অনাদি ( উৎসাহের সঙ্গে ) : কোথায় হরিদা ?
হরিদা : আজ সন্ধ্যায় জগদীশবাবুর বাড়িতে।
অনাদি , ভবতোষ ও অপর বন্ধু : তাই না'কি ! বাঃ দারুন !
অনাদি : কিন্তু হরিদা , হঠাৎ জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখাবার জন্য আপনার এত উৎসাহ জেগে উঠল কেন ?
হরিদা ( রহস্যময়ভাবে হেসে ) : মোটা মতন কিছু আদায় করে নেব। বুঝতেই তো পারছ , পুরো দিনটা রূপ ধরে ঘুরে বেড়িয়েও দু - তিন টাকার বেশি হয়না।
ভবতোষ : ঠিকই বলেছেন আপনি। দুদিন - একদিন খেলা দেখিয়ে তো সাতদিনের পেট চলবার মত রোজগার হয়না আপনার !
হরিদা : নাঃ , এবার আর কাঙালের মত হাত পেতে বকশিস নেওয়া নয়। এবার মারি তো হাতি , লুঠি তো ভান্ডার। একেবারেই যা ঝেলে নেব তাতে আমার সারা বছর চলে যাবে।
ভবতোষ : কিন্তু সে কী করে সম্ভব ? জগদীশবাবু ধনী মানুষ হলেও বেশ কৃপণ। আপনাকে একটা যোগী সন্ন্যাসী বা বৈরাগী সাজতে দেখে কত আর খুশি হবেন হরিদা ? আর খুশি হলেই বা কত বকশিস দেবেন , পাঁচ আনার বেশি তো নয়।
হরিদা : তোমরা যদি দেখতে চাও , তবে আজ ঠিক সন্ধ্যাতে জগদীশবাবুর বাড়িতে থেকো।
ভবতোষ : থাকবো ! ঠিক আছে হরিদা আমরা নাহয় থাকবো। ............. কিন্তু একটা অজুহাত তো চাই ..............
অনাদি : ভেবো না ভবতোষ , আমাদের স্পোর্টের চাঁদা নেওয়ার জন্য আজ সন্ধ্যাতেই জগদীশবাবুর বাড়িতে যাবো।
ভবতোষ : সেই কথাই থাকলো তাহলে , আজ ঠিক সন্ধ্যায় জগদীশবাবুর বাড়িতে।
মঞ্চসজ্জা : এই দৃশ্যে মঞ্চসজ্জার দিকে বিশেষভাবে যত্নশীল হতে হবে। সমগ্র মঞ্চে চাঁদের মত উজ্জ্বল এবং স্নিগ্ধ আলো বিরাজ করবে। কোনোভাবে আলো ও অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে একটি চাঁদের প্রতিরূপ মঞ্চে উপস্থাপন করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। মঞ্চে একটি উঁচু চৌকি থাকবে এবং সেই চৌকির উপর একটি কাঠের হাতলওয়ালা বড় চেয়ার থাকবে।
সেই চেয়ারে জগদীশবাবু উপবিষ্ট। মঞ্চে অনাদি , ভবতোষ ও অপর বন্ধুর প্রবেশ।
জগদীশবাবু ( আগত ব্যক্তিদের দেখতে পেয়ে ) : আরে , অনাদি - ভবতোষ তোমরা ................. বল কী ব্যাপার !
অনাদি : এই তো জগদীশবাবু স্পোর্টের চাঁদা নিতে এলাম।
জগদীশবাবু : স্পোর্টের চাঁদা ............ তা বেশ বেশ ............ তা কত দেবো ?
ভবতোষ : ( স্পোর্টের চাঁদার খাতাটি জগদীশবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে ) : এই নিন , আপনিই লিখে দিন।
[ তাঁদের কথোপকথনের মধ্যেই হরিদা মঞ্চে প্রবেশ করেন ধীরপায়ে। এই দৃশ্যে হরিদার সজ্জা সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ। মাথার উপর উড়ছে শুকনো সাদা চুল। ধুলো মাখা পা , হাতে একটা ঝোলা , ঝোলাতে একটা বই , পরনে ছোট বহরের একটি সাদা থান। ধীরগতি ও দৃষ্টিতে পূর্ণাঙ্গ স্নিগ্ধতা। সেই আগন্তুক মঞ্চে প্রবেশ করতেই সকলে তার দিকে তাকায় ; অপলক ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে সকলে তাকিয়ে থাকে। স্পোর্টের চাঁদার খাতা জগদীশবাবুর হাতেই থেকে যায়। ]
জগদীশবাবু ( উঠে দাঁড়িয়ে আগন্তুকের উদ্দেশ্যে ) : আসুন।
হরিদা : ( স্নিগ্ধ হেসে ও ধীরকণ্ঠে ) : আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড় ?
জগদীশবাবু : ( ঈষৎ লজ্জিত ) : কেন ? কেন আপনি একথা বলছেন মহারাজ ?
হরিদা : আমি মহারাজ নই , আমি এই সৃষ্টির মধ্যে এককণা ধূলি। ......... কিন্তু আপনি বোধহয় এগারো লক্ষ টাকার সম্পত্তির অহংকারে নিজেকে ভগবানের চেয়েও বড়ো বলে মনে করেন। তাই ওখানেই দাঁড়িয়ে আছেন , নেমে আসতে পারছেন না।
[ একথা শোনামাত্র জগদীশবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন এবং নেমে এসে একেবারে হরিদার সম্মুখে উপস্থিত হন। ]
জগদীশবাবু ( হাত জোড় করে ) : আমার অপরাধ হয়েছে। আপনি রাগ করবেন না।
হরিদা ( সামান্য হেসে ) : আমি বিরাগী , রাগ নামে কোনো রিপু আমার নেই। ছিল একদিন , সেটা পূর্বজন্মের কথা।
জগদীশবাবু : বলুন , এখন আপনাকে কীভাবে সেবা করব ?
হরিদা : ঠান্ডা জল চাই , আর কিছু না।
[ জগদীশবাবু তাঁর চেয়ারের পাশে রাখা একটি পাত্র থেকে জল আনতে গেলেন। এই সময় হরিদা তার ঝোলা থেকে একটি বই বের করেন। পাতা উল্টে একটু পড়েন। তারপর একটু হেসে বইটি বন্ধ করে আবার ঝোলার ভেতর রেখে দেন। ]
হরিদা ( জগদীশবাবুর আনা জল পান করে ) : পরম সুখ কাকে বলে জানেন ?
জগদীশবাবু : আপনিই বলুন বিরাগীজি।
হরিদা : সকল সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়াই হল পরম সুখ।
[ এইসময় অনাদি ভবতোষকে হাত ধরে মঞ্চের একেবারে সামনের দিকে টেনে আনে। এখানে অনাদি ও ভবতোষ ফিসফিস করে কথা বললেও তা যেন দর্শকেরা শুনতে পায় - এমনভাবে কথা বলতে হবে। ]
অনাদি :শুনছো তো ? এসব ভাষা কি হরিদার মুখের ভাষা হতে পারে ?
ভবতোষ : আর ওই চোখ ! ওই চোখ কি হরিদার হতে পারে ? ....... না না না , এ অসম্ভব।
অনাদি : আমার মনে হয় হরিদা আজ আসেননি। এই আগন্তুক বহুরূপী হরিদা নন ; তিনি সত্যি সত্যিই বিরাগী।
ভবতোষ : আমারও তা'ই মনে হয়।
[ কথাগুলো বলার পর আবার তারা হরিদা ও জগদীশবাবুর দিকে ফিরে গেল। ]
জগদীশবাবু : আমার এখানে কয়েকটা দিন থাকুন বিরাগীজি। আপনার কাছে এটা আমার প্রাণের অনুরোধ। [ দুই হাত জোড় করে হরিদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন জগদীশবাবু। ]
হরিদা : ( হেসে ) : বাইরে খোলা আকাশ থাকতে আর ধরিত্রীর মাটিতে স্থান থাকতে , আমি এক বিষয়ীর দালান বাড়ির ঘরে থাকব কেন , বলতে পারেন ?
জগদীশবাবু ( গলার স্বরে করুণতা ও আবেদনপূর্ণ ) : বিরাগীজি !
হরিদা : না , আপনার এখানে জল খেয়েছি , এই যথেষ্ট। পরমাত্মা আপনার কল্যাণ করুন। কিন্তু আপনার এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
জগদীশবাবু : তবে অন্তত একটু কিছু আজ্ঞা করুন , যদি আপনাকে কোনো ............. ।
হরিদা : না না , আমি যার কাছে পড়ে আছি , তিনি আপনার চেয়ে কিছু কম নন। কাজেই আপনার কাছে আমার তো কিছু চাইবার দরকার হয়না।
জগদীশবাবু : তবে কিছু উপদেশ শুনিয়ে যান বিরাগীজি , নইলে আমি শান্তি পাব না।
হরিদা : ধন জন যৌবন কিছুই নয় জগদীশবাবু। ওসব হল সুন্দর সুন্দর এক - একটি বঞ্চনা। মন - প্রাণের সব আকাঙ্খা নিয়ে শুধু সেই একজনের আপন হতে চেষ্টা করুন , যাকে পেলে এই সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া হয়ে যায়। ............ আচ্ছা , আমি চলি।
জগদীশবাবু : আপনি একটা মিনিট থাকুন বিরাগীজি।
[ হরিদা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। জগদীশবাবু দ্রুত মঞ্চ থেকে প্রস্থান করলেন এবং দ্রুত মঞ্চে পুনরায় প্রবেশ করলেন। জগদীশবাবুর প্রস্থান এবং পুনঃপ্রবেশের মাঝে যেটুকু সময় , সেই সময়টুকুতে আবার অনাদি ও ভবতোষকে ফিসফিস করে কথা বলতে দেখা গেল। অনাদি আবার ভবতোষকে হাত ধরে মঞ্চের একেবারে সামনের দিকে নিয়ে আসলো। এখানে অনাদি ও ভবতোষ ফিসফিস করে কথা বললেও দর্শকেরা তাদের কথা শুনতে পাবে - এমন করে কথা বলতে হবে। ]
অনাদি : তোকে বলছি এ কিছুতেই হরিদা হতে পারেনা , অসম্ভব।
ভবতোষ : হ্যাঁ , ইনি তো উঁচু দরের কোনো এক সন্ন্যাসী ; মানুষটি যেন এই জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে হেঁটে চলে এসেছেন। চোখে কী উদাত্ত শান্ত ও উজ্জ্বল একটা দৃষ্টি তাঁর চোখ থেকে ঝরে পড়ছে।
[ এরমধ্যে জগদীশবাবু হাতে একটা ছোট থলে নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করলেন ; তিনি হরিদার সামনে নতজানু হয়ে দাঁড়ালেন ; অনাদি ও ভবতোষ পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেল। ]
জগদীশবাবু : ( প্রার্থনার ভঙ্গিতে ) : এই সামান্য একশো এক টাকা গ্রহণ করে আমাকে শান্তি দান করুন বিরাগীজি। আপনার তীর্থ ভ্রমণের জন্য এই টাকা আমি দিলাম।
হরিদা ( অমায়িক হেসে ) : আমার বুকের ভিতরই যে সব তীর্থ। ভ্রমণ করে দেখবার তো কোনো দরকার হয়না।
জগদীশবাবু ( অনুনয়ের সুরে ) : আমার অনুরোধ বিরাগীজি। ........
হরিদা ( দৃঢ়কণ্ঠে ) : আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি , তেমনি অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি।
[ হরিদা মঞ্চ থেকে প্রস্থান করলেন। টাকার থলিটি জগদীশবাবুর হাতেই ধরা রইল। আলো ধীরে ধীরে নিভে এলো। ]
মঞ্চসজ্জা : প্রথম দৃশ্যের অনুরূপ।
হরিদা মঞ্চে উপবিষ্ট। হরিদার সামনের একটি স্টোভ বা উনুনে একটা ছোট হাঁড়ি। হরিদা সেইদিকে একযোগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছেন। বিরাগীর সাজে হরিদা যেসকল পোশাক ও থলে ও সাদা উত্তরীয় পরিধান করেছিলেন সেগুলি সব খাটিয়ার উপর রাখা। হঠাৎ হই হই করতে করতে অনাদি , ভবতোষ ও অপর এক বন্ধুর প্রবেশ।
অনাদি : কী করছেন হরিদা , কী হলো ?
ভবতোষ : আজ যে বলেছিলেন জবর খেলা দেখাবেন , সে - কথা কি ভুলেই গেলেন ?
জনৈক বন্ধু : আজকের সন্ধ্যাটা ঘরে বসেই কাটিয়ে দিলেন কেন ?
[ কিন্তু হরিদার কাছে আসতেই সকলের কথা থেমে গেল। সকলে খাটিয়ার উপর রাখা বিরাগীর বেশগুলি অবাক হয়ে হাতে তুলে দেখতে শুরু করলো। ]
ভবতোষ : হরিদা , আপনি তাহলে সত্যিই বের হয়েছিলেন ! আপনিই বিরাগী ?
হরিদা ( লজ্জিতভাবে হেসে ) : হ্যাঁ রে ভাই।
অনাদি : তবে এটা কী কান্ড করলেন , হরিদা ? জগদীশবাবু এত টাকা সাধলেন , অথচ আপনি একেবারে খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো সব তুচ্ছ করে সরে পড়লেন ?
হরিদা : কী করব বল ? ইচ্ছেই হলো না। শত হোক ............ ।
ভবতোষ : কী ?
হরিদা : শত হোক , একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা - ফাকা কী করে স্পর্শ করি বল ? তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়।
ভবতোষ ( রাগত স্বরে ) : হরিদা , আমার আর বুঝতে অসুবিধে নেই যে তোমার জীবনের ভাতের হাঁড়ি মাঝে মাঝে শুধু জল ফুটিয়েই সারা হবে। অদৃষ্ট কখনও আপনার এই ভুল ক্ষমা করবে না।
অনাদি : কিন্তু আপনি কি জগদীশবাবুর কাছে গিয়ে আর কখনও ............... ।
হরিদা ( চেঁচিয়ে হেসে উঠে ) : যাবই তো। না গিয়ে উপায় কী ? গিয়ে অন্তত বকশিশটা তো দাবি করতে হবে ?
ভবতোষ ( চেঁচিয়ে ও রাগত স্বরে ) : বকশিশ ? সেটা তো বড়জোর আট আনা কিংবা দশ আনা !
হরিদা ( লজ্জিতভাবে হেসে ) : কী আর করা যাবে বল ? খাঁটি মানুষ তো নয় , এই বহুরূপীর জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে ?
[ সকলে হরিদার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল ; ধীরে ধীরে পর্দা নেমে এল। ]
List of Subjects -
[ Just CLICK on the subjects below to get all the projects / notes ]
0 comments