Pages

Powered by Blogger.

Pages

Pages

Pages

facebook twitter instagram pinterest bloglovin Email
Career CLASS 11 (XI) Class XI 1st Semester CLASS XI 2nd Semester H.S. 3rd SEM H.S. EDUCATION H.S. HISTORY HS SOCIOLOGY HS SUGGESTION INDIAN HISTORY NCERT POLITY PROJECT Sociological Studies Teaching & Education TEST PAPERS SOLVE TEST PAPERS SOLVE 2020 WORLD HISTORY XI EDUCATION XI HISTORY XI POL SC XI SOCIOLOGY XII Bengali XII Sanskrit

Pages

Nandan Dutta

School project and education news.

Pages

প্রকল্পের কৃতজ্ঞতা স্বীকার।  

কৃতজ্ঞতা স্বীকার লেখার নিয়ম। 

উচ্চমাধ্যমিক প্রকল্পের কৃতজ্ঞতা স্বীকার লেখার নিয়ম। 




প্রকল্পের কৃতজ্ঞতা স্বীকার। 


বিদ্যালয়ের যেকোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা স্বীকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কৃতজ্ঞতা লেখার সময় বিশেষ কিছু নিয়ম ও গঠনের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। প্রকল্পগুলিকে মূলতঃ দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন - (A) প্রতিবেদনমূলক প্রকল্প ও (B) সাক্ষাৎকারমূলক প্রকল্প। এই দুই ধরণের প্রকল্পের কৃতজ্ঞতা স্বীকার কখনই এক প্রকার লেখা যাবে না। নীচে দুই ধরণের প্রকল্পের কৃতজ্ঞতা স্বীকার কীভাবে লিখতে হবে তা দেখানো হল। 

(A) প্রতিবেদনমূলক প্রকল্পের ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা স্বীকার :- 


                               - : কৃতজ্ঞতা স্বীকার :- 


আমি ___________১_____________ বিদ্যালয়ের ______২________ শ্রেণীর একজন ছাত্র /ছাত্রী এবং আমি এই মর্মে স্বীকার করি যে ____________৩________________ শীর্ষক প্রকল্পটি রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক / প্রধান শিক্ষিকা - মাননীয় / মাননীয়া _______৪_________ মহাশয় / মহাশয়া ও বিদ্যালয়ের  _______৫_________ বিষয়ের শিক্ষক / শিক্ষিকা - মাননীয় / মাননীয়া _____৬________ মহাশয় / মহাশয়ার অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর পথনির্দেশ ও অভিভাবকত্বে প্রকল্পটি নির্মাণ করা সম্ভবপর হয়েছে। 

এছাড়াও আমি আমার অভিভাবক ও সহপাঠীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতাবদ্ধ। তাঁদের আন্তরিক সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে সহায়ক হয়েছে।   

প্রকল্প রূপায়কের সাক্ষর 

দিনাঙ্ক ______৭_______ 

_________৮__________  

[ ১. নিজের বিদ্যালয়ের নাম। 
২. কোন শ্রেণি / ক্লাশ। 
৩. প্রকল্পের শিরোনাম। 
৪. প্রধান শিক্ষক / প্রধান শিক্ষিকার নাম। 
৫. বিষয়। 
৬. বিষয়ের শিক্ষক / শিক্ষিকার নাম ( যিনি প্রকল্প কর্মটি করতে দিয়েছেন তাঁর নাম ) । 
৭. তারিখ। 
৮. জেলা। ] 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।


(B) সাক্ষাৎকারমূলক প্রকল্পের ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা স্বীকার :- 


                               - : কৃতজ্ঞতা স্বীকার :- 


আমি ___________১_____________ বিদ্যালয়ের ______২________ শ্রেণীর একজন ছাত্র /ছাত্রী এবং আমি এই মর্মে স্বীকার করি যে ____________৩________________ শীর্ষক প্রকল্পটি রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক / প্রধান শিক্ষিকা - মাননীয় / মাননীয়া _______৪_________ মহাশয় / মহাশয়া ও বিদ্যালয়ের  _______৫_________ বিষয়ের শিক্ষক / শিক্ষিকা - মাননীয় / মাননীয়া _____৬________ মহাশয় / মহাশয়ার অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর পথনির্দেশ ও অভিভাবকত্বে প্রকল্পটি নির্মাণ করা সম্ভবপর হয়েছে। 

এর সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ছাত্র - ছাত্রী / ব্যক্তির প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতাবদ্ধ। প্রকল্পের প্রয়োজনে  সাক্ষাৎকার প্রদানে তাঁরা যে অমূল্য সময় ও মতামত প্রদান করছেন - সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।   

এছাড়াও আমি আমার অভিভাবক ও সহপাঠীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতাবদ্ধ। তাঁদের আন্তরিক সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে সহায়ক হয়েছে।   

প্রকল্প রূপায়কের সাক্ষর 

দিনাঙ্ক ______৭_______ 

_________৮__________  

[ ১. নিজের বিদ্যালয়ের নাম। 
২. কোন শ্রেণি / ক্লাশ। 
৩. প্রকল্পের শিরোনাম। 
৪. প্রধান শিক্ষক / প্রধান শিক্ষিকার নাম। 
৫. বিষয়। 
৬. বিষয়ের শিক্ষক / শিক্ষিকার নাম ( যিনি প্রকল্প কর্মটি করতে দিয়েছেন তাঁর নাম ) । 
৭. তারিখ। 
৮. জেলা। ] 

এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো যে , যদি সাক্ষাৎকারের জন্য নিজের বিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে হয় তাহলে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক / প্রধান শিক্ষিকার নাম এর সঙ্গে যোগ করতে হবে। 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

 
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

উচ্চমাধ্যমিক প্রকল্প : কিশোর অপরাধ প্রবণতা :- 

উচ্চমাধ্যমিক সমাজতত্ত্ব প্রকল্প : কিশোর অপরাধ প্রবণতা। 

কিশোর অপরাধ প্রবণতার কারণ। কিশোর অপরাধ প্রবণতার বৈশিষ্ট। কিশোর অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ। 



উচ্চমাধ্যমিক প্রকল্প : কিশোর অপরাধ প্রবণতা :- 

ভূমিকা :- 

বর্তমান ভারতে কিশোর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক। কিশোর অপরাধ প্রবণতার বিষয়টি শুধুমাত্র ভারতে নয় - সারা পৃথিবীতেই কিশোর অপরাধ প্রবণতার বিষয়টি উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। কিশোর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির কারণগুলি মূলতঃ সামাজিক , অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক। শিশু ও কিশোরদের বিশেষ ধরণের সমস্যাগুলি তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি করে। এই ধরণের প্রবণতাকে শিশু ও কিশোর অপরাধ বা Juvenile Delinquency বলা হয়। ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত ব্যখ্যা অনুযায়ী , ৭ থেকে ১৮ বছরের নীচের শিশু ও কিশোরদের Juvenile Justice Act 1986 দ্বারা বিচার করা হয়। কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত আদালতের একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসাবে ডক্টর জে বি মুখোপাধ্যায় বলেছেন , কিশোরদের অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপ নির্ভর করে তাদের শ্রেণিগত জীবনযাত্রা ও সামাজিক পরিবেশের উপর। সমাজতাত্ত্বিক ও পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সভানেত্রী ডক্টর বেলা দত্তগুপ্ত বলেছেন , কিশোর অপরাধ প্রবণতার প্রতিকারের যেকোনো প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক শৃঙ্খলার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। 

বর্তমান প্রকল্পটিতে শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিশোর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ , কিশোর অপরাধ প্রবণতা দূর করতে ও প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ , কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত সাংবিধানিক বিষয় , কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চালচিত্র , সমাজতত্ববিদদের অভিমত - ইত্যাদি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য :- 

যেসকল উদ্দেশ্যগুলিকে সামনে রেখে প্রকল্পটি রচনা করা হয়েছে সেগুলি হল - 
১. কিশোর অপরাধ প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা গঠন। 
২. কিশোর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির কারণগুলি অনুসন্ধান করা। 
৩. সামাজিক ও পরিকাঠামো সংক্রান্ত কারণগুলি ছাড়াও বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলিও কিশোর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। সেই সকল মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। 
৪. কিশোর অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধ করতে যেসকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে - সে সম্পর্কে ধারণা গঠন। 
৫. কিশোর অপরাধ প্রবণতা সম্পর্কে চিকিৎসক , মনস্তত্ত্ববিদ ও সমাজতত্ববিদদের মতামত বিশ্লেষণ করা। 
৬. কিশোর অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধ করতে যেসকল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে - সেগুলি কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং তার বাস্তবতা সম্পর্কে আলোচনা করা। 
৭. কিশোর অপরাধের বিভিন্ন বৈশিষ্টগুলির উপর আলোকপাত করা। 
৮. আন্তর্জাতিক স্তরে কিশোর অপরাধ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যেসকল গবেষণা ও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে , সেগুলি তুলে ধরা। 
৯. কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত সাংবিধানিক বিষয়গুলি সম্পর্কে ধারণা গঠন করা। 
১০. সর্বোপরি , বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তোলা। 

প্রকল্পের গুরুত্ব :- 

যেসকল কারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে , সেগুলি হল - 
১. প্রকল্পটির মাধ্যমে কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়টি সম্পর্কে যথার্থ ধারণা গঠন সম্ভব। 
২. কিশোর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির কারণগুলি প্রকল্পটির মাধ্যমে সহজেই জানা সম্ভব। 
৩. প্রকল্পটির মাধ্যমে কিশোর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি সম্পর্কে জানা সম্ভব। 
৪. ভারতে কিশোর অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধে যেসকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে - প্রকল্পটিতে সেসম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হয়েছে। 
৫. কিশোর অপরাধ প্রবণতা প্রসঙ্গে বিভিন্ন চিকিৎসক , মনস্তত্ত্ববিদ ও সমাজতত্ববিদদের মূল্যবান আলোচনা প্রকল্পটিকে সমৃদ্ধ করেছে। 
৬. কিশোর অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধে যেসকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে - সেগুলির যথার্থতা , বাস্তবতা ও কার্যকারিতা - সম্পর্কে প্রকল্পটিতে মূল্যবান আলোচনা সংযোজিত হয়েছে। 
৭. প্রকল্পটির মাধ্যমে কিশোর অপরাধের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্টগুলি সম্পর্কে জানা সম্ভব। 
৮. আন্তর্জাতিক স্তরে কিশোর অপরাধ প্রবণতা সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণা চলছে ও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটিতে এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা বর্তমান। 
৯. প্রকল্পটির মাধ্যমে কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত সাংবিধানিক বিষয়গুলি সম্পর্কে সহজেই জানা সম্ভব। 
১০. সর্বোপরি , প্রকল্পটি কিশোর অপরাধ প্রবণতার বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তুলতে সহায়তা করবে।  

কর্মপরিকল্পনা ও পদ্ধতিগত দিক :- 

'' কিশোর অপরাধ প্রবণতা '' শীর্ষক প্রতিবেদনমূলক প্রকল্পটি রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অনুসৃত হয়েছে। এগুলি হল - 

# বিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিষয়ের মাননীয় / মাননীয়া শিক্ষক / শিক্ষিকা কর্তৃক প্রকল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন। 

# মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করা হয়। সেই পরিকল্পনা অনুসারে পাঠ্যপুস্তক ও বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার থেকে বিভিন্ন পুস্তক গ্রহণ করে সেগুলি থেকে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

# সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন রচনা করা হয়। 

# খসড়া প্রতিবেদনটি মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নিকট উপস্থাপন করা হলে তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশদান করেন। 

# মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকার নির্দেশমত প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর প্রতিবেদনটি পুনরায় লিপিবদ্ধ করা হয়। 

# প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় চিত্র প্রতিবেদনটিতে সংযোজন করা হয়। 

# পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটিকে বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।    

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

তথ্য সংগ্রহ :- 

বিদ্যালয়ের মাননীয় শিক্ষক / মাননীয়া শিক্ষিকা - র নির্দেশমত নিমলিখিত তথ্যগুলি সংগ্রহ করা হয়। 

কিশোর অপরাধের বিভিন্ন কারণ :- 


শিশু ও কিশোর অপরাধ অনুষ্ঠিত হওয়ার পেছেনে যেসকল উপাদান দায়ী সেগুলি মূলতঃ দুই ভাগে বিভক্ত - ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশমূলক। শিশু ও কিশোর অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পেছনে দায়ী বিভিন্ন কারণগুলি হল - 

১. পরিবারের ভূমিকা :- মনস্তাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিকরা মনে করেন - প্রাক শৈশব অভিজ্ঞতা , আবেগীয় অবদমন , শিশু গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ত্রুটি - বিচ্যুতি - ইত্যাদি বিষয়গুলি শিশু ও কিশোর অপরাধ সংগঠন করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তিত্ব গঠন , উন্নয়ন , মূল্যবোধ , জীবনশৈলীর শিক্ষা - ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথার্থ প্রতিপালন করা না হলে তা শিশু ও কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবন মানসিকতা গড়ে তোলে। 

২. পারিপার্শ্বিক পরিবেশ :- পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে শিশু ও কিশোরদের প্রতি বিরূপ আচরণ , প্রচলিত সংস্কৃতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব , কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা , বয়স্কদের সামাজিক ভূমিকা , নৈতিকতার শিক্ষার অভাব - ইত্যাদি বিষয়গুলি শিশু ও কিশোরদের মনস্তাত্ত্বিক জগতে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ব্যাপক বৈপরীত্য ধীরে ধীরে কিশোর মনকে অপরাধ প্রবণ করে তোলে। 

৩. মূল্যবোধের অবক্ষয় :- বর্তমান প্রতিটি সমাজে চিরাচরিত মূল্যবোধের ক্রমাগত অবক্ষয় ঘটছে। এর জন্য দায়ী বিশ্বায়ন , মুক্ত বাজার অর্থনীতি , দারিদ্রতা , কর্মসংস্থানের অভাব - ইত্যাদি। ইতিবাচক মূল্যবোধ মানুষকে নৈতিকতার মানদন্ডে উপরের দিকে রাখে। কিন্তু ধীরে ধীরে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটার ফলে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

৪. উত্তেজক চলচ্চিত্র ও পর্নোগ্রাফি :- উত্তেজক চলচ্চিত্র ও পর্নোগ্রাফি শিশু ও কিশোর মনকে নেতিবাচক করে তোলে ; তাদের মধ্যে উশৃঙ্খল জীবন যাপনের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। ধূমপান , মদ্যপান , ড্রাগ - সেবন - ইত্যাদি প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এগুলির সামগ্রিক ফল হিসাবে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায় , হিরোইজম , কঠোর মনোভাব , অপরাধ সংগঠনের প্রতি আকর্ষণ - ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। 

৫. সুনির্দিষ্ট নীতির অভাব :- শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নীতির অভাবে বিষয়টি দিনে দিনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে। উপযুক্ত পাঠক্রমের অভাব , মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সিলিংয়ের অভাব , আচরণ সংশোধনমূলক পদক্ষেপের অভাব - ইত্যাদি বিষয়গুলি শিশু ও কিশোর অপরাধকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছে। 

শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতার বৈশিষ্ট :- 


(ক ) অপরাধের হার উত্তর কৈশোর অর্থাৎ ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে অনেক বেশি দেখা যায়। 
(খ ) গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতার হার বেশি। 
(গ ) যথার্থ শিক্ষার অভাব অপরাধ বৃদ্বির একটি অন্যতম কারণ। 
(ঘ ) শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতার মূল কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে দারিদ্রতা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থাই হল এর মূল কারণ। 
(ঙ ) কিশোরীদের তুলনায় কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা অধিক মাত্রায় লক্ষ্য করা যায়। 
(চ ) যেসকল শিশু পিতা - মাতা ও অন্যান্য অভিভাবকের সঙ্গে থাকে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার হার বেশি। 
(ছ ) ভারতে সংগঠিত কিশোর অপরাধ সংগঠনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। 

শিশু ও কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ / কর্মসূচি :- 


১. ১৮৫০ সালে Apprentice Act চালু করে বলা হয় যে শাস্তিপ্রাপ্ত কিশোরদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে ; যার ফলে শাস্তিপ্রাপ্ত কিশোররা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে যেতে পারবে। 

২. ১৯৭৬ সালে Reformatory School Act চালু করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে বলা হয় ১৫ বছরের কম বয়স্ক শিশুরা শাস্তিপ্রাপ্ত হলে তাদের সংশোধনমূলক প্রতিষ্ঠানে তিন - চার বছরের বিশেষ সংশোধনাত্মক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। 

৩. ১৯৬০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কিশোরদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত স্বতন্ত্র আদালত গঠন করে এবং দুঃস্থ কিশোরদের দেখাশোনার ভার শিশু কল্যাণ পর্ষদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। 

৪. ১৯৮৬ সালে Juvenile Justice Act চালু করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। 

৫. Juvenile Board গঠনের মাধ্যমে অভিভাবকহীন কিশোরদের অপরাধ মুক্তির পর তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

৬. কিশোর অপরাধীদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে বহু সংশোধনমূলক আবাস গড়ে তোলা হয়েছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গের লিলুয়া হোম , বারাসাতের কিশলয় - ইত্যাদি।      

৭. শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতা প্রতিহত করতে মনিটরিং এবং মূল্যায়ন সংক্রান্ত কর্মসূচিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।   

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

তথ্য বিশ্লেষণ :- 

১. শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতা বিষয়টি নিয়ে আধুনিককালে বিশদে আলোচনা হলেও সমস্যাটির সূত্রপাত কিন্তু নতুন নয়। সমস্যাটি সর্বদায় প্রতিটি সমাজে বিরাজমান ছিল ; কিন্তু বর্তমানে সমস্যাটি নিয়ে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

২. অপরাধ প্রবণতার জন্ম নেয় মানব মনের গহীনে। সাধারণতঃ পরিবারের লালন পালনের ক্ষেত্রে ত্রুটি বিচ্যুতি , পারিপার্শ্বিক ঘটনাপ্রবাহ , মানসিক অসঙ্গতি , ভোগবাদের বিস্তার - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে সাধারণতঃ শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতার জন্য দায়ী করা হয়। 

৩. বর্তমান আধুনিক সমাজে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে। মানুষ সহযোগিতা , মানবিকতা , সহমর্মিতা - ইত্যাদি ভুলে গিয়ে তীব্রভাবে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। এর ফলে একদিকে যেমন মানুষ হতাশাবোধ ও হীনমন্যতায় ভুগছে , তেমনি অন্যদিকে শিশু ও কিশোর মনকে তা ভারাক্রান্ত করে তুলছে। 

৪. বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে পণ্যের সহজলভ্যতা , পর্নোগ্রাফির রমরমা ও সহজলভ্যতা , কিছু অশ্লীল সাহিত্য , ভিডিও গেমের প্রতি আসক্তি , ড্রাগ সহ অন্যান্য নেশার প্রতি আসক্তি - ইত্যাদি বিষয়গুলি শিশু ও কিশোরমনের সুকোমল বৃত্তিগুলিকে বিলুপ্ত করে তুলছে। এর ফলে শিশু ও কিশোররা সুস্থ সংস্কৃতির পরিবর্তে এক বিকৃত সংস্কৃতির শিকার হয়ে পড়ছে। এর ফলেই বাড়ছে শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতা। 
৫. শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতার শিক্ষার অভাব লক্ষণীয়। ফলে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে নৈতিকতার অভাব ঘটছে। নৈতিকতার শিক্ষার অভাবে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এক গভীর যন্ত্রণাবোধ ও মানসিক অস্থিরতা তৈরী হচ্ছে। এর অনিবার্য পরিণতিতে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

৬. শিশু ও কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধ করতে সরকারি পদক্ষেপগুলি প্রশংসনীয় হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কর্মসূচীগুলি খাতা ও ফাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। সংশোধনমূলক হোম গুলিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ , নিম্নমানের খাদ্য পরিবেশন , যথার্থ প্রশিক্ষণের অভাব , বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের অভাব - ইত্যাদি কারণে বেশিরভাগ অভিভাবকেরাই নিজেদের অপরাধ প্রবন সন্তানকে এই সকল হোমে পাঠাতে চান না। 

৭. শহরাঞ্চলে যেহেতু যোগাযোগের সহজলভ্যতা রয়েছে , পণ্যপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা রয়েছে , এবং শিশু ও কিশোরদের অপরাধ প্রবন হওয়ার সবগুলি কারণের অস্তিত্ব রয়েছে - তাই গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা অধিক পরিমানে দেখা যায়। 

৮. অপরাধপ্রবন শিশু ও কিশোরদের পুনর্বাসনের নীতি গৃহীত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। যথাযথ পুনর্বাসনের অভাবে সমাজ থেকে শিশু ও কিশোর অপরাধপ্রবণতার বিষাক্ত বীজটিকে উৎখাত করা সম্ভব হচ্ছে না। 

৯. বিচারপতি কৃষ্ণ আয়ার বলেছেন - কিশোর অপরাধীদের জন্য নির্ধারিত সংশোধনাগারগুলি কোনোমতেই স্বাস্থ্যকর নয়। তাছাড়া একসঙ্গে বহু অপরাধীকে ধরে রাখার ফলে তাদের খাদ্য , স্বাস্থ্য - ইত্যাদি বিষয়গুলি উন্নতমানের নয়। পুনর্বাসনের কর্মসূচীগুলি কাগজে কলমে থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়িত হয়না। এর ফলে মাঝে মধ্যেই কিশোর আবাসিকরা আবাসিক কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা করে , কেউ কেউ পালিয়ে যায় , কেউ কেউ আবার নতুন করে অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। 

১০. Juvenile Justice Act 1986 কে কেন্দ্র করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধনের চেষ্টা করা হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। কিশোর অপরাধীদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদানের কথা ঘোষণা করা হলেও সেরকম কোনো কর্মসূচি গৃহীত হয়নি। অপরাধপ্রবণ কিশোরদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের অভাবে তারা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসে নতুন করে জীবনধারণ করার সুযোগ পাচ্ছে না। 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

উপসংহার :- 

পরিশেষে বলা যায় যে , শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতার বিষয়টিকে একটি সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করে গৃহীত কর্মসূচিগুলিকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করলে , পুনর্বাসন এবং প্রতিরোধমূলক কর্মসূচিগুলিকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি - এই দুইভাবে ভাগ করে বাস্তবায়িত করলে , অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করলে - শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতা কিছুটা লাঘব হবে বলে আশা করা যায়। বস্তি , ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা - ইত্যাদি অঞ্চলে মনিটরিং নিয়মিত রাখতে হবে ; এছাড়াও যেসকল কর্মসূচিগুলি বর্তমানে চালু আছে তা রূপায়ণ করতে যে সকল কর্মীরা নিযুক্ত আছেন - তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

সীমাবদ্ধতা :- 

প্রকল্পটি রূপায়নকালে এবং রূপায়িত হওয়ার পর যেসকল সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি বিচ্যুতি দৃষ্টিগোচর হয়েছে - সেগুলি হল - 
১. প্রতিবেদনটিতে শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনা করা হয়নি। 
২. প্রতিবেদনে রাশি তথ্য অনুপস্থিত। 
৩. কিশোর অপরাধ প্রবণতা দূর করতে যেসকল সংগঠন কাজ করছে - তাদের ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনটিতে আলোচনা সীমাবদ্ধ। 
৪. ভারতে কিশোর অপরাধ প্রবণতা প্রশমন করতে যেসকল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে - সেগুলির আলোচনা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। 
৫. বিষয়টি সম্পর্কে কোনোরূপ সমীক্ষা করা হয়নি।
৬. কিশোর অপরাধীদের পুনর্বাসনের বিষয়টি তথ্য সহকারে আলোচনা করা হয়নি।        

গ্রন্থপঞ্জি :- 

যেসকল গ্রন্থগুলি থেকে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে , সেগুলি হল - 
১. ভারতীয় সামাজিক সমস্যা - বাণী প্রকাশন। 
২. ভারতীয় সমাজ - অনাদিকুমার মহাপাত্র। 
৩. Helps to the study of WBCS Sociology - Oriental Publication. 
৪. শিক্ষাতত্ত্ব - সুশীল রায়। 
৫. উচ্চমাধ্যমিক সমাজতত্ত্ব ( দ্বাদশ ) - অরুনাংশু প্রধান। 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বহুরূপী গল্পের সম্প্রসারণ। 

বহুরূপী গল্পের পরিবর্ধিত রূপ। 

বাংলা প্রকল্প। 

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প। 




গল্পের নাম : অ্যাডভেঞ্চার ও হরিদা। 
মূলগল্প : বহুরূপী।  
মূল গল্পের লেখক : সুবোধ ঘোষ। 

[ সুবোধ ঘোষের বহুরূপী গল্পটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গল্পটিকে বর্ধিত রূপ দেওয়া হয়েছে। বহুরূপী গল্পের চরিত্রগুলিকে ও ঘটনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়কে '' অ্যাডভেঞ্চার ও হরিদা '' - গল্পতে অনুসরণ করা হয়েছে। ]   


                            অ্যাডভেঞ্চার ও হরিদা। 

জগদীশবাবুর বাড়িতে সেদিন সন্ধ্যাবেলায় অফুরন্ত উপার্জনের সুযোগ ছিল হরিদার। কিন্তু হরিদা সেই সুযোগ হরিদা হেলায় হারালেন। বহুরূপী সাজতে গিয়ে চরিত্রের একেবারে অন্দরমহলে ঢুকে যান তিনি। বিরাগীর চরিত্রে হরিদা সত্যিকারের বিরাগীর মতই সমস্ত পার্থিব লোভকে উপেক্ষা করেছেন। আমরা এনিয়ে কিছুটা রাগারাগি করলেও হরিদা আগের মতোই নির্লিপ্ত থাকলেন। এভাবেই দিন চলতে থাকলো। কখনো হরিদার ভাতের হাড়িতে চাল ফোটে , কখনো শুধুই জল ফোটে। 

হরিদা বহুরূপী - সেকথা আমরা সকলেই জানি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হরিদাকে প্রকৃত শিল্পী বলে মনে করে। বহুরূপীর সাজ হরিদা খুব ভালোবাসেন। শুধু অর্থ উপার্জন করার থাকলে তো অনেকভাবেই করতে পারতেন হরিদা। কিন্তু যখন তিনি যে সাজে বহুরূপী সাজেন সেই রূপে তিনি যেন বিলীন হয়ে যান। সবই ঠিকঠাক চলছিল ; কিন্তু হরিদার জীবনের এই চরম আর্থিক দুরবস্থা আমাদের সকলকেই খুব ভাবিয়ে তোলে। কিন্তু আমাদের ঠিক যে কী করণীয় সেটা আমরা কেউই বুঝতে পারছিলাম না। তবে তার অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছিল। 

তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো - চরম আর্থিক দুর্গতির মধ্যে থাকলেও হরিদা আমাদের কাছে থেকে কখনোই টাকা ধার চান নি। আমরা সকলেই মোটামুটি স্বচ্ছল। তবে আমরা কখনোই আগ বাড়িয়ে হরিদাকে সাহায্য করতে যাইনি - পাছে হরিদার আত্মসম্মানে আঘাত লাগে ! 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

তবে এর ঠিক একমাস পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। উল্কার গতিতে ছুটতে থাকা এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সবকিছুই গতিশীল , চলমান। কোনোকিছুই এক অবস্থায় চিরকাল বিরাজমান থাকতে পারেনা। তাই হরিদার জীবনও পাল্টে গেল। 

একদিন পার্কের সামনে ট্রাফিক পুলিশ সেজে হরিদা গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল। যারা হরিদাকে চিনতে পেরেছিল তারা হরিদাকে দুটাকা - একটাকা দিয়ে হাসিমুখে চলে যায়। কেউ কেউ আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হরিদার কীর্তিকলাপ দেখতে থাকে। ট্রাফিক পুলিশরূপী হরিদাকে দেখে তেমন একটা আনন্দ বা মনোরঞ্জনের উদ্রেক না হলেও প্রতিদিনের একঘেঁয়েমি থেকে মুক্তির একটা আহ্বান ছিল। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে থেকে একটি বছর বাইশের ছেলে হরিদাকে দশটাকার দশটি কয়েন দেয়। হরিদা হাত পেতে কয়েনগুলো নেয় ঠিকই ; কিন্তু সেদিকে খুব একটা মনোযোগ দেয় না। চট করে কয়েনগুলো পকেটস্থ করে। আবার হরিদা নাটকীয়ভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। 

সেইদিন সন্ধ্যাবেলা হরিদার বাড়ি যেতেই হরিদাকে দেখলাম বেশ একটা খুশি খুশি ভাব। আমি জিজ্ঞেস করলাম - '' কী হয়েছে হরিদা , বেশ খুশি বলে মনে হচ্ছে ? '' 
হরিদা ছোট্ট করে বলেন ,- '' আজ পকেট বেশ গরম। ''
- '' কেন কী হয়েছে হরিদা ? '' 
- '' আজ দুপুরে ট্রাফিক পুলিশ সেজে পার্কের গেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। টুকটাক রোজগার হচ্ছিল ; হঠাৎ একটা ছেলে একটু বেশি খুশি হয়ে বেশ কয়েকটা দশ টাকার কয়েন দিয়ে গেল। '' 
অনাদি প্রশ্ন করে - '' তা কত রোজগার হল ? '' 
- '' গুনে তো দেখিনি , ওই পকেটের মধ্যে আছে এখনো। '' 

ভবতোষ আর অনাদি হরিদার পুলিশ-প্যান্টের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমিও উৎসাহ নিয়ে দেখতে থাকলাম। দু - এক টাকার কয়েনের সংখ্যায় বেশি। তবে কয়েকটা দশ টাকা - পাঁচ টাকার কয়েনও আছে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্য করার মত ব্যাপার হল দশটি দশ টাকার কয়েন। অনাদি হরিদার সমস্ত রোজগার থেকে দশ টাকার কয়েনগুলিকে আলাদা করলো। অনাদির ভ্রু কুঁচকে আছে। ভবতোষও কেমন যেন চিন্তিত দৃষ্টিতে কয়েন গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েন গুলো দেখে আমারও কেমন যেন খটকা লাগলো। 
অনাদি বললো - '' একটু বেশি চকচকে না ? এক্কেবারে নতুন ! '' 
ভবতোষ বললো - '' সোনার মত উজ্জ্বল। .............. এক্কেবারে সোনা বলেই তো মনে হচ্ছে। '' 
আমি বললাম - '' কয়েনের মধ্যেকার লেখা ও ছাপ সাধারণ কয়েনের মত নয়। '' 

আমরা তিনজনই একমত হলাম যে , এ সাধারণ দশ টাকার কয়েন নয়। আমরা প্রত্যেকেই এর মধ্যে কোনো গন্ধ পেলাম। হরিদা বেশ ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেছে। কী করবে , কী বলবে বুঝতে পারছে না সে। আমরা ঠিক করলাম কাল সকালেই পুলিশ স্টেশন যেতে হবে এগুলো নিয়ে। হরিদাও এতে সম্মতি দিল। তাঁর মধ্যে এখন খুশি খুশি ভাবটা উধাও। 

আমি বললাম - '' হরিদা , আজ রাতে তোমার কাছে এগুলো রাখা ঠিক হবে না। বিপদ হতে পারে। যে তোমাকে এগুলো  গেছে সে নিশ্চই এগুলো উদ্ধার করতে আসবে। '' 
অনাদি বললো , - '' তাহলে তো হরিদারও আজ রাতে বাড়িতে থাকা ঠিক নয় ; বিপদ তো হরিদারও হতে পারে। '' 
তাই আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম , আজ রাতে হরিদা আমার বাড়িতে থাকবে এবং কাল সকাল হতেই আমরা সবাই পুলিশ স্টেশন যাবো। 

সেইমত আমরা সকাল হতেই পুলিশ স্টেশনে পৌঁছলাম। থানার বড়বাবু হরিদাকে চিনতেন। তাই আমাদেরকে কোনো বিরূপ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হল না। হরিদার মুখ থেকে বড়বাবু সমস্তটাই শুনলেন , কয়েনগুলো দেখলেন এবং তারপর যা বললেন তাতে আমাদের সকলের চক্ষু চড়কগাছ। বড়বাবু বললেন , - '' এই প্রত্যেকটা কয়েন আসল চব্বিশ ক্যারাটের সোনা দিয়ে তৈরী। সাধারণের তুলনায় বেশি ভারী ; মোট ওজন প্রায় আড়াইশো গ্রাম এবং বাজার দর প্রায় দশ লক্ষ টাকা। কিছুদিন আগে উত্তরবঙ্গের এক পূর্বতন জমিদারবাড়িতে একটি সোনার বিগ্রহ চুরি হয়। পুলিশের উপরমহল সোর্স মারফত জানতে পারে , সেই বিগ্রহ গলিয়ে দশটি দশ টাকার কয়েনে পরিণত করা হয়। আমরা জানতে পারি চোর আমাদের থানা এলাকাতেই গা ঢাকা দিয়ে আছে। গতকাল দুপুরে এক সন্দেহজনক ব্যক্তিকে পার্কের পাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখে কর্তব্যরত পুলিশের সন্দেহ হয়। তাকে তাড়া করে ধরেও ফেলা হয়। কিন্তু তার কাছ থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি। সম্ভবতঃ সেই সময়ই ওই চোর হরির হাতে কয়েনগুলি দিয়ে দিয়েছিল। '' 

আমরা সকলেই চুপ। প্রচন্ড বিস্মিত। দুদিন পর বড়বাবু আবার আমাদের সকলকে পুলিশ স্টেশনে ডেকে পাঠালেন। আমরা গেলাম। বড়বাবু খুব খোশ মেজাজে ছিলেন। আমরা ঘরে ঢুকতেই বড়বাবু আমাদের সাদর অভ্যর্থনা জানালেন। তিনি বললেন - '' হরির জন্য দারুন একটা খবর আছে। আমরা পূর্ববঙ্গের সেই জমিদারবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা বলেছেন তাঁরা সেই সোনা দিয়ে আবার একটি বিগ্রহ গড়িয়ে নেবেন। কিন্তু হরির জন্য ভালো খবর হল এই যে সেই জমিদার বাড়ি থেকে তোমাকে পুরস্কৃত করা হবে। এই পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রায় তিন লক্ষ্য টাকা। এছাড়াও তাদের এখন জমিদারি না থাকলেও তাদের বিস্তর জমি জায়গা , দেখাশোনার জন্য লোক চাই। তারা সেই কাজে হরিকে নিযুক্ত করতে চান। '' 

বড়বাবুর মুখে এই কথাগুলি শুনে আমিতো খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। কিন্তু হরিদার মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন চোখে পড়লো না। হরিদা বললেন - '' না বড়বাবু ; এতে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই। তাই ওই পুরস্কারের যোগ্য প্রাপক আমি নই। এ আমি নিতে পারবো না বড়বাবু। আর তাছাড়া কোনো বাঁধাধরা কাজেও আমার কোনো উৎসাহ নেই। '' 

এবার কিন্তু আমরা সক্রিয় হলাম। আমরা জোর করে হরিদাকে পুরস্কারের অর্থমূল্য গ্রহণ করতে বাধ্য করলাম। কিন্তু জমিদারি দেখাশোনার কাজে রাজি করাতে পারলাম না। যাক পুরস্কার লাভের ফলে হরিদার অর্থকষ্ট তো লাঘব হল ; আর তাছাড়া হরিদা আমাদের ছেড়ে দূরে কোনো জায়গায় চলে যান - এটাও আমরা মন থেকে চাইনি। তাই হরিদা থেকে গেলেন তাঁর সেই পুরোনো রূপের খেলা নিয়েই। 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

চন্দ্রনাথ গল্পের সম্প্রসারণ। 

চন্দ্রনাথ গল্পের পরিবর্ধিত রূপ। 

বাংলা প্রকল্প। 

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প। 




গল্পের নাম : চন্দ্রনাথের প্রত্যাবর্তন।   
মূলগল্প : চন্দ্রনাথ। 
মূল গল্পের লেখক : তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়।  

[ তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের চন্দ্রনাথ গল্পটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গল্পটিকে বর্ধিত রূপ দেওয়া হয়েছে। চন্দ্রনাথ গল্পের চরিত্রগুলিকে ও ঘটনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়কে '' চন্দ্রনাথের প্রত্যাবর্তন  '' - গল্পতে অনুসরণ করা হয়েছে। ]    


                              চন্দ্রনাথের প্রত্যাবর্তন। 

চন্দ্রনাথ বরাবরই সাধারণ ও স্বাভাবিক বোধগম্যতার বাইরে বিরাজ করত - তার পরিচয় আমরা আগেই পেয়েছি। চন্দ্রনাথের মতে , তাঁকে অন্যায়ভাবে পরীক্ষায় সেকেন্ড করানো হয়েছে। সে আসলে ফার্স্ট হওয়ার যোগ্য। তাই দ্বিতীয় পুরস্কার গ্রহণ করাকে '' বিনিথ মাই ডিগনিটি '' বলে মনে করেছিল। চন্দ্রনাথের মতে হারু স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো হওয়ার সুবাদে আগে থেকেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জানতে পেরেছিল। আর তাছাড়াও পরীক্ষার খাতা দেখার সময় কিছু শিক্ষক হারুর প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব করেছেন। তা'ও অঙ্ক পরীক্ষার দিন হারু চন্দ্রনাথের খাতা দেখে অঙ্ক টুকেছিল। 

তবে , ম্যাট্রিক পরীক্ষার রেজাল্টের ব্যাপারে চন্দ্রনাথ যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল তার অনেকটা মিলে গেলেও একটা বিষয় মেলেনি - হারু ম্যাট্রিক পরীক্ষায় চন্দ্রনাথকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে। হারু খুব ভালো ফল করায় তার কাকা , স্কুলের সেক্রেটারি এক বিরাট ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন। চন্দ্রনাথ এই ভোজসভায় আমন্ত্রিত হলেও সে তো উপস্থিত হয়ই নি , বরং চিঠি লিখে সে এই ভোজসভার বিরূপ প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করে। ঠিক সেই ভোজসভার দিনই চন্দ্রনাথ যেন কোন জনহীন ছায়াপথে , সুদূর জ্যোতিস্কলোকের উদ্দেশ্যে হারিয়ে যায়। কোনো পিছুটান তার ছিলনা। স্কুলের সঙ্গে সম্পর্ক সে ছিন্ন করেছিল ; নিজ দাদা নিশানাথবাবুর সঙ্গে তো সম্পর্ক অনেক আগেই ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। 

এরপর কালপ্রবাহে বয়ে গেছে অনেক জল। সময় পেরিয়ে গেছে অনেকটা। প্রায় কুড়ি বছর - সময়টা কম নয়। যথারীতি চন্দ্রনাথের কোনো খোঁজ আজ অবধি আমি পাইনি। হারুর কাকা হারুকে আই সি এস তৈরী করতে চেয়েছিলেন। হারু তাই হয়েছে। আজ সে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলার কালেক্টর। প্রশাসক হিসাবে সে খুব সফল। সরকারি উপরতলায় তার যথেষ্ট প্রভাব - প্রতিপত্তি। আর আমি সেই একই থেকে গেছি। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চায় হাত পাকিয়েছিলাম। কলেজ পাশ করার পর লেখালিখিটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিলাম। এখন আমি মোটামুটি নামকরা একজন সাহিত্যিক এবং তার সঙ্গে সঙ্গে বাংলার সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্রের রাজনৈতিক সাংবাদিক। মোটামুটি সফল বলা যেতে পারে। বলা বাহুল্য , পেশার কারণে হারুর সঙ্গে এখনো আমার যোগাযোগ আছে। 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

চন্দ্রনাথের কথা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেলেও প্রবল প্রতাপশালী কালচক্র আমাদের তিনজনকে ; অর্থাৎ আমি , হারু ও চন্দ্রনাথকে আবার একসাথে মিলিয়ে দেয়। তবে , সেই স্কুল জীবনের মতই এই মিলন ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতার। ঘটনার শুরু হয়েছিল মাস তিনেক আগে। পশ্চিমের দুটি জেলায় রাজ্য সরকার একটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু এই বাঁধ নির্মিত হলে বৃহত্তর অর্থে কিছু লাভ হলেও সেই বাঁধ নির্মাণের ফলে দুটি জেলার প্রায় পাঁচশো গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়বে ; বাসস্থান , কৃষিজমি - সবকিছুই জলের অতলে তলিয়ে যাবে। তাই এই দুই জেলার লক্ষাধিক মানুষ একজোট হয়েছে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই আন্দোলন হিংসাত্মক আকার ধারণ করছে। তাই সারা রাজ্য এবং পুরো দেশের কৌতুহলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই ঘটনা। 

ঘটনাচক্রে , হারু বিশেষ প্রমোশন পেয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিশেষ পরিদর্শক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে এবং আমি পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন সাংবাদিক। সরকার বিরোধী আন্দোলন এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। আরো লক্ষ লক্ষ মানুষ আন্দোলনে যোগদান করে আন্দোলনকে তীব্রভাবে শক্তিশালী করে তুলেছে। সরকারের শীর্ষ দপ্তর থেকে হারুকে পাঠানো হয়েছে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য। হারুর নেতৃত্বে একের পর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু প্রতিটি বৈঠকের ব্যর্থতার সঙ্গে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। সরকার বলপ্রয়োগের পক্ষপাতী নয় ; তাই সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা করছে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার। কিন্তু সেভাবে কোনো সুরাহার পথ বেরিয়ে আসছে না। বিষয়টি পাঁচশো গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের বাসস্থান ও রুজির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই আন্দোলনকারীরা কোনোরকম আপোসের পথে হাঁটতে নারাজ। 

আজ আন্দোলনকারীদের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বৈঠক। এই বৈঠকের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। এই বৈঠকে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছে হারু এবং আমি নিউজ কভারের দায়িত্বে। 

চমকটা লাগলো আন্দোলনকারীদের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছনোর পর। শীর্ষ নেতৃত্বের গাড়ি প্রশাসনিক ভবনে এসে পৌঁছনোর পর জনাদশেক সাংবাদিক শীর্ষ নেতৃত্বকে ঘিরে ধরলেন ; আমিও ছিলাম তাদের দলে। না , চিনতে ভুল হয়নি এতটুকুও। কুড়ি বছর পরেও চেহারার সামান্য পরিবর্তন এলেও চন্দ্রনাথ প্রায় একই রকম আছে। তার সেই রৌদ্রতেজদীপ্ত ধারালো চোখের দৃষ্টি , হার না মানা ব্যক্তিত্ব , ব্যতিক্রমী চরিত্র - সবই যেন একই রকম আছে - চন্দ্রনাথ যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিল - সেই কথোপকথন থেকে আমি তা বুঝতে পেরেছিলাম। আমি অবাক বিহ্বল হয়ে গিয়ে তাকে কোনো প্রশ্ন করতেই ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এই যে চন্দ্রনাথ আমাকে দেখেছে , লক্ষ্য করেছে এবং চিনতেও পেরেছে বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু তাতে তার অভিব্যক্তিতে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

বৈঠক শুরু হতেই হারু চন্দ্রনাথকে দেখে উচ্ছসিত হয়ে ওঠে - '' এই চন্দ্রনাথ , কীরে চিনতে পারছিস ? '' দ্বিধাহীন শীতল কণ্ঠে চন্দ্রনাথ বলে ওঠে - '' ভুলে যাওয়ার মত কোনো কারণ নেই। কিন্তু এটা আমাদের ব্যক্তিগত আলাপচারিতার জায়গা নয়। জনগণের স্বার্থে আজ আমি তাদের প্রতিনিধি। সুতরাং কাজের কথায় আসা যাক। '' 

চন্দ্রনাথের এই উত্তরে হারু যেন একটু দমে যায়। আমি খুব অবাক হই। এত বছর পর পুরোনো মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়েও তার মধ্যে কোনো উচ্ছাস নেই। এমনই নির্লিপ্ত সে। 

যাই হোক , '' কাজের কথা '' শুরু হওয়ার পর প্রথমেই চন্দ্রনাথ প্রায় আধ ঘন্টা ধরে সরকারের প্রকল্পের ফলে কীভাবে পাঁচশো গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবেন - তার বর্ণনা শুনতে পাওয়া গেল এবং হারু চন্দ্রনাথের অকাট্য যুক্তির সামনে একপ্রকার চুপ করেই থাকল। শেষে চন্দ্রনাথ এও জানিয়ে রাখলো - বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা শুরু হয়েছিল - তার শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী দুই - এক দিনের মধ্যে রায় বেরোবে। তাই বিচারাধীন বিষয়টি নিয়ে আপাততঃ কোনো বৈঠক বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন নেই। 

নমস্কার জানিয়ে চন্দ্রনাথ চলে যেতেই হারু আর আমি পরস্পরের দিকে মুখ চাওয়া - চাওয়ি করলাম। বলা বাহুল্য , দুজনেই ঐসময় চন্দ্রনাথের কথাই ভাবছিলাম। ছেলেটি চিরকালই এইরকম অপ্রতিরোধ্য। কথা বলার সময় তার কপালে ফুলে ওঠা শিরার লাল ত্রিশুল চিহ্ন লক্ষ্য করেছিলাম। অর্থাৎ চন্দ্রনাথ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কাউকেই সে জিততে দেবেনা। হারু বলে উঠলো - '' একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছিস নরু ? " 
- '' কী ? "
- '' চন্দ্রনাথের কাছে আমরা সবাই কেমন যেন ছোট , হেরে যাওয়া। আমি এত উঁচু পদে বসে থাকা একজন সিভিল সার্ভেন্ট ; অথচ চন্দ্রনাথ যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমরা কতটা ভুল। ওর বজ্র কঠিন চোয়াল দেখে মনে হচ্ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের সমর্থন ওর সঙ্গে না থাকলেও ওর অবস্থান একই থাকতো। '' 

আমি হারুকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম - '' দেখ হারু , ব্যাপারটা সেরকম নয়। তুই একটা দায়িত্বপূর্ণ পদে আছিস। সরকার কর্তৃক আরোপিত দায়িত্ব এবং জনগণের স্বাৰ্থ - দুইই তোকে দেখতে হয়। তাই তোর নিজেকে হেরে যাওয়া মনে করার কোনো কারণ নেই। '' 

বলা বাহুল্য আমার কথা হারুকে সন্তুষ্ট করতে পারলো বলে মনে হল না। আমিও মনে মনে জানি - আকাশের সেই ধ্রুবতারার মত চন্দ্রনাথ আজ অনেক উপরে ; হয়তো সবসময়ই সে উপরেই ছিল - আমরাই তাকে বুঝতে ভুল করেছি। কেমন একটা বিশ্বাসও আমার মনে জন্মেছিল - চন্দ্রনাথের নেতৃত্বে যে আন্দোলন চলছে - তার জয় হবেই। চন্দ্রনাথ হেরে যাওয়ার পাত্র নয়। এত জনপ্রিয়তা , মানুষের সমর্থন পেয়েও তার পোষাক সাধারণ , চলন সাধারণ ; কিন্তু লড়াইয়ের মানসিকতা বাঘের সঙ্গে তুলনীয়। 

ঠিক এর দিন দুই পর কোর্টের রায় বেড়িয়েছে। কোর্টের রায় যথারীতি আন্দোলনকারীদের পক্ষে। শুরু হয়েছে তাদের বাঁধভাঙা উচ্ছাস। আমি সাংবাদিক ; অনেক গোপন খবর আমাকে রাখতে হয়। খবর নিয়ে জেনেছি যে , এই বাঁধভাঙা উচ্ছাসে চন্দ্রনাথ কোথাও নেই। সে আজ বিকেলেই রওনা হচ্ছে অন্য একটি রাজ্যে অপর কোনো এক সমস্যার সম্মুখীন হতে। তাই বিকেলের আগেই আমি আর হারু চন্দ্রনাথের ডেরায় হানা দিলাম। 

একটি ছোট্ট একচালা কুঁড়ে ঘর। দেখে অবাক হয়ে গেলাম এই বিরাট আন্দোলনের শীর্ষ নেতা এই কুঁড়েঘরে থাকে ! বাইরে থেকে নাম ধরে ডাকতেই চন্দ্রনাথ বেরিয়ে এল। মুখে সেই নির্লিপ্ত হাসি। হারুই প্রথম কথা বললো - 
- '' তোর জয়ের জন্য অভিনন্দন। কিন্তু এই আনন্দের মুহূর্তে তুই নেই কেন ? '' 
চন্দ্রনাথ দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিল - '' জয়টা প্রাসঙ্গিক ; কিন্তু তার জন্য উৎসব অর্থহীন। ঠিক যেভাবে তোর স্কলারশিপ পাওয়ার ভোজটা আমার কাছে অর্থহীন বলে মনে হয়েছিল। '' 

আজ অনেকদিন পর আমি আবার স্মৃতির অন্ধকারে ডুব দিয়েছি। চোখ বন্ধ করলেই ফুটে ওঠে সেই বোর্ডিং স্কুল , চন্দ্রনাথ , হারু , আমি হেড মাস্টারমশাই। মনকে প্রবলভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে চন্দ্রনাথের প্রবল ব্যক্তিত্ব। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেই যেন বলে উঠলাম - '' নাহঃ , চন্দ্রনাথকে আমরা আজও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। ''     

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

    
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

জ্ঞানচক্ষু গল্পের সম্প্রসারণ। 

জ্ঞানচক্ষু গল্পের পরিবর্ধিত রূপ। 

বাংলা প্রকল্প। 

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প। 



       
গল্পের নাম : এক্কেবারে নিজের গল্প
মূলগল্প : জ্ঞানচক্ষু 
মূল গল্পের লেখিকা : আশাপূর্ণা দেবী। 

[ আশাপূর্ণা দেবীর জ্ঞানচক্ষু গল্পটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গল্পটিকে বর্ধিত রূপ দেওয়া হয়েছে। জ্ঞানচক্ষু গল্পের চরিত্রগুলিকে ও ঘটনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়কে '' এক্কেবারে নিজের গল্প '' - তে অনুসরণ করা হয়েছে। ]    


                                             এক্কেবারে নিজের গল্প    

প্রথমবারের গল্প লেখার তিক্ত অভিজ্ঞতা তপনকে অত্যন্ত মর্মাহত করেছিল। গল্প লেখার এবং গল্প ছাপাবার ব্যাপারে তপন যে অন্য কারো সাহায্য নেবে না - এ সিদ্ধান্ত তো তপন আগেই নিয়েছিল। কিন্তু নতুন করে গল্প লেখার জন্য স্বাভাবিক মনোনিবেশ করতে পারছিলনা। চেষ্টা যে সে করেনি - তা নয়। টেবিলের উপর খাতা রেখে , কলমের খাপ খুলে তপন অনেকবার তৈরী হয়েছে। হাবিজাবি কিছু লিখে বারবার কেটে দিয়েছে। ব্যাস ঐটুকুই ; এরপর আর বেশিকিছু করা সম্ভব হয়নি তপনের। লিখতে চেয়েছে বারবার ; কিন্তু লেখার মত কিছু লিখে উঠতে পারেনি। 

তপনের মনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই তীব্র ঝড়ের আভাস কিন্তু তার বাড়ির কেউ টের পায়নি ; মা , বাবা , কাকা কেউ না। বরং সকলে তো এই ভাবনাতেই অস্থির ছিল যে প্রথম গল্প ছাপবার পর তপন আরো বেশি করে গল্প লেখায় মনোনিবেশ করবে ; পড়াশোনা মাথায় উঠবে। এই নিয়ে মা বেশ চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু সকলে এটা দেখে খুব অবাক হয় যে তপন দিনরাত গল্প লিখে বাড়ি মাথায় তুলছে না - সে দিব্যি স্বাভাবিক আছে ; স্কুলে যাওয়ার সময় স্কুলে যাচ্ছে ; পড়ার সময় পড়তে বসছে ; খাওয়ার সময় খাচ্ছে। কিন্তু গল্প লেখার জন্য তপনের মধ্যে যে তীব্র ব্যস্ততা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা সকলে করেছিল - সেরকম তো কিছু ঘটছে না ! তাহলে কী সত্যিই সে লেখক হয়ে উঠলো ! প্রতিষ্ঠিত নামকরা লেখকদের মত। এই তো তপনের নতুন মেসোমশাই - কলেজে পড়ান , আড্ডা দেন , সিনেমা দেখতে যান , শ্বশুরবাড়ি আসেন। সব কাজই তো করে চলেছেন ঠিকঠাক। তপনও কি তাহলে তার নতুন মেসোর মত লেখক হয়ে উঠলো ! 

তবে কেউ বুঝতে না পারলেও তপনের মনের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়টা প্রথম টের পান তপনের মা। বেশ কয়েকদিন হল তিনি লক্ষ্য করেছেন , তপন পড়তে বসছে - কিন্তু পড়ায় মন নেই ; তপন খেতে বসছে - কিন্তু খাওয়ায় আগ্রহ নেই। 

-- '' এর তোর কী হয়েছে রে ; দিনরাত কেমন যেন আনমনা , কোনকিছুতেই মন নেই। ''

যেন সম্বিৎ ফিরে তপনের - '' কই , কিছু হয়নি তো। '' 

-- '' না কি গল্পের জন্য নতুন কোনো প্লট খুঁজে পাচ্ছিস না ? '' মায়ের মুখে মাতৃসুলভ দুষটুমি ভরা হাসির ঝিলিক। কিন্তু কথাটা শুনে খুব রাগ হয় তপনের। কিছু বলে না সে। 

মা যেন সকল সমস্যার মূল উৎসে পৌঁছে গেছেন এমন একটা ভাব এনে বলেন - '' আচ্ছা , আচ্ছা , বুঝেছি এবার। তোকে একটা সুখবর দিই - সামনে রোববার তোর ছোট মাসি আর নতুন মাসি এবাড়িতে বেড়াতে আসছে ; তা মেসোর কাছ থেকে ভালো একটা প্লট জেনে নিলেই তো হল। '' 

তপন মুখ বুজে পড়ার টেবিল থেকে উঠে যায়। একথার পর হাসবার বা কাঁদবার - কোনোটারই ইচ্ছা তপনের ছিলনা। 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতেই বাবা বললেন - '' তপন তোমার চিঠি এসেছে , তোমার পড়ার টেবিলে রাখা আছে। ............... আর হ্যাঁ , তোমার মা বাড়ি নেই। ফিরতে দেরি হবে ; রান্নাঘরে তোমার খাবার ঢাকা দিয়ে গেছেন , খেয়ে নিও। '' 

বাবা বাড়ির অন্যদের তুলনায় একটু রাশভারি ; তিনি তপনের কোনো ব্যাপারেই বিশেষ হস্তক্ষেপ করেন না। মা'ও বাড়ি নেই। তাই চিঠিটা যে কেউ পড়েনি - সে ব্যাপারে তপন নিশ্চিত হল। কিন্ত তপনকে আবার চিঠি লিখলো কে ? প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতে থাকে তপনের মনে। তাড়াতাড়ি পড়ার টেবিলে গিয়ে হাজির হয় সে। মনের চাপা উত্তেজনা তাকে হাত - ধুয়ে খাবার খেতে অনুপ্রাণিত করেনি। পড়ার টেবিলের কাছে গিয়েই তপন হামলে পড়ে চিটিটার উপর। একটা পোস্টকার্ড। '' ধ্রুবতারা '' মাসিক পত্রিকার পক্ষ থেকে এসেছে। মাত্র দুটি লাইন তাতে লেখা। কাঁপা কাঁপা হাতে ওই দুটি লাইনকেই বারবার পড়তে থাকে তপন - 
'' দুঃখিত।  আপনার লেখা আমাদের পত্রিকায় ছাপাবার জন্য মনোনীত হয়নি। '' 
   
গল্প যে একেবারেই লিখেনি তপন - এমনটা নয়। দুটো গল্প লিখেও ছিল সে। সেই দুটো গল্পকেই সে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে ধ্রুবতারার অফিসে পোস্ট করেছিল। আজ ফল পেল হাতেনাতে। দুটি গল্পের একটাও মনোনীত হয়নি। কিন্তু আশ্চর্য যে চরম হতাশাবোধ তপনের মধ্যে হওয়া উচিত ছিল - তেমনটা তো হচ্ছেনা ! বরং একটা তীব্র জেদ তপনের মনে জন্ম নিয়েছে - যতই যাই হোক , গল্প ছাপবার ব্যাপারে আর কারো সাহায্য নেবেন তপন। নিজের লেখা গল্প কাউকে দিয়ে কারেকশন করাবে না সে। তাই ধ্রুবতারার অফিস থেকে তার দুটি গল্পেরই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার চিঠি পেয়েও ভেঙে পড়েনি তপন। 

দিন কয়েক পরের ঘটনা। স্কুলে ইংরেজির ক্লাস। প্রতুল স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। আজ তিনি ইংরেজি পাঠ্যবই থেকে নতুন একটি গল্প পড়াতে শুরু করলেন - Liam O'Flaherty - র লেখা His First Flight গল্পটি। প্রথম দিকে তেমন আগ্রহ পায়নি তপন। কিন্তু ধীরে ধীরে গল্প এগোতে থাকে এবং গল্পটির প্রতি এক আশ্চর্য আকর্ষণ অনুভব করে তপন। একটি ছোট্ট পাখি , যে আগে কখনো উড়তে শেখেনি ; তার ভাই - বোনেরা সকলেই উড়তে শিখেছে এবং তার সামনে দিয়ে উড়ছে। পাখিটি উড়বার জন্য বারবার চেষ্টা করছে ; কিন্তু অত উঁচু পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেওয়ার মত সাহস করে উঠতে পারছেনা। ক্ষুধায় , ক্লান্তিতে জর্জরিত পাখিটি। তার মা যখন একটুকরো খাবার নিয়ে এসেও তাকে না দিয়ে একটু দূর দিয়ে উড়তে শুরু করলো , তখন পাখিটি ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেয় ; এবং এই ঝাঁপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে উড়তে শিখলো। 

পড়ানো শেষ করে প্রতুল স্যার ছাত্রদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন - '' বল , এই গল্পটি থেকে তোমরা কী শিক্ষা পেলে ? '' সকলকে অবাক করে দিয়ে একমাত্র হাত তুললো তপন। প্রতুল স্যারও একটু অবাক হলেন ; তপন তো কোনোদিনই পড়া দেওয়ার জন্য এভাবে হাত তোলে না ! 
-- '' হ্যাঁ , বল তপন। '' 
-- '' অনেক সময় কোনো কাজ করতে গিয়ে আমরা ভয় পাই , মনে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে। কিন্তু একবার যদি সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে কাজ শুরু করে দেওয়া যায় , তাহলে আত্মবিশ্বাস নিজে নিজেই ফিরে আসে এবং আমরা কাজে সফল হই। '' 

প্রতুল স্যার অবাক চোখে তপনের দিকে তাকিয়ে থাকলেন , কিছু বললেন না। কিন্তু তপন জানতো এর চেয়ে ভালো উত্তর হয়তো আর কারো জানা নেই। 

সেদিন থেকে এক আশ্চর্য পরিবর্তন এল তপনের মধ্যে। তপন এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ - গল্প সে লিখবেই। 

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।

এর ঠিক ছয়মাস পর তপনের জীবনের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত দিনটি এল। একদিন তপন মায়ের সাথে মামার বাড়ি বেড়াতে এসেছে। ছোট মাসি আর নতুন মেসোও এসেছে। নতুন মেসোর সঙ্গে বহুদিন পর তপনের দেখা। এর মধ্যে নতুন মেসো আর তপনের লেখার ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ দেখান নি। কিন্তু দুপুরে খাওয়ার টেবিলে তপনকে দেখে কিছু একটা বলতে হয় - তাই ভেবে নতুন মেসো তপনকে বললেন - 
-- '' তা তপন , আজকাল কি আর গল্প টল্প লিখছো না ; লিখলে আমায় দিয়ো , আমি কারেকশন করে ছাপিয়ে দেব ,আগের বারের মত। '' 

তপন কোনো কথা বললো না ; একছুটে মায়ের ব্যাগ থেকে একটা পত্রিকা বের করে আনলো। বাংলার সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রচলিত ছোটদের পত্রিকা '' ধ্রুবতারা '' র একটি সংখ্যা। মেসোকে দিল। মেসো অবাক হয়ে পত্রিকাটি হাতে নিলেন ; পৃষ্ঠা উল্টে সূচিপত্রে চোখ রাখলেন। প্রথমেই দেওয়া আছে - '' আমার প্রথম গল্প লেখা ( গল্প ) - শ্রী তপন কুমার রায়। '' 

এই গল্পটির ব্যাপারে তপন কাউকে কিছু বলেনি। এমনকি মাও কিছু জানতেন না। তাই খাবার টেবিলে তপনের গল্পের গল্পটি সকলকে অবাক করেছিল। সবচেয়ে অবাক হয়েছিলেন নতুন মেসো। তাঁর কারেকশন ছাড়া তপনের গল্প বিখ্যাত পত্রিকায় ছেপেছে - এ যেন তাঁর ধারণার বাইরে। 

তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি এল আজ। আজ সকলেই তপনের গল্প নিয়ে ব্যাস্ত। কেউ আর নতুন মেসোর কারেকশন নিয়ে কিছু বলছে না। এ গল্পের প্রতিটি লাইন তপনের। নতুনমেসোর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে তিনি আনন্দ পেয়েছেন ; না কি অন্য কিছু ! একমাত্র মা 'ই মনে হয় তপনের মনের আসল কষ্টের জায়গাটা ধরতে পেরেছিলেন। তিনি মুচকি মুচকি হাসছেন। আজ সত্যিই নিজেকে লেখক মনে হচ্ছে তপনের।    

XI - XII Online MCQ : CLICK HERE

LIST OF ALL PROJECTS.

সমস্ত প্রকল্পের তালিকা পেতে এখানে CLICK করো।


Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hellow viewers, myself Nandan Dutta reside at Maheshpur ,Malda, West Bengal, India.

My intent to make the website is to share my view and knowledge to the HS students. They can easily find projects, HS suggestion and many more here.


Categories

  • Career (2)
  • CLASS 11 (XI) (1)
  • Class XI 1st Semester (4)
  • CLASS XI 2nd Semester (16)
  • H.S. 3rd SEM (6)
  • H.S. EDUCATION (5)
  • H.S. HISTORY (1)
  • HS SOCIOLOGY (2)
  • HS SUGGESTION (1)
  • INDIAN HISTORY (30)
  • NCERT (1)
  • POLITY (61)
  • PROJECT (96)
  • Sociological Studies (79)
  • Teaching & Education (128)
  • TEST PAPERS SOLVE (11)
  • TEST PAPERS SOLVE 2020 (7)
  • WORLD HISTORY (53)
  • XI EDUCATION (7)
  • XI HISTORY (3)
  • XI POL SC (1)
  • XI SOCIOLOGY (1)
  • XII Bengali (1)
  • XII Sanskrit (1)

recent posts

Sponsor

Facebook

Blog Archive

  • July 2025 (8)
  • June 2025 (4)
  • May 2025 (23)
  • April 2025 (75)
  • March 2025 (32)
  • December 2024 (5)
  • November 2024 (70)
  • October 2024 (1)
  • September 2024 (1)
  • July 2024 (5)
  • June 2024 (3)
  • April 2024 (2)
  • March 2024 (3)
  • February 2024 (11)
  • January 2024 (1)
  • November 2023 (4)
  • October 2023 (8)
  • September 2023 (10)
  • April 2023 (9)
  • March 2023 (18)
  • February 2023 (2)
  • January 2023 (1)
  • December 2022 (3)
  • November 2022 (3)
  • October 2022 (4)
  • September 2022 (16)
  • August 2022 (3)
  • July 2022 (5)
  • June 2022 (5)
  • April 2022 (23)
  • March 2022 (10)
  • February 2022 (18)
  • January 2022 (30)
  • December 2021 (8)
  • November 2021 (12)
  • October 2021 (2)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (2)
  • July 2021 (2)
  • June 2021 (5)
  • May 2021 (1)
  • April 2021 (2)
  • November 2020 (1)
  • October 2020 (1)
  • August 2020 (2)
  • June 2020 (3)
  • May 2020 (1)
  • October 2019 (3)
  • September 2019 (5)
  • August 2019 (3)
  • June 2019 (3)
  • May 2019 (3)
  • April 2019 (1)
  • March 2019 (2)
  • February 2019 (3)
  • December 2018 (1)
  • November 2018 (3)
  • October 2018 (4)
  • August 2018 (1)

Total Pageviews

Report Abuse

About Me

subhankar dutta
View my complete profile

Sponsor

Pages

  • Home
  • Project
  • জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 SAQ
  • EDU FINAL A 2020
  • Class XI ( Class 11 ) Sociology chapter wise MCQ &...
  • Class 12 (H.S.) History Chapter Wise MCQ & SAQ
  • Class 11 (XI) Sociology 1st chapter MCQ & SAQ
  • H.S. Sociology notes .
  • H.S. Sociology 1st chapter MCQ & SAQ ( only reduce...
  • H.S. Education 10th chapter SAQ & MCQ
  • H.S. Education 10th chapter MCQ & SAQ
  • CLASS 12 SOCIOLOGY 4TH CHAPTER SAQ WITH ANSWER

Pages

  • About Me
  • Contact
  • Privacy Policy
  • Disclaimer

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates