­
উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত প্রকল্প : সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা : আর্যভট্ট। - Nandan Dutta

উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত প্রকল্প : সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা : আর্যভট্ট।

by - September 04, 2022

উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত প্রকল্প : সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা : আর্যভট্ট। 




সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা : আর্যভট্ট। 


ভূমিকা :- 
কোনো কোনো ইংরেজ ঐতিহাসিক এবং এবং তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু ভারতীয় পন্ডিত বলেন - ভারতীয়রা স্বভাবত ভাবপ্রবণ ও বাস্তববিমুখ। তাই সাহিত্য , দর্শন , শিল্প , সমাজবিদ্যা , স্মৃতিশাস্ত্র , ধর্মশাস্ত্র - ইত্যাদি বিষয়ে ভারতীয়দের অগাধ পান্ডিত্য ও অসাধারণ অবদান থাকলেও বিশুদ্ধ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় ভারতীয়দের অবদান নগন্য। কিন্তু ভারতীয়দের সম্পর্কে এই অভিযোগ সর্বৈব ভিত্তিহীন। আধুনিক গবেষণায় জানা গেছে , প্রাচীন যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় ভারতীয়রা উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেছিল। যেসকল ব্যক্তিবর্গ ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম আর্যভট্ট। 

বর্তমান প্রকল্পটিতে আর্যভট্টের জীবন সম্পর্কে , তাঁর বিজ্ঞান চর্চা সম্পর্কে , আবিষ্কৃত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সম্পর্কে ও ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চায় তাঁর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। 

যেসকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হয়েছে সেগুলি হল - 
১. আর্যভট্টের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা। 
২. ভারতীয় গণিত শাস্ত্রে আর্যভট্টের অবদান আলোচনা করা। 
৩. ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আর্যভট্টের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা। 
৪. আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতচর্চা আর্যভট্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নীতির দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়েছে - সে সম্পর্কে আলোচনা করা। 
৫. আর্যভট্টের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন সম্পর্কে জানা। 

প্রকল্পের গুরুত্ব :- 
যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে সেগুলি হল - 
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চার উৎকর্ষতা সম্পর্কে ধারণা অর্জন সম্ভব। 
২. প্রকল্পটির মাধ্যমে আর্যভট্ট ও তাঁর বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা সম্পর্কে জানা সম্ভব। 
৩. প্রকল্পটিতে আর্যভট্টের বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক উদ্ভাবনগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। 
৪. পাশ্চাত্য জ্ঞান - বিজ্ঞান চর্চা ও আধুনিক ভারতীয় জ্ঞান - বিজ্ঞানের চর্চা আর্যভট্টের বৈজ্ঞানিক নীতির দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়েছে - সে সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকরি। 
৫. সর্বোপরি প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চা ও আর্যভট্ট সম্পর্কে শিক্ষার্থিদের কৌতূহলী করে তোলা সম্ভব। 
 
 কর্মপরিকল্পনা / পদ্ধতিগত দিক :- 

প্রকল্পটি নির্মাণ করতে যেসকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলি হল -   

>> বিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা X মহাশয় / মহাশয়া কর্তৃক প্রকল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন। 

>> বিষয় নির্বাচনের পর মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত দিকগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - র নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

>> সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা করে সেটি মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নিকট উপস্থাপন করা হয় এবং তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করেন। 

>> মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর পুনরায় প্রকল্পটি প্রস্তুত করা হয়। 

>> প্রয়োজনীয় চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলি প্রতিবেদনে সংযোজিত করা হয়। 

>> পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। 


তথ্য সংগ্রহ / পরীক্ষামূলক উপাদান :- 

[ এখানে যেকোনো নোট বই থেকে আর্যভট্ট সম্পর্কে যতটা ইচ্ছা লিখতে হবে। ] 

তথ্য - বিশ্লেষণ / প্রকল্পের ব্যাখ্যা :- 

(i) আর্যভট্টই প্রথম ভারতীয় ব্যক্তি যিনি ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানকে বিশ্বের দরবারে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। 

(ii) আর্যভট্ট বিবিধ গাণিতিক সূত্র ও পদ্ধতির উদ্ভাবক। যেমন - বর্গমূল , ঘনমূল , সমান্তর শ্রেণী , যোগফল , দ্বিঘাত সমীকরণ - ইত্যাদি। 

(iii) সৌরজগৎ সম্পর্কে আর্যভট্টের ধারণা বৈজ্ঞানিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। তিনিই প্রথম মহাবিশ্বের অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সঠিক ধারণা প্রদান করেন। 

(iv) পৃথিবীর দুটি গতি যথা - আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি সম্পর্কে আর্যভট্ট তাঁর বৈজ্ঞানিক অভিমত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন - যা আজ আধুনিক বিজ্ঞানের দ্বারা স্বীকৃত। 

(v) আর্যভট্টের বৈজ্ঞানিক কর্মকান্ড থেকে স্পষ্টরূপে বলা যায় , ভারতীয়রা উচ্চমার্গের আধ্যাত্মিক চেতনার সঙ্গে সঙ্গে উৎকৃষ্ট জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রেও বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে। 
(vi) আর্যভট্ট কর্তৃক রচিত আর্যভট্টিয় , আর্যাষ্টশতক , দশগীতিকাসুত্র - ইত্যাদি গ্রন্থগুলি ভারতীয় জ্যোতিষ ও গণিতশাস্ত্রের ক্ষেত্রে অমূল্য সম্পদ। প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান - বিজ্ঞান চর্চা যে কতটা উন্নত ছিল - তা এই গ্রন্থগুলি থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। 

(vii) অন্যান্য গাণিতিক সূত্রের সঙ্গে অক্ষরের দ্বারা সংখ্যার প্রকাশ - আর্যভট্টের এক অমূল্য অবদান। এছাড়াও আর্যভট্ট ত্রিকোণমিতির জ্যার্ধ ও তার মান - ইত্যাদি গাণিতিক সূত্র আবিষ্কারের জন্য আর্যভট্ট চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। 

(viii) আর্যভট্ট কর্তৃক রচিত আর্যাষ্টশতক গ্রন্থে সময়গণনার বিজ্ঞানসম্মত ও অত্যাধুনিক তত্ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। সময়গণনার ক্ষেত্রে আর্যভট্টই সর্বপ্রথম বাস্তবসম্মত গণিতের প্রয়োগ করেন। 

(ix) আর্যভট্ট কর্তৃক রচিত দশগীতিকাসুত্র গ্রন্থে মহাকাশের রহস্য সম্পর্কে যাবতীয় বর্ণনা পাওয়া যায়। এতে প্রতিটি গ্রহের আবর্তনের পথ , রবিমার্গ - ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ভারতে তথা সমগ্র পৃথিবীতে মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে এটি বিজ্ঞানসম্মত ও গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ। যা মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে এক নতুন পথনির্দেশ প্রদান করেছিল। 

উপসংহার :- 
ভারতে বিজ্ঞানসম্মত জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতিষ্টাতা ছিলেন আর্যভট্ট। গণিত শাস্ত্রের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার উপযুক্ত। এই সকল কারণে আর্যভট্টকে গুপ্তযুগের নিউটন আখ্যা দেওয়া হয়। বিশ্বের দরবারে ভারতীয় জ্ঞান - বিজ্ঞান , গণিত ও জ্যোতিষ শাস্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে আর্যভট্ট ছিলেন প্রাণপুরুষ। 

সীমাবদ্ধতা :- 
প্রকল্পটি রূপায়নকালে এবং রূপায়িত হওয়ার পর যেসকল ত্রুটি - বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. বিভিন্ন পাঠ্যবই , সহায়ক গ্রন্থ - ইত্যাদিতে আর্যভট্ট সম্পর্কে তথ্য খুবই সীমিত আকারে দেওয়া আছে। আর্যভট্টের প্রাথমিক জীবন , কয়েকটি গ্রন্থ ও আর্যভট্ট কর্তৃক আবিষ্কৃত কয়েকটি সূত্র ছাড়া আর্যভট্ট সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়না। তাই প্রকল্পের জন্য তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। 
২. আর্যভট্ট কর্তৃক রচিত গ্রন্থগুলির বিস্তারিত বিবরণ প্রকল্পটিতে অনুপস্থিত। 

গ্রন্থপঞ্জি / তথ্য সূত্র :- 
যেসকল গ্রন্থগুলি থেকে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস - ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। 
২. প্রাচীন ভারতের সংস্কৃত সাহিত্য - ডক্টর উদয়চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। 
৩. সংস্কৃত সাহিত্য কা ইতিহাস - বাচস্পতি গৈরালা।   




    

You May Also Like

0 comments