উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত প্রকল্প : সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা : বরাহমিহির।
উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত প্রকল্প : সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা : বরাহমিহির।
সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা : বরাহমিহির।
ভূমিকা :-
কোনো কোনো ইংরেজ ঐতিহাসিক এবং এবং তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু ভারতীয় পন্ডিত বলেন - ভারতীয়রা স্বভাবত ভাবপ্রবণ ও বাস্তববিমুখ। তাই সাহিত্য , দর্শন , শিল্প , সমাজবিদ্যা , স্মৃতিশাস্ত্র , ধর্মশাস্ত্র - ইত্যাদি বিষয়ে ভারতীয়দের অগাধ পান্ডিত্য ও অসাধারণ অবদান থাকলেও বিশুদ্ধ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় ভারতীয়দের অবদান নগন্য। কিন্তু ভারতীয়দের সম্পর্কে এই অভিযোগ সর্বৈব ভিত্তিহীন। আধুনিক গবেষণায় জানা গেছে , প্রাচীন যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় ভারতীয়রা উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেছিল। যেসকল ব্যক্তিবর্গ ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম বরাহমিহির।
বর্তমান প্রকল্পটিতে বরাহমিহিরের জীবন সম্পর্কে , তাঁর বিজ্ঞান চর্চা সম্পর্কে , আবিষ্কৃত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সম্পর্কে ও ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চায় তাঁর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
যেসকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হয়েছে সেগুলি হল -
১. বরাহমিহিরের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা।
২. ভারতীয় গণিত শাস্ত্রে বরাহমিহিরের অবদান আলোচনা করা।
৩. ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বরাহমিহিরের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা।
৪. আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতচর্চা বরাহমিহির কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নীতির দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়েছে - সে সম্পর্কে আলোচনা করা।
৫. বরাহমিহিরের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন সম্পর্কে জানা।
প্রকল্পের গুরুত্ব :-
যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে সেগুলি হল -
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চার উৎকর্ষতা সম্পর্কে ধারণা অর্জন সম্ভব।
২. প্রকল্পটির মাধ্যমে বরাহমিহির ও তাঁর বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা সম্পর্কে জানা সম্ভব।
৩. প্রকল্পটিতে বরাহমিহিরের বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক উদ্ভাবনগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ।
৪. পাশ্চাত্য জ্ঞান - বিজ্ঞান চর্চা ও আধুনিক ভারতীয় জ্ঞান - বিজ্ঞানের চর্চা বরাহমিহিরের বৈজ্ঞানিক নীতির দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়েছে - সে সম্পর্কে জানতে প্রকল্পটি কার্যকরি।
৫. সর্বোপরি প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চা ও বরাহমিহির সম্পর্কে শিক্ষার্থিদের কৌতূহলী করে তোলা সম্ভব।
কর্মপরিকল্পনা / পদ্ধতিগত দিক :-
প্রকল্পটি নির্মাণ করতে যেসকল পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলি হল -
>> বিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা X মহাশয় / মহাশয়া কর্তৃক প্রকল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন।
>> বিষয় নির্বাচনের পর মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত দিকগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
>> মাননীয় শিক্ষক মহাশয় / মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়া - র নির্দেশমত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
>> সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা করে সেটি মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নিকট উপস্থাপন করা হয় এবং তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করেন।
>> মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর পুনরায় প্রকল্পটি প্রস্তুত করা হয়।
>> প্রয়োজনীয় চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলি প্রতিবেদনে সংযোজিত করা হয়।
>> পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।
[ এখানে যেকোনো নোট বই থেকে বরাহমিহির সম্পর্কে যতটা ইচ্ছা লিখতে হবে। ]
তথ্য - বিশ্লেষণ / প্রকল্পের ব্যাখ্যা :-
(i) ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে আর্যভট্টের পরেই বরাহমিহিরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
(ii) বরাহমিহির জ্যোতিষশাস্ত্রের তিনটি শাখাতেই পন্ডিত ছিলেন।
(iii) ফলিত জ্যোতিষ সম্পর্কে বরাহমিহিরের দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল - বৃহজ্জাতক ও লঘুজাতক।
(iv) গণিত - জ্যোতিষের ক্ষেত্রে বরাহমিহিরের পাঁচটি গ্রন্থ অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। এগুলিকে একত্রে বলে পঞ্চসিদ্ধান্তিকা। অত্যন্ত উচ্চমানের বিশেষ রচনাকেই 'সিদ্ধান্ত' বলে অভিহিত করা হত। এই সিদ্ধান্তগুলির নাম হল - পৈতামহ সিদ্ধান্ত , বশিষ্ঠসিদ্ধান্ত , সৌর বা সূর্যসিদ্ধান্ত , রোমক সিদ্ধান্ত , পৌলিশ সিদ্ধান্ত।
(v) অবশ্য সিদ্ধান্তগুলি বরাহমিহিরের মৌলিক নয় , এগুলি উৎকৃষ্ট সংকলনমাত্র।
(vi) সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে রোমকসিদ্ধান্ত হল মূলতঃ পাশ্চাত্য জ্যোতিষের সারসংকলন।
(vii) পৈতামহ সিদ্ধান্ততে ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল নির্যাস সন্নিহিত আছে।
(viii) বশিষ্ঠ সিদ্ধান্ততে চন্দ্র ও সূর্যের অবস্থান নির্ণয় এবং দিবারাত্রির পরিমান নির্ণয়ের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি আলোচিত হয়েছে।
(ix) সৌরসিদ্ধান্তে সৌর বৎসর সংক্রান্ত আলোচনা সংকলিত হয়েছে।
(x) বেদাঙ্গ জ্যোতিষের কালে ফলিত জ্যোতিষের কোনো পৃথক অস্তিত্ব ছিল না। গণিতশাস্ত্র জ্যোতিষের সাথে সন্নিবিষ্ট ছিল। কেবলমাত্র বরাহমিহিরের গ্রন্থেই ফলিত জ্যোতিষের অস্তিত্ব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।
(xi) বরাহমিহির ভারতীয় জ্যোতিষচর্চা ও কোষ্ঠিগণনার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করেছিলেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
(xii) সর্বোপরি একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানকে বিশ্বের দরবারে বরাহমিহির অতি উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
উপসংহার :-
ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানকে যাঁরা বিশ্বের দরবারে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন - তাঁদের মধ্যে বরাহমিহির অন্যতম। তিনি ভারতীয় গণিত ও জ্যোতিষশাস্ত্রে তাঁর অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। জ্যোতিষচর্চা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়গুলিকে সুবিন্যস্ত আকারে উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে উক্ত বিষয়ের বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার বহুযুগ আগে ভারতীয় মনীষীদের এইরূপ উন্নত ও নির্ভুল পরিমাপ দেখলে আশ্চার্যান্বিত হতে হয়।
সীমাবদ্ধতা :-
প্রকল্পটি রূপায়নকালে এবং রূপায়িত হওয়ার পর যেসকল ত্রুটি - বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে - সেগুলি হল -
১. বিভিন্ন পাঠ্যবই , সহায়ক গ্রন্থ - ইত্যাদিতে বরাহমিহির সম্পর্কে তথ্য খুবই সীমিত আকারে দেওয়া আছে। বরাহমিহির প্রাথমিক জীবন , কয়েকটি গ্রন্থ ও বরাহমিহির কর্তৃক আবিষ্কৃত কয়েকটি সূত্র ছাড়া বরাহমিহির সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়না। তাই প্রকল্পের জন্য তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
২. বরাহমিহির কর্তৃক রচিত গ্রন্থগুলির বিস্তারিত বিবরণ প্রকল্পটিতে অনুপস্থিত।
গ্রন্থপঞ্জি / তথ্য সূত্র :-
যেসকল গ্রন্থগুলি থেকে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে - সেগুলি হল -
১. সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস - ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
২. প্রাচীন ভারতের সংস্কৃত সাহিত্য - ডক্টর উদয়চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩. সংস্কৃত সাহিত্য কা ইতিহাস - বাচস্পতি গৈরালা।
0 comments